আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'গরিবের বন্ধু'

আমি আমার মতন।
নিজের নাম লিখতে পারেন কোনো রকমে, সহায়-সম্বল বলতে চার শতক জায়গার ওপর ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর। পেশা অন্যের ফুটফরমায়েশ খেটে বেড়ানো। কিন্তু মনে জোর থাকলে অনেক অসাধ্যও যে সাধন করা সম্ভব। তারই ব্রত নিয়ে এবার জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়ে রীতিমতো এলাকায় হইচই ফেলেছেন আবদুল আলিম।

অর্থ-সম্পদ না থাকলেও সৎ ও পরোপকারী আলিম নিজ গ্রামে 'গরিবের বন্ধু' হিসেবে পরিচিতি লাভ করায় গ্রামবাসী একাট্টা হয়ে তাঁর পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। সহায়-সম্বলহীন আলিমের এ সাধ্যাতিরিক্ত সাধ পূরণে পাশে দাঁড়িয়েছে গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতা। জানা গেছে, কালাই পৌরসভার প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। সেসময় আঁওড়া গ্রাম থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আলিম কমিশনার (বর্তমানে কাউন্সিলর) পদে নির্বাচন করে জামানত হারিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাঁর ইচ্ছা জাগে এ গ্রামে মেয়র পদে কাউকে দাঁড় করানোর।

কিন্তু অনেক দেনদরবার করেও এ পথে কোনো বিত্তবানের সাড়া না পেয়ে আলিম নিজেই মেয়র পদে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রামবাসীকে জানিয়ে দেন। গ্রামবাসীও তাতে সাড়া দেয়। চাঁদা তুলে প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসী তাঁর নামে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ছুটে যায় উপজেলা সদরে। সেখানেও বাধে বিপত্তি। কপর্দকহীন আলিমের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া যেন অনেকটাই বেমানান।

তাই কেউ তাঁকে পাত্তাই দিতে চায়নি। তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করার চেষ্টাও চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সারা দিন অপেক্ষার পর আলিম তাঁর মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেয়েছেন। সেই থেকে প্রতিদিন গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আলিম ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। সাধারণ ভোটারদের সাড়াও মিলছে তাঁর প্রতি।

হাসি-ঠাট্টার মধ্য দিয়ে লোকমুখে কপর্দকহীন মেয়র পদপ্রার্থী আলিমকে নিয়ে মুখরোচক নানা গল্প এখন কালাই পৌরবাসীর মুখে মুখে। মঙ্গলবার তাঁর নিজ বাড়ি আঁওড়া গ্রামে দেখা মেলে আলিমের সঙ্গে। ক্লিন সেভ, মাথায় টুপি, গায়ে পুরনো ডিপ নেভি ব্লুু রঙের কোট ও পাজামা পরিহিত আলিম স্বভাবসুলভ নিয়মে সালাম দিয়ে প্রথমেই তাঁর প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দোয়া চান। একমাত্র মেয়ে কালাই বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। বনিবনা না হওয়ায় বউ তাঁকে ছেড়ে গেছে অনেক আগে।

মা-বাবার সঙ্গে মাটির ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে তাঁর বাস। অর্থ-সম্পদ না থাকলে কি নির্বাচন করা সম্ভব_এমন প্রশ্নে আলিমের সহজ উত্তর গ্রামবাসীই তাঁকে সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, 'ভোটাররা তাঁকে শুধু ভোট নয়, অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করছে। ' এ পর্যন্ত খরচ করেছেন কত জানতে চাইলে বলেন, 'আমার কোনো খরচ লাগেনি। সবই করছে গ্রামবাসী ও তাঁর ভোটাররা।

' গ্রামের প্রবীণ ভোটার মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল খায়ের বলেন, 'এ গ্রামে আমরা কোনো দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী দাঁড় করাতে পারিনি। অথচ দুই পাড়া মিলে গ্রামের ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। সহায়-সম্বলহীন আলিম যে প্রার্থী হতে রাজি হয়েছেন এ জন্যই তাঁরা তাঁর পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। ' গ্রামের মুরবি্ব আলহাজ হারুনুর রশিদ বলেন, 'আলিমকে আমরা সবাই গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেছি। ' গ্রামের তরুণ ছেলে কলেজপড়ুয়া রুবেল জানান, আলিমের পক্ষে শুধু বয়স্করা নন, গ্রামের মহিলা থেকে শুরু করে সব মহলেরই ব্যাপক সাড়া রয়েছে।

' অর্থ না থাকায় শুধু গ্রামবাসী নয়, পাশের গ্রামের অনেকেই তাঁকে সহযোগিতা করছে। কালাই পৌরসভায় এবার মেয়র পদে ১১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ্যতা পেয়েছে। এর মধ্যে তিনজন ডামি প্রার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে। নির্ধারিত তারিখে তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন আটজন। তাঁদের মধ্যে অর্থ, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শিক্ষায় আলিমের অবস্থান সবার নিচে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।