আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষকের মর্যাদা

এক বৃদ্ধ লোক ছিল, সরকারী চাকুরী করতেন। এক সময় চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করলেন। অবসরের টাকা গ্রহন করার জন্য হিসাব রক্ষণ অফিসে সকল কাগজ পত্র দাখিল করেন। কাগজপত্র সঠিক করতে ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমোদন দরকার। কাজ সমাধা করার জন্য অফিসের লোকজন মাত্রাতিরিক্ত টাকা দাবী করেন।

বৃদ্ধ কিছু টাকা দিতে চান কিন্তু অফিসের যার কাছে কাজ সে কম টাকায় কাজ করবে না বললেন। বৃদ্ধ প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করে । অফিসে গেলেই লোকটি কাল,পরশু এভাবে বিভিন্ন তারিখ করেন। বৃদ্ধ অফিসে যোগাযোগ করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেলেন। এর পর কিছু টাকা বাড়িয়ে দেয়ার কথাও বলেন।

এরপরও কাজ করে দিচ্ছেননা। শুধু তারিখ করেন। এদিকে বৃদ্ধ বয়সের ভাড়ে প্রায় ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। টাকা পয়সা যা ছিল সবই প্রায় শেষ। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অসহায় হয়ে গেলেন।

তার বিবাহ যোগ্য কন্যা ছিল। তাকেও টাকার জন্য বিয়ে দিতে পারলেন না । ্এক দিন বৃদ্ধ রাগান্বিত ভাবে মনের দুঃখে বললেন, আজ অফিসে গিয়ে বড় অফিসারের সাথে সব কথা খুলে বলব। বৃদ্ধ প্রতিদিনের মত অফিসে গিয়ে ম্যাজিষ্টেট সাহেবের অফিস কক্ষের দরজার পাশে বসে পড়লেন। পড়নের জামা কাপড় তেমন ভাল ছিলনা।

বৃদ্ধ হেেল যাহয় । ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের গার্ড বৃদ্ধকে দরজা থেকে সরে যেতে বলল। বৃদ্ধ বললেন তুমিও একদিন আমার মত হবে। আজ আমি বড় সাহেবের সাথে দেখা করে আমার সব কথা বলবই। কথা না বলে আমি যাব না।

গার্ড বৃদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে লাগল। এমন সময় ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব এসে ঘটনা দেখলেন। বললেন বৃদ্ধকে ধাক্কাচ্ছ কেন? গার্ড বলল, স্যার ওনাকে সরে যেতে বললাম কিন্তু উনি সরলেন না। স্যার গরিব মানুষেরা এমনই হয়। ম্যাজিষ্ট্রেট বললেন উনাকে আসতে দাও।

গার্ড বৃদ্ধকে ভিতরে যেতে বলল। বৃদ্ধ ভিতরে গিয়ে বললেন ঝরৎ ধস ধ ৎবঃরৎবফ ঃবধপযবৎ ড়ভ ভৎবব ঢ়ৎরসধৎু ঝপযড়ড়ষ স্যার আমি আপনাকে কিছু কথা বলব দয়া করে শুনবেন। ম্যাজিষ্ট্রেট বৃদ্ধের মুখে ইংরেজী কথা শুনে অবাক হলেন। ভাবলেন, নিশ্চয়ই বৃদ্ধ একজন শিক্ষিত লোক হবেন। ম্যাজিষ্ট্রেট বললেন বলুন কি বলবেন? ঊৃদ্ধ বললেন,স্যার আমি একজন অবসর প্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক।

আমার বাড় বাহাদুরপুর গ্রামে। আমি দীর্ঘদিন চাকুরী করে বর্তমানে অবসর গ্রহন করেছি কিন্তু স্যার আমার পেনশনেরর টাকা পয়সা এখনও পাইনি। স্যার আমার কাগজ পত্র সবই আমি আপনার অফিসে জমা দিয়েছি। এরপরও আমার কাজ নিয়ে আমাকে আজ, কাল,পরশু করে ঘুরাচ্ছেন। আমার কাছে অনেরক টাকা দাবী করছেন।

স্যার আমি ঐ সাহেবকে কিছু টাকা দিতে রাজি হয়েছি কিন্তু তিনি আজও টাকা দাবী করছেন। আমি বলেছি কাজ হলে আরও কিছু দেব। এরপরও ঐ সাহেব আমাকে ঘুরাছ্ছেন। স্যার আমার কাছে যে টাকা পয়সা ছিল তা দিয়ে এতদিন আপনার অফিসে আসা যাওয়া করে সবই শেষ করেছি। স্যার আমার ঘরে বিবাহযোগ্য কন্যা আছে ।

তাকে টাকার জন্য বিবাহ দিতে পারছিনা। ছেলের কলেজের বেতন দিতে পারছিনা। কিছুদিনের মধ্যে ছেলের পরীক্ষার ফরম পুরন করতে হবে। নিরুপায় হয়ে আমি আপনার কাছে বলতে বাধ্য হলাম। বৃদ্ধ একটানা মনের কথাগুলো বলে ফেললেন।

ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোন কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন? ঊৃদ্ধ বললেন, স্যার আমি প্রথমে এলানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে,পরে বদরপুর প্রাথমিক বিলাশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সব শেষে হরিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহন করেছি। বৃদ্ধের কথা শুনে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব বললেন আপনার নাম কি ? স্যার আমার নাম আব্দুল মাজেদ মিয়া। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব জিজ্ঞেস করলেন কোন সালে এলানপুর বিদ্যালয়ে ছিলেন। বৃদ্ধ বললেন স্যার আমি ১৯৬০ সালে ঐ বিদ্যালয়ে ছিলাম। বৃদ্ধের কথা শুনে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের মনে পড়ল ঐ সালে তিনি এলানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনী পাস করেছেন এবং মাজেদ স্যারের কাছে পড়েছেন।

তাৎক্ষনাৎ ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব চেয়ার থেকে উঠে বৃদ্ধের পায়ের ধুলা নিয়ে বৃদ্ধকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,স্যার আমি আপনার ছাত্র ছিলাম । আমার নাম জাফর আহমেদ। আমার বাবার নাম মিঃ জাবেদ আহমেদ। আমার বাবা এলানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আপনি আমাকে স্যার বলবেন না স্যার।

আমি আপনার ছাত্র। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব তার প্রিয় স্যারকে চেয়ারে বসালেন । গার্ডকে চা-নাস্তা আনার জন্য বললেন গার্ডতো হতবাক, কি হলো । স্যার ঐ বৃদ্ধকে পায়ে সালাম করলেন,বুকে জড়িয়ে ধরলেন,আবার চা-নাস্তা খাওয়ালেন। কত সম্মান করলেন।

ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব তার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন স্যার আপনার কাগজপত্র কার টেবিলে আছে, কে দিচ্ছেনা? ঊৃদ্ধ বললেন,স্যার উনার নাম আবেদ সাহেব । গার্ডকে ম্যাজিষ্টেট সাহেব আবেদ সাহেবকে ডাক। গার্ড আবেদ সাহেবকে ডেকে আনলেন । ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব বৃদ্ধকে দেখিয়ে আবেদ সাহেবকে বললেন,ওনাকে চিনেন? উনি একজন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক। উনি একদিন আমার আপনার মত দাপটের সাথে চাকুরী করছেন।

ওনারও চেয়ার টেবিল ছিল। আজ উনি মাটিতে বসে আপনার কাছে অনুরোধ করছেন। তিনি আমার মত,আপনার মত অনেক জজ, ব্যারিষ্টার, ম্যাজিষ্ট্রেট,অফিসার, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক তৈরী করেছেন। আজ তার এ অবস্থা। তিনি আমার বাল্য শিক্ষক।

আপনি –আমি একদিন তাঁর মত বৃদ্ধ হব। একজন মানুষ গড়ার কারিগর তিনি । আপনারা মানুষকে মানুষ হিসাবে গন্য করেন না। এখনই গিয়ে স্যারের কাগজপত্র ঠিক করে আমার কাছে পেশ করেন। আমি স্যারের কাজ শেষ করে উঠব।

মনে রাখবেন,তিনি আমার আপনার জন্য কি করেছেন, আর আমার তার জন্য কি করতে পেরেছি। মানুষ হন, মানুষকে ভালবাসুন, মানুষকে মানুষ হিসেবে গন্য করুন, শিক্ষককে মর্যদা দিন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.