আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারি চাকরির অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বৃদ্ধিতে যে প্রভাব পড়তে পারে...

মত প্রকাশের স্বাধীনতা কোন সুযোগ নয়, অধিকার। গত বছরের(২০১১) ১৯ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বিষয়টিকে সরকারের একটা ‘রাজৈতিক চাল’ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন। তাদের ধারণা, আগামী নির্বাচনে প্রশাসনকে সরকারের পক্ষে কাজ করানোর উদ্দেশ্যে এটাকে একটা পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। তাদের মতে, ১৯৯৬ সালে বিপথগামী কিছু সরকারি কর্মকর্তা জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকারকে উত্খাত করতে যেভাবে জনতার মঞ্চ গঠন করেছিল, সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার ‘প্রো-একটিভ মেজার’ হিসবেই বর্তমান সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে তাদের সাথে অনেকটাই একমত হলেও বিষয়টিকে আমি দেখতে চাই সামান্য অর্থনৈতিক, বেকারত্ব দূরীকরণ এবং রাষ্ট্রে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তাই বিষয়টিকে আমি একটু ভিন্নভাবে দেখছি। এই বিষয়ে আমার অভিমত, ইতোমধ্যে যারা সরকারি চাকরি করছেন তারা কমপক্ষে ২৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। সুতরাং ৫৭ বছর বয়সে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিলেও তারা পাবেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চয়কৃত, গ্রেচুইটি ও অন্যান্য সুবুদাদিসহ বড় একটা পরিমাণ; তাছাড়া অবসর ভাতা তো রয়েছেই। সুতরাং সব মিলিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার (যদি শেষ হয়ে না থাকে)খরচ এবং মোটামুটিভাবে সংসার চালানোর একটা অবলম্বন তাদের কোনভাবে হয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রী তাদের পড়াশুনা শেষ করছে পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে যাদের বড় একটা অংশ প্রতিবছরই বেকার হচ্ছে। ফলে বেকারদের কাতার দিন দিন লম্বা হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি চাকরিরতদের বয়স যদি দুই বছর বাড়ানো যায় তবে, অবসরের বয়সসীমা এই দুই বছর বাড়ানোর কারনে যে কোঠা এখন শূন্য হওয়ার কথা ছিল তা শূন্য হবে দুই বছর পর। তাই পড়াশুনা শেষ করা যেসব মেধাবীর বয়স এখন ২৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি, উক্ত চাকরির কোঠা শূন্য হওয়ার আগেই তাদের অনেকেরই সরকারির বয়স পার হয়ে যাবে। ফলে রাষ্ট্র সামান্য হলেও মেধা থেকে বঞ্চিত হবে।

এভাবে প্রতিবছরই কিছু না কিছু মেধাবীরা সরকারি চাকরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে প্রশাসন এক সময় অনেকটাই মেধাশূন্যতায় পড়বে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রশাসনে অপেক্ষাকৃত অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী এবং মেধাহীনদের সারিতো দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হচ্ছেই। বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। সবার বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

রাষ্ট্রের নিজস্ব সম্পত্তি যতটুকু আছে তার সুষম বণ্টনের মাধ্যমে রাষ্ট্রেকেই সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয়। আর সেই রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা নিয়োজিত থাকে দায়িত্বটা তাদের উপরেই বর্তায়। তাই সময় থাকতে এই বিষয়টি নিয়ে সরকার আরও একটু ভাবতে পারে। তাছাড়া সমালোচকদের কথাটা যদি পুরোপুরি সত্য হয়,(সত্য হলেও বাংলাদেশের কোন সরকার কখনোই স্বীকার করেনা) আগামী নির্বাচনে প্রশাসনকে সরকারের পক্ষে কাজ করানোর উদ্দেশ্যে এটা একটা পুরস্কার হিসেবে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়; তবে এর ফল যে খুব একটা ভালো হবেনা তা অতীতের ইতিহাস থেকেই কিছুটা অনুমান করা যায়। তাই ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বল্পকালীন কোন সুবিধা লাভের আশায় এই উদ্যোগের সরকারের জন্য যদি ভালো কোন ফল আনতে সামর্থ হয়; তবে প্রতিবছরই একদিকে বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে ধীরে ধীরে মেধাশূন্যতায় পড়া প্রশাসন রাষ্ট্রের জন্য বয়ে আনবে ভয়াবহ পরিণতি।

পুরোপুরি মেধাশূন্যতায় পড়ার আগেই প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে ইতোমধ্যেই এর যেসব আলামতে কথা আমাদের নাগরিক সমাজ তাঁদের বিভিন্ন লেখনিতে উল্লেখ করছেন; প্রশাসন পুরোপুরি মেধাশূন্য হলে এই পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে তার কিছুটা হলেও এখনই অনুমেয়। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.