আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৈশাখী রাত

মিজান রহমান শ্রেষ্ঠ মধ্যরাত। আনজুরহাট বাজারের মেইন রোডের ঠিক মাঝখানে বটগাছটা একটা ঝোপের মত দাড়িয়ে আছে। মামুনের হাতে হাত ঘড়ি নেই। রাত ক’টা বাজে বোঝা সম্ভব হচ্ছেনা। হঠাৎ করে বটগাছের ঝোপের মত অংশটা কেমন অদ্ভূত রকমের কালো হয়ে গেল।

ভয়ে আতংকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো মামুন। কিন্তু ততনে অঘটনটা ঘটে গেল। ঝোপের মধ্য থেকে আতংকময় কালো অংশটা এগিয়ে এলো মামুনের দিকে। মামুনের মাথায় ব্যাথা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে অসম্ভব যন্ত্রনায় পরিনত হলো। মামুন আর দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা।

সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার। চৈত্রের এই দিনে যথেষ্ট গরম হলেও এই রাতে যেভাবে মৃদু বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে তাতে কারোরই ঘেমে ভিজে ওঠার কোন কারণ নেই। মামুন ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল। \২\ রিপন, শফিক আর বাবু সেই সকাল থেকেই আনজুরহাট বাজারের মধ্যখানে অবস্থিত মেইনরোডে বটগাছটার নিছে মঞ্চ তৈরি করে রঙ বেরঙের কাগজ দিয়ে বৈশাখী মেলার জন্য সাজ তৈরি করছে। আজ চৈত্রমাসের শেষ দিন।

সারাদিন চৈত্র সংক্রান্তির নানা আয়োজন শেষে এখন পহেলা বৈশাখ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বটমূল সাজানোর জন্য এখনও অনেক কিছূ বাকী। সাজানো শেষ হলে কাবঘর থেকে মাইক এনে ফিটিং করতে পারলেই রাতের কাজ শেষ হবে। এইসব নানা ব্যস্ততার মাঝে মাঝরাতে মামুনকে বটমূলে আসতে দেখে ওরা তিন জনই বট গাছ থেকে নেমে মামুনের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু মামুনের কাছে যেতে না যেতেই মামুন মাটিতে ঢলে পড়লো।

মামুনের কাছে যেতেই বিষয়টা পরিষ্কার হলো। সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে, সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার। ওরা তিনজন মিলে মামুনকে বটমূলের মঞ্চে এনে শুইয়ে দিল। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই মামুন চোখ খুলে তাকালো। আমতা আমতা করে বলল,‘তোরা ? কি হইছে আমার ? ‘কি জানি ?’ রিপন বলল,‘কই গেছিলি ?’ ‘ফুফুগো বাড়ী’ মামুন জবাব দেয়।

‘আইলি ক্যান ?’ বাবু জানতে চায়। ‘রাগ কইরা। ’ মামুন বলে,‘তোরা কি করোছ ?’ ‘বটগাছটা সাজাই। ’ শফিক বলে,‘কাইল বৈশাখী মেলা করুম। ’ মামুন আস্তে আস্তে উঠে বসতে বসতে বলে, ‘এক্কে বারে ঘাইমা গেছি।

দেখিকি একটা ভুত বটগাছটার মাথার উপর। পুরো বটগাছটা কালো হয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। ভয়ে আমি শেষ। ’ ‘ও এই খবর ?’ বাবু বলে, ‘তুই একটা মদন। পৃথিবীতে ভুত বলে কিছু আছে নাকি ? আমরাইতো গাছের উপর বইসা বৈশাখী মেলার জন্য সাজাচ্ছি।

’ ‘আমি ভাবলাম এতো রাত। ’ মামুন বলে, ‘গাছের মধ্যে কি যেন নড়াচড়া করে। হঠাৎ কেমন কালো হয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। আমি দৌড়াতে গিয়েও আর দৌড়াতে পারিনি। এক্কেবারে কাইত।

ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলাম। ’ ‘এখন কেমন লাগে ?’ রিপন জিজ্ঞেস করে। ‘এখনও কেমন বুকটা ধুকধুক করতেছে। ’ মামুন বলে। ‘এখনও ভয় লাগে ?’ বাবু জানতে চায়।

‘তোদেরকে দেখে ভয়টা কেটে গেছে। ’ মামুন বলে। ‘চল সব কিছু তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। ’ শফিক তাড়া দেয়,‘ রাত প্রায় শেষ হয়ে গেল। ’ ওদের সব গুছাতে গুছাতে রাত শেষ হয়ে আসে।

সবশেষে মঞ্চের সাথে মাইক বেধে ওদের কাজ শেষ হয়। রিপন মাইকটাকে পরীা করে, ‘হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং হ্যালো, হ্যালো, ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ সিক্স সেভেন এইট নাইন জিরো হ্যালো, হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো। এর পর ক্যাসেট প্লেয়ার অন করে মাইকে বাজানো হয়, ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো। তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমুর্ষরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক এসো এসো ... ’ \৩\ ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো ...’ গানের সুরে ঘুম ভাঙ্গে মামুনের। গতকাল রাত দেড়টার সময় নাটকের রিহার্চাল শেষ করে ফুফুর বাসায় আসে মামুন।

এত রাতে বাসায় ফেরায় ফুফু রাগে ফেটে পড়লেন। টেবিলে ভাত দিতে দিতে এবং মামুনের জন্য বিছানা গুছাতে গুছাতে একটানা আধা ঘন্টা বকাবকি করেই গেলেন। আরও সাসালেন আগামী কাল মামুনের বাবার কাছেও এ ব্যাপারে একটা নালিশ জারি করা হবে। মামুন রাগে দুঃখে প্রথমে না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সারাদিন না খেয়ে বৈশাখী মেলার কাজ করে রাতের বেলা নাটকের রিহার্চাল দিয়ে একদম কান্ত হয়ে পড়লো।

টেবিলে খাবার দেখে ুধাটা আরো বেড়ে গেছে তার। তাই কোন মতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ফুফুদের বাড়ীতেই। সকালে মামুনের ঘুম ভাঙ্গতেই এক দৌড়ে চলে আসে আনজুরহাট বাজারের মেইন রোডে। এদিক সেদিক তাকিয়ে খুজতে থাকে বটগাছটাকে। কৈ এখানের বট গাছ কোথায় ? এ কি স্বপ্ন দেখলো মামুন।

আনজুরহাট বাজারের মেইন রোডে তো কোন বটগাছ নেই আর তাই এইখানের বটমূলে বৈশাখী মেলা করার কোন প্রশ্নও ওঠেনা। আনজুরহাটের বৈশাখী মেলা হচ্ছে আনজুরহাট স্কুল মাঠে। [বি:দ্র: আনজুরহাট বাজারের মেইন রোডে কয়েক বছর আগে একটি বটগাছ ছিল। ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।