আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিপাত যাক সাম্প্রদায়িকতা, এই বৈশাখে প্রাণ মোদের জেগে ঊঠুক নতুন স্বপ্নের সম্ভাবনায়!!

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ব্লগিং হজমের জন্য ক্ষতিকর। আজ সূর্যোদয়ের সাথে বিকশিত হওয়া ভোরের প্রথম আলোকরশ্মির উজ্জ্বল রেখা বাঙালি নববর্ষের সূচনা ঘোষণা করবে। এরই সাথে আমরা বরণ করে নিবো নতুন বছরকে আর সেই সাথে কন্ঠ মোদের মেতে উঠবে “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো” গানের ছন্দে!! সকল দুঃখ, বেদনা, পুরাতন, জীর্ণতার বাঁধন ভেঙ্গে কোটি বাঙালি হৃদয় নতুন উদ্যমে শুরু করে নতুন পথচলা নতুন বছরের পথে। সব শত্রুতা ভুলে গিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বৈশাখ শত শত বছর ধরে বাঙালির জীবনে বয়ে আনে নতুনের বার্তা। অনেকে হয়তো বলতে পারেন যতো সব আদিক্ষেতা, পান্তা ইলিশ খেয়ে গরীবের সাথে মশকারা, এক দিনের সখের বাঙালি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।

কিন্তু একদিনের জন্য হলেও পহেলা বৈশাখের এই দিনটির জন্যই বাঙালি তার অতীত ঐতিহ্যকে কাছ থেকে জানার ও দেখার সুযোগ পায়। তাঁতের শাড়ি, পান্তা, ইলিশ, বাহারী মেলা, নগরদোলা, সাপের খেলা, বাউল গান, রমনার বটমূল; একটি দিনের জন্য হলেও ক্ষতি কি? হোক না। যদিও আমরা এখন দিবস কেন্দ্রিক বাঙালি হয়ে গেছি। এটা শুনতে হয়তো আমাদের কারো কারো খারাপ লাগতেও পারে। কিন্তু সারা দেশের মানুষ প্রতি বছরই এ দিনে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মেতে ওঠেন পরম আনন্দে।

এইবা আর কম কি? বেশ কিছুদিন ধরে "পহেলা বৈশাখ পালন হারাম" এই বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালাতে দেখেছি জনৈক তালগাছবাদীদের। কিন্তু আমাদের মনে পরে কি, সেই ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলের কথা?? যেদিন ধর্মের দোহাই দিয়ে ব্রেনওয়াশ করানো কিছু যুবক আল্লাহর নামে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালায়। যেই হামলায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিল্পী, দর্শকসহ ১০ জন নিহত হন। কি দোষ ছিলো তাদের? পহেলা বৈশাখ হিন্দুয়ানী অনুষ্ঠান আর সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া হারাম। এটাই কি ছিলো তাদের দোষ? সেই হামলায় গ্রেফতারকৃত এক জঙ্গির জবানবন্দি ছিল এরকম - আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জঙ্গি আরিফ জানায়, মাওলানা আবু তাহের সম্পর্কে তার মামা হয়।

পয়লা বৈশাখের প্রায় এক মাস আগে থেকে পরিকল্পনা নেয়া হয় মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসায়। ঘটনার একদিন আগে মাওলানা আবু তাহের চারটি বোমা আরিফ হাসানের কাছে তুলে দেয়। হামলার আগে তার মামা মাওলানা আবু তাহের তাদের বলেছিল, "রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড। এটা যে কোন মূলে প্রতিহত করতে হবে। " এই যদি হয় তাবত ধর্মাবাল ছাগুদের মনের কথা, তাহলে সেই সব ছাগুদের জানাতে চাই, বাংলাদেশ কখনোই আফগানিস্থান ছিলো না আর তা আমরা হতেও দিতে পারি না।

তাই যারা ধর্মের প্রলেপে সুকৌশলে মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা, তারা নতুন কিছু করছে না, বরং তারা এইসব প্রচারণা দ্বারা বাংলাকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র তথা কায়েদে আজম জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব নতুনরুপে প্রমাণ করতে ব্যস্ত মাত্র। উল্লেখ্য, এই প্রচেষ্টা ছাগুদলের হৃদয় মঞ্জিলে পাকিস্তান প্রীতির একটি বহিঃপ্রকাশও বঠে। আরে এই বৈশাখ আছে বলেই তো হাজার বছর পরও আমরা গর্ব ভরে বলতে পারি – আমি বাঙালি। আমাদের জীবনে এটি এমন একটি দিন যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একই সুতোয় গেঁথে রেখেছে। বৈশাখ আছে বলেই আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি অসাম্প্রদায়িক এক শস্য-শ্যামল বাংলাদেশের।

বৈশাখ আছে বলেই তো ছোট্ট শিশুটি প্রাণ খুলে হাসতে পারে জীবনে প্রথম নাগরদোলায় চরার আনন্দে। বাঙালি কেমনে পারবে সেই প্রাণের উৎসবকে ছেড়ে থাকতে?? নতুন বাংলাবছর ১৪১৯ শুরু হোক সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী। আমাদের সবার অবস্থান থেকে আমরা সবাই ভালো থাকি, বিকাশ ঘটায় দেশীয় সংস্কৃতির এবং নতুন বাংলাবছরে সবার জীবনে শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক। এই কামনায় সবাইকে আমার পক্ষ থেকে জানাই - আর আপনাদের জন্য রয়েছে এই গানটি, সেই বৈশাখী গান - ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.