আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পহেলা বৈশাখ, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের খাসলত

আমার জীবনে দেখা অন্যতম বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর অন্যতম হচ্ছে দেশ বিভাজন রেখায় সভ্যতা ও সংস্কৃতির পার্থক্য। আমার বাড়ি সীমান্তসনলগ্ন হওয়ার কারনে বিষয়টি খুব খাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। একটি গ্রামের দুইটি পাড়া যদি দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত হয় তবে আপাত দৃষ্টিতে গ্রাম দুটির মানুষের কথাবার্তা , চাল-চলন হুবহু একই রকম হবার কথা, কিন্তু বাস্তবে তা হয় ন...া, দুই পাড়ার মানুষের মধ্যে অনেক পার্থক্য চোখে পড়ে। এমন ক্ষেত্রে যে পাড়া ইন্ডিয়ার ভেতরে পড়েছে সেখানকার মানুষ শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দূর্বল গড়নের, এরা বেশ ভীতু আর সাংঘাতিক কঞ্জুস ধরণের। দয়া-মায়া ও নিঃসার্থ পরোপকারে এদের বেশ অনাগ্রহ।

পক্ষান্তরে বাংলা সীমান্তের মানুষ শক্ত গড়নের, এরা সাহসী ও অপেক্ষাকৃত উদারচিত্তের; কোন কোন মানুষ বেশ হিংস্র প্রকৃতির হয়। তাছাড়া ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বাংলাদেশের তুলনায় ইণ্ডিয়াতে বেশি। এ গুলো হচ্ছে আমার পর্যবেক্ষণকৃত মতামত। এবার আসল কথায় আসি। মননশীলতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে আমরা ইন্ডিয়ান্ডের তুলনায় ঢের এগিয়ে।

কিন্তু একটা দিক থেকে আমরা তাদের থেকে পিছিয়ে, সেটা হল , “খাসলত”। বাঙালীদের খাসলতখুবই নিচু মানের। বিদেশীদের অন্ধ অনুকরণ না করলে আমাদের মনে সুখ আসেনা, নিজেদের ঐতিহ্য- সংস্কৃতি সস্তাদরে বিকিয়ে দিয়ে চড়া দামে ফালতু সংস্কৃতির চাদর গায়ে না ঘুরলে আমাদের ইমেজ বাড়েনা। ভারতের আবর্জনা ছাড়া আমাদের কম্পোস্ট সারও তৈরী করা চলেনা। চিংকুপিয়াহে কিংবা মুন্নী বদনাম হুঁইয়ে বাজনা ছাড়া আমাদের বিয়ে শাদী, বনভোজন কিছুই পূর্ণতা পায় না।

ঈদ-পূজা যাই হোক না কেন , কাহারুক খান স্যুট প্যান্ট না পরলে বাঙ্গাল দাদাবাবুদের ইজ্জত ঢাকেনা, ‘কারিনা কামিজ-সালোয়ার’ ছাড়া খোকার মায়ের আহ্লাদ পূরণ হয় না। আরো আছে ভয়ংকর দিক। চটি গল্প অবলম্বনে রচিত স্টারপ্লাসের বস্তাপচা পরকীয়া কাহিনি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়া দিদিমনি, ভাবী সাহেবানরা নিদ্রা যায় আর স্বপ্নে দেখেন পাশেরবাড়ির ছোকরাটা তার গা টিপে দিচ্ছে। এই হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের গন্তব্য। নিজেরা উন্নত হওয়া সত্বেও আমরা অবনত ও নোংরা ভারতীও সংস্কৃতি গিলছি।

এসবই কিন্তু খাসলত। পহেলা বৈশাখ আসছে, আসছে বাঙালী সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলবার দিন। কিন্তু পোড়া কপাল আমাদের; গরীবেরা যে পান্তা আর পোড়া মরিচ খেয়ে জীবন ধারণ করে , পহেলা বৈশাখে নির্লজ্জ ধনী বাঙ্গালরা চড়া দামে টাটকা গরম পান্তা কিনে খেয়ে সেই গরিবদের প্রচ্ছন্ন ব্যাঙ্গ ও উপহাস করে বলে, “ আমরাও বাঙ্গাল রে….হে... হে... হে, আমরাও...। কিছুক্ষণ পরপর পান্তা খাওয়ার ঢেকুর উঠবে, তাতে উগলে বের হবে আমাদের সংস্কৃতি- ঐতিহ্য, ঘটা করে টিভি চ্যানেলগুলো তা প্রচার করবে। সংস্কৃতি ইন্সটল দেবার বিষয় নয়, অভ্যাসের মাধ্যমে অর্জনের বিষয়।

বসে বসে সুখপাঠ্য অনেক কিছুই রচনা করা যায়, তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। নিজের মেরুদন্ড সোজা না করে দাঁড়ালে সীমান্তে কাঁটাতারে বেড়ায় ঝুলে থাকতে হবে , উলঙ্গ হয়ে বি.এস.এফ এর হাতেমার খেতে হবে। এজন্য দরকার ভীনদেশী সংস্কৃতি প্রতিরোধ করা, নিজেদেরকে মেলে ধরা । পহেলা বৈশাখ হোক নিজের ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবার মোক্ষম হাতিয়ের। সবাইকে বাংলা নববর্ষের অগ্রীম শুভেচ্ছা।

এফ এইচ রিগ্যান ৩০ শে চৈত্র, ১৪১৮ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।