আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পনায় মগ্ন, বাস্তবের মুখমুখি না হতে চাওয়া বন্ধুহীন মেয়েটা

I like to hear complain from my readers about my lacks.............................................আমি এক পরী যার ডানাও নেই, আকর্ষনও নেই "ওহ" আমি বললাম। "তুমি কি কাদছ?" তমা জিজ্ঞেসা করল আমাকে। ওর কথাটা একপ্রকার তাচ্ছিল্য করেই ফিরে গিয়েছিলাম আমার বেঞ্চে। আবার হয়ে উঠেছিলাম নীরব, ফিরে পেলাম নিজেকে। তখনকার দিন গুলোতে এ যেন এক নতুন রকম শুরু।

আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম। সেদিন ছিল বছরের শুরুর দিকের দিন। আমার মাঝারি সাইজের চুলে বেণী হতনা, তাই ছোট দুইদিকে দুই ঝুটি বেধে যেতাম স্কুলে, কেননা এক ঝুটির না করার নিয়ম উপেক্ষা আমি করতাম না। সেদিন অনেক দুঃখের শেষ করতে, তমার বন্ধু হতে চেয়েছিলাম। যদিও জানতামনা ওর সাথে কথা বলাই আমার কাল হয়ে দাড়াবে! যাইহোক, ও আমাকে যা বলল তা সংক্ষেপে এমন দাড়ায়, "না, আমি তোমার বন্ধু হবনা।

" ও বলল। "আচ্ছা" আমি হতবাক মুখে বললাম। "আমার কথা শুনো মন দিয়ে," তমা বলল এরপর। "বলো!" একটা শব্দ বলতে আমার কন্ঠনালী ছিড়ে যাবার উপক্রম হচ্ছিল। "ফারিয়া, তুমি অনেক ছোট।

বয়সে নয়, মনের দিক থেকে। তুমি আমার বন্ধু হলে আমার বন্ধুদের সাথে তুমি মিশবে, সেটা আমি চাইনা। আমরা অনেক কিছু নিয়ে কথা বলি, যা তুমি মানতে পারবে না, বুঝতেও পারবে না। আমরা অনেক বড় তোমার চেয়ে, ভাবনায়, চিন্তায়। আমি আমার বন্ধুরা খারাপ হলেও আমরা নিজেদের সঙ্গ ছাড়তে পারবনা, তাই তোমাকে বন্ধু বানাতে পারছি না।

তাছাড়া তুমি অসুস্থ, তোমার কোন সমস্যা হতে পারে, মানসিকভাবে, তাই আমাদের সাথে বন্ধু হতে চেয়না। " ও বলে শেষ করল, আর আমি 'এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের' করতে চাইলাম, যদিও পারিনি! তারপর ওহ বলে, চোখের পানি, জল, অশ্রু, যে যাই বলুক, গোপন কিংবা আড়াল করে ক্লাসের অন্যদিকে চলে গেলাম। আমাদের বাড়ির টুকটাক কিছু কাজ করে দেন যিনি, তার নাম কমলা বুয়া। কমলা বুয়া বলত আল্লাহ আমাকে ছেলে বানাতে গিয়ে মেয়ে বানিয়ে ফেলেছিল। সেদিন মনে হচ্ছিল বুয়ার কথা কিছুটা হলেও সত্যি! আমি হয়ত ছেলেদের মতই।

নাহলে সেদিন নিজের চোখের জল কেন লুকালাম? ক্লাসে কালে কালে কত ঘটনায় কত মেয়ে কেদেছে, কই ওরাতো চোখের জল লুকায়নি! কিন্তু আমি লুকিয়েছি, কেননা আমিতো ছেলেদের মত। মাঝে মাঝে রাগ হয়, কার উপর তা জানিনা, তবে এই ভেবে রাগ হয়, আমার স্বভাব কেন ছেলেদের মত, আর আমি কেন মেয়ে? ওরা বলে, ছেলেদের চোখ ফাকি দেয়া চলে, কিন্তু মেয়েদের? সেটা কোন দেবতাও পারেনা। আর এখানেই বিপত্তি!আমার চোখে ছোটখাট বিষয়গুলো তেমন মুল্য পায়না, ঠিক মুল্য পায়না বললে চলেনা। ছোটখাট বিষয়গুলো আমি চোখেই দেখিনা, তবে তার মানে এই নয় যে আমার চোখের অবস্থা খারাপ। আর তাই সবার ধারনা আমি নাকি ছেলেদের মত।

আমার গলার স্বর মেয়েদের মত, কিন্তু কথার ভাব নাকি ছেলেদের আদলে তৈরী! আমি যখন কোন বিষয়ে মন্তব্য করি, তাও ছেলেদের মত করে বলি!আমি কোন স্বিধান্ত নিলেও ছেলেদের মত, আমার সবকিছুই ছেলেদের মত। আমার কিন্তু ঠিক তা মনে হয়না। আমার মনে ওরা আমার সাথে ছেলেদের সাদৃশ্য একটু বেশিই দেখে। অনেকটা অতিরঞ্জিত করার মত। সব কিছুর আগে ও পরে, আমি একটা মেয়েই! সেটাকে অস্বীকার করা যাচ্ছেনা, সুতরাং এ নিয়ে আর তর্ক নয়।

তবে আমি একটা মেয়েকে আমার বন্ধু হতে বলব, এটা একটা অভাবনীয় বস্তু ছিল তখন! দীর্ঘ তিন বছর একা একা স্কুল জীবন কাটানোর পর ক্লাস ফোরে আমার সাথে কথা হয়েছিল ঝিনুকের। ঝিনুক প্রথমে আমার ঠিক বন্ধুর মত ছিলনা। কিন্তু খুব দ্রুত ও আমার বন্ধু হয়ে উঠল, যেহেতু আমার কোন বন্ধুই ছিলনা! আমি ওর সাথে সব কিছু করতাম, স্কুলে কাটানো পাঁচ ঘন্টায় যা করা যেত আরকি। দুষ্টামি আর বান্দরামীর হাতেখড়ি আমি ওর কাছেই পেয়েছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পেয়েছিলাম একজন মানুষের সঙ্গ, এবং এমন কেউ যার কাছে সব বলা যায়! পেয়েছিলাম একজন বন্ধু, যার সাথে বসে ঐ পাঁচ ঘন্টায় আমি ভুলে থাকতে পারতাম, আমি অসুস্থ।

আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ, দুর্বল। অধিক চিন্তা আমার শারীরিক অসুস্থতার কারন হতে পারে। আমি ভুলে থাকতে পেরেছিলাম, আমি ভিন্ন। আমি সবার মত ভাবতে পারিনা। আমাকে নিয়ে সবার দুশ্চিন্তা আমাকে আর অসহ্য করে তুলত না।

ও আমাকে শিখিয়েছিল, মানুষের অনেক কিছু থাকে, আবার অনেক কিছু থাকেনা। কেউ ভাবে এভাবে, কেউ ওভাবে! আর সবাই যাই ভাবুক, আমি নিজের কাছে ঠিক থাকলেই চলে। অনেকটা 'আপনি ভালো থাকলে দুনিয়া ভালো' এর মত! এরপর আমি কিছুটা অন্যরকম হয়েগিয়েছিলাম। আমি ভাবতাম আমার সামনে একটা সুন্দর পৃথিবী আছে। কিন্তু যেদিন থেকে ওকে দেখলাম না, মনে হচ্ছিল পৃথিবীটা বদলে গেছে।

কিন্তু এভাবে জীবন চলে না, আমার পাশে কেউ চাই। যাকে সব না হলেও অনেক কিছু বলা যায়। কিন্তু তা করতে গিয়েই এত কিছু হয়ে গেল! (চলবে) ভালো থাকুন! ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।