আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরনো সেই আশা

নতুন হলেও নগন্য না। আমি তখন খুব ছোট। বয়স হয়তো বা ৫-৬ বছর। আমাদের বাসায় স্যাটেলাইট চ্যানেল না থাকার কারনে পাশের এক ভাইয়াদের বাসায় খেলা দেখতে গিয়েছিলাম আব্বুর সাথে। আব্বু পাকিস্তানের একজন বড়সড় ভক্ত।

সকল বাচ্চাদের মত আমিও আব্বুকে দেখে পাকিস্তানের ভক্ত হলাম। খুব বেশি মনে নাই খেলাটা সম্পর্কে। খালি মনে আছে সাঈদ আনোয়ার ব্যাটিং করছিল। সে এক একটি বল খেলছিল আর এখানে হাত তালির বন্যা বয়ে যাচ্ছিলো। ঐ খেলাই সাঈদ আনোয়ার ১৯৪ করেছিল।

তারপর থেকে আমি পাকিস্তানের কড়া ভক্ত হয়ে গেলাম। কিন্তু ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে যখন পাকিস্তান বড় খারাপভাবে হারলো তখন থেকে আমি ভারতের ভক্ত হয়ে গেলাম। পাকিস্তানের ভক্তের পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেও আমি কখনই পাকিস্তান বিরোধী ছিলাম না। ভারত জিতলে আমার যেরকম ভালো লাগতো পাকিস্তান জিতলে ঠিক সেইরকম ভালো না লাগলেও খারাপ লাগতো না। ভারত বা পাকিস্তান প্রধান কথা না।

সব চাইতে প্রথমে আমি বাঙ্গালি। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে বাংলাদেশকে সমর্থন করা আমার ধর্ম, আমার দায়িত্ব, আমার কর্তব্য। আমি ঠিক তাই করতাম। বাংলাদেশের খেলা থাকলে পড়াশুনা বাদ রেখে আগে টিভি সেটের সামনে যেয়ে বসতাম। বাংলাদেশ দলটি পাকিস্তান-ভারতের মত অত ভালো দল ছিলোনা।

অনেক চাইতাম বাংলাদেশ ভালো করবে। আনেক আশা নিয়ে বসে থাকতাম আজ হয়ত বাংলাদেশ জিতবে। কিন্তু ১৯৯৯ সালের আই,সি,সি টুর্নামেন্টের পর থেকে বাংলাদেশের জন্য জিতটা যেন আমাবশ্যার চঁাদের ন্যায় হয়ে গেলো। কখনো উদয় হত না। ১ ম্যাচ জিততো তো ১০-২০ টি হারত।

ছোট সেই আমি কতই না দোয়া করতাম। শুধু বাংলাদেশ জিতুক অথবা ভাল খেলুক, এতটুকুই চাওয়া ছিল আমার। কিন্তু আমার চাওয়ার মূল্য তারা কখনই রাখতে পারে নাই। কখনই তারা ভালো খেলতে পারে নাই। আস্তে আস্তে আমিও আশা রাখা বাদ দিলাম।

বুঝলাম আশা না রাখলেই আর নিরাশা পেতে হবেনা। তারপর থেকে আমি (দৃশ্যত) বাংলাদেশের খেলার প্রতি আর কোনরুপ আশা রাখি না। ওরা জিতলে অনেক ভালো লাগত এবং ওরা খারাপ খেললে অনেক রাগ লাগতো। মনে মনে প্রশ্ন ছিল ওরাও অন্যান্য দলগুলোর মত সারা জীবন চর্চা করে। তবুও ওরা ভালো করে না কেন? একটু বড় যখন হলাম, যখন একটু জ্ঞান বারলো তখন বুঝতে পারলাম যে শুধু চর্চাই মূল বিষয় না।

ভালো করতে হলে আরো লাগে আত্মবিশ্বাস, ভাল নির্দেশক, উপস্থিত বুদ্ধী ইত্যাদি। আরো একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপুর্ণ, সেটা হল "দর্শক সমর্থন" ; (অনেকেই বলে তারা তো তাদের সমর্থন দেন। নিঃসন্দেহে তারা তাদের দেশকে সমর্থন করেন। কিন্তু তাহলে যখন তারা হেরে যাই তখন কেন তাদেরকে এত তিরস্কার করেন??? আপনার কি মনে হয় আপনি তাদের চাইতে ভাল খেলতে পারেন??? তারা যদি এত চর্চার পরও এত খারাপ খেলে, তাহলে ভাবুন তো আপনি কতটা খারাপ খেলবেন!!! আপনারা আরো বলেন যে ওদেরকে তো টাকা দাওয়া হয় এই কাজের জন্য, তাহলে ঠিকমত খেলটে কেন পারে না??? মানছি আপনার প্রশ্ন যুক্তিযুক্ত, কিন্তু একবারো কি চিনতা করে দেখেছেন ওদেরকে কত টাকা দাওয়া হয়? আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের তুলনাই প্রাই অর্ধেক। আর যাদেরকে আপনারা বলেন খেলতে পারে না, তারা কিন্তু দেশের মধ্যে থেকে বাছাই করা সেরা খেলোয়ার।

দর্শকদের কাছে আমার এটুকুই আবেদন থাকবে যে, যাদেরকে দেশের সেরা খালোয়ার ধরা হচ্ছে তাদেরকে তাদের খারাপ প্রদর্শনীর সময়ও তিরস্কার করেন না। তারাও দেশের হয়ে খেলছে। তাদেরও দেশের জন্য জিততে ভালো লাগে আর হারতে খারাপ। আমরা যদি তাদের উপর ভরসা রাখি তাহলে তারা আমাদেরকে আরো ভাল খেলা উপহার দিবে। ) আর তারই প্রতিফলন আমারা এবার দেখতে পেলাম "এশিয়া কাপ" এ।

এই বিষয়গুলো এবার বাংলাদেশ দলের মধ্যে ছিলো। যার ফলে আমরা এত ভাল একটি টুর্নামেন্ট উপভোগ করতে পারলাম এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এবারের পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আমাদের সবার মুখে শুধুই বাংলাদেশই ছিল না পাকিস্তান, না ভারত আর না ই শ্রীলঙ্কা। খুব আশা ছিল এবারের এশিয়া কাপ বাংলাদেশ নিবে। সব সে দিকেই যাচ্ছিলো। কিন্তু পাকিস্তানের ভাল বোলিং এর সামনে বাংলাদেশ মাত্র ২ রান এ হেরে গেলো।

আজ খেলার সময় আবার সেই ছোটবেলার মত দোয়া করতেছিলাম বাংলাদেশের জন্য। আজও পুরোনো দিনের মত বাংলাদেশ হেরে গেলো কিন্তু ফিরিয়ে দিয়ে গেলো পুরোনো সেই আশা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।