আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্যোগ প্রতিরোধে জাতিসংঘ: বান কি মুন

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের জন্ম ১৩ জুন ১৯৪৪। পড়াশোনা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০০৭ সাল থেকে বান কি মুন জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশ্বজুড়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্রমেই একটি জটিলতর বিষয় হয়ে উঠছে। ২০১১ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে ৫ কোটি ৬০ লাখ দুর্গত মানুষকে মানবিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে।

তিন বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল এখনকার অর্ধেক। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজন হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। একটি বিপর্যয়ের পর বিলিয়ন ডলার সাহায্যের আবেদন পাওয়া এখন আর নতুন কিছু নয়।
এই বাস্তবতায় জাতিসংঘ এখন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রমগুলোর পরিধি আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আর্তমানবতার ডাকে সাড়া দিতে যেন দেরি না হয়, সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত প্রকল্পগুলো যাতে আরও কার্যকর হয়ে ওঠে, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থাকে এ ধরনের কাজে সক্রিয় হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করছে। জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় নতুন অংশীদারি সৃষ্টি করা এবং জনহিতকর নীতিনির্ধারণী আলোচনা শুরু করার মাধ্যমে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। যেমন সুইডেন ও ব্রাজিলের উদ্যোগে মানবতা-সম্পর্কিত আলোচনা একটি সম্ভাবনাময় নতুন উদ্যোগ। এ ছাড়া কাতার, তুরস্ক ও ডমিনিকান রিপাবলিকের ‘হোপ ফর’ কার্যক্রম সামরিক বাহিনী ও জনসেবামূলক সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় করার একটি দারুণ প্রচেষ্টা।


বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদার করার উদ্যোগগুলো যথেষ্ট সাফল্য বয়ে এনেছে। ওআইসি, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের যৌথ কার্যক্রম এভাবেই সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। পশ্চিমা দাতা সংস্থা ও ইসলামিক সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এই যৌথ উদ্যোগগুলোর যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। তাই সোমালিয়ার সংকটের ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় পশ্চিমা সাহায্য পৌঁছাতে পারেনি, সেখানেও মানুষ সাহায্য উপকরণ থেকে বঞ্চিত হয়নি। শুধু সাময়িক সংকট উত্তরণের জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক উন্নয়ন এবং একটি সমন্বিত সেবামূলক অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্যও এ ধরনের প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ।


জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের সহায়তায় ‘ইন্টার এজেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটি ট্রান্সফর্মেটিভ এজেন্ডা’-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। হাইতি আর পাকিস্তানে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই এজেন্ডা বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে চাইছে। এতে করে দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুততর ও অধিক কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১১ সালে আফ্রিকার সাহেলে যখন খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দেয়, তখন তাৎক্ষণিকভাবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। সেই ঘটনা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।

অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ফলেই জাতিসংঘ দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের জন্য উচ্চপর্যায়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা সরবরাহ করতে পেরেছিল। জাতীয় ও আঞ্চলিক নেতৃত্বের জন্য উদ্যোগটি অত্যন্ত সহায়ক হয়েছিল।
সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে মানবাধিকারের মতো বিষয়কে অবহেলা করে অর্থনৈতিক বা সামাজিক উন্নয়নের চিন্তা করা অর্থহীন। রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মুখে উন্নয়ন কার্যক্রম চলতে পারে না। সন্ত্রাস ও নাশকতা যখন শান্তি বিঘ্নিত করে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে, তখন সে অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হলে অবশ্যই মানবাধিকার রক্ষার উদ্যোগকে সর্বাগ্রে রাখতে হবে।


গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত উদাহরণ। জাতিসংঘ এসবের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। আমি ২০১২ সালকে ‘প্রতিরোধ বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করছি। মানবতাকে ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া এসব অপরাধ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সকলের সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে।
কয়েক বছর ধরে সদস্য রাষ্ট্র, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংস্থাগুলো জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এসব সংস্থার বিভিন্ন কূটনৈতিক ও মানবাধিকার রক্ষামূলক তৎপরতা ২০১১ সালে সাধারণ মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ অনেক ঘটনাকে যথাসময়ে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
এসব লক্ষ্য পূরণে আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োজিত করতে হবে এবং বিদ্যমান সমস্যাগুলোর যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে হবে। আমরা সবাই মিলে আমাদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারব, এটিই আমার প্রত্যাশা।

সূত্র: ওয়েবসাইট। ২০১২ সালে সাধারণ পরিষদে দুর্যোগ মোকাবিলা ও মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের উদ্যোগ সম্পর্কিত বান কি মুনের দেওয়া বক্তব্য থেকে নির্বাচিত অংশের অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.