আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাশেদ কি আবার দেখিয়া দেখিয়াই জল ফেলিবে??

সাহেব-বিবি-গোলাম.....সাবধান.. কনকনে শীত। রাশেদ একখানা চাদর জড়িয়ে রাস্তায় বের হতে হতে হোচট খেল। কিন্তু সে তার কোন পরোয়া করল না। হন-হন করে ছুটে চলেছে। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল রুবেল তাড়াতাড়ি দুটো সিগারেট দে।

রুবেল রাশেদকে দেখে বলে উঠল রাশেদ ভাই আগের টাকা কিন্তু এখনো দেন নাই। রাশেদ ধমকের সুরে বলে উঠল তোর তো কোন কাম কাজ নাই দোকানে আইলে খালি টাকা চাস। টাকা না দিয়া কি পালায় যামু। এই বলে সিগারেট দুটো হাতে নিয়ে একটা পকেটে ঢুকাল আর একটা টানতে টানতে রওয়ানা হল সামনের দিকে। রাশেদ বন্ধুদের সাথে এক ফ্লাটে থাকে।

এর মাঝে শাকিল এর মাঝে রয়েছে কলি কালের রোমিওদের যাবতীয় গুনাগুন। এবং সে তা অক্ষুন্নভাবে বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিয়া থাকে। মানে মোবাইলে অদেখা ভুবনের মেয়েদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপচারিতা। এর পরে দেখা করিয়া তারপর ঘুরিতে যাওয়া আর তারপর আলীবাবা চল্লিশ চোরের মত চিচিংfuck। সে যাই হোক রাশেদ, বাইরে থেকে দেখে যতই সাহসী মনে হোক না কেন মেয়েদের বিষয়ে তার বড়ই দুর্বলতা ইতিপূর্বে দেখা গিয়াছে।

এই যুগে যেখানে বন্ধুরা হালি খানেক মেয়েকে ম্যানেজ করে চলতেছে আর সবচেয়ে বড় বিষয় তার ঘনিষ্ঠবন্ধু সেখানে এই বিষয়ে অনেকের চেয়ে অগ্রগামী সেখানে রাশেদ একদম একেলা এটা সে আর সহ্য করতে পারিতেছে না। রাস্তায় বের হলে তরূনীদের হাস্যজ্জল চেহারা আর অপরূপ চঙ্গভঙ্গী দেখিয়া মনে মনে বলে উঠে আর পারিনা গুরু। কিন্তু কি করিবে বেচারার দেখিয়া দেখিয়াই জল ফেলিতে হয়। এভাবেই কাটছিল আমার বন্ধু রাশেদের সময়। একবিকালে শাকিল কে অনেক পীড়াপীড়ি করিয়া হোটেলে চা খাইতে নিয়ে গেল।

পীড়াপীড়ি এই কারণে যে এ যাবৎকাল সকল চা পুরির বিল শাকিল কেই বহন করিতে হইয়াছে কিন্তু আজ সময় যেন থমকে দাড়াল। রাশেদ উৎফুল্ল চিত্তে চায়ের বিল দিয়ে দিল। আর শাকিল এতে এতই ঘাবড়াইয়া গেল যে সে বুঝতেই পারছিল না কি হইয়া গেল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ যেন রাশেদের প্রতি ভালবাসা অনেক বাড়িয়া গেল। এরপর দুজনেই হাটছিল আর তাদের মাঝে কথা চলছিল।

রাশেদ বলিয়া উঠিল দোস্ত আমার একটা ব্যবস্থা করিয়া দে। এতদিনের ঢাকার জীবনে একটাও প্রেম করিতে পারিলাম না। আর তো সইতে পারি না। শাকিলকে এর সাথে সাথে এই ওয়াদাও করিয়ে নিল যে সে এই কথা আর কাউকেই বলিতে পারিবেনা। শাকিল বন্ধুর এই দুরবস্থা দেখে সে তার প্রেমের জন্য যা যা করা লাগে তা করবে বলে কথা দিল।

এর ঠিক দুদিন পর শাকিল বলে উঠল দোস্ত পাইছি তোমার রাজকন্যার খোজ। এই বলে একটি গ্রামীন নাম্বার ধরাইয়া দিল। বলিল এখন দায়িত্ব তোর কিভাবে কি করবি কিন্তু ঘুনাক্ষরেও আমার নাম বলা যাইবে না। যাই হোক রাশেদ মনে মনে খুশি আবার ভীত। নতুন অভিজ্ঞতা।

কি হয় আর না হয়। এই ভেবে সারাদিন কাটিয়া গেল। রাতের বেলা মোক্ষম সময় দেখিয়া কল দিল। কল দেবার সাথে সাথেই কল রিসিভ হইয়া গেল। সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসল হ্যালো কে বলছেন? রাশেদ কি বলবে আর কি বলবেনা ভাবিয়া পাইতেছিলনা।

কিচ্ছুক্ষণ বিরতির পর কথা শুরু করিল। আর মেয়েটি যেন এভাবে কথা বলছিল সে যেন তার যুগ যুগের সাথী। রাতে কথা বলতে বলতে যে কখন ফজরের আযান দিয়ে দেয় তার কোন ঠিক থাকে না। এবার লাইলীর পক্ষ থেকে মজনূকে আহ্বান জানানো হল। এস আমরা কোথাও দেখা করি।

রাশেদ প্রস্তাবে প্রথমেই রাজী হইয়া গেল। কবে, কখন, কোথায়, কিভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। রাশেদ দুপুর থেকে রেডি হচ্ছে। দুই বন্ধুকে সাথে করে নিয়ে রওয়ানা দিল। শাকিল গেল না।

যাবার সময় ৫০০ টাকার নোট পকেটে গুজে রওয়ানা হল রাশেদ। শাকিল ৫০০ টাকা নেওয়া দেখে বলল আর কিছু টাকা নিয়ে যা। কিন্তু রাশেদ উল্ট বলিয়া উঠিল আমার কাছে থেকে কেউ কি টাকা খসাতে পারে!! আর সাচ্চা প্রেম কখনও টাকা দিযয়া হয় না। এই বলে সে তিন জনকে নিয়ে বাহির হয়ে গেল। বেইলি রোডে এসে কিছুক্ষন অপেক্ষার পরই দেখা হইল সেই মোবাইল কন্যার।

এওটার সাথে আরও এওটা ফ্রি এর মত এখানে দুটফ্রি পাওয়া গেল। খাপে খাপ। তিনে তিনে ছয়। রাশেদ পরিচয় হইতে হইতেই বলিল খাইতে খাইতে কথা বলিলে কেমন হয়। পাশ থেকে একবন্ধু কানেকানে বলিল রাস্তার পাশে চটপটি খাইতে খাইতে কথা বলিলেই ভাল হইবে।

এতে রাশেদের আত্মসম্মানে বড়ই আঘাত লাগিল। সে একটি ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকিলে পিছনে পিছনে বালক বালিকা সকলেই প্রবেশ করিল। মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের খাবার তালিকা প্রস্তুত করিতেছিল। আর রাশেদ তাদের দেখিয়া দেখিয়া বড়ই মুগ্ধ হইতেছিল। কিন্তু খাবার মুল্য ৮০০ ছাড়িয়া ৯০০০ ছুই ছুই করিতেছে।

যেহেতু খাবার আগেই মুল্য পরিষোধ করিতে হইবে তাই বাধ্য হইয়া রাশেদকে বন্ধুদের দারস্থ হইতে হইল। রাশেদ খাবার চাইতে কথাই বেশি বলিতেছিল। আর বালিকাত্রয় কথাশোনার চাইতে খাইতেই বেশি ব্যাস্ত ছিল। আর বন্ধুরা খাইতে এবং দেখতে দুই কাজেই ব্যাস্ত ছিল। তারা কি দেখছিল তা না বললেও আপনার নিশ্চয় বুঝে গেছেন।

তাই না। সেই সাথে রাশেদ কিপ্টার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করা ছিল কষ্টসাধ্য বিষয়। খাওয়া দাওয়া শুরু হতে হতেই রাশেদ গত দিনের বন্ধু দুজন প্রবেশ করল। তারা দুজনে অন্য টেবিলে গেল। মোবাইল কন্যা উৎকন্ঠিত কন্ঠে বলিয়া উঠিল অই বালক দ্বয়কে কি তুমি চেন।

শাকিল জোরে জোরে মাথা নাড়াইতে নাড়াইতে বলিল কস্মিনকালেও না। কে ওই দুই হতচ্ছাড়া। বালিকা বলিল এমনি বলিলাম হয়তবা চিনিতে পার। শাকিল এই বিষয় নিয়া আর বেশি নাড়াঘাটা করিল না। তারা দুজন বসিয়াবসিয়া কফি গলধঃকরণ করিতেছিল।

শাকিলের সাথে বন্ধু হঠাৎ উঠিয়া গেল। বলিল আসিতেছি। শাকিল দেখিতেছিল তারা খাইতেছিল যেন বহু দিন ধরে না খাইয়া আছে। এরই মাঝে শাকিলের একটি কল আসিল। শাকিল কল পাইয়া খুব খুশি।

শাকিলের বন্ধু অনেক দিন পর ঢাকা আসিয়াছে। তাও আবার বেইলী রোডে। শাকিল বালিকাদের কাছে অনুমতি লইয়া গেল যে তার বন্ধুকে সে নিয়া আসিতেছে। বালিকারা খাইতে খাইতে সব কিছু ভুলিয়া বসিয়াছে। তাই তারা বলিল কই বাত নেহি।

শাকিল বন্ধুর মুখদর্শনের উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করিয়া বাহির হইয়া গেল। বালিকাগন খাইয়া-দাইয়া খুশ গল্প করিতেছে। এরই মাঝে অনেক সময় পার হইয়া গিয়াছে। হঠাৎ তারা বলিল এখনও আসিতেছেনা কেন বাছাধন। বিল তো ১৫০০ ছাড়িয়া গিয়াছে।

শাকিল বাবা আসিলেই তো খুল্লু খালাস। এরই মাঝে তারা উদ্ধার করিল শাকিলের মোবাইল বন্ধ হইয়া গিয়াছে। সকল বালিকার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটিয়া উঠিয়াছে। বারবার কল দিতেছে কিন্তু কল ঢুকিতেছে না। কি করিয়া ঢুকিবে বাবা ঢো কার পথ যেব ন্ধ করিয়া দিয়াছে।

এরই মাঝে রাশেদের আগমন। মোবাইল কন্যা জানে পানি ফিরিয়া পাইল। এই রাশেদ রাশেদ। রাশেদ দুনিয়ার সমস্ত বিষ্ময় নিয়ে তাকাল। কি হয়েছে জানতে চাইলে মোবাইল কন্যা নির্লজ্জের মত সব ঘটনা খুলে বলল।

আর রাশেদ বেচার সেইদিনকার ঘটনা। । আহা। রাশেদ তাদেরকে ইচ্ছামত গালিধোলাই করিল। তারা এওত গালি মনে হয় কোনদিন ষনে নাই।

গালি দিতে দিতে রাশেদ বাহর হয়া গেল। আর নিরুপায় বালিকাগন কি করিবে ভাবিতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত তাদের প্রিয় মোবাইল খানা জমা দিয়া বাহির হইয়া আসিল। তাদের কাছে টাকাও ছিল না। আর সেই বন্ধুদ্বয় ভিতরে বসিয়া এই ক্রীড়া কৌতুক উপভোগ করিতেছিল।

আমরা সবাই মিলিয়া মজা করিতে করিতে বাসায় ফিরিয়া আসিলাম। রাতে সেই মোবাইল কন্যাকে কল দিবার পর সে তার মনের সকল ক্ষোভ প্রকাশ করিল। আর শেষ মুহুর্তে গালি দিতেও ভুলিল না। বড়ই আজিব মেয়ে জাতি। ।

।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।