আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উজ্জ্বল সবুজ ঘাস এবং রাশেদ

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

টানা ৩ দিন পর দুপুরের দিকে প্রকৃতির মেজাজ শান্ত হলে শহর জুড়ে দুপুরে মৃদু , স্নিগ্ধ বাতাস বইতে শুরু করে । প্রাইভেট কারের অসহ্য ট্রাফিক , বাতাসের অসহনীয় উত্তপ্ত ভাপের শিকলে হাঁসফাস খেতে থাকা পাবলিক নিস্তার পায় । রাস্তাজুড়ে যেন পরিস্থিতি পূর্বের চেনা পরিচিত ঢাকার মত হয় । রিকশাওয়ালা প্রবল বেগে মানুষজন নিয়ে রাস্তায় চলে ।

এক ট্রিপ দেবার পর ভাড়া গুনতে গুনতে কপাল থেকে টপটপ করে ঘামের বন্যা বইতে থাকে । মতলববাজ পাবলিক অফিসের বোকাচোদা বসের পা চেটে চেটে প্রমোশন বাগিয়ে ছুটির পর গলার টাই খুলে দলবেঁধে বসে যায় কোন ফাস্ট ফুডের দোকানে । গলাটা সফট ড্রিংক্সে না ভেজালেই চলছেনা । খোঁচা খোঁচা দাড়ি , মাথায় গোলটুপি , হাতে মাইক নিয়ে ছদরুদ্দীনের স্পেশাল বড়ির গুণগান গাওয়া হয় । তারস্বরে সেই বড়ি সেবন করলে কিভাবে লিঙ্গ শক্ত , মোটা হবে , এর ফলে সহবাসের স্থায়িত্ব অনেকগুণ বাড়বে , ঘন ধাতুর নির্গমণ ঘটবে এসবের বর্ণনা চলতে থাকে নিরন্তর ।

নগরে ফ্রি এম্যুজমেন্টের খোঁজ পেয়ে যাওয়া আরবান জনগণ মজা পায় । উৎসাহ পেয়ে কাকসম কর্কশ কন্ঠে সেই বড়ির গুণকীর্তন চলতেই থাকে । কিন্তু কেউ সামনে এগিয়ে কিনতে যায়না । ক্রমাগত চেঁচিয়ে যাওয়া বেয়াক্কেল বোঝেনা খোলা রাস্তায় কেউ এসব কিনতে গিয়ে পাবলিকলী প্রেস্টিজ খোয়াতে চায়না । যার যাওয়ার সে গোপনে ঠিকানাতেই চলে যাবে ।

কিছুক্ষণ পর এম্যুজমেন্টের নামে আরেক যন্ত্রণার সূচনা হয় । ওমুক মসজিদে কোন দানবীর কত হাজার টাকা চাঁদা দান করেছে তার ফিরিস্তি শুরু হয় এক রিকশায় মাইকের মাধ্যমে । শ্রবণের সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যাওয়া ডেসিবেলে কানে তালা লেগে যায় । মাশাল্লাহ , জিন্দাবাদে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে । এর চেয়েও কম সাধনায় ঈশ্বর থাকলে নিশ্চয়ই তার ধরা দেওয়ার কথা ।

কিন্তু কোথাও কোন প্রতিক্রিয়া হয়না । সার্কাসের মত এক দেওয়ালের পোস্টার দেখা যায় । পোস্টারে লেখা ' ধীরে কথা বলিবেন । নম্রসুরে কথা বলা ঈমানদার ভদ্রলোকের লক্ষণ । ' একচোট হেসে নিয়ে কলেজফেরত ছেলেপেলে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে উঠে নতুন কোন টপিক নিয়ে ।

এসবের কিছুই রেখাপাত করেনা মাঠে । মানুষজন হাঁটছে , বসে আছে , শীর্ষস্থানীয় এক ফুটবল দলের অনুশীলন দেখছে । বিচিত্র সব ক্যারিকেচার । লং রেঞ্জের শট প্র্যাকটিস করতে গিয়ে আফ্রিকান একজনের বাম পায়ের জোরালো শট গোলপোস্ট না চিনলেও বাদাম খেতে খেতে হাঁটতে থাকা এক গোবেচারা লোকের পাছা চিনে যায় । অতশত লক্ষ্য না করা ভদ্রলোক আশেপাশের মানুষদের হাসি , টিকা - টিপ্পনী ইত্যাদি পেরিয়ে পুনরায় হাঁটতে থাকলেন ।

দূরের স্ট্যান্ডের কাছে স্থানীয় কয়েকজন তাস পিটায় । সকাল , বিকাল , দুপুর খাওয়ার সময় বাদ দিয়ে তাস পিটিয়েই যায় তারা । কিছু টোকাই পুরনো , নোংরা কাগজ , চিপসের প্যাকেট কুড়াতে এসে গাল শোনে " চুতমারানীর পোলারা পরে কুড়াইতে আয় , এহন ডিস্টার্ব দিসনা । " বিকাল হয়ে আসলে মাঠে একজন ধীর পায়ে প্রবেশ করে । সব দেখে নিয়ে সুবিধামত এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে ।

দূর থেকে দেখতে থাকে কয়েকজন ড্রিল মেশিন হাতে উজ্জ্বল সবুজ ঘাস রোল করে শুইয়ে দেওয়া হচ্ছে । কাজটা করতে করতে তারা একে অপরের সাথে কথা বলে । ড্রিল মেশিন চলতে থাকে । সবুজ ঘাস রোল করে শুইয়ে দেওয়া হয় ক্রমাগত । বোঝা যাচ্ছে যে সামনে বড় কোন ম্যাচ আছে ।

চমৎকার সবুজ ঘাসগুলো নিমেষের মধ্যে চুপসে যায় । শেষ বিকালে ধীর পায়ে মাঠে প্রবেশ করা রাশেদের মন সেই দৃশ্য দেখে গভীর বেদনায় পূর্ণ হয়ে উঠে । তার মনে হয় ঘাসগুলোর রোল হয়ে যাওয়া তার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার প্রতীকি এক চিত্র বিশেষ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।