আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আয়না

সত্য সব সময় জনপ্রিয় হয় না , জনপ্রিয়ও সবসময় সত্য নয় । (১) আমার সামনে এখন যে ছেলেটি বসে আছে তার নাম শুভ্র। শুভ্র চৌধুরী। দেখতে শুভ্র না হলেও ছেলেটির চেহারায় কেমন যেন শুভ্র ভাব রয়েছে। শুভ্রর বাবা-মা দুজনেই বেশ ফর্সা।

কিন্তু শুভ্র হয়েছে কুচকুচে কালো। এ নিয়ে শুভ্রর খালাদের চিন্তার শেষ নেই। শুভ্রর অবশ্য এ ব্যাপারে কোন আফসুস নেই। ছেলেদের গায়ের রঙ কোন ফ্যাক্টর না। মেয়ে হলে অবশ্য চিন্তার শেষ থাকতো না।

কালো মেয়েদের কেউ ভালোবাসতে চায় না। আর বিয়ের বাজারেও তাদের দাম খুব কম। তাই এ সমাজে কালো মেয়েদের একটা চাপা কষ্ট নিয়ে চলতে হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই ফর্সা হওয়ার অফুরন্ত চেষ্টায় নিমগ্ন থাকে। আজকাল বাজারে নানা ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়।

শুভ্রর এক বোন আছে। দেখলে মনে হয় আফ্রিকা থেকে এসেছে। কিন্তু কিছুদিন আগে মৌ নাইট ক্রিম ব্যবহার করে এখন সে বিদেশিদের মতো ফর্সা। তাকে দেখলে শুভ্রর ধবল রোগীদের মতো লাগে। এখন নাকি তার পিছনে ছেলেদের বিশাল লাইন পড়ে যায়।

সবমিলিয়ে এখন অনেক সুখেই আছে শুভ্রর বোন। মৌ নাইট ক্রিমের নির্মাতা নির্ঘাত জান্নাতে চলে যাবে শুভ্রর বোনের মতো এমন হাজারো মেয়ের দোয়ায়। অনেক্ষন ধরে শুভ্রর মাথায় গানের দুটা লাইন ঘুরছে। অনেকবার গিটার নিয়ে গাইতেও চেষ্টা করেছে। শুভ্রর খুব গান গাইবার শখ।

কিন্তু সে গাইতে পারে না। লো স্কেলের গান কোনরকম গিটারের সাথে মিলিয়ে গাইতে পারে। কিন্তু হাই স্কেলের গান বিন্দুমাত্র গাইতে পারে না। আবার গিটার ধরে শুভ্র। গেয়ে ওঠে দু লাইন।

“কালো কালো করিস নারে ও গোয়ালের ঝি আমার বিধাতা করেছে কালো আমি করবো কি?” নিজের গান শুনের নিজেই বিরক্ত হয় শুভ্র। কিছুদিন আগে বন্ধুদের সাথে ছবির হাটে গিয়েছিল সে। বন্ধুদের চক্করে পড়ে প্রথমবারের মতো গাঁজা টেনেছিল। তখন তার একবন্ধু গিটার বাজিয়ে এ গানটিই গাইছিল। শুভ্র কেবল বুদ হয়ে শুনছিল।

তখন মনে হচ্ছিল, “এই তো জীবন। আহা!! কি সুখ। লাইফ ইজ প্রিটি মাচ বিউটিফুল। ফিলিং লাইক হেভেন। ” কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই শুভ্র বুঝতে পারলো সে আসলে স্বর্গরূপী নরকে আছে।

আশপাশের কোন মুভমেন্ট বা কোন সাউন্ড সে ক্যাচ করতে পারছে না। দৃষ্টি স্থির হয়ে আসছে। মাথা ঘুরছে। ভীষন চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পরে শুভ্র। কারন সে দিন ছিল ছুটির দিন।

তার বাবা বাসায়। বাবাকে বড্ড ভয় পায় শুভ্র। শুভ্রর বাবার সাথে শুভ্রর সম্পর্কটা কেমন তা সে নিজেই বুঝতে পারে না। শুধু এটুকু বুঝতে পারে যে তার কিছু একটা করতে হবে। তার বাবার থেকে অনেক অনেক বড় হয়ে হবে।

তার বাবা তার সাথে যেসব অন্যায় করেছে ঠিক তার বিপরীত কাজগুলো করে তাকে উচিৎ জবাব দিতে হবে। সে যাত্রায় বাবার হাতে ধরা খাওয়া থেকে বেচেঁ যায় শুভ্র। কিন্তু ছবিরহাটের মুহূর্তগুলো তার ব্রেনে একটি শক্ত অবস্থান করে নেয়। শুভ্র প্রতিজ্ঞা করে সে আর জীবনেও এসব ছাইপাশঁ ছুয়েঁও দেখবে না। অনেক্ষন ধরে শুভ্র মোবাইলে একজনকে ফোন করার চেষ্টা করছে।

কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে বার বার বিরক্ত হয়ে উঠছে শুভ্র। শুভ্রর চেহারা রক্তিম হয়ে ওঠে। তার সামনে ফিজিক্স বই খোলা পড়ে আছে। ফিজিক্স শুভ্রর প্রিয় সাবজেক্ট। বইয়ের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না সে।

হয়তো যাকে সে কল করার চেষ্টা করছে সে আরো অনেক বেশি প্রিয়। প্রচন্ড আক্রশে মোবাইলটি বিছানায় ছুড়ে মারে শুভ্র। ইচ্ছে করছিল মেঝেতে ছুড়ে মারতে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা ইচ্ছা করলেই সবকিছু করতে পারে না। এদের মনে সবসময় অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার একটা ভয় কাজ করে।

(২) এই মুহূর্তে আমার সামনে বসে আছে শুভ্র। শুভ্র চৌধুরী। আসলে ঠিক আমার সামনে বসে নেই। আমার সামনে রাখা আয়নাটিতে তার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। মুখ হা করে গাল চুল্কাচ্ছে শুভ্র।

চোখ-মুখে গভীর চিন্তার ভাব। হঠাৎ বিছানায় পড়ে থাকা মোবাইল বেজে উঠলো। রিংটোনা হিসেবে বাজছে শুভ্র সবথেকে প্রিয়গানটি। “ভালোবাসি, ভালোবাসি সেই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়... বাজায় বাশিঁ, ভালোবাসি ভালোবাসি। ” কিছুক্ষন আগের রক্তিম মুখে এবার হাসি ফুটে ওঠে।

শুভ্রর বুঝতে বাকি রইলো না যে সেই প্রত্যাশিত কালো মেয়েটি ফোন করেছে। চাপা কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই কালো মেয়েটি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।