আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আয়না !

পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি

প্রিয় বান্ধবীর শিশুটিকে বুকে করে বসে আছি । সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে , বেশ আগলে ধরে , বুকের ওমের ভিতরে চেপে বসে আছি । একদিন মাত্র বয়স। ওর গরম লাগছে না ঠান্ডা , বুঝতে পারি না । আমার কোন বাচচা নেই ।

বান্ধবীর আছে । স্বামীও আছে। আমি যে ঘরের বারান্দায় বসে আছি , সেই ঘরের ভিতরেই আছে । আমি তাকাতে পারছি না। পর পুরুষের প্রায় অসহায় রূপ দেখা , ইসলামে নিষেধ ।

আমি তাই বারান্দায়। অনেক্ষন হয়ে গেলো বান্ধবী শিশুটিকে বুকে নেয়নি । ওর সেইদিকে খেয়ালও নেই। সে উথাল পাথাল করে ভাঙছে ঘরের জিনিস পত্র । বোন চায়নার সেট ।

আফ্রিকা , ইউক্রেইন , ইউরোপ চষে আনা অসাধারন শিল্পকর্ম। একে একে চুর চুর হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে তার প্রিয় ফুল গাছ । ফুলের গাছ গুলোকে ও সন্তানের মতই যত্ন করতো! টবের ভাঙা টুকরো গুলো ছিটকে আসতে পারে । আমি আরেকটু ঘুরে বসি । জোছনার আলো এসে পড়ে ছোট্ট মুখটায় ।

কি নিষ্পাপ , সুন্দর! টুকটুকে গোলাপি মুখের কুটকুটে চোখ দুটোকে বুঝে কি নিশ্চিন্তে আছে আমার বুকে ! আমার বুড়ো আঙ্গুলে মাথার সমান এক জোড়া ঠোঁট। হঠাৎ পিপড়ের কামড়ে ফুলে ওঠা ফুস্কুঁড়ির মত একটা নাক ! রোয়া রোয়া চুল ! মা গো , আমার নিয়ে নিতে ইচ্ছে করে এই দেবশিশুকে । বান্ধবী দেবে? ভেতর থেকে বর্নার গালির শব্দ ভেসে আসে । অকথ্য , অশ্রাব্য ভাষায় ও গালি দিয়ে চলেছে । মেডিকেলে পড়তে পড়তে আমি আর বর্না একবার " বাংলা ভাষায় গালি ও তার নৃতাত্ত্বিক গুরুত্ব " নামে একটা গবেষনা করেছিলাম।

তখন একেবারেই অনভ্যস্ত আমার গালির প্রথম এবং পুংখানুপুংখ পাঠ হয়েছে । আমি লক্ষ্য করি , সে বাংলার ব্রাত্যজনের গালির সাথে , প্রভুর ভাষা ইংরেজি আর বনেদী কলোনিয়াল ভাষা ফ্রেনচে গালি দিয়ে চলেছে । রেগে গেলে বর্না আর আমি দুজনেই ইংরেজি , হিন্দী , উর্দু , আরবী , আরও কি কি সব ভাষা মিশিয়ে গালাই । বাংলা আমাদের কাছে মায়ের মত পবিত্র । এই ভাষায় গালি দিতে , কেন যেন, অস্বস্তি হয় ।

বর্না মনে হয় একটু বেশিই রেগেছে । ব , ঠ আর চ বর্গীয় কোন গালিই বাদ পড়ছে না আজ! আমার খারাপ লাগে । ধুর ! তার চেয়ে বাচচার দিকে মন দেই , ভারি সুন্দর ! ভিতর থেকে অপু ভাইয়ের ডাকে আমার সম্বিত ফিরে ! উঠে যাই ভিতরে। অপু ভাইয়ের শার্ট ছেড়া । হাত , বুক, পিঠ , গলা ক্ষত বিক্ষত বর্নার নখের আঁচড়ে ।

বর্না এক কোনায় বসে সাপের মত ফুসছে । ভঙ্গীটা তীব্র আক্রমনাত্মক । আমাকে দেখার সাথে সাথে গালির তুবড়ি ছুটে । আমার কানে কিছু ঢোকে না। আমি বুকের শিশুর কান দুটোকে চেপে ধরে আরেকটু ভিতরে নেই ।

বাচচা মানুষ! এই সব শুনতে নেই । অপু ভাই আমাকে গাড়িতে একাই চলে যেতে বলেন । আর কেউ বর্নাকে সামলাতে পারবে না। আমি জানি সেটা । বুঝিও ।

কাল সাপিনী সামলানো সম্ভব , বর্নাকে নয়! আমি না হলে অপু । কাউকে থাকতে হবে । আমি গাড়িতে উঠি । আর কে কে , কি কি যেন বলে , করে । আমার কানে কিছুই ঢোকে না ।

আমি আমার বুকের হিমটুকু নিয়েই ব্যস্ত । অপলক তাকিয়ে থাকি ছোট্ট মুখটায় । হওয়ার আগেই লন্ডনে , বামরুনগ্রাদে কত ছবি তোলা হলো ! কে বলবে , এই স্বর্গীয় মুখটার পিছনে কোন অসুখ লুকিয়ে আছে ! এত সুন্দর, এত শান্ত , এত নিখুঁত ! কে বলবে , এই ছোট্ট নাকটা মাত্র ঘন্টা খানেক আগে নিঃশ্বাস ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে , আমাদের পৃথিবী জোড়া বাতাস ও নেয়নি ওর নিষ্কলুষ ফুসফুসে। ধানমন্ডি থেকে বনানী কবরস্থান । পথের আলো আঁধারিতে আমার হঠাৎই মনে হয় , আমার সামনে একটা আয়না ।

আমার সমস্ত বুক জুড়ে আয়না। আমার কোল জুড়ে আয়না। বিম্বিত ছায়াটুকু বড্ড ধুসর!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।