আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বানরের হাতে খন্তা...

"বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। "শিহরণে সত্তায় তুমি, হে আমার জন্মভূমি" দেখতে দেখতে কেমন করে যেন পিসি, ট্যাবলেট, আইপড-প্যাড, মোবাইল একেবারে জীবন যাপনের আবশ্যক উপকরণে পরিণত হয়েছে। প্রথম যখন মোবাইল এসেছে তখন তো এলাহি অবস্থা। অনেকটা ডিশ অ্যান্টেনার মতো, যার বাসার ছাদে ডিশ লাগানো তারা কত বড়লোক তার হিসাব কষতাম আমরা। যাদের তা নেই তাদের অ্যান্টেনার সাথে ঢাকনা লাগানো ডিডি বাঙলা আর জিটিভি দেখার জন্য।

সেসব দিন গেল। ভিসিপি ভিসি আর এর যুগ গেল। এনালগ টিএন্ডটি ডিজিটাল হলো। কলার আইডি হলো। মোবাইল সহজলভ্য হলো।

সাথে সাথে এগুলো সংশ্লিষ্ট অপরাধ পেতে থাকলো অন্য মাত্রা। ধরেন একজন রিকশাশ্রমিক তার কাছে একটা মোবাইল আছে, এখন একই পেশায় নিয়োজিত তার অন্যান্য কলিগদের মোবাইল নেই। যন্ত্রটা যখন আছে কথা বলার সাধ ও আছে। সে কি করবে? সে র‌্যান্ডমলি ফোন ডায়াল করবে এবং রং নাম্বারে উপযুক্ত অভ্যর্থনা পেলে "বন্ধুত্ব" পাতাবে। আবার আমাদের আলাল দুলালীরা যাদেরকে আমাদের মতো বাবা মা রা পলকে হারায় তাদের হাতে মোবাইল গেলে তারা মোবাইলে বন্ধু খুঁজবে, কথা আর শেষ হবে না।

নানা অফারে এরা থাকবে অগ্রগণ্য ভোক্তা। এদের মোবাইল আবার লেটেস্ট হতে হবে ক্যামেরা থাকতে হবে। যদি বাই চান্স প্রেম হয়ে যায় তাহলে মোবাইলে মুহুর্মুহূ ছবি উঠবে, ব্রেক আপ হলে এগুলো আবার পাবলিক প্রপার্টি হয়ে যাবে। এদের বয়স ক্লাস সিক্স থেকে শুরু হবে এবং বিস্মিত হবার কিছু নেই যখন আড্ডায় শুনবেন অমুক ইংলিশ মিডিয়ামের ফাইভ পেরোনো বাচ্চারা বাবা মা হবার পথে হাঁটাহাঁটি শুরু করেছে। মানুষ রসময় গুপ্তের চটি পড়ে বালেগ হয়েছে, তারপর নীলক্ষেতেরে ফুটপাথ থেকে ইংরেজী ছবিওলা বই কিনেছে।

এরপর ভিসিআর ভিসিপি তে ভিডিও ক্যাসেট দিয়ে নীল ছবি দেখেছে। তারপর একসময় ফ্লপিতে স্টিল ছবি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছে। প্রি ডায়াল আপ লাইন যখন পেয়েছে তখন হার্ড ডিস্কে পর্নো কপি করেছে। এখন মোবাইলে, ব্লু টুথের মাধ্যমে এক বন্ধুর থেকে আরেক বন্ধুর কাছে প্রভার ভিডিও ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে। আলফ্রেড নোবেল যেমন ডায়নামাইট আবিষ্কারের পর এর ভিন্ন ব্যবহার দেখতে পেয়েছেন তেমনি আমাদের অতীব দরকারী অনুসঙ্গগুলো আমাদের বিরুদ্ধেই মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আপনার সাথে আমার কোন কারণে বনছে না - আমি ভুয়া ইমেইল আইডি তৈরী করে যাচ্ছেতাই ইমেইল পাঠালাম। আপনি আইপি দিয়ে আমাকে ট্রেস করতে পারবেন না যদি না পুলিশ কেস হয়। আপনাকে আমার অপছন্দ আমি আপনার ফেসবুকের কনটেন্ট অথবা লিংকড ইনের কনটেন্ট কপি করে আপনার নামেই একটা একাউন্ট খুলে আপনার কাছের মানুষদের আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতে থাকব কিংবা আপনাকে এড রিকোয়েস্ট ও পাঠাতে পারি। কোনভাবে বুঝলেন কাজটা আমি করেছি, আপনি আমাকে বললেন কেন আমি একাজ করেছি আমি পৃথিবীর সবকিছুর কসম কেটে বলব আমি কাজটা করিনি। আপনার অবসরে আপনি এখন ই-বুক পড়তে পারেন তা করবেন না আপনি প্রথম সার্চ মারবেন সেক্স ভিডিওজ।

এছাড়া জীবনে আর কিছু নেই। আমি শ্রেনীহীন সমাজে বিশ্বাস করি না। ফকিরের বাচ্চা (আর্থিক নয় শুধু মানসিকতার দিক থেকেও)দের হাতে প্রযুক্তি পড়লে কি অবস্থা হয় তা আমরা প্রতিদিন দেখতে পা্চ্ছি। আমার খুব দুঃখবোধ হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা আপত্তিকর ভিডিও দেখতে পারছি গাটেঁর টাকা খরচ করে এটাকা তো কত ভালো কাজে ব্যয় হতে পারতো! একটা ভালো লিখা পড়া যেত, ঐ সময়টুকুতে তা না।

আমাদের আরেক জিনিস এখন টিভি-উফ টিভি...ঘরেই ঢুকেই আমাদের প্রথম কাজ টিভি ছেড়ে দেয়া, ঘুমিয়ে গেলেও টিভি চলছেই...হাজারো সিরিয়াল নাটক মালাইকার আনারকলি ডিসকো চলি আমরা দেখেই যাচ্ছি...চোখের চিউইং গাম চলছে... প্রযুক্তির কঠিনতম ব্যবহার চলছে নারীর বিরুদ্ধে...সম্প্রতি না কি আইন হয়েছে পর্নো দেখা সঙরক্ষণ এগুলোর জন্য ১০বছরের সবোর্চ্চ শাস্তি...পর্নো বানানোর শাস্তিটা কার্যকর হলে ব্যালেন্স হতো ভালোভাবে... কেন সবার মোবাইল দরকার, কেন সবাইকে নেট কানেকশন মোবাইল ইন্টারনেট দিতে হবে আমি ঠিক বুঝি না। আমি যেমন বুঝি না সবার উচ্চশিক্ষার কি প্রয়োজন। কেন সবাইকে মাস্টার্স পাস করতে হবে, কেন এমবিএ করতে হবে... কেন সবার ডাক্তার হতে হবে...এগুলো আমি বুঝি না। এরশাদ আমলে যখন বিনামূল্যে কনডম দেয়া শুরু হলো এগুলো বস্তির বাচ্চারা বেলুন হিসেবে খেলা শুরু করলো...সহজ লভ্য ডিগ্রী, সহজলভ্য প্রযুক্তি আমাকে বিনামূল্যে বিতরণকৃত কনডমের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বারবার। এইসব বানরের হাতে কেন সুবিধা তুলে দেয়া!!!! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।