আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বানরের গল্প

৩য় বর্ষ, কলেজ অব ইনফরমেশন সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব সুকুবা, জাপান

একটা খাঁচায় ১০টি বানর রাখা ছিল, আর খাঁচার ছাদে কলা ঝুলানো ছিল । তো, যেই বানরগুলো কলা দেখল একসাথে সবগুলো বানর কলা নেয়ার জন্য লাফ দিল । যেই না লাফ দেয়া অমনই বাইরে থেকে গার্ডরা গরম পানি বানরের গায়ে ঢেলে দিল । গরম পানি ঢালা বন্ধ হলেই বানরগুলো আবার লাফ দিল, আবারো বাইরে থেকে গার্ডরা গরম পানি ঢেলে দিল । এমন করে কয়েকবার চলার পর বানর বুঝে গেল, কলার জন্য লাফ দেয়া যাবে না ।

কারণ, লাফ দিলেই গরম পানি । গরম পানির অভিজ্ঞতা আছে এমন বানরকে অভিজ্ঞ বানর হিসেবে ধরা যাক । এবার খাঁচা থেকে একটা অভিজ্ঞ বানরকে সরিয়ে নিয়ে একটা নতুন বানর ঢুকানো হলো । নতুন বানরটা যেইনা কলা দেখল অমনেই লাফ দিল । কিন্তু এবার আর বাইরের গার্ডরা গরম পানি দিচ্ছে না ।

তবে অভিজ্ঞ পুরাতন ৯টি বানর নতুনটার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল । আরে করিস কি, করিস কি, কলা নেয়া যাবে না । নতুন বানরটা তো পুরো বোকা হয়ে গেল । আরে এই বানরগুলোর সমস্যা কি ! নিজেরা তো কলা নিচ্ছেই না, বরঞ্চ আমাকেও নিতে দিছে না । কিন্তু এই পর্যন্তই, কেন কলা নেয়া যাবে এই নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে বাকি ৯টা বানরকে অনুসরণ করে চুপচাপ বসে রইল ।

এইবার করা হলো কি, আরেকটা অভিজ্ঞ পুরাতন বানরকে সরিয়ে তার জায়গায় আরেকটা নতুন বানরকে ঢুকানো হল । এখন, খাঁচায় আছে গরম পানির অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ ৮টি পুরাতন বানর, গরম পানির অভিজ্ঞতা নাই এরকম ১টি পুরাতন বানর এবং ১টি একেবারেই নতুন বানর । এইবারও একই ঘটনা, নতুন বানরটা যেইনা কলা দেখল, অমনি লাফ দিল । আর সাথে সাথে গরম পানির অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ ৮টির সাথে সাথে গরম পানির অভিজ্ঞতা নাই ঐ বানরটিও ওদের সাথে একসাথে নতুন বানরটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । তো নতুন বানর আর কি করার, আগেরটার মতই কেন কলা নেয়া যাবে না, সেই দিকে না গিয়ে অন্ধভাবে বাকিগুলোকে অনুসরণ করল।

এমন করে একটার পর একটা গরম পানির অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ বানরগুলোকে সরিয়ে নতুন বানর ঢুকানো হয়, আর একই ঘটনা ঘটতে থাকে । এমন করে এখন খাঁচায় যেই বানরগুলো রইলো সেইগুলোর কারোরই গরম পানির অভিজ্ঞতা নাই । তারা জানে না , কেন কলা নেয়ার জন্য লাফ দেয়া যাবে না, কিন্তু তারা কেউ আর কলা নেয়ার চেষ্টা না করে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে থাকল । গল্পটা এইখানেই শেষ । কিন্তু এই গল্প থেকে দারুণ একটা জিনিস শিখেছি ।

এই গল্পটা জানার পর, নিজেকে বানরের মতই মনে হয়েছে কয়েকদিন । শুধু আমার নিজেকে না, আমার চারপাশের অনেককেই বানর বলে মনে হয়েছে এবং এখনো হয় । চিন্তা করে দেখলাম, আমরা তো ঠিক একই কাজটা করে থাকি । সবাই করে তাই করি । যেমন, আমাদের সময় লাভ হোক বা না হোক, সবাই প্রাইভেট পড়তে যেত ।

আমার ভাগ্য ভাল, আমি যাই নাই । এতে কোন ক্ষতিই হয় নাই, বরঞ্চ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম আমি মনিপুর স্কুল থেকে । যাই হোক । আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, বাবা-মা নামায পড়ে । তাই আমরাও পড়ি ।

কখনো নিজেকে জিজ্ঞেস করি নাই, কেন নামায পড়তে হবে কিংবা নামায জিনিসটাই বা কি ? নিজেকে মুসলমান বলি । মুসলমান বলতে আসলে কি বুঝায়, জানি না । কেন রোযা রাখব ? মসজিদে প্রায় কাপড়বিহীন গরীব মানুষেরা বসে থাকে জুম্মার দিন । তাদেরকে পায়ে ঠেলে ২ রাকাত নামায(যা পড়ি ঐটাকে যদি নামায বলা যায়!) পড়ে মসজিদে ৫টাকা দান করে ফলমূল কিনে নিয়ে বাসায় ফিরে মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে বিশাল ঘুম দেই । কখনোও নিজেকে প্রশ্ন করি না, এইটা কি করছি ? বিদেশী মেয়েকে বিয়ে করা যাবে না ।

বিয়ে করতে গেলে বাসা থেকে সমস্যা ! বিয়ে করা যাবে না । কখনো ভেবে দেখিনা, ইসলাম কি বলছে এই বিষয়ে । অলসতা ২ ধরনের । একটা শারীরিক আরেকটা মানষিক । আমরা যারা একটু ভাল ছাত্র, তারা পড়াশনায় প্রচুর খাটি ।

এবং খাটাটা অবশ্যি দরকার । এইটাও ইসলামের অন্তভূক্ত । যাই হোক আমরা তাও মাথা খাটাই । কিন্তু আফসোস, মানুষ আজকে চিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছে । অনেকে আবার বলে, বেশী চিন্তা করলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে ।

বটে ! আইনষ্টাইন তার ব্রেনের ১৭% মাত্র ব্যবহার করতে পেরেছিলেন । আর, আমাদের চিন্তায় মাথা খারাপ হবে ? চিন্তা কেন করি না আমরা ? কেন চ্যালেঞ্জ করি না যে, কেন ৪টা বিয়ে করা যাবে । কেন চ্যালেঞ্জ করি না সুদ কেন দেয়া যাবে না ? আমরা এমনই বোকা, একজন একটা নিয়ম বানায়, আর বানরের মতই সেইটা অন্ধ অনুকরণ করি । হুজুর বলছে সুন্নত না পড়লে গুনাহ্‌ হবে, কখনো ভাবি না, এই সুন্নত কি জিনিস । আর হুজুররা যদি ভাল মানুষই হবে, তাহলে তাদের এই রকম বাজে হাল কেন ? ঠিক ঐ বানরগুলোর মত ।

আজকে শেষ একটা ঊদাহরণ দেই, হিল্লা বিয়ে । আধুনিক মানুষেরা এর বিপরীতে । আবার অথাকথিত মৌলবাদীরা এর সপক্ষে চেঁচামেচি করে । একদিকে এরা চেঁচামেচি করে, অন্যদিকে আধুনিক নাট্যকারেরা ভুরিভুরি নাটক লিখে টিভি তে প্রচার করে থাকেন । আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি, যখন সূরা বাকারার ২২০ নম্বর আয়াত থেকে পড়া শুরু করলাম ।

না মোল্লারা ঠিক, না নাট্যকাররা ঠিক, দুইজনেই ভূল । আমরা কিরকম বানর, যেই জিনিসটার অস্তিত্ব নাই, সেইটা নিয়ে মারামারি করি বিপক্ষে ভুরিভূরি নাটক লিখি, পক্ষে কত ফতোয়া দেই, কিন্তু সুরা বাকারা ২০ মিনিট সময় ব্যয় করে পড়ি না !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।