আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কিছুক্ষণ

ইকবাল হাসান তখন সন্ধ্যা। স্থান : বেলভিউ হাসপাতাল নিউইয়র্ক। ১৬ ওয়েস্ট, রুম ২৯। রুমে ঢুকেই দেখা গেল ধবল শয্যায় বসে একই সঙ্গে কেমো নিচ্ছেন আর দাবা খেলছেন তিনি। দাবার কোর্টে তাঁর তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী স্ত্রী, শিল্পী মেহের আফরোজ শাওন হার মানার জন্য মোটেই প্রস্তুত নন।

আমাদের দেখে বলে উঠলেন, খেলা ডিসমিস। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, হার মেনেছো তাহলে? না মানা পর্যন্ত খেলা চলবে। শাওনের মুখে তখন সূক্ষ্ম এক টুকরো হাসি, বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচ্যগ্র মেদিনী_ ভাবটা আর নেই। কে জিতল শেষমেশ? হুমায়ূন আহমেদ বললেন, আমরা এখন পর্যন্ত সমানে সমান। চার রাউন্ড খেলায় দু'বার শাওন আর দু'বার আমি জিতেছি।

সদা হাস্যোজ্জ্বল জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে দেখে মনেই হয় না, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। অবিশ্বাস্য মনের জোর তাঁর। যেন 'কুসুমিত ইস্পাত'। ভেতরে-বাহিরে লড়ে যাচ্ছেন একজন অমিততেজ লড়াকু হিসেবে। অথচ বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই।

মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতা এতটুক কেড়ে নিতে পারেনি এই লেখকের মানবিক মূল্যবোধ, সৌজন্য আর রসজ্ঞ শিষ্টাচার। দেখামাত্র হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি, বসতে বললেন শয্যাপাশে। তাঁর হাত ছুঁয়ে মনে হলো, যেন পাখির পালকে হাত রেখেছি। সত্যি বলতে কি, আমরা সবাই (নিউইয়র্কের সংস্কৃতিকর্মী রুমা সাহা, স্থপতি শিখা আহমেদ) ভেতরে ভেতরে আবেগাপ্লুত যখন, আমার মনের ভেতর তখন রুম উইদাউট ডোরস, আউটসাইডার আর গোলাপ-সুন্দরীর উথালপাথাল_ ভিজে উঠছিল চোখের পাতা, হুমায়ূন আহমেদ বললেন, হাসপাতাল তো_ কী দিয়ে যে তোমাদের আপ্যায়ন করি! চা খাবে? কলা, আপেল? আচ্ছা, তোমরা কিছুই যখন খাবে না_ রোগী দেখতে এসেছো, তাহলে তোমাদের 'জোক্স' দিয়েই আপ্যায়ন করি। পুরোপুরি সত্যি ঘটনা, মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।

একবার একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছি, আমার পাশে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ডিজাইনার মইনুল হোসেন। অনুষ্ঠান শুরু হলো, হঠাৎ মইনুল বললেন, আপনি আমার চেয়ারটায় বসুন, প্লিজ। আমি কারণ জানতে চাইলাম না_ চেয়ার বদল করলাম আমরা। একটু পর মইনুল আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে যা বললেন, শুনে আমি বিস্মিত। হুমায়ূন, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখুন, কারা দাঁড়িয়ে আছে।

আমি তাকালাম_ কিচ্ছু নেই। বললাম, কিছুই তো দেখছি না। মইনুল বললেন, ভালো করে দেখুন_ তিনটা জিন কেমন পথ আগলে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ওই দরজা দিয়ে আমি কীভাবে বেরোব? বললাম, মইনুল, আপনি আমার পেছন পেছন বেরোবেন। জিনরা আমাকে ভয় পায়।

আপনার কিচ্ছু হবে না। শিল্পী সুলতান সব সময় পকেটে বিড়াল নিয়ে হাঁটতেন। আর মাঝে মধ্যেই নিজের মনে বিড়বিড় করে কথা বলতেন। কার সঙ্গে কথা বলছেন জিজ্ঞেস করলে বলতেন, কার সঙ্গে আবার_ তেনাদের সঙ্গে। একবার বললেন, হুমায়ূন, জিনদের অত্যাচারে বড় অস্থির আছি।

সারাক্ষণ কানের কাছে খালি বিড়বিড় করে। কী যে বলে কিছুই বুঝি না। তো, একবার শিল্পী সুলতান গেলেন নিউমার্কেট। পকেটে দুই বিড়াল-ছানা। পকেটমার পিছু নিল তাঁর_ যদি কিছু পাওয়া যায়! হঠাৎ দেখা গেল, পকেটমার চিৎকার করে দৌড়_ মানিব্যাগ হাত কামড়ে দিয়েছে।

এভাবে একের পর এক জোক্স বলে গেলেন তিনি। হঠাৎ জানতে চাইলেন, মেলা কেমন দেখলে? বললাম, জমজমাট। মেলায় আপনি না থেকেও আছেন, মানুষ আপনার বই কিনছে লাইন দিয়ে। পুরো দেশ আপনার অপেক্ষায়। নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ সুস্থ হয়ে উঠছেন।

বেলভিউ হাসপাতালে নবম কেমোথেরাপি গ্রহণ শেষে তিনি গতকাল বিকেলে বাসায় ফিরেছেন। দু'সপ্তাহ পরপর তাঁকে আরও তিনটি কেমো নিতে হবে। এরপর ডাক্তাররা সিটি স্ক্যান, ক্লোনোসকপিসহ নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তবে তিনি কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন তা এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে কেউ বলতে না পারলেও তাঁর অবস্থা উন্নতির দিকে। হুমায়ূন আহমেদ এ পর্যন্ত নয়টি কেমো নেওয়ার পরও শারীরিকভাবে যথেষ্ট সবল-সুস্থ আছেন।

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তথ্যসূত্র- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.