আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টুকটাক কৌতুক

তুমি যদি প্রতিটি দিন এটা ভেবে পার কর যে আজই তোমার জীবনের শেষ দিন, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সঠিক হবে। দুজন লোক কথা বলছে। একটা বারে বসে। তাদের সামনে টেলিভিশন। টেলিভিশনে সাতটার খবর হচ্ছে।

খবরে দেখাচ্ছে, একটা লোক একটা সেতুর রেলিংয়ে উঠেছে। প্রথম জন বলল, ‘এই লোকটা এখনই ব্রিজ থেকে লাফ দেবে। ’ দ্বিতীয় লোকটা বলল, ‘না, লাফ দেবে না। ’ ‘অবশ্যই দেবে। ’ ‘না, দেবে না।

’ ‘বাজি ধরো। ৫০০ টাকা। ’ ‘আচ্ছা, বাজি। ৫০০ টাকা। ’ টেলিভিশন খবরে দেখা গেল, সেতুর রেলিংয়ে দাঁড়ানো লোকটা সত্যি সত্যি লাফ দিল।

সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় লোক ৫০০ টাকা বের করে দিল প্রথম ব্যক্তির হাতে। প্রথম লোক বলল, ‘না, টাকা দিতে হবে না। আমি আসলে পাঁচটার খবর দেখেছি। ও যে ব্রিজ থেকে লাফ দেয় সেটা আমি তখনই দেখেছি। ’ দ্বিতীয় লোক বলল, ‘পাঁচটার খবর তো আমিও দেখেছি।

কিন্তু আমি ভাবিনি একটা লোক এত বোকা হবে। দ্বিতীয়বারও সে একই ভুল করবে। ’ একই ভুল সাধারণত আমরা দ্বিতীয়বার করি না। আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নিই। আমরা ঠেকে শিখি।

যেমন এই দেশের মানুষ ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে মানুষ সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেনি। ১৯৯৬ সালে মানুষ ভোট দিয়েছিল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে। তারপর ২০০১ সালে আর তা করেনি। তারা ভোট দিয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে।

এর পরের বার আর বিএনপিকে ক্ষমতায় আনেনি, এনেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে। এর পরের বার তারা কী করবে? দেশের মানুষের হাতে বিকল্প কম। একবার এক পল্লিগ্রামের লোক ট্রেনের টিকিট কাটতে রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। ‘টিকিটের দাম কত?’ ‘কুড়ি টাকা। ’ ‘১৫ টাকায় দেবেন?’ ‘না।

আমাদের টিকিটের দাম ফিক্সড। আমাদের দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই। ’ তখন লোকটা বলল, ‘আপনি না দিলে আমি অন্য দোকানে যাব। ’ টিকিটবিক্রেতা হেসে বললেন, ‘টিকিট কেনার কাউন্টার এই একটাই। আর কোনো দোকানে এই টিকিট পাওয়া যাবে না।

’ তখন ওই সরল যাত্রীটি বললেন, ‘একটাই দোকান। তাই তো আপনি দাম কমাচ্ছেন না। আরেকটা দোকান থাকলে ঠিকই টিকিটের দাম কমাতেন। ’ আমাদেরও সমস্যা হয়েছে। এই দেশে বিকল্প মাত্র দুটো।

একটা হলো বিএনপি, আরেকটা আওয়ামী লীগ। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, এই দেশে দল আছে একটা। তা হলো আওয়ামী লীগ। এর বাইরে বিকল্প আছে একটা, না-আওয়ামী লীগ। কিংবা লোকে এভাবেও বলে, বিগত নির্বাচনে লোকে মহাজোটকে ভোট দেয়নি, তারা আসলে বিএনপি-জামায়াত জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

কিন্তু এরপর কী? অনেকেই তৃতীয় শক্তির আশা করেন। আমেরিকা-বিলেতে, গণতন্ত্রের আদর্শ বলে আমরা যাদের মানি, সেখানেও তৃতীয় শক্তি নেই। মানুষের দুটো পা, তিন পা-ওয়ালা মানুষ দেখা যায় না। সম্প্রতি কোনো কোনো কাগজে নাকি জরিপের ফল বেরিয়েছে, এই মুহূর্তে ভোট হলে বিএনপি জোট জয়লাভ করবে। আমরা প্রথম কৌতুকটার কথা মনে করতে পারি, দ্বিতীয় লোকটা আশা করেছিল, পাঁচটার খবরে যা ঘটেছিল, সাতটার খবরে তা ঘটবে না।

একই ভুল একই লোক দ্বিতীয়বার করবে না। কিন্তু তার সেই আশা পূর্ণ হয়নি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত যা করেছে, তার পরও সেই বিএনপি-জামায়াত? এই বিষয়ে দুটো পুরোনো গল্প আগে বলে নিই। এক নারীকে তাঁর স্বামী খুব পেটাত। উপায়ান্তর না দেখে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ ঘটালেন।

তারপর আবার বিয়ে করলেন। এই স্বামীও খুব পেটায়। যখন তিনি স্বামীর হাতে মার খান, তখন তিনি বিনবিনিয়ে কাঁদেন আর বলেন, ‘আমার আগের স্বামীও মারত, কিন্তু আগের স্বামীর মারটা এর চেয়ে মধুর ছিল। ’ এক ভদ্রমহিলা বারবার সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর ধাত্রীও নির্দিষ্ট।

কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তিনি ব্যথা সহ্য করতে পারেন না। খুব কাঁদেন। ধাত্রীর হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করেন, ‘এবারই শেষ। আর কোনো দিন আমি মা হব না। ’ কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তিনি আবার ধাত্রীর দ্বারস্থ হন।

আবার কাতরাতে থাকেন। ধাত্রী বলে, ‘কী, আবারও!’ মহিলা বলেন, ‘এই যে কানে ধরেছি, এবারই শেষ। ’ কিন্তু পরের বছর তিনি আবারও ধাত্রীর কাছে আসেন পেটে সন্তান নিয়ে। ধাত্রী বলে, ‘আপনার ঘটনা কী? মহিলা বলেন, ‘আমার বাচ্চাদের বাবা এত মধুর মধুর কথা বলে যে আমি প্রত্যেকবার পটে যাই...এই যন্ত্রণার কথা আমার মনেই থাকে না। ’ আসলেই।

আমরা এত মধুর মধুর প্রতিশ্রুতি শুনি, আমরা বারবার ভুলে যাই। তারপর যখন ওঁরা ক্ষমতায় আসেন, আমাদের বারোটা বাজতে থাকে। এখন তো আমাদের সামনে ঘোরতর অমানিশা। সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আর নেই।

বিএনপি-জামায়াত তা মেনে নেবে না। তারা কঠিন কঠিন সব কর্মসূচি দেবে। এর আগের বার আওয়ামী লীগের জলিল সাহেবও সন-তারিখ দিয়ে বলেছিলেন, সরকার ফেলে দেবেন। পারেননি। এখন বিরোধীরা আওয়াজ দিচ্ছে, কী কী যেন সব ঘটবে।

একদল ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। আরেক দল ক্ষমতায় আসতে চায়। এই আমরা দেখে আসছি মেয়াদের পর মেয়াদ। শিল আর পাটা ঘষাঘষি করে। মধ্যখানে মরিচের প্রাণ যায় যায়।

এবং এদের যদি জিগ্যেস করেন, এঁরা ক্ষমতায় থাকতে বা আসতে চান কেন? এঁরা বলবেন, ‘নিজের স্বার্থে তো আমরা ক্ষমতা চাই না। চাই দেশের ভালোর জন্য। দেশটাকে বাঁচানোর জন্য। ’ এঁরা হয়তো এটা বিশ্বাসই করেন, তিনি ক্ষমতায় থাকা মানে দেশটার ভালো থাকা। আর উনি ক্ষমতায় আসা মানেই দেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

তাই যদি হবে, তা হলে তো এঁর বা ওঁর ক্ষমতায় থাকাটা খুব জরুরি। যেকোনো মূল্যেই এঁকে বা ওঁকে ক্ষমতায় থাকতে বা আসতেই হবে। তা হলে প্রশ্ন হলো, দেশের মানুষের ভালোর জন্য যদি ক্ষমতায় থাকাটা খুব জরুরি হয়, সেটা যদি দেশ এবং ষোলো কোটি মানুষের স্বার্থেই হয়, তা হলে একজন তাহেরপুত্র বিপ্লবের প্রতি ভালোবাসার মূল্য কি ক্ষমতার প্রতি ভালোবাসা কিংবা ১৬ কোটি মানুষের ভালো থাকার মূল্যের চেয়েও বেশি? গণিতবিদেরা আমার এই অঙ্কের উত্তর দেবেন আশা করি। শেষ করি, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে পড়া একটা কৌতুক দিয়ে। দুই আর দুই কখন পাঁচ হয়? যখন ভুল হয়।

সমস্যা হলো, আমাদের ক্ষমতাসীনেরা কখনো কোনো ভুল করেন না। আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.