আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যানঃ লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির একটি কালজয়ী সৃষ্টি

.ঠিক এই রকমই এক দিনে তোমার হৃদযন্ত্র থেমে যাবে ............and play its final beat .....................ঠিক এই রকমই এক দিনে,তোমার ঘড়ির কাঁটাটাও থেমে যাবে ..................And time won’t mean a thing ইতালির রেনেসাঁ যুগ । সে যুগের অনেক শিল্পী তাদের চিত্রকর্মে কিংবা শিল্পকর্মে ব্যাপকভাবে গোল্ডেন রেশিও এর ব্যবহার করতে থাকেন । কিন্তু কেন গোল্ডেন রেশিও ? এটা সম্ভবত এ কারণে যে ,কোন শিল্পে যতবেশি এর ব্যবহার করা সম্ভব তত বেশি সেই শিল্পকে বাস্তব বলে মনে হবে । আর এক্ষেত্রে এক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান উল্লেখযোগ্য। এই শিল্পকর্মটি ভিঞ্চি এঁকেছিলেন শুধুমাত্র কালি আর কলম ব্যবহার করে একটা A4 সাইজের কাগজে।

ভিঞ্চি এই কাজে যার আইডিয়া আর থিওরি কে প্রকাশ করতে চেয়েছেন তিনি হচ্ছেন রোমান আর্কিটেক্ট ভিট্রুভিয়ান। ভিট্রুভিয়ান বিশ্বাস করতেন মানব দেহের এই সমানুপাত আর পরিমাপ স্বর্গীয় ব্যাপার-স্যাপার এবং তা সম্পূর্ণ নিখুঁত। তবে একটা কথা, ভিঞ্চি কেন দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান আঁকার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন? এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে , ভিঞ্চি আসলে বিশ্বাস করতেন মানবদেহ নিয়ে কাজ করা এই মহাবিশ্ব নিয়ে কাজ করার অনুরূপ। আসলে মানবদেহ হচ্ছে মডেল অফ পারফেকশন। মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ককে এই চিত্রকর্ম টিতে তিনি তুলে ধরেছেন ।

এই একটি মাত্র ইলাসট্রেশনে বিভিন্ন বিচিত্র বিষয় যেমন চিত্রকলা, স্থাপত্যবিদ্যার অনুপমতা , মানব এনাটমি , আর প্রতিসমতা এই এতগুলো বিষয় সম্পর্কে তার আইডিয়া একসাথে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা সমসাময়িক তো বটেই আজকের এই যুগেও রীতিমত ঈর্ষা জাগায়। ভিঞ্চি এই চিত্রকর্মে যা তুলে ধরেছেনঃ ১..........সহজ ভাষায় বলতে গেলে এই ছবিতে প্রথমে আমাদের চোখে যা পড়ে তা হচ্ছে একজন মানুষ যদি সোজাসুজি দাড়িয়ে থাকে এবং তার হাত যদি ভুমির সাথে সমান্তরালে পাশের দিকে ছড়িয়ে দেয় তবে সে একটি বর্গক্ষেত্রে একদম নিখুঁতভাবে মিলে যাবে। ২...........অন্য দিকে লোকটি যদি তার পা প্রসারিত করে এবং হাত দুটিকে তার মাথার উপরের দিকে ছড়িয়ে দেয় ঠিক যেন স্কেচ-টার মত করে তাহলে তিনি অনায়াসে একটি বৃত্তের ভিতর তার পরিধির সাথে মিলে যাবে। ৩............উভয় ক্ষেত্রেই লোকটির নাভি থাকবে বৃত্তের কেন্দ্রে। প্রাচীন জ্ঞান অনুযায়ী , মানবদেহকে বলা যেতে পারে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ব্লু প্রিন্ট আর এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের আনুপাতিক সামঞ্জস্যতা যা মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাঝে লক্ষ্য করা যায়।

আর এটা ভিঞ্চি সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করতেন এবং তিনি তার এই ইলাস্ট্রেশনে মানবদেহের কাঠামো আর মহাবিশ্বের মধ্যে এই স্বর্গীয় সংযোগ তুলে ধরেছেন। ও হ্যাঁ (যদিও একান্তই ব্যক্তিগত মতামত) ভিঞ্চি সম্ভবত বর্গ দ্বারা আমাদের এই পার্থিব দুনিয়ার অস্তিত্ব এবং একইসাথে বৃত্ত দ্বারা আধ্যাত্মিক দুনিয়ার অস্তিত্বকে কে প্রকাশ করেছেন। অবশেষে সংকেত আর সৌন্দর্যের অপূর্ব মিশেলে দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান সারা বিশ্বের সৌন্দর্য ও শিল্প-পিপাসুদের চোখে ও মনে সবচেয়ে মূল্যবান চিত্রকর্মের আসনে আসীন হয়ে আছে। তাছাড়া এই অনন্য রুপায়ন টি মানবদেহের প্রতিসাম্যতার জন্যও সারাবিশ্বে সুপরিচিত। আর এই মহামূল্যবান চিত্রকর্মটি সংরক্ষিত আছে ইতালির ভেনিস নগরীর Gallerie dell'Accademia তে।

আর বিশেষ-বিশেষ উপলক্ষ পেলে তবেই এটা শুধুমাত্র প্রদর্শিত হয়। দুইটি মজার গানিতিক সামঞ্জস্যতাঃ ১। উপরের ছোট লাল বৃত্তটাকে চাঁদ এবং নিচের বৃত্তটাকে আমরা পৃথিবী কল্পনা করতে পারি। এখন কথা হচ্ছে কল্পনা তো আমরা যা খুশি তাই করতে পারি কিন্তু মজাটা হচ্ছে বৃত্ত দুইটার ব্যাসের অনুপাত (r / R) , বাস্তবিক চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যাসের অনুপাতের সাথে মিলে যায়। ২।

ভিঞ্চির এই স্কেচ থেকে আরেকটি রহস্যময় সম্পর্ক যা পাওয়া গেছে , তা হচ্ছে ইজিপ্ট-এ গিজার পিরামিড থেকে। অবশ্য এটা আমার কাছে রহস্যের চেয়ে রোমাঞ্চকর –ই বেশী লেগেছে। নিচের চিত্রটিতে যে ত্রিভুজকে চিহ্নিত করা হয়েছে তা গিজার পিরামিডের জ্যামিতিক অনুপাতের (৫১ ডিগ্রি ৫১ সেকেন্ড) সাথে হুবুহু মিলে গেছে। সমাপ্তি সঙ্গীত (শেষ কথা): দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান ভিঞ্চির এমন একটি শিল্পকর্ম যা তিনি সৃষ্টি করছিলেন নিজের মানসিক প্রশান্তির জন্য। বিক্রি করার জন্য কিংবা কাউকে দেখানো বা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টি করেননি।

প্রকৃতপক্ষে এই মহান শিল্পকর্মটি আবিষ্কৃত হয় ভিঞ্চির মৃত্যুর-ও কয়েক শতাব্দি পরে । আর দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান মানব দেহের রূপ ও আকৃতির প্রতি এই কালজয়ী মানুষটার গভীর অনুরাগ আর জ্যামিতির প্রতি ভালবাসা, একাগ্রতা এবং পরিশেষে ভিঞ্চির ভিতরকার লালন করা অধ্যবসায়ের প্রতীক। ভিঞ্চির স্কেচ কালেকশন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.