আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববাসীর কাছে কানাডা এখন লোভনীয় গন্তব্য, বদলে যাচ্ছে অভিবাসন মানচিত্র

দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম সকল দেশের মানুষের কাছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ উত্তর আমেরিকার কানাডা এখন সবচেয়ে লোভনীয় গন্তব্য। প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষ ভাগ্যের অন্বেষণে আবাস গাড়ছে বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষস্থানীয় এই দেশটিতে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কানাডার প্রতি অভিবাসীদের দুর্নিবার এই আকর্ষণের পেছনে রয়েছে নানা কারণ। যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সমৃদ্ধির এই পর্যায়ে আসার পেছনে রয়েছে, এদের উদার অভিবাসন নীতি। কানাডার নীতি-নির্ধারকেরাও সে পথে হাঁটছেন।

দেশটিতে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ, অবকাঠামো, ভালো মজুরি, নিরাপত্তার মতো আনুষাঙ্গিক বিষয়। এ ছাড়া নানা কারণ। তবে লাখ লাখ অভিবাসী এলেও কানাডার সব অঞ্চল অভিবাসীদের দিয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে না সমভাবে, অভিবাসী বণ্টনে রয়েছে বিস্তর ফাঁরাক। কেন এই ফাঁরাক, সবচেয়ে লোভনীয় গন্তব্যের দেশ হলেও নানা কারণ বিদ্যমান এর পেছনে। তবে অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে।

যেমন, দেশটির পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় প্রদেশ নিউ ব্রুনসউইকের লৌহ প্রক্রিয়াকরণ শিল্প পূর্ব ইউরোপ থেকে অভিবাসীদের টেনে আনছে, যারা উত্তাপ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সংযোজনের কাজে শ্রম দিচ্ছে। গ্রাম অঞ্চলের একটি খাদ্য প্রস্তুত প্রতিষ্ঠান বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করছে রোমানিয়ান শ্রমজীবীদের। মংকটন অঞ্চলের একটি জাতীয় কফি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করছে ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় পারদর্শী মানুষকে। কানাডায় অভিবাসন নতুন কিছু নয়। বর্তমানে ৭০ লাখেরও বেশি প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী রয়েছে দেশটিতে, যাদের ৪০ লাখই এসেছে গত দুই দশকে।

আয়তনে বিশাল দেশ কানাডায় প্রদেশ আছে ১০টি। প্রতি বছর দেড় লাখেরও বেশি অভিবাসীকে গ্রহণ করে নিচ্ছে দেশটি। সব প্রদেশই অভিবাসীদের সমানভাবে আকর্ষণ করে না। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর প্রদেশই অভিবাসীদের পছন্দের শীর্ষে। অবশ্য দ্রুত এই ধারার পরিবর্তন ঘটছে।

অভিবাসীদের বণ্টন ও ধারার পরিবর্তনের পেছনে কী কাজ করছে? ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সময়কালে মোট অভিবাসী মানুষের ৫৪ দশমিক পাঁচ শতাংশই বেছে নিয়েছে অন্টারিওকে। কিন্তু সমুদ্র উপকূলীয় প্রদেশ নিউ ব্রুনসউইক এই একই সময়ে আকর্ষণ করতে পেরেছে এক শতাংশ অভিবাসীকে, যদিও কানাডার মোট জনসংখ্যার পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশের বাস এই অঞ্চলে। অপরদিকে গত ১৫ বছরে কানাডায় আসা মোট অভিবাসীদের মাত্র শূন্য দশমিক ছয় শতাংশকে আকর্ষণ করেছে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সাসকাচিওয়ান। সাম্প্রতিক সময়ে কানাডায় অভিবাসনের ধরনে পরিবর্তন ঘটছে এবং তা শুধু অগ্রসর অঞ্চল দক্ষিণ ও মধ্য কানাডায় নয়। ২০১১ সালে আগত অভিবাসীদের দুই দশমিক সাত শতাংশ বসতি গেড়েছে সমুদ্র উপকূলীয় রাজ্যগুলোয় এবং দুই দশমিক নয় শতাংশ তাদের ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছে সাসকিচিওয়ান প্রদেশকে।

২০০৬ থেকে ২০১১ সময়কালে প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়েছে ছয় গুণ। অভিবাসী আকর্ষণের হার ক্রমশই বাড়ছে এসব অঞ্চলে। মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ এখানে অভিবাসী। নিউ ব্রুনসউইকে গত পাঁচ বছরে অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ শতাংশ। এক দশক আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে নোভা স্কশিয়ায়ও অভিবাসী আকষর্ণের হার বেড়েছে তাৎপর্যপূর্ণভাবে।

অন্টারিও, কুইবেক ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বাদে নানা দিক দিয়ে দেশের অন্য অঞ্চলে অভিবাসনের হার বৃদ্ধি ছিল অনিবার্য। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল থেকে দশক দশক ধরে তরুণদের দেশের অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া আর বার্ধক্যের কারণে অবসর যাওয়ায় শ্রম অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তা পূরণে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কম পারিশ্রমিকের হার আর সারা বছর কাজের সুযোগ না থাকাও স্থানীয়দের অন্য প্রদেশে চলে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে। অভিবাসীরা শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসছে। এসব কারণেই, নিউ ব্রুনসউইকের মতো প্রদেশ ও অঞ্চলে, যেখানে বলতে গেলে কোনো নতুন কর্মসংস্থানই সৃষ্টি হয় না, তা-ও অভিবাসীদের আকৃষ্ট করছে।

২০০৭ থেকে ২০০৯ সময়কালে প্রতি বছরই চার গুণ বেশি করে অভিবাসী এসেছে এখানে। তবে পাথর্ক্য আছে, সাসকাচিওয়ান ও আলবার্টার রেকর্ড পরিমাণ অভিবাসী আকর্ষণের পেছনে, কারণ এখানে ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজার। পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, উন্নয়ন আর ভারসাম্য আনার স্বার্থে কানাডার সমুদ্র উপকূলীয় আর অপ্রথাগত প্রদেশে অভিবাসীদের আকৃষ্ট করার প্রয়োজন আগামী দিনগুলোয় আরও বাড়বে। অবসরে যাওয়া শ্রমগোষ্ঠীর শূন্যতা পূরণে অভিবাসীদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কানাডা জুড়ে অভিবাসনের এই ধারা ভবিষ্যতে কানাডার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালীই করবে।

তথ্যসূত্র- Click This Link ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.