আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববাসীর কাছে কানাডা এখন স্বপ্নের দেশ, জনসংখ্যা ১০ কোটিতে উন্নীত করার প্রস্তাব

দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম বর্তমান বিশ্বে কানাডাকে মনে করা হয়, সবচেয়ে আলোচিত অভিবাসী ও শরণার্থীবান্ধব দেশ। নীতি-নির্ধারকেরা বিশাল ভূখণ্ড আর বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী এক কানাডার স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রায় শতবর্ষ আগে, যার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো কানাডার মানুষজন এখন দেখছে। ইতিবাচক দৃষ্টিতে, অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী না হলেও শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যেই তার অবস্থান; জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী ষষ্ঠ দেশ হওয়ার অন্যতম প্রার্থী; দেশে দেশে শান্তি স্থাপনে শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে জোরালো ভূমিকা রাখছে, প্রভাব-প্রতিপত্তিও তার অনেক বেড়েছে। এক কথায় বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্ববাসীর কাছে ধীরে ধীরে স্বপ্নের এক দেশ হয়ে উঠছে কানাডা। আর এই সব কিছুর পেছনেই রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

সম্প্রতি সাবেক লিবারেল পার্টির কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রবার্ট কাপলান আরও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে কানাডাকে প্রতিষ্ঠা করতে আরও বর্ধিত হারে অভিবাসীদের গ্রহণ করে কানাডার জনসংখ্যা ১০ কোটিতে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন। অনেকে কাপলানের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে কল্পনাবিলাসের পরিসর আরও বাড়াতে পারেন। কিন্তু আজকের কানাডার বাস্তবতা অনেকখানি ভিন্ন। বর্ধিত হারে অভিবাসনে বড় বড় শহর ইতিমধ্যেই মানুষজনের গাদাগাদিতে যন্ত্রণা বোধ করছে, আবাসন ও জীবনমানের খরচেও করদাতারা হাঁপিয়ে ওঠার কথা বলছেন। হার্বার্ট গ্রুবেল এবং প্যাট্রিক গ্রেডির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নতুন অভিবাসীদের জন্য কানাডিয়ানদের ১৬ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে; কারণ, কানাডিয়ানদের করের টাকায় সরকারকে নতুন অভিবাসীদের ভাতা দিতে হয়।

বহু জাতির সম্মিলনে সংস্কৃত ও ঐতিহ্যের পরিমণ্ডলেও তৈরি হচ্ছে নতুন এক টানাপোড়েন। মুসলিম সংখ্যাধিক্যে টরন্টোর ভেলি পার্ক মিডল স্কুলে ধর্মীয় প্রার্থনার জন্য নিয়ম-কানুন শিথিল করা এবং কয়েক দিন আগে শ্রীলঙ্কার ৪৯০ জন তামিলসহ একটি জাহাজ কানাডার উপকূলে আসার পর অভিবাসী ও শরণার্থী নিয়ে বিতর্ক আরও জোরাল হয়েছে। দেশ গঠনে অবদান আর মানবিকতা ছাপিয়ে মানব পাচারের বিষয়টি এখন আলোচিত হচ্ছে বেশি। অভিবাসীরা মূলধারারা কানাডিয়ানদের চেয়ে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে থাকলেও সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে থাকছেন। দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে অভিবাসীদের আগমন কানাডিয়ানরা স্বাগত জানালেও তাদের প্রতিবেশী দেখতে চান না অনেকেই।

অনেকের ধারণা, বর্তমান গতিতে অভিবাসীদের স্রোত অব্যাহত থাকলে এ ধরনের সংকট আরও বাড়বে। তৈরি হবে বিভাজন। কানাডার সবচেয়ে সফল ও কার্যকর অভিবাসন মন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত জেসন কেনি যখন প্রশ্ন তোলেন, কানাডিয়ানরা কি আরও বেশি সংখ্যায় অভিবাসীদের গ্রহণের জন্য প্রস্তুত, তখন তা যৌক্তিকই মনে হয়। ভ্যাংকুভার বোর্ড অব ট্রেডকে তিনি সম্প্রতি বলেন, প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যায় অভিবাসী গ্রহণের জন্য আমাদের যথেষ্ঠ সম্পদ ও সামর্থ্য নেই। এ ক্ষেত্রে তিনি, করদাতাদের অর্থে চলা তহবিল আর আবাসন শিল্পের ওপর বেড়ে চলা চাপের দিকে অঙুলি নির্দেশ করেন।

বর্তমান হারে অভিবাসী গ্রহণের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও জেসন কেনিকে আগামী দিনগুলোতে আরও জটিল কিছু সংকটের মুখোমুখী হতে হবে। কেননা কানাডিয়ানরা আপাতদৃষ্টিতে অভিবাসীদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও, যে হারে তাদের গ্রহণ করা হচ্ছে, তাতে তারা মোটেও সন্তুষ্ট নয়; বিশেষত বড় বড় শহরের অধিবাসী কানাডিয়ানরা, যেখানে নতুন আসা অভিবাসীরা ঠিকানা গড়ে নিচ্ছেন। গত নভেম্বরে ইকোস রিসার্চের এক জরিপের ফলাফল বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য, যেখানে দেখা যায়, দেশের জন্য অভিবাসীদের অধিকাংশ কানাডিয়ান স্বাগত জানালেও, তাদের প্রতিবেশী হিসেবে দেখতে অনেকেরই অনীহা রয়েছে; ৭১ শতাংশ কানাডিয়ান উত্তরাদাতার মতে, অভিবাসন কানাডার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু তাদের যখন প্রশ্ন করা হয়, প্রতিবেশী হিসেবে অভিবাসীরা কি কল্যাণকর? মাত্র ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতার অভিমত, হ্যাঁ। লিজার মার্কেটিংয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলাফল বলছে, ৫৫ শতাংশ ক্যালগারিয়ান মনে করেন, তাদের শহর ইতিমধ্যেই অত্যাধিক বড় আকার নিয়েছে এবং ৩৯ শতাংশের মত, বর্তমানের জনসংখ্যা ঠিকই আছে; অর্থাৎ ৯৪ শতাংশ চান না, আরও বড় আকার গ্রহণ করুক তাদের শহর।

কিন্তু নাটকীয়ভাবে অভিবাসীর সংখ্যা কমানো না হলে তাদের এই চাওয়া পূরণ হওয়া অনেকটা অসম্ভবই। অন্যদিকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর টরন্টো ও ভ্যাংকুভারের মাত্র পাঁচ শতাংশ অধিবাসী মনে করেন, প্রদেশের জনসংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত। কিন্তু বর্তমানের অভিবাসী গ্রহণের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই দশকের মধ্যে টরন্টো ও ভ্যাংকুভারের জনসংখ্যা দাঁড়াবে যথাক্রমে তিরিশ লাখ এবং দশ লাখ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, কানাডার নীতি-নির্ধারক এবং নাগরিকদের চিন্তাভাবনার এই বৈপরীত্য আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নয়। অভিবাসীদের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্ট্যাডিজ ইন ওয়াশিংটনের এক জরিপে দেখা গেছে, নীতি-নির্ধারকদের (কংগ্রেস সদস্য, চার্চ নেতৃত্ব, ব্যবসায়ী মহল, ইউনিয়ন নেতৃত্ব, সাংবাদিক, শিক্ষকসমাজ প্রভৃতি) ১৮ শতাংশ মনে করেন, অভিবাসীদের সংখ্যা কমানো উচিত।

কিন্তু নাগরিকদের ৫৫ শতাংশই এ ব্যাপারে নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। কিন্তু উন্নতির পথে ধাবমান কানাডায় অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ানোর বিশেষ প্রয়োজনীয়তা থাকলেও নীতি-নির্ধারকেরা বাস্তবতার আলোকে ঠিকভাবে তা উপস্থাপন করতে পারছে না বলে অনেকেই মনে করেন। একদিকে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতি ক্রমশ বড় আকার নিচ্ছে। কানাডার বর্তমানের শনৈ শনৈ উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অভিবাসীদের জন্য দরজা খুলে রাখা অপরিহার্য। বর্তমানের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর যথাযথ ব্যবহার এবং শিক্ষা-প্রশিক্ষণে অধিক জোর দিয়ে হয়তো অভিবাসীর চাপ কমানো সম্ভব, কিন্তু তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, অভিবাসী-বান্ধব দেশ হিসেবে কানাডার অবস্থান অব্যাহত রাখা এবং নতুনদের স্বাগত জানানোর প্রয়োজনীতা থাকলেও নাগরিকদের মনোভাবকে উপেক্ষা করে রবার্ট কাপলানের প্রস্তাব মতো অভিবাসীর সংখ্যা অত্যাধিক পরিমাণ বৃদ্ধি হবে বোকামিরই নামান্তর। এতে সামাজিক ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটবে। বরং আরও সুচিন্তিতভাবে অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে অভিবাসীদের নিয়ে টানাপোড়েন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.