আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব..........

কোন একটি বিশেষ শ্রেনী'র বিশেষ পরীক্ষা'র বিশেষ প্রশ্ন এবং উত্তর। প্রশ্ন - গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচিত সরকারের দায়িত্বগুলো'কে ক্রমানুষারে সাজাও। বাংলাদেশ'কে উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। উত্তর - প্রথমেই পরীক্ষক মন্ডলিকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে এত ভাল এবং সময়োপযোগী একটি প্রশ্নে'র জবাব দেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্যে। বাংলাদেশ'কে উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়াতে আশা করছি আমার উত্তরটি আরও বেশি শক্তিশালি হবে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের দায়িত্বগুলো কি জানার পুর্বে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে আমরা কি বুঝি তা আগে জেনে নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে আমরা এমন একটি রাষ্ট্র কে বুঝি যে রাষ্ট্রে জনগন রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচিত করবেন সর্বসম্মত পদ্ধতি'র মাধ্যমে (গন ভোট)। আর নির্বাচিত পদ্ধতিটি পরিচালনা করবেন একটি সর্বসম্মত নির্বাচিত নিরপেক্ষ দল। কারো ব্যক্তিগত বা দলীয় ইচ্ছায় সে/ তারা যেমন কাজ করবে না, ঠিক তেমনি কারো ব্যক্তিগত বা দলীয় ইচ্ছায় তাকে/ তাদেরকে নির্বাচন করা হবে না। নির্বাচন পদ্ধতিটি হতে হবে সর্বসম্মত এবং সর্বদলীয়।

অধিকাংশ (প্রাপ্ত:বয়স্ক) জণগনে'র স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে তা হতে হবে সাফল্যমন্ডিত। বর্তমান সরকারের চাপিয়ে দেয়া পদ্ধতিতে তা অবশ্যই পরিচালিত হবে না। এত গেল নির্বাচন। এবার আসি সেই রাষ্ট্র'টি কেমন হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জণগন স্বাধীন হবে চলনে, বলনে (আচার-আচরনে), পরিধানে এবং কার্যক্রমে।

রাষ্ট্রিয় আইনের মধ্যে থেকে সে যে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে স্বাধীনভাবে। তাতে কারো বাঁধাদেয়ার কোন অধিকার থাকবে না। জণগন শুধুই ক্ষমতার (ক্ষমতায় আসার) উৎস হয়ে থাকবে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নামে পরিবারতন্ত্রে'র (.....'র কন্যা কিংবা .....'র স্ত্রী) নির্বাচনের হাতিয়ার হবেনা। এবার মূলপ্রসঙ্গে আসি।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচিত সরকারের দায়িত্বগুলো হচ্ছে: ১) জণগনের প্রয়োজন/ চাহিদাগুলোকে সনাক্ত করা, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ক্রম তৈরি করা এবং এক এক করে তা পুরনের চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে জনবহুল দরীদ্রদেশগুলোর (যেমন বাংলাদেশ) সরকারকে মুলত খাদ্য- বস্ত্র- বাসস্থান-জান/ মালের নিরাপত্ত্বা এই ক্রম অনুসরন করতে হবে। ২) খাদ্য'কে ভেজাল মুক্ত রাখার দায়িত্ব সরকারের। কে, কারা, কিভাবে খাদ্যে ভেজাল মিশাচ্ছে তা জেনে জণগনে'র কোন লাভ নেই। জণগন চায় ভেজালমুক্ত খাদ্য।

আর সরকার'কে তার সরবরাহ নিশ্চিৎ করতে হবে। সরকারে'র উচ্ছমহলে'র ছত্রছায়ায় কারা খাদ্যে ভেজাল মিশাচ্ছে তা সরকারকেই খুঁজে বেড় করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। ৩) দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব সরকারের। জণগনে'র ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দ্রব্যমুল্য রাখার সর্বচ্চো চেষ্টা করতে হবে। উৎপাদনস্থল থেকে ভোক্তার হাতে আসা পর্যন্ত দ্রব্যমুল্য যেন সর্বনিম্ন পর্যয়ে বৃদ্ধিপায় সেদিকে লক্ষ রাখা এবং তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের।

মধ্যসত্বভোগীরা সরকারের উচ্চমহলকে টাকা খাইয়ে যেনতেন ভাবে দ্রব্যমুল্য যেন বৃদ্ধি করতে না পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ও অবশ্যই সরকারের। এছারা সরকারি কোন মহলের মদতে চাঁদাবাজরা যেন মাল বহনকারি পরিবহন আটক করে চাঁদা আদায় করতে না পারে তা ও সরকারকেই নিশ্চিৎ করতে হবে। এই মধ্যসত্বভোগীরা আর চাঁদাবাজরা মিলেই যে দ্রব্যমুল্য সাধারন জণগনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে (গেছে) তা সরকারকে অনুধাবন করতে হবে। ৪) বাসস্থান সংকট জনবহুল দরীদ্র দেশগুলোর (যেমন বাংলাদেশ) একটি বড় সমস্যা। সরকার'কে এ সমস্যা সর্বনিম্ন পর্যয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

রাজধানী'র সকল সুযোগ সুবিধা (অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল) প্রথমে বিভাগীয় পর্যায়ে, পরে জেলা - উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরফলে রাজধানী'র উপরে জণগনের চাপ কমবে, বাসস্থান সংকট কমবে, জানজট কমবে এবং আরও কিছু সমস্যাও কমবে যেগুলো পরীক্ষক মন্ডলি (আপনারা) ভেবে নিতে পারেন। বাড়িওয়ালারা জুলুম করে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভারা আদায় করতে পারবে না এটাও নিশ্চিত হবে। ৫) জানমালের নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। একটি সরকার'কে অবশ্যই ব্যর্থ বলা হবে যদি সে জণগনে'র জানমালের নিরাপত্বা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়।

ইভটিজিং বন্ধ করা থেকে শুরু করে নিজ বাসভবনে ঘুমিয়ে থাকা মানুষটি'র জীবনে'র নিরাপত্বা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি সর্বন্নোত রাখতে সরকার'কে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলেই যেন নিশ্চিন্তে/ নির্ভয়ে চলাচল/ বসবাস এবং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে তা ও সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। ৬) সরকার'কে বিচার ব্যবস্থা সর্বন্নোত করার সর্বচ্চো চেষ্টা করতে হবে। জণগন'কে এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই যে কোন অপরাধিই আইনের উর্ধ্বে নয় সে যে ই হোক না কেন বা যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন।

সরকারি দালাল, আমলা আর মন্ত্রীরা'ও যে আইনে'র চোখে সমান তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রেসিডেন্ট কিংবা অন্য কারো খামখেয়ালিতে কোন চিন্হিত আসামি যেন ছাড়া পেয়ে না যায় আর নতুন করে অপরাধ সংঘটন করতে না পারে তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। ৭) রাস্তা-ঘাটে'র উন্নয়ন এবং সড়ক/ নৌ দুর্ঘটনারোধ করা সরকারের দায়িত্ব। একটি জীবন একটি পরিবারের চালিকাশক্তি হতে পারে এটা সরকারকে অনুধাবন করতে হবে। লাইসেন্সবিহীন, ভুয়া লাইসেন্সধারী কিংবা অযোগ্য (সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী'র দৃষ্টিতে যোগ্য) চালকদে'র খুঁজে বেড় করতে হবে এবং তারা যেন গাড়ি চালাতে না পারে তা সরকারকে কেই নিশ্চিত করতে হবে।

নৌ-পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রীবহন বন্ধ করতে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করতে হবে। ৮) শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার মান সর্বন্নোত করতে হবে। শুধু শিক্ষিত নয়, সুশিক্ষিত জনগোষ্টি তৈরি করতে হবে। নকল রোধ এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে হবে।

উন্নত বিশ্বে'র "সিজিপিএ" সিষ্টেম অনুসরন করলেই হবে না, তাদের পাঠদান পদ্ধতিও অনুশরন করতে হবে। শিক্ষাক্ষাতে সর্বোচ্চ ব্যয় খাতা-কলমে থাকলে চলবে না। শিক্ষার্থিরা বিদ্যাপিঠেই শিক্ষালাভ করছে, এজন্য তাকে কোচিং কিংবা প্রইভেট টিউটরের পিছনে জুতা ক্ষয় করতে হচ্ছেনা এটা নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারেরই। আইন করে কোচিং পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। শিক্ষক'কে তার লুব্ধপ্রায় মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হবে।

আর প্রয়োজনে সারকার তাকে বাধ্য করবে। ৯) ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বৃহৎ বিনিয়োগকারী'র বিনিয়োগের সুরক্ষা এবং সর্বোচ্চ ব্যবহর সুনিশ্চিত করতে হবে। শেয়ার বাজার'কে কারা নিজের ইচ্ছেমত ব্যবহার করছে এবং হাজার-হাজার কোটি টাকা আত্বসাৎ করছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব অবস্যই সরকারের। সরকারকে'ই জণগনের ক্ষতি'র দায়ভার নিতে হবে। সময়োপযোগী পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃত্রিম বাজার তৈরি বন্ধ করতে হবে।

আর ব্যার্থতার পুরো দায়ভার অবস্যই সরকারের। ১০) আধুনিক প্রযুক্তি (কম্পিউটার) ব্যবহারে জণগন'কে উৎসাহিত করার দায়িত্বও সরকারেরই। এই ক্ষেত্রে প্রযুক্তির মুল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে হবে। ইন্টারনেটে'র সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিৎ করতে হবে। প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চইত করতে ভর্তুকি কিংবা বিনা সুধে ঋন সুবিধা দিতে হবে।

উচু মানের স্যাটেলাইট চ্যানেল প্রদর্শনের পাশাপাশি নিম্নমনের (কুরুচিপুর্ন) চ্যানেল প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে নজর রাখতে হবে যেন নিজস্ব কৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। উপরোক্ত বিষয়গুলো আমলে নেয়ার পরে সরকার তার পিতৃহত্যার বিচার করবেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন এবং এমন অসংক্ষ হত্যার (অপরাধের) বিচার করবেন। এই বিচারের ক্ষেত্রেও তাকে ক্রম অনুসরন করতে হবে। যেমন আগে যুদ্ধাপরাধী, তার পরে পিতৃহত্যা এবং তারও পরে অন্যান্য অপরাধ (কেননা যুদ্ধাপরাধই সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল)।

ব্যক্তিগত আক্রোষে জাতীয় স্বার্থ'কে পিছনে ঠেলে দিলে অবশ্যই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এমনকি সরকারের চোখে কেউ যদি অপরাধি হয়ে থাকে তাকেও বিচার ব্যবস্থায় আনতে হবে। বিনা বিচারে একজন অপরাধিকেও (অনুমেয়) হত্যা করা যাবেনা। এগুলোও সরকারের দায়িত্বের অংশ। আর সরকার যদি তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অপরাধের বিচারেই উৎসাহিত হয় তাহলে ধরে নিতে হবে সরকার জণগনের নয় ব্যক্তি/ দলীয় স্বর্থে কাজ করছে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.