আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাদ্রী জারজিস ওরফে বুহাইরা বা বহিরার সাথে বালক মুহাম্মাদ (সা) -এর সাক্ষাৎ

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] খ্রীস্টান পাদ্রী জারজিস ছিলেন বসরার একজন বেশ জ্ঞানী ও পন্ডিত ব্যক্তি। ইসলামের ইতিহাসে তিনি বুহাইরা বা বহিরা নামে অধিক পরিচিত। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত সিরিয়ার একটি জনবহুল শহর ছিল বসরা।

বসরার এক টিলার উপর অবস্থিত ছিল পাদ্রী জারজিসের গীর্জা যা বুহাইরার গির্জা নামে সে সময় খুব নামকরা ছিল। পাদ্রী জারজিস ছিলেন তাওরাত-ইঞ্জিলসহ পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থের উপর একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। সেজন্যে দূরের এবং কাছের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকেরা প্রায়ই তার গির্জায় আসতো। ধারণা করা হয়, পাদ্রী জারজিস ছিলেন নেস্টোরিয়ান অথবা আরিয়ান। নেস্টোরিয়ান এবং আরিয়ান খ্রীস্টানদের দুটি বিলুপ্তপ্রায় ফেরকা।

ত্রিত্ববাদী রোমান ক্যাথলিকসহ অন্যান্য খ্রীস্টান ফেরকাদের থেকে এ দুটি ফেরকার ধর্মীয় বিশ্বাসে ছিল বিস্তর ফারাক। সে যাই হোক, বালক মুহাম্মাদ (সা) এর বয়স যখন মাত্র বারো তখন তার সাথে পাদ্রী জারজিসের সাক্ষাৎ হয় এই বসরা নগরীতেই। দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিবের বাড়িতেই শিশু মুহাম্মাদ (সা) বেড়ে উঠতে থাকেন। চাচা তাকে অসম্ভব আদর করতেন এবং মুহাম্মাদ (সা) -ও চাচা আবু তালিবকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতেন। আবু তালিব পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন এবং প্রতি বছরেই ব্যবসার কাজে সিরিয়া সফরে যেতেন।

মুহাম্মাদ (সা) এর বয়স যখন ১২ ব্ছর তখন একবার তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলে আবু তালিব তার অতি আদরের ভাতিজার আবদার উপেক্ষা করতে পারলেননা। প্রথমবারের মত বালক মুহাম্মাদ (সা) চাচার সাথে সিরিয়া সফরে বের হলেন। যাত্রাপথে বসরা পৌঁছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাঁবু ফেললেন। পাদ্রী জারজিস এ কাফেলার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হলেন। তাদের তিনি আমন্ত্রণ জানালেন।

আবু তালিব পাদ্রীর আমন্ত্রণ রক্ষা করলেন। এই প্রথমবার বালক মুহাম্মাদ (সা) কোন খ্রীস্টধর্মাবলম্বীর সম্মুখীন হলেন। পাদ্রী জারজিস একের পর এক প্রশ্ন করে যান বালক মুহাম্মাদ (সা) কে। এখানে উল্লেখ্য যে, পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থের আলোকেই পাদ্রী জানতেন যে, তাওরাত ,ইঞ্জিল সহ অন্যান্য গ্রন্থে যে মহান নবী বা পবিত্র আত্মার আগমণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তার আগমণ ইসমাঈলের বংশধরদের মধ্য থেকেই হবে। কারণ ইসহাকের বংশধর ইসরাঈলীরা একত্ববাদকে নিজেদের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।

তাদের দ্বারা একত্ববাদকে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া অসম্ভব। অন্যদিকে ভ্রান্ত খ্রীস্টানরা তো স্রষ্টার সংজ্ঞাই পরিবর্তন করে ফেলেছে। আর বাকিরা লিপ্ত পৌত্তলিকতা ও অন্ধকারে। বালক মুহাম্মাদ (সা) কে দেখে, তার সাথে কথা বলে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাদ্রীর চিনতে আর বাকী রইলো না যে এই সে বহু প্রতিক্ষীত শেষ নবী, ইতিহাসের গতি পরিবর্তকারী, আরবসহ সমগ্র পৃথিবী থেকে পৌত্তলিকতার বিনাশকারী, একত্ববাদকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠাকারী। পাদ্রী বুহাইরা আবু তালিবকে মুহাম্মাদ (সা) কে সিরিয়ায় নিয়ে যেতে নিষেধ করেন; কারণ সেখানকার ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানরা তার ক্ষতি করতে পারে।

পাদ্রীর উপদেশ মত আবু তালিব মুহাম্মাদ (সা) কে কয়েকজন ভৃত্যের মাধ্যমে মক্কায় পাঠিয়ে দেন। পাদ্রীর সাথে বালক মুহাম্মাদ (সা) এর সাক্ষাতের এই ঘটনা অমুসলিমদের লেখনীতেও পাওয়া যায়। যেমন, সিরিয়ার আরেক খ্রীস্টান পন্ডিত জন অব দামাস্কাসের লেখনীতে। তবে জনের দৃ্ষ্টিতে বহিরা ভিন্ন মতাবলম্বী (ত্রিত্ববাদের বিরোধিতাকারী সবাই) এবং মুহাম্মাদ (সা) সত্য নবী নন। বহিরা ও জন দুজনই ইসলামের ইতিহাসের সাক্ষী, তবে একজন সত্যকে বুঝতে পেরেছিল আর আরেকজন ভ্রান্ত পথেই ছিল আজীবণ।

শেষ করবো বাইবেলের একটি বাণী দিয়ে যেটা যীশু দিয়েছিলেন তার অনুসারীদের যাতে তারা মহান নবীকে সহজে চিনে নিতে পারে। বাণীটি ইংরেজীতে এরকম, I have yet many things to say unto you, but ye cannot bear them now. Howbeit when he, the Spirit of truth, is come, he will guide you into all truth: for he shall not speak of himself; but whatsoever he shall hear, [that] shall he speak: and he will shew you things to come. He shall glorify me: for he shall receive of mine, and shall shew [it] unto you. gospel of john chapter 16 verse 12-14 তথ্যসূত্রঃ Monastery of Bahira the monk নূরনবী মোস্তফা (সা) মুহাম্মদের শৈশব ও কৈশোরকাল en.wikipedia.org/wiki/Bahira  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.