আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুগো স্যাভেজ : সেনানায়ক থেকে দেশনায়ক

চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি স্যাভেজের জন্ম হয় ২৮ জুলাই, ১৯৫৪। তাঁর বাবা মা দুজনেই ছিলেন গ্রামের বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভেনেজুয়েলার এক নিম্নমধ্যবিত্ত গ্রামীণ পরিবেশে স্যাভেজ এর বড় হয়ে ওঠা। স্যাভেজ মানুষ হন তাঁর ঠাকুমার কাছে, যিনি ছিলেন এক ধর্মপ্রাণা খ্রীষ্টান, আর এর প্রভাব পড়েছিল এমনকী সমাজতন্ত্রে উদ্বুদ্ধ স্যাভেজের ওপরেও। ছোটবেলায় তাঁর আগ্রহের বিষয়ের মধ্যে ছিল ছবি আঁকা, বেসবল খেলা আর ইতিহাস পড়া।

সতেরো বছর বয়সে তিনি ছাত্র হিসেবে কারাকাসের মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। এখানে ছাত্র অবস্থায় থাকাকালীন তিনি গল্প, কবিতা লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে ছবি আঁকা এবং নাট্যচর্চাও। এসময়েই তিনি সাইমন বলিভার এবং চে গেভারার রচনা পড়েন ও তার দ্বারা বিশেষ অনুপ্রাণিত হন। ১৯৭৪ এ পেরুর মুক্তিযুদ্ধের সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিনি ভেনেজুয়েলার প্রতিনিধি দলে নির্বাচিত হন।

পেরুতে তৎকালীন বামপন্থী শাসক আলাভারাদোর বক্তৃতা তাকে উজ্জীবিত করে। পানামার বামপন্থী রাষ্ট্রপতি ওমার টোরিজোস দ্বারাও তিনি ভালো মাত্রায় প্রভাবিত হয়েচিলেন। অন্যদিকে চিলিতে এই সময়কালে প্রতিবিপ্লব সাধিত হয় সি আই এ-র প্রত্যক্ষ মদতে। চিলির মার্কিন বশংবদ নয়া সেনা শাসক পিনোচেত সম্পর্কে স্যাভেজ বিতৃষ্ণা ছিল সীমাহীন। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর যোগাযোগ রক্ষাকারী অফিসার হিসেবে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

সেইসময় স্যাভেজের বাহিনীর ওপর দায়িত্ব পড়েছিল একটি মার্ক্সবাদী লেনিনবাদী অভ্যুত্থানকে দমন করার। যদিও স্যাভেজ এই কাজে যোগ দেবার আগেই এই অভ্যুত্থান মোটামুটি সমাপ্ত হয়ে এসেছিল, কিন্তু অভ্যুত্থানকারীদের ফেলে রেখে যাওয়া বেশ কিছু বইপত্র স্যাভেজের হস্তগত হয়। বইগুলির লেখকদের মধ্যে ছিলেন কার্ল মার্কস, লেনিন এবং মাও। স্যাভেজ এই সমস্ত লেখালেখি মন দিয়ে পড়েন। এই বইগুলি ভেনেজুয়েলায় একটি বামপন্থী সরকারের প্রয়োজনিয়তা সম্পর্কে স্যাভেজের ভাবনাকে আরো অনেকদূর উসকে দেয়।

সেনাবাহিনীর মধ্যেই অল্পসংখ্যক অনুগামী নিয়ে তিনি ‘ভেনেজুয়েলান পিপলস রিপাবলিকান আর্মি’ নামে একটি গোপন সংগঠন তৈরি করেন। এই সময়ে স্যাভেজ ও তার সঙ্গীরা একটি মধ্যপন্থী নীতিমালায় বিশ্বাসী ছিলেন, তা পুরোপুরি দক্ষিণপন্থী বা বিপ্লবী কোনটাই ছিল না। ভেনেজুয়েলার বিভিন্ন বাম মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জোটের আকাঙ্ক্ষায় স্যাভেজ এই সময়পর্বে তাদের সঙ্গে অনেকগুলি গোপন বৈঠক করেন। ভেনেজুয়েলান পিপলস রিপাবলিকান আর্মি গঠনের পাঁচ বছর পর স্যাভেজ সেনাবাহিনীর মধ্যে আরো ব্যাপক পরিসর সমৃদ্ধ একটি নতুন গোষ্ঠী গঠন করেন, যার নাম দেওয়া হয় বলিভারীয় বিপ্লবী বাহিনী - ২০০। জামোরা, সাইমন বলিভার এবং রডরিগেজ এর মতো সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ইতিহাস পুরুষদের প্রেরণা এর পেছনে সক্রিয় ছিল।

পুঁজিবাদ এবং মার্কসবাদ উভয়ের বেশ কিছু উপাদানকে যুক্ত করে বলিভারীয় এই বাহিনী মূলত ভেনেজুয়েলা এবং লাতিন আমেরিকার সমকালীন নয়া উদারনৈতিক অর্থব্যবস্থাকে আঘাত করতে চেয়েছিল আর সরে আসতে চেয়েছিল সোভিয়েত ধাঁচের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকেও। ইতোমধ্যে সেনাকর্তাদের একাংশ স্যাভেজ এর বলিভারীয় বিপ্লবী বাহিনীর বিষয়ে ইঙ্গিৎ পান, কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাকে বরখাস্ত করা যায় নি। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রত্যন্ত প্রদেশে। সেখানে স্যাভেজ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৮৮ তে স্যভেজ মেজর পদে উন্নীত হন এবং আবার ফিরে আসেন রাজধানী কারাকাসে।

ইতোমধ্যে ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে জিতে পুনঃনির্বাচিত হন রাষ্ট্রপতি পেরেজ এবং জিতে এসেই ভরতুকিতে কাটছাঁট শুরু করেন। জনগণের বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তাকে রোখার জন্য নামানো হয় হয় নির্মম দমন নীতি। এতে মারা যান ২৭৬ জন, বেশ কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। দেশজোড়া দমন, দুর্নীতি আর রাজনীতিবিদ ও পুঁজিপতিদের মধ্যে অশুভ জোটের প্রেক্ষিতে স্যাভেজ মিলিটারির মধ্যে একটি অভ্যুত্থান বা ক্যু দে তা সংগঠিত করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯২ এই অভ্যুত্থানের দিন নির্ধারিত হন।

ঠিক হয় এইদিন স্যাভেজের নেতৃত্বাধীন পাঁচটি সেনা ইউনিট রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, সেনা এয়ারপোর্ট, সেনা জাদুঘর এর দখল নেবে। রাষ্ট্রপতি পেরেজকে বন্দী করা ছিল প্রাথমিক লক্ষ্য। পরবর্তী সময়ে করা বিশ্লেষণ অনুযায়ী সেনাবাহিনীর মধ্যে স্যাভেজের দশ শতাংশ সমর্থন থাকলেও নানারকম ভুলভ্রান্তি, দুর্বল পরিকল্পনা, বিশ্বাসঘাতকতা, অন্তর্ঘাত প্রভৃতি কারণে এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বুঝতে পেরে স্যাভেজ সরকারের হাতে ধরা দেন। তাঁকে জাতীয় দূরদর্শনে বক্তব্য রাখার সুযোগের শর্তের বিনিময়ে তিনি অভ্যুত্থানে প্রস্তুত সেনাদের অভ্যুত্থান প্রয়াস সংবরণ করতে বলেন।

মাত্র সামান্য সময়ের বক্তব্যে তিনি জানান এবারের মতো তারা তাদের সংকল্পে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার সুযোগ আসবে আর দেশকে আরো ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এরপর স্যাভেজকে বন্দী করা হয়। বন্দিত্বকালীন সময়েই লক্ষিত হয় স্যাভেজের পক্ষে জনসমর্থন ক্রমশ বাড়ছে। বছর খানেকের মধ্যে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি পেরেজ দুর্নীতির দায়ে পদ ছাড়তে বাধ্য হলে ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন হয়।

নতুন রাষ্ট্রপতি রাফায়েল ক্যালডেরা ক্ষমতায় এসে স্যাভেজ ও অন্যান্য বন্দী অভ্যুত্থানকারীদের মুক্তি দেন। জেলের বাইরে এসে শুরু হয় স্যাভেজের রাজনৈতিক জীবনের নতুন অধ্যায়। ব্যাপক সামাজিক অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি ১৯৯৮ সালের ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শ্রমিক শ্রেণি ও দেশের গরীব জনগণের বিরাট সমর্থন স্যাভেজকে বিজয়ী করে। শুরু হয় রাষ্ট্রনায়ক স্যাভেজের পথ চলা ও ভেনেজুয়েলার রূপান্তরের ইতিহাস, যা বদলে দিতে থাকে গোটা লাতিন আমেরিকাকে।

ক্ষমতাসীন হয়ে স্যাভেজ প্রথমেই যে কাজগুলো করা শুরু করেন তার মধ্যে ছিল ‘বলিভার ২০০০ পরিকল্পনা’ নামক একগুচ্ছ প্রকল্প শুরু করা। এর আওতায় সড়ক ও গৃহ নির্মাণ ও বুনিয়াদী স্বাস্থ্য পরিষেবা, টীকাকরণ এর কাজ ব্যাপক মাত্রায় শুরু হয়। বড় বড় ব্যবসা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কৃষিজোতের কর ফাঁকি রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শাসনকালের প্রথম পর্বে স্যাভেজ পুঁজিবাদের ঘোষিত বিরোধী ছিলেন না, কেবল নয়া উদারনৈতিক লুন্ঠন ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি সহনীয় পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্রিয় ছিলেন। এজন্য দেশের বিরাট তৈল ভাণ্ডারকে তিনি কাজে লাগান।

কিউবাকে সস্তায় প্রচুর তেল দেয়ার বিনিময়ে সেখানকার হাজার হাজার চিকিৎসক ভেনেজুয়েলার গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেবার কজ শুরু করেন। স্যাভেজ ক্ষমতাসীন হবার যে নতুন সংবিধান তৈরি হয় তার ৮৩, ৮৪ এবং ৮৫ নম্বর ধারায় স্বাস্থকে মৌলিক সামাজিক অধিকার বলে ঘোষণা করা হয়েছে, বলা হয়েছে তা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শুধু আপ্তবাক্য আওড়ানো নয়, কথাগুলোকে বাস্তবে পরিণত করতে স্যাভেজ আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছেন। জনস্বাস্থ্যর পাশাপাশি স্যাভেজের সরকার বিশেষ নজর দেয় জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার দিকটিতে। নেওয়া হয় ‘মিশন মারকাল’ প্রকল্প।

গরীবদের বিনা মূল্যে খাদ্য সরবরাহের জন্য দেশজুড়ে একশোটি কেন্দ্র স্থাপিত হয়, স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহের জন্য খোলা হয় ২৫,০০০ এরও বেশি বিপণি। শিক্ষার উন্নতির লক্ষ্যে চালু করা হয় মিশন রিবাস। এর মাধ্যমে নিখরচায় শিক্ষা, খাবার, থাকার ব্যবস্থা/যাতায়াতের অর্থ দেওয়া হয়। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য শিক্ষা বাসস্থান আর খাবারের অধিকার কে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রের সে ব্যাপারে দায়িত্ব তুলে নেওয়াই নয়, এমনকী শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে নান্দনিক বিকাশের দিকেও স্যাভেজের ভেনেজুয়েলা সরকার বিশেষ নজর দেয়। ভেনেজুয়েলার সংসদে পাশ হওয়া একটি আইন অনুসারে ভেনেজুয়েলার প্রত্যেক শিশু কিশোরের যন্ত্রসঙ্গীত শেখার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে শুধু কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণাতেই স্যাভেজ আটকে থাকেন নি। ক্রমশ তাঁর ভাবনা আরো প্রগতির দিকে এগিয়েছে। ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থানের পরেই স্যাভেজ ‘মানবিক পুঁজিবাদের’ ধারণা থেকে ক্রমশ সরে আসতে থাকেন। মানবিক পুঁজিবাদ থেকে সরতে সরতে তিনি এসে পৌঁছন ‘একুশ শতকের সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার স্থপতির জায়গায়। ভূমি সংস্কার কর্মসূচী প্রথম থেকেই স্যাভেজের গুরুত্ব তালিকায় ওপর দিকে ছিল, ক্রমশ জোর পড়তে থাকে সমবায়ের ওপর।

দেশজুড়ে হাজার হাজার সমবায় গড়ে ওঠে, পেছনে সক্রিয় ছিল রাষ্ট্রের সমর্থন। বস্তুতপক্ষে ভেনেজুয়েলায় সমবায় আন্দোলনের পরিধি এত ব্যাপক যে তা এক স্বতন্ত্র চর্চার বিষয়। স্যাভেজের সরকারের আরেকটি গুরূত্বপূর্ণ দিক কারখানার ব্যবস্থাপণায় শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। তবে স্যাভেজ সারা বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছেন তার তীব্র সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী অবস্থানের জন্য, লাতিন আমেরিকা জোড়া এক প্রতিবাদী অক্ষর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতন এবং চীনের সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির পথে হাঁটার সুবাদে সারা বিশ্বে যখন মার্কিন দাপট এবং নিও লিবারাল অর্থনীতির একচেটিয়াকরণ শুরু হয়, তখন লাতিন আমেরিকা থেকেই প্রথম অন্যস্বর শোনা গিয়েছিল।

এই অঞ্চলে মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে প্রায় একক কন্ঠস্বর হয়ে পড়া দ্বীপরাষ্ট্র কিউবার পাশে এসে দাঁড়ায় স্যাভেজের নেতৃত্বাধীন ভেনেজুয়েলা। বিশ্বের অন্যতম প্রধান তৈল রপ্তানীকারক এই দেশ তার তেলের খনিগুলোর জাতীয়করণ করার দিকে এগোনোর মধ্য দিয়ে মার্কিন ও অন্যান্য বহুজাতিক কর্পোরেটদের তেলের থেকে বিপুল মুনাফা অর্জনের রাস্তা বন্ধ করে। মার্কিন কর্পোরেট সংস্থাগুলি আগে ভেনেজুয়েলায় ব্যাপক অর্থনৈতিক লুন্ঠন চালাত, স্যাভেজ সরকারের নীতি সেখানে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা ও দেশের ভেতরে দারিদ্র দূরীকরণ, জনস্বাস্থ্য জনশিক্ষা প্রসারের কাজ দ্রুত গতিতে চলতে থাকে। ভেনেজুয়েলায় স্যাভেজের এইসব কর্মকাণ্ডে উৎসাহ সৃষ্টি হয় পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতেও।

লাতিন আমেরিকার অনেকগুলো দেশে সামজিক আন্দোলন গতি পায়। বিভিন্ন দেশে এই আন্দোলনগুলো নতুন নতুন প্রেসিডেন্টকে বিজয়ী করে দেশ শাসনের দায়িত্ব দেয়। ২০০২ সালে চিলেতে রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে বিজয়ী হন রিকার্ডো লাগোস, ব্রাজিলে লুলা। ২০০৩ সালে আর্জেন্টিনার নির্বাচনে বিজয়ী হন নেসটর কির্কনার, উরুগুয়েতে ২০০৫ সালে নির্বাচনে জেতেন তাবারে ভাজকুয়েজ। ২০০৬ সালে চিলেতে মিশেল বাশালেত, বলিভিয়ায় ইভো মোরালেস, ইকুয়েডরে রাফায়েল কোরেয়া ও নিকারাগুয়ায় ড্যানিয়েল ওর্তেগা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

২০০৭ সালে আর্জেন্টিনায় ক্রিস্টিনা ফের্নানদেজ ও গুয়েতমালায় আলভারো কলোম রাষ্ট্রপতি পদে বসেন। প্যারাগুয়েতে ২০০৮ সালে ফের্নাদো লুগা এবং এল সালভাদোরে ২০০৯ সালে মরিসিও ফুয়েনেস রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সে বছরই ইকুয়েডরে রাফায়েল কোরেয়া ও বলিভিয়ায় ইভো মোরলেস দ্বিতীয় বারের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। উরুগুয়েতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন হোসে মুজিকা। এই নতুন অধ্যায়কে স্যাভেজ চিহ্নিত করেন লাতিন আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই এর প্রবাদপ্রতিম নেতা সাইমন বলিভারের নামে।

তৈরি হয় ‘বলিভারিয়ান আল্যায়েন্স ফর দ্য আমেরিকান্স’ [ALBA]। ভেনেজুয়েলা আর কিউবা ছাড়াও এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আছে অ্যান্টিগা, বলিভিয়া, ডমিনিকা, ইকুয়েডোর, নিকারাগুয়া, সেইন্ট ভিনসেন্ট, সুরিনাম, সেইন্ট লুসিয়া। তারা একটি নতুন মুদ্রা [SUCRI] র মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক আদানপ্রাদানের দিকে এগোচ্ছেন, উদ্দেশ্য মার্কিন ডলারের একাধিপত্যর বাইরে আসা। ইতোমধ্যেই ভেনেজুয়েলা ও ইভো মোরালেস এর নেতৃত্বাধীন বলিভিয়ার মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পেরু, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মত বিভিন্ন দেশের সামাজিক আন্দোলন মার্কিন বিরোধী এই নতুন অক্ষকে শক্তিশালী করছে।

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এই আন্দোলনের জোয়ারের সময় স্যাভেজের মৃত্যু নিঃসন্দেহে একটি বড় আঘাত। কিন্তু ভেনেজুয়েলা তথা দক্ষিণ আমেরিকার সংগ্রামী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মানুষ যে ঐতিহাসিক লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন, সমস্ত প্রতিকূলতাকে পেরিয়ে তারা তাতে অবিচল থাকবেন, সাম্প্রতিক কয়েক বছরের সংগ্রামের ইতিহাস তেমন প্রত্যয়ই জাগায়। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.