আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুগো শ্যাভেজ ও ভেনিজুয়েলার ভবিষ্যৎ

I want to make me as a blog writter. আনলাকি থার্টিনের দুর্ভাবনায় ভেনিজুয়েলাবাসী। দুঃসংবাদ দিয়েই বছর শুরু হয় তাদের। মৃত্যু পথযাত্রী প্রিয় নেতা প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ। এর আগে তার এত অসুস্থতার কথা কাউকে জানতে দেয়া হয়নি। তবে ১৮ মাসে চারবার শ্যাভেজের শরীরে অস্ত্রোপাচারের পর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জাতিকে জানানো প্রয়োজন মনে করে কারাকাস।

৩ জানুয়ারী তথ্যমন্ত্রী আর্নেস্তো ভিলেগাস জানান, ৫৮ বছর বয়সী বিপ্লবী নেতার ফুসফুসে মারাতœক সংক্রমণ। শাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। তখনও তিনি কিউবার রাজধানী হাভানার কিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর শ্যাভেজের শাসনালিতে ছয় ঘন্টার অস্ত্রোপাচারে অনাকাঙ্খিত ভাবে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। তারপর তিনি দীর্ঘদিন কিউবার হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকার পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারী দেশে ফেরেন।

বর্তমানে তিন ভেনিজুয়েলার সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন শ্যাভেজ দেশের মাটিতে শেষ নিঃশাস টুকু ত্যাগ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য কারাকাসের মাটিতে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এদিকে অক্টোবর ২০১২ সালের নির্বাচনে ক্যান্সার আক্রান্ত শরীর নিয়েও তিনি বিপুল ভোটে বিরোধীদের হারিয়ে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত ১০ জানুয়ারী চতুর্থ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবার কথা ছিলো হুগো শ্যাভেজের। কিন্তু কিউবায় ক্যান্সারের অপারেশনের কারণে তাঁর এই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাটুকু পালন করা সম্ভব হয়নি।

তবে তার শপথ গ্রহন না করার কারণে দেশটিতে আইনগত ভাবে কোন সঙ্কট সৃষ্টি হয়নি। কারণ দেশটির সুপ্রিমকোট শ্যাভেজের শপথ গ্রহন স্থগিত রাখাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে। এমনকি শ্যাভেজ পরে যে কোন সময় শপথ নিতে পারবেন বলে রায় দেয় দেশটির সুপ্রিমকোট। এদিকে গত অক্টোবরের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজিত বিরোধীরা ভেবেছিল, শ্যাভেজের অনুপস্থিতিতে জোড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে সমাজতান্ত্রিক সরকারের ভিত নড়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি বরং শ্যাভেজের প্রতি আনুগত্য অটল রাখার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানই।

হুগো শ্যাভেজ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যান্সার ও স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর তিনি চতুর্থবার গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। শ্যাভেজ ১৯৫৪ সালে শ্রমিক শ্রেনীর পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি তার স্কুল শিক্ষক পিতার দ্বিতীয় সন্তান। তরুন বয়সে শ্যাভেজস রাজনীতি নয়, বরং বেজবল স্টার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

তিনি ১৭ বছর বয়সে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ভেনিজুয়েলার স্বাধীনতার বীর সিমন বলিভারের রিভুলুশনারি বলিভারিয়ান মুভমেন্ট নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং সৈন্যদের সংগঠিত করতে শুরু করেন। ১৯৯২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অসন্তোষের সুযোগে শ্যাভেজ অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং দুই বছর তাকে কারাগারে কাটাতে হয়। ১৯৯৪ সালে প্রেসিডেন্ট রাফায়েল ক্যালডেরা ক্ষমা করে দেয়ার পর শ্যাভেজ কারাগার থেকে মুক্তি পান।

১৯৯৮ সালে তিনি ভেনিজুয়েলার গরিবদের মধ্যে তেলসম্পদের সুবিধা বন্টন করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্ষমতায় এসেই তিনি তার সোস্যালিস্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালান। নব্য উদারপন্থীদের বিরাষ্ট্রীকরণ কর্মসূচী বাতিল করে তিনি প্রধান প্রধান শিল্প কারখানা গুলো রাষ্ট্রায়ত্ত করেন। বিশ্বের বৃহত্তম তেলের আধার ভেনিজুয়েলায় তিনি ২০০১ সালে এক নতুন আইন চালু করেন যার বলে বিদেশী তেল কোম্পানিগুলোর গায়ে প্রবল আঘাত হানা হয়। পূর্বে এক্সন, বিপি, শেল ও শেভরন ভেনিজুয়েলা থেকে আহরিত তেলের বিক্রয়লব্ধ অর্থের ৮৪ ভাগ পেত।

সেটা এখন ৭০ ভাগ। সরকারকে আগে রয়ালিটি দেয়া হত মাত্র ১ শতাংশ। এখন দিতে বাধ্য করা হল ১৬ শতাংশের বেশি। এভাবে আদায়কৃত বিপুল অর্থ দারিদ্র ও নিরক্ষরতা বিমোচনে ব্যয় করা হলো। গত ১২ বছরে ভেনিজুয়েলা সামাজিক খাতে প্রভুত সাফল্য অর্জন করেছে।

ঋণের নামে আইএমএফের শোষণ মোকাবেলায় তিনি পেট্রো ডলার কাজে লাগিয়েছিলেন। কিউবা বিপ্লবে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। ল্যাতিন আমেরিকার মিত্রদেশগুলোর কাছে তিনি কম মূল্যে তেল সরবরাহ করেছেন। ইরানের সঙ্গে মেত্রী করেছেন। লিবিয়ার লৌহ মানব গাদ্দাফিকে সমর্থন দিয়েছিলেন।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই পাশ্চাত্য ও তাদের মিডিয়ার বিরাগভাজন হয়েছেন শ্যাভেজ। তারা তাকে বিতর্কিত, স্বৈরাচারী, একনায়ক প্রভৃতি বিশ্লেষনে হেয় করার চেষ্টা করেছে। কেননা তিনি সর্বদা মার্কিনসহ তার মিত্রদের সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। তিনি জাতিসংঘে দেয়া বক্তৃতায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশকে ‘শয়তান’হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। শ্যাভেজ ভেনিজুয়েলায় গরিবদের ইমেজ হিসেবে পরিচিত।

সেই শ্যাভেজ কারাকাসের জনগনের কাছে ফিরে এসেছেন। কিন্তু ভেনিজুয়েলার ক্যান্সার আক্রান্ত প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ কি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের হাল ধরতে পারবেন? বিষয়টি এখনও পরিস্কার নয়। কেননা মৃত্যুর সঙ্গে তার লড়াই পুরোদস্তর চলছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ক্ষমতা গ্রহন করা তার পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে কি না তা কেউ বলতে পারছে না। তবে তিনি কিউবা থেকে দেশে ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

দেশে ফেরার পর থেকে তার কোন ছবিও প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি কেউ দেখাও করতে পারছে না। তাই অনেকেই মনে করছেন, যদিও শ্যাভেজ দেশে ফিরেছেন, তারপরও স্বাস্থের ক্রমাবনতির কারণে তাকে হয়ত ক্ষমতা থেকে সরে সরে দাঁড়াতে হবে। বস্তুতপক্ষে তার দল পিএসইউডি এবং ভেনিজুয়েলাবাসী এই অমোঘ সত্যটি মেনে নিয়েছে এবং তার জন্য তারা শ্যাভেজ-উত্তর পরিস্থিতি বরণ করে নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ সুস্থ হয়ে না উঠলে কি দেশটি সাংবিধানিক সংকটে পড়বে? যদি প্রেসিডেন্ট অস্থায়ীভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে না পারেন সম্ভবত একজন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট তার স্থলাভিষিক্ত হবেন।

তবে তিনি মৃত্যুবরণ করলে বা অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়লে সংবিধান অনুসারে ৩০ দিনের মধ্যে নতুনভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। অর্থাৎ এটা সত্য যে, হুগো শ্যাভেজ যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, ক্ষমতার রদবদল নিয়ে ভাবছে ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট পার্টি। হুগো শ্যাভেজের মৃত্যু বা তার গুরতর অসুস্থতা নিয়ে নানামুখি রটনাকে ভেনিজুয়েলায় অনিশ্চয়তা আর নৈরাজ্য সৃষ্টির মনস্তাত্বিক লড়াই মনে করা হলেও দু’টি ক্ষেত্রেই পুনঃনির্বাচন অনিবার্য। এদিকে প্রেসিডেন্টের শপথ না হওয়ার পর থেকেই বিরোধীরা নির্বাচনের জন্য দাবি জানাতে থাকে। তবে দেশটির সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পর বিরোধীদের বিতর্ক স্থমিত হয়ে যায়।

কিন্তু বর্তমান সময়ে শ্যাভেজ দেশে ফেরার পর আবারো অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। এদিকে তিনি যদি ক্ষমতা ছেড়ে দেন তবে কে হবেন প্রেসিডেন্ট? এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, গত বছর ৮ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে হুগো শ্যাভেজ প্রথমবারের মত বলেছিলেন, কোন অনাকাঙ্খিত পরিবেশ সৃষ্টি হলে এবং তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তিনি তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাই এটা সুস্পষ্ট যে, নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রার্থী হবেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। আর তাকে ভোটে জয়ী দেখতে শ্যাভেজ দেশে এসেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। সংবিধান অনুসারে পার্লামেন্টের স্পিকার দিউসদাদো কেবেলো অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন।

আবার বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, কেবেলো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও হতে পারে। কেননা তিনি মাদুরোর প্রতিদ্বন্দ্বি। অন্যদিকে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক ইউনিটি (এমইউডি) অ্যালায়েন্সের প্রার্থী গত নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। কারাকাসের গভর্নর হেনরিক ক্যাপরিলস ছিলেন শ্যাভেজের প্রতিদ্বন্দ্বি। শ্যাভেজ যদি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহনে ব্যর্থ হন এবং আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে হেনরিক ক্যাপরিলসর সামনে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়।

কেননা এক জড়িপে দেখা যায় যে, ক্যাপরিলস শ্যাভেজের অনুসারী অন্য যে কোন প্রার্থীর চেয়ে জনপ্রিয়। অবশ্য প্রেসিডেন্টের উত্তরসূরী হিসেবে নিকোলাস মাদুরো নির্বাচনে অংশ নিলে শ্যাভেজের ইমেজের কারণে তার সহজে জয়লাভ করারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শ্যাভেজের পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে যিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন না কেন, তাকে কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থা মোকাবেলা করতে হবে। দেশটির অর্থনীতির গতি এখন শ্লোথ হোয়ে পড়েছে। মুদ্রাস্ফিতি এখন ১৮ শতাংশ, সম্ভবত ভবিষ্যতে আরো বাড়তে পারে।

তবে নিকোলাস মাদুরো যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন, তার প্রধান কাজ হবে দলের মধ্যকার সংঘাত বন্ধ করা। যদিও শ্যাভেজ তার ব্যক্তিত্বের জন্য সহজেই অন্তর্কোন্দল সামাল দিতে পারতেন। কিন্তু শ্যাভেজ পরবর্তী সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করাও খুব সহজ হবে না। কারণ কট্টর বামপন্থী হিসেবে অনেকেই মাদুরোর আস্থাভাজন হতে পারবে না। তবে যাই হোক দুরারোগ্য কান্সার যদি শ্যাভেজকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে অথবা তিনি যদি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান তারপরও শ্যাভেজের মতাদর্শ বা তার ভিত্তিতে তৈরি সমাজ বা রাষ্ট্রকাঠামো এক নিমিষেই চুড়মার হবার নয়।

কেননা দরিদ্র সংখ্যাধিক্যরা তাদের নায়ককে স্বরণ রাখবে চিরকাল। শুধু ভেনিজুয়েলা বা ল্যাতিন আমেরিকা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরের নির্যাতিত মানুষের মনেও শ্যাভেজ থাকবেন চিরকাল অম্লান। কেননা এই সাহসী মানুষটিই মার্কিন অভিযানে আফগান শিশুর লাশের ছবি দেখিয়ে বলেছিলেন, সন্ত্রাস দিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়া যায় না। যা বিশ্বের অন্য কোন নেতা দ্ব্যর্থ কন্ঠে বলার সাহস পাননি। তাই অনেকেই মনে করেন,বলিভারিয়ান মুভমেন্টের বর্ধিত কলেবরকে তার মৃত্যুর পর হয়তো বলা হবে শ্যাভিজম।

আর শ্যাভিজমকে ঘিরেই হয়তো আবর্তিত হবে ভেনিজুয়েলার রাজনীতি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.