আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা- নো মোর সুইসাইড

মরিতে চাহিনা আমি এ সুন্দর ভুবনে- তারপরও কেনো মানুষ আত্মহত্যা করে? ১.বিষণ্ণতা বা depression - আত্মহত্যার প্রধান কারণ হিসাবে দায়ী করা যায় একে। একেকজন মানুষ কেনো যে বিষন্নতায় ভোগে তার কারণও বিভিন্ন। সোনার পালঙ্কে শুয়েও, সম্পূর্ণ স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনেও কেউ কেউ ভোগে ভয়াবহ বিষণ্ণতায়। বিষন্নতার শুরু শৈশবে। শিশু বয়সের বিভিন্ন ঘটনা পরবর্তী জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।

এর ভেতরে আছে শিশু বয়সে যৌন, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন, বাবা-মার দাম্পত্য কলহ বা ঝগড়া বিবাদ, কোনও ধরণের ভয়াবহ ঘটনা নিজের চোখে দেখা এসব। এছাড়াও বংশগত কিছু কারণে অনেকে বিষণ্ণতায় ভোগে। ২.মানষিক সমস্যা- সিজোফ্রেনিয়া জাতীয় মানসিক রোগ আত্মহত্যার আরেকটি কারণ। আরও নানা ধরণের মানসিক রোগ চিকিৎসার অভাবে রোগী আত্মহত্যা প্রবনতায় ভুগতে পারে। ।

যদিও বিষণ্ণতাকেও এক প্রকার মানষিক রোগ বলা হয়। ৩. ক্রোধে, অভিমানে বা ঝোঁকের বশে- ক্রোধ, অভিমান বা অ্যালকোহল, ড্রাগ ইত্যাদির প্রভাবে ঝোঁকের বশে আত্মহত্যা চেষ্টা করে অনেকেই। পরবর্তীতে অনেকেই মনে করতে পারে না কেন এরকম তারা করেছিল। বিষন্নতা, হতাশা, ক্রোধ বা অভিমান গুলির পেছনের কারণগুলি, আর্থিক দৈন্য,নারী-পুরুষের প্রেমঘটিত সমস্যা,জীবনে কোনও 'ট্রমাটিক' ঘটনা,বড় ধরণের কোনও ক্ষতি, সামাজিক চাপ ইত্যাদি। তবে এই ধরণের সমস্যাগুলোর ভিতর দিয়ে আমরা জীবনে কম বেশি প্রায় প্রত্যেকেই যাই কিন্তু সবাই আত্মহত্যা করি না।

তাই 'কারণের পিছনের কারনগুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আত্মহত্যার প্রবনতা সিম্পটম বা এ রকম মনোভাব অবদমিত রাখা মানুষগুলরো আচরণে অনুমান করা যায় সে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে কিনা যেমন- ক) মৌখিক হুমকিঃ 'আমি তো বোঝা', 'আমাকে ছাড়া তোমরা ভালো থাকবে', 'চলে যাব আমার সব কিছু গুছিয়ে' ইত্যাদি। খ) আত্ম-ধ্বংসমূলক কাজকর্মঃ যেমন নিজের শরীরে কাটাকাটির চেষ্টা করা, অ্যালকোহল বা ড্রাগস গ্রহন, হঠাৎ আগ্নেয়াস্ত্র বা ঘুমের ওষুধ ইত্যাদি কেনা। গ) গুটিয়ে নেওয়াঃ হঠাৎ করে কাজকর্ম, পড়াশুনা বা বন্ধু-বান্ধব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, নিজের প্রিয় সব জিনিসপত্র দিয়ে দেওয়া। ঘ) মৃত্যু নিয়ে কথা বলাঃ বারবার মৃত্যু, আত্মহত্যা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলা।

ঙ) অসহায়ত্ববোধ বা হতাশাঃ একটি সাধারণ লক্ষন। সম্পূর্ণ অসহায় বোধ না করলে কেউ নিজের জীবন ত্যাগ করার কথা ভাবে না। চ) ইনসমনিয়া বা ঘুমের অভাব, খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করা ইত্যাদি। উপরের কারনগুলি নারী পুরুষ নির্বিশেষে আত্মহত্যার কিছু সহজাত কারণ হওয়া সত্বেও আমাদের দেশে নারী আত্মহত্যা প্রবনতার পেছনে আরও কিছু সহজাত কারন রয়েছে- যৌতুক ও যৌন নিপীড়ন-প্রতিদিনই কোন না কোন নারীর আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদপত্রে টিভিতে বা মিডিয়ায় দেখে দেখে আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। শুধু আমরা আলোড়িত হই বা একটু চমকে উঠি যখন দেখি আমাদের পরিচিত প্রিয় কোনো মুখ, হোক না সে চিত্রাভিনেত্রী বা কোনো পন্যের মডেল তারাও জীবন বলি দিচ্ছেন আত্মহত্যার মাঝে।

বিশেষ করে তরুণী ও গৃহবধূদের মধ্যে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। এসবের কারণ হিসেবে আমাদের দেশে রয়েছে আরও কিছু প্রচলিত সামাজিক ও পারিবারিক নিয়ম কানুন বা প্রথা। যেমন যৌতুক প্রথা। এসব কারণে সামাজিক ও মানষিক নির্যাতনের পাশাপাশি বখাটেদের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে তরুণীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে ৬৫ জন কিশোরী ও তরুণী।

এর মধ্যে গত বছরই আত্মহত্যা করেছে ৩৯ জন। এর আগের বছর করেছিল ৭ জন। বিগত বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে যৌন হয়রানির কারণেই আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ সালে যৌতুকের কারণে নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে ২২ জন নারী। গত তিন মাসে আত্মহত্যা করেছে ৭ জন।

যৌতুক ছাড়াও আরও অন্যান্য পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীদের মধ্যে দিনে দিনে আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে নারী আত্মহত্যা প্রবনতার আরেকটি কারণ-লিঙ্গীয় বৈষম্য - এটাও অন্যতম এক কারণ। পারিবারিক, সামাজিক বিভিন্ন সঙ্কটের মোকাবেলা করে জীবন-সংগ্রামে টিকতে না পেরেই একজন নারী আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি কারণে নারীরা ঘরের অভ্যন্তরে এবং ঘরের বাইরে যেমন রাস্তাঘাটে-কর্মস্থলে বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। নির্যাতিত হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে এবং এর কোন প্রতিকার না পেয়ে অনেক নারীই আত্মহত্যাকেই বেছে নেয়।

সামাজিক ও পারিবারিক অনিরাপত্তা- সামাজিক ও পারিবারিক কিছু অনুশাসন ও রীতির কারণে নানা রকম সমস্যা যখন মোকাবেলা করার জন্য কোনো সঙ্গী পায়না তখন তারা এক ধরনের একাকীত্ব ও অনিরাপত্তাবোধ থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সমাজ ও পরিবারের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে- কোন নারীকে যাতে আর আত্মহত্যা করতে না হয় তার বিরুদ্ধে যেমন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে তেমনি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও শুধু নতুন নতুন আইন প্রণয়ন নয়, তাৎক্ষনিক আইনের সঠিক প্রয়োগও নিশ্চিতিকরণ প্রয়োজন। কোন নারীর মধ্যে যেন আত্মহত্যার বোধ না জন্মায় সেই পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে সমাজকে, রাষ্ট্রকে। এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও। আত্মহত্যা মুক্তির পথ নয়।

সমস্ত প্রতিকূলতা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুন্দর সমাজ কাঠামো আর মতাদর্শ তৈরি করা যায়, গড়ে তোলা যায় আরও অর্থবহ সুন্দর জীবন। এই চেতনা ধনী গরীব নির্বিশেষে সকল নারীদের মাঝে জাগ্রত করতে হবে। আপনার নিজ পরিবারে কাউকে সুইসাইডের হাত থেকে বাঁচাতে কিছু উদ্যোগ ১. কাউন্সেলিং বা মুক্ত আলোচনা দিয়ে বুঝিয়ে বলা- যদি কাউকে মনে হয় যে সে হতাশাগ্রস্ত বা বিষন্নতায় ভুগছে বা আত্মহত্যা করতে পারে, তার সাথে খোলামেলা কথা বলা খুবই জরুরী। এ ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় কোনভাবেই তাকে দোষারোপ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

অবশ্যই কোনও রকম জাজমেন্ট-এ যাওয়া যাবে না। ২. আত্মহত্যা করতে চাইলে তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কিভাবে করতে চায় সে আত্মহত্যা। যে যত ডিটেলস বলতে পারবে, বুঝতে হবে তার আত্মহত্যার ইচ্ছা তত বেশী। ৩. আত্মহত্যার ইচ্ছা পোষনকারী মানুষকে একা রাখা যাবেনা কখনই। ৪. নিজে নিজে এই সমস্যা দূর করার চেষ্টা করার চাইতে একজন প্রফেশনালের সহায়তা নেওয়া ভালো।

সে যতই বাধা দিক না কেন, তাকে বুঝিয়ে তার উপকার করার চেষ্টা করতে হবে। আত্মহত্যা রুখে দিতে নারীর প্রতি নারীর নিজেদের কিছু কর্তব্য বা শপথ গাঁথা- জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা- আর নয় আত্মহত্যা- আসো শিখি জীবনের সকল সমস্যাকে মোকাবেলা করতে - যে কোনো প্রতিকূলতাকে ছেটে ফেলে নিজ গৌরবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে- অন্যের অন্যায় আচরণ তোমার লজ্জা নয়- আসো রুখে দেই নারীর প্রতি সকল অন্যায়, অনাচার- গর্জে উঠি, বাঁচতে শিখি- জীবন অনেক সুন্দর- আনন্দময়- অসুন্দরটুকু ফেলে দিয়ে সেঁচে তুলি জীবনের আনন্দটুকু, সুন্দর মুহুর্তগুলিকে। দুঃখ ভোলো, গাও আনন্দের জয়গান। সম্প্রতি প্রিয় অভিনেত্রী মিতা নূরের অকাল প্রয়ান এ লেখা লিখতে ভাবিয়েছে আমাকে। লেখাটি তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত করা হলো।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.