আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিয়ে করবেন কেন ? কাকে বিয়ে করবেন, কখন করবেন ?

চলার পথ অনেক, সত্য পথ একটাই মিসরে বিয়ে শাদী নিয়ে একটা লেখা সোনার বাংলাদেশ ব্লগে প্রকাশ করার পর অনেকে তাদের জন্য কনে দেখতে বলেছেন। তাদের মন্তব্য পড়তে গিয়ে মনে হলো, কনে খোজা নিয়ে জরুরী কিছু পরামর্শ দিয়ে একটা কিছু লিখলে এখনো যারা বিয়ে করেননি, তাদের উপকারে আসতে পারে। বিয়েটা হচ্ছে জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আমাদের দেশে যেহেতু একটার বেশী বিয়ে করার রেওয়াজ নেই, তাই অত্যন্ত ভেবেচিন্তে, হিসাব নিকাশ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। একটা ভুল বা খারাপ বিয়ে মানে পুরো জীবনটা নষ্ট।

ধরুন, আপনি মোটামুটি একটা চাকুরী করেন, কোন রকমে সংসার চলে যায়। কিন্তু, বিয়ে করে ফেললেন ধনীর দুলালীকে। তার খরচ মেটাতে তখন আপনার জীবন শেষ, সাথে বোনাস হিসাবে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা। আবার স্ত্রী যদি চিররুগ্ন হন, তাহলে জীবনের অনেক কিছুই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক সরকারী চাকুরী করতেন।

ভালো ভালো পজিশনে কাজ করেছেন। কিন্তু, কিছুই জমাতে পারেন নি, কেননা, তার স্ত্রী সারাজীবন অসুস্থ থেকেছেন। কাকে বিয়ে করবেন? জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মে যে বিষয়টিকে সবথেকে বেশী জোর দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে দুই পক্ষের সমতা। এই সমতা বলতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানই মূলত: বোঝানো হয়েছে। বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমেই যাকে বিয়ে করতে চান, তার একটা স্পেসিফিকেশন তৈরী করুন।

সবথেকে ভালো হয়, এই স্পেসিফিকেশন যদি আরো আগেই তৈরী করে রাখেন। তাহলে কাউকে ভালো লাগলেও, আগে থেকেই হিসাব নিকাশ করে অগ্রসর হতে পারবেন। বেহিসেবী প্রেমের কারণে প্রেমের বিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সফল হয় না। জীবন সঙ্গীর স্পেসিফিকেশনে যে বিষয়গুলো থাকতে পারে তা হচ্ছে: ১. সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান: জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মে দুই পক্ষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের সমতাকে সবথেকে বেশী জোর দেয়া হয়েছে। বিয়ে শুধু দুইজন মানব-মানবীর মধ্যেই ঘটে না, বরং বিয়ে হয় দুটো পরিবারের।

কথাটি মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশী প্রযোজ্য। যে মেয়েটিকে আপনি বউ করে ঘরে নিয়ে আসবেন, সে শুধু আপনার বউ না, সে আপনার বাবা-মায়ের বৌমা, ভাই-বোনের ভাবী। সমতা না থাকলে পুরো পরিবারকে আপন করে নিতে সমস্যা হতে পারে। অসম আর্থ-সামাজিক অবস্থানের কারণে অনেক বিয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে। বর্তমানে আমাদের সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ার কারণে এই বিষয়টির গুরুত্ব মারাত্মক হতে পারে।

আপনি মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র, পাশ করে মোটামুটি ভালো চাকুরী শুরু করেছেন। এখন যদি এমন কোন মেয়েকে বিয়ে করেন, যে ছোটবেলা থেকে গাড়ীতে চলাচল করে অভ্যস্ত, তাহলে আপনার গাড়ী না থাকলে তার জন্য খুব কষ্টকর হবে। মনে হতে পারে, তাহলে নিজের থেকে কম আর্থ-সামাজিক অবস্থানের কাউকে বিয়ে করলেই তো হলো। আপনার জীবনসঙ্গীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান যদি আপনার থেকে বেশী কম হয়ে থাকে, তাহলেও সমস্যা। মানসিকতায় নাও মিলতে পারে, বিশেষ করে আপনার পরিবারের সাথে।

২. বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান: বৈবাহিক জীবনের পূর্ণ আনন্দ তখনই পাওয়া যায়, যখন দুই জনের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান ম্যাচ করে। এ ধরণের ক্ষেত্রে সঙ্গীর সাথে কিছুক্ষণ থাকলেই মনের সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর হয়ে যেতে পারে, কেননা, তার কাছে আপনি নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেন। তা না হলে, আপনি বউ এর থেকে বন্ধুদের সাথে থাকতে বেশী পছন্দ করবেন। আপনি খুব রাজনীতি সচেতন, অথচ, আপনার জীবন সঙ্গীর এ বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই। তাহলে তার সাথে কথা বলতে আপনার ভালো লাগবে না।

আপনি সাহিত্য খুব পছন্দ করেন, সে এসবের কিছুই বোঝে না - তাহলে এক সময় আপনি তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। জীবন সঙ্গীর মেধাবী হওয়াটাও দরকার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেধাবী পিতা-মাতার সন্তান মেধাবী হয়। ৩. দৈহিক সৌন্দর্য্য: আমাদের দেশে বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে দৈহিক সৌন্দর্য্যকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। দৈহিক সৌন্দর্য্যের অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু এটিই মুখ্য হওয়া উচিৎ নয়।

৪. ব্যক্তিত্বের মিল: স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের মিল (ম্যাচ) হওয়া দরকার। এই মিল মানে যে দুইজনকে একই রকম হতে হবে, তা নয়। দুইজন কিছুটা বিপরীত চরিত্রের হলে ভালো হয়। যদি দুইজনই খুব শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের হয়ে থাকে, তাহলে সংসার ভেঙ্গেও যেতে পারে। আবার দুইজনই যদি খুব নরম প্রকৃতির হয়, তাহলে সন্তান লালন-পালন, অন্যান্য সাংসারিক বিষয়, যেখানে কিছুটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাতে সমস্যা হতে পারে।

৫. ধার্মিকতার মিল: ধার্মিকদের জন্য এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি খুব ধার্মিক, অথচ, জীবন সঙ্গী ধর্মের ধারই ধারেনা - এ রকম হলে সমস্যা হতে পারে। ৬. শারীরিক সুস্থতা: এটির গুরুত্ব খুব বেশী। আপনার জীবন সঙ্গী অবশ্যই যেন চির রোগা টাইপের না হয়। ৭. বয়সের মিল: মোটামুটি সমবয়সী বিয়ে করা ভালো।

বরের থেকে কনের বয়স ২-৩ বছর কম হলেই ভালো হয়ে। কণের বয়স বেশী হলে পরে সমস্যা হতে পারে। আবার কনের বয়স অনেক কম হওয়াও ঠিক নয়। ৮. আর্থিক সক্ষমতা: ছেলেকে বিয়ের আগে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়া দরকার। এই স্বচ্ছল মানে এই না যে, তার অনেক টাকা জমানো থাকতে হবে, বা নিজের বাড়ী-গাড়ী থাকতে হবে, বরং সে যেন নিজের সংসার নিজে চালাতে পারে - সেই পরিমাণ উপার্জন থাকা দরকার।

পিতা-মাতার উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল অবস্থায় বিয়ে করা উচিৎ নয়। ছেলের একার পক্ষে সংসার চালানোর মত উপার্জন না থাকলে চাকুরীজীবি মেয়ে বিয়ে করা যেতে পারে। ৯. নিকটাত্মীয় বিয়ে না করা: নিকটাত্মীয় বিয়ে করলে অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের নানা রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে। বিয়ে করার বয়স: আমার মতে ছেলেদের বিয়ে করার সবথেকে ভালো বয়স হচ্ছে ২৫ বছর, মেয়েদের ২২-২৩। মেয়েদের এর আগে বিয়ে হলে তারা শারীরিকভাবে পূর্ণ নাও হতে পারে এবং যেহেতু, বিয়ের পর তাদেরকে একটি নতুন পরিবেশে চলে যেতে হয়, সেই পরিবেশ মোকাবেলা করার মত পরিপক্কতা তাদের নাও আসতে পারে।

আবার বেশী বয়সে বিয়ে করলে যেমন সন্তান শারীরিক ও মেধার দিক থেকে যথেষ্ঠ শক্তিশালী না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি সন্তান লালন-পালন করার জন্য পিতা-মাতার হাতে পর্যাপ্ত সময়ও থাকে না। বিয়ে করার জন্য কিভাবে অগ্রসর হবেন? আপনার জীবন সঙ্গীর স্পেসিফিকেশন তৈরী করার পর মনে মনে খুঁজতে থাকুন। এভাবে একটা শর্টলিস্ট করে ফেলুন। তারপর তাদের সম্পর্কে খোজ-খবর নিতে থাকুন। খোজ-খবর নেয়ার সময় তাদের পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়গুলো নিয়েও খোজ খবর নিতে হবে।

দেখা গেলো, মেয়ে মেধাবী, ধার্মিক, সুন্দরী, কিন্তু, তাদের পরিবারের লোকেরা খুব অসামাজিক। তাহলে আপনার পরিবারের সাথে তাদের মিল নাও হতে পারে। দুই পক্ষের কথা-বার্তা হয়ে গেলে দিন ঠিক করে আমাদেরকে দাওয়াত দিবেন। কার্ডে লিখে দিবেন, 'উপহার নয়, শুধুমাত্র দোয়া চাই। ' ধন্যবাদ লেখক: আমিনূল মোহায়মেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.