আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিয়ে....

মনের চেয়ে বড় মসজিদ, মন্দির নেই সংস্কৃতি যখন একটা জীবন ধারা তখন জাতীয়তার সঙ্গে ধর্মীয় আচারটিও সংযুক্ত থাকে। আমাদের দেশে বাঙালিয়ানা এবং ধর্মীয় আচারগুলো সমান্তরালে চলে । বিয়ের উৎসবটাও তাই । বিয়ে যতটা ধর্মীয় আবহতা নিয়ে চলে ততটাই মেখে চলে বঙ্গ সংস্কৃতির রূপ- রস - বর্ণ ও গন্ধ। ফলে মুসলমান , হিন্দু কিংবা খ্রিস্টান যে কোন ধর্মাবলম্বীর বিয়েতেই অন্য সব ক্রিয়া প্রক্রিয়ার সঙ্গে বর-কনের সাজটাও এই সমান্তরাল পথচলা দ্বারা প্রভাবিত হয়।

বিয়ে সামাজিক একটি সম্পর্ক । একটি নির্ভরশীলতার স্থান। আদিকালে বিয়ে বন্ধন এসবের বালাই ছিল না মোটেই। ছকড়া-নকড়া ধরনের জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিল সবাই। ধীরে ধীরে মানুষ জুটিবদ্ধভাবে বাস করতে শুরু করে।

প্রাক বিবাহ যুগে দেখা গিয়েছে ,দুটি মানুষ কেবল পারস্পরিক আকর্ষণ থেকে একসঙ্গে বসবাস করতে ভালোবাসতো। যে আকর্ষনে অজো দুটি মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। কালের বিবর্তনে তা কেবল সামাজিক রীতিতে রূপ নিয়েছে। বিয়েটা যেমন একটা সামাজিক রীতি,তেমনি বিয়েতে সাজের ব্যাপারটাও এখন একটি সামাজিক নিয়মেরই অংশ। বিয়ে শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক আশা,উচ্ছ¡াস,ভালোলাগা ভালোবাসা ও বিরহ।

কিছুটা কম্প্রোমাইজ ,ছাড়, কিছু নতুন করে পাওয়া-সব নিয়েই এর পূর্ণতা প্রাপ্তি। বিয়ে একজন নারীর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি একজন পুরুষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর বিয়ের দিন বর কনেকে সবাই মোহনীয় দেখতে চায়। কারণ বিয়ের কেন্দ্রবিন্দুই থাকে তারা। এখন প্রায় সব বউই তাই নিজেকে মোহনীয়রূপে সাজাতে বিউটি পার্লারে যায়।

আজকাল বরও যাচ্ছে। বিশেষ ওই দিনটিতে প্রত্যেকেই চায় দক্ষ হাতে নিজেকে সাজাতে। কিন্তু এরপরও প্রত্যেকেরই নিজস্ব পছন্দ, অপছন্দ রুচিবোধ আছে। তাই নিজের সাজের পরিকল্পনা পার্লারে গিয়ে বুঝিয়ে বলা ভালো। আর সর্বপ্রথম একটি ভালো পার্লরের খোঁজ জানা বেশি প্রয়োজন।

গায়ে হলুদ কনে-আজকাল হলুদের সাজটা বিউটি সেলুনেই করা হয়। ঘর হোক পার্লার , হলুদের সাজটা অবশ্যই হালকা হতে হবে। কেননা হলুদের অনুষ্ঠানে একটা ঘরোয়া ভাব থাকে। তাই এ দিনের সাজ সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। গায়ে হলুদের সাজ সম্পর্কে বিউটি এক্সপার্ট রাফিনা আক্তার বলেন, এই অনুষ্ঠানে গাঢ় বিভিন্ন রঙের ফুলের এক্সেসরিজ ব্যবহার করা হয়।

গায়ে হলুদে বেশিরভাগ কনেকে হলুদ রঙের শাড়ি পড়ানো হয়। সেজন্য মেকাপে গোল্ডেন শেড বেশি ব্যবহার করতে হয়। তবে মনে রাখতে হবে হলুদ মাখলে এমনিতেই সবাইকে একটু ডার্ক লাগে। এজন্য মেকাপের বেইজটা গোল্ডেন দিতে হবে। মেকাপের ক্ষেত্রে প্রথমে কনসিলার , কমপ্যাক্ট বা ফাউন্ডেশন দিয়ে হালকা বেজ মেকাপ করতে হবে।

সামান্য পানি স্প্রে করে পাফ দিয়ে ভালোভাবে তা মুখের ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে আইশ্যাডো লাগাতে হবে। আইশ্যডোর ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন গোল্ডেন মেরুন , লাল , ব্রাউন বা মানানসই শ্যাডো। ব্রাউন বা কালো আইব্রো পেন্সিল দিয়ে আইব্রো এঁকে নিতে পারেন। ডিপ কালারের লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট এঁকে একই রঙের লিপস্টিক ও লিপব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ম্যাচ করতে হবে।

মেরুন , মেজেন্টা, গোলাপি বা লাল রঙের লিপস্টিক লাগাতে পারেন। গালে , চিবুকে ও কপালে হালকা রঙ যেমন ব্রাউন ও পিঙ্ক রঙের বøাশঅন আভা লাগিয়ে নিতে পারেন। চুলে খোঁপা করে তাজা বা ড্রাই ফুল লাগালে কনে তার গায়ে হলুদে একটি ভাব অনুভব করবে। বর-গায়ে হলুদের দিন যারা একটু নিজেকে উজ্জ্বল রাখতে চান তারা প্রথমে মুখটা ভালোভাবে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। এরপর ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে।

কারণ ছেলেদের মুখের সাজে ফাউন্ডেশন প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাফ বা ব্রাশের সাহায্যে সম্পূর্ণ মুখে পাউডার বুলিয়ে নিতে হবে। শীতের এই সময়ে ঠোঁট বারবার শুকিয়ে যায়। তাই ঠোঁটের সুরক্ষায় লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন। চুলের জন্য বিভিন্ন স্টাইল করতে পারেন।

তবে সে স্টাইলটা যেন মুখের সঙ্গে অবশ্যই মানানসই হয়। আমাদের দেশে শীতকালকে বলা হয় বিয়ের মৌসুম। শীতে এমনিতেই ত্বক তার নিজস্ব সৌন্দর্য হারায়। এজন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি যতেœর । আর শীতের সময় বিয়ে হওয়ায় বর কনে উভয়েরই বাড়তি যতেœর প্রয়োজন হয়।

কারণ অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এই সময়ে ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি ময়লা জমে। ত্বক পরিষ্কার , টানটান ভাব বজায় এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে ফেসিয়ালের কোন বিকল্প নেই। এজন্য বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হলে ভালো পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করে নিন। শীতকালে বিয়ে হলে কনেদের চাই আরেকটু সচেতনতা। শীতকালে গরমের জন্য উপযোগী কোনো প্রসাধনই ব্যবহার করা উচিত নয়।

কনেদের শীত উপযোগী ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং লোশন, গিøসারিন সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা দরকার। বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই লাগাতে হবে সানস্ক্রিন লোশন। বিয়ে ব্যাপারটার ক্ষেত্রে সাজটাই মুখ্য মনে হলেও অন্যান্য প্রস্তুতিও দরকার আছে। শারীরিক ধকলের চেয়েও বড় সমস্যাটা হলো বিয়ের আগে নতুন জীবনে প্রবেশ নিয়ে মেয়েদের মনে নানা রকম দুশ্চিন্তা এবং ভয়ের আনাগোনা থাকে। সবকিছু মিলিয়ে কনের মানসিক অবস্থা হয় নিদারুন, যাতে অনায়াসেই ¤øান হয়ে যায় বাহ্যিক সৌন্দর্যও।

এসব কারণেই বিয়ে-পূর্ব সৌন্দর্যচর্চার পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রশমিত থাকার জন্য কনের স্ট্রেস-রিলিফ বিষয়টা ভীষণ জরুরি। এজন্য কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে কনের নিজের দুর্ভাবনা, জিজ্ঞাস্য বিষয়ে একটি কাউন্সেলিং প্রত্যেকটি মেয়ের জন্যই উপকারী। কনের এই শারীরিক ও মানষিক পূর্ণাঙ্গ সৌন্দর্যবর্ধনে পারলারগুলোয় এখন থাকে কনের জন্য বিশেষ ব্রাইডাল প্যাকেজ। একই পারলারে বিয়ের সব কটি অনুষ্ঠানে কনে সাজের সুযোগ নিয়েই ব্রাইডাল মেকআপ প্যাকেজ। ব্রাইডাল মেকআপের প্যাকেজে সাধারণত থাকে কনের সব কটি অনুষ্ঠানের সাজ, কনের মেহেদি, থাকে তার সঙ্গীদের সাজের ক্ষেত্রে কিছু মূল্য ছাড়ও।

এছাড়া আছে ব্রাইডাল গ্রুমিংয়ের ব্যবস্থা। কনেকে নজরকাড়া করে তুলতেই এ প্রক্রিয়া। ত্বক, চুলের যতœ এবং ওয়্যাক্সিং, থ্রেডিং, মেনিকিওর, পেডিকিওর ইত্যাদি মৌলিক সেবাই গ্রুমিংয়ের অন্তর্গত। ত্বক পরিচর্যায় থাকে বিশেষ ফেসিয়াল, ফেয়ার পলিশ, স্পা, চুলের জন্য থাকে স্পা, প্রোটিন ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি থাকতে পারে বডি ম্যাসাজ, হট-বাথ। সাধারণত মেকআপ প্যাকেজেই কিছু গ্রুমিং সেবা থাকে।

আবার পারলারভেদে বিশেষ ব্রাইডাল ফেসিয়াল, ম্যাসাজ ইত্যাদি আলাদাভাবে বা প্যাকেজ আকারে করার সুযোগ থাকে। ফেসিয়াল, ওয়্যাক্স, ইত্যাদি কবে, কখন ও কত দিন আগে করবেন, সে সম্পর্কে পারলারের সঙ্গে কথা বলে নেয়া ভালো। সুবিধামতো ভিন্ন পারলারে গ্রুমিং ও মেকআপ প্যাকেজ নিতে পারেন। মেয়েদের জন্য পার্লারের পাশাপাশি আজকাল ছেলেদেরও অনেক সেলুন আছে,সেখানে অনায়াসেই বিয়ের আগে একটা গ্রæমিং সেশন করে নিতে পারেন। ছেলেরা যেহেতু ত্বক সম্পর্কে একটু উদাসীন এবং বাইরেও বের হন বেশি ।

তাই তাদের বিয়ের আগে ত্বকটা অবশ্যই পরিষ্কার রাখা উচিৎ। মুখের কালো ছোপ ছোপ দাগ ,বø্যাক হেডস বা ব্রণ দূর করতে বিয়ের অন্তত দুই তিন মাস আগে থেকেই ফেসিয়াল করা ভালো । শুধু মুখের যতœ নিলেই হয় না , বর-কনের হাত ও পায়ের পরিচর্যাও করা জরুরি। হাত - পা পরিচর্যায় মেনিকিউর পেডিকিউর অনেক উপকারী। ঘরে বসেই হাত পায়ের যতœ নিতে পারে।

তবে পার্লারে গিয়ে করানোটাই বেশি ভালো। বিয়ের সময় ছাড়াও সুস্থ ও সুন্দর চুল সবারই আরাধ্য বিষয়। আর কনের তো আরো বেশি প্রয়োজন। কারণ যেকোন সাজেই অন্যতম ভ‚মিকা পালন করে চুল। তাই বিয়ের অন্তত মাস খানেক আগে থেকেই কনের চুলের যতœ নেয়া প্রয়োজন।

নিয়মিত যতœই এনে দিবে একরাশ দীঘল কালো চুল। বরের চুলের ক্ষেত্রে নিতে পারেন বিভিন্ন হেয়ার ট্রিটমেন্ট। গায়ে হলুদের দিন থেকে শুরু করে বিয়ের আনুষঙ্গিক দিনগুলিতে অনুষ্ঠান ভেদে নিতে পারেন চুলের বিভিন্ন স্টাইল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.