আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বলছি -ঢাকাইয়া সিনেমার 'চরম' কাহিনীর প্যাঁচে পড়ে যাওয়া দুর্ভাগা দর্শকদের গল্প!!!!!!

প্রিয় বন্ধুরা প্রতিদিন গান আর ছবি নিয়ে লিখতে লিখতে আর ভালো লাগে না। ভাবছিলাম আজ অনেকদিন পর আমাদের দেশের বর্তমান অশান্তিময় রাজনীতি নিয়ে লিখবো। হায় বিধিবাম!!!!! এই ছিল মোর কপালে???? রাজনীতি নিয়ে হিসাব মিলাতে গিয়ে দেখি আমরা তো বাংলা সিনেমার ১ টি চরম কাহিনীর মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছি!!!!! অর্থাৎ বাংলা অ্যাকশন সিনেমার এক দুর্দান্ত কাহিনীর প্যাচে পরে আমরা সাধারণ জনগণ দুর্ভোগ আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝে জীবন কাটাচ্ছি। যে ছবি 'বাংলাদেশ পলিটিক্স কর্পোরেশন'' এর নিবেদন, আর ' সরকার' মুভিজ প্রযোজিত ও অভিজ্ঞ পরিচালক 'তৈলুর রহমান' পরিচালিত '' মর জনগণ! ' এখন আসুন সেই ছবির কাহিনী একটু জেনে নেয়া যাক। "মরো জনগণ"- এই ছবির কাহিনীর সাথে বাংলা সিনেমার পরিচয় অনেক আগে থেকেই।

এমন কাহিনী নিয়ে অসংখ্য বাংলা ছায়াছবি হয়েছিল ,হচ্ছে ও আগামীতেও হবে। কারন এই ফরমুলাটা অনেক সহজ ও হিট। আপনাকে শুধু কাহিনীটা একটু ঘুরিয়ে দর্শকদের খাওয়াতে হবে এইটুকু মাথায় রাখলে হবে। এই ছবি শুরু হয় এক গ্রামের জনপ্রিয় রাজনিতিবিদ/নেতা রহমান চেয়ারম্যান কিছু কুচক্রীর কথা মতো না চলায় একসময় সেই কুচক্রিরা সেই চেয়ারম্যান সহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে (মূল অভিনেত্রীর পুরো পরিবার)। সৌভাগ্যবশত ঐ নেতার ২ কন্যা তখন শহরে ব্যস্ত ছিলেন।

তাই সেদিন হত্যাকারীরা ঐ ২ কন্যাকে হত্যা করতে পারেনি। হত্যাকারীরা এরপর তাদের দলবল নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং বাহিরে থেকেই নিজেদের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। হত্যার খবর শুনে সেদিন দেশের বাহিরে থাকা অসহায় ২ বোন জীবন সংগ্রামে নেমে পরে আর মনে মনে পিতৃহত্যার ও আপনজনদের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্প করে। এভাবে কেটে যায় কয়েকটি বছর। এরপর ঐ নিহত নেতার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সহযোগিতা ও আশ্বাস পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়ে বড় মেয়ে 'রোজিনা গ্রামে ফিরে আসে।

এবার শুরু হয় নতুন করে আস্থাভাজন দের নিয়ে পিতার রাজনীতির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে দল গোছানো ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিজের শক্তি বৃদ্ধি করা। এভাবে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মাঝে ছবির গল্প এগিয়ে যায়। রোজিনা যখন গ্রামে আসলো তার কিছুদিনের মাথায় ঐ গ্রামের ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যান কে তাঁর শত্রু পক্ষের লোকজন হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। রোজিনা এসব দেখে নিসচুপ। শুরু হয় নিহত চেয়ারম্যান এর হত্যাকারী এরশাদ মাতবরের রাজত্ব।

রোজিনা তখন তাঁর বাবার ''সোনার বাংলা'' পার্টি নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে এরশাদ মাতবর এর সাথে গণ্ডগোল দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত গ্রামে নিরাপদে থাকার জন্য এরশাদ মাতবরের সাথে হাত মিলিয়ে নিজের চমৎকার বুদ্ধির পরিচয় দেয়। ওহ ভালো কথা, এরশাদ মাতবর যাকে খুন করেছিলেন তাঁর নাম ছিল কুতুব মিয়া যাকে এলাকার সবাই ''মিয়া চেয়ারম্যান'' নামে ডাকতো। সেই মিয়া চেয়ারম্যান এর ছিল এক স্ত্রী ও ২ কিশোর পুত্র। তারাও সেদিন মিয়া চেয়ারম্যান এর লাশ অশ্রু ফেলে আর মনে মনে মিয়া চেয়ারম্যান হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্প করে।

মিয়া চেয়ারম্যান এর ২ সন্তান অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তখন মিয়া চেয়ারম্যান সব কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব নেয় তাঁরই স্ত্রী জোবেদা । যাকে সবাই জোবেদা মিয়া নামে চিনে। স্বামীহারা জোবেদা তখন কঠিন সংগ্রামে নেমে পরে আর মিয়া চেয়ারম্যান এর বিপুল জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে গ্রামের রাজনীতিতে এগিয়ে যায়। শুরু হয় মিয়া চেয়ারম্যান এর খুনি এরশাদ মাতবর এর সাথে জোবেদা র সরাসরি দ্বন্দ্ব। আগেই বলেছি এই দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মাতবরের সাথে রোজিনা সমঝোতা করার কৌশল নিয়েছিল।

কিন্তু জোবেদা কিছুতেই মাতবরের সাথে সমঝোতা করবে না। গ্রামের সাধারণ মানুষও জোবেদার পক্ষে থাকে এতে জোবেদা এরশাদ মাতবরকে উচ্ছেদ করার আন্দোলনে নেমে পরে। অবশেষে গ্রামের সাধারণ মানুষের তীব্র বিরোধিতার মুখে এরশাদ মাতবর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ায় এবং গ্রামের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পায় । কাহিনীর এই পর্যায়ে চলে আসে 'ইনটারবেল' বা 'বিরতি'। দর্শকেরা জমজমাট কাহিনীর বাকী অংশ দেখার আগে একটু কোক, ফানটা, সিগারেট খেয়ে নিজেদের একটু চাঙ্গা করে নেয়।

! যথারীতি ১০ মিনিট বিরতির পর আবার ছবি শুরু হয়। দর্শকরা চরম উত্তেজনা নিয়ে ছবির বাকী অংশ দেখা শুরু করে। বিরতির আগে জোবেদা বেগম গ্রামের উন্নতির জন্য তাঁর নিহত স্বামীর দায়িত্ব পালন করার জন্য গ্রামের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। দায়িত্ব পেয়েই জোবেদা গ্রামকে একটু নতুন করে গোছানো শুরু করে আর সাথে সাথে নিজের দলের শক্তি বৃদ্ধি করে। এইবার পর্দায় আবার হাজির হয় গল্পের শুরু যে রহমান চেয়ারম্যান তাঁর মেয়ে রোজিনা ।

এরশাদ মাতবর জেলে যাওয়ায় রোজিনা তখন জোবেদা চেয়ারম্যান এর বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। এর মাঝে রোজিনাকে তাঁর সাথের শুভাকাঙ্ক্ষীরা বুঝাতে সমর্থ হয় যে তাঁর বাবা (রহমান চেয়ারম্যান) কে হত্যার পিছনে জোবেদার স্বামী জড়িত ছিল। কাহিনী এমনভাবে ঘুরে যাওয়াতে দর্শকরা হলজুড়ে করতালি দেয়া শুরু করে উত্তেজনায়। কেউ কেউ উত্তেজনায় হলের বাহিরে গিয়ে মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢালতে শুরু করে !আবার কেউবা করিডরে গিয়ে কপালে চিন্তার ভাজ নিয়ে একটা গোল্ডলিফ সিগারেট ধরিয়ে কাহিনী কোথায় শেষ হবে তা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে!!!!! যাই হক,আমরা আবার কাহিনীতে ফিরে যাই- রোজিনা যখন জানতে পারে যে জোবেদার স্বামী তাঁর বাবার হত্যাকারী তখন সে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকে। যার ফলে জোবেদা গ্রামের স্কুলে কোন গাছ লাগালে সেই গাছ রাতের আধারে রোজিনার লোকজন তা তুলে ফেলে দেয় এবং গ্রামের মানুষকে অশান্তি করার পাঁয়তারা করে।

এইভাবে গ্রামে চুরি ,ডাকাতি, খুন বেড়ে চলে আর এটা নিয়ে রোজিনা গ্রামের মানুষকে জোবেদার বিরুদ্ধে ক্ষেপীয়ে তুলে। গ্রামবাসীর একপক্ষ তখন জোবেদার সমর্থনে যায় বাকিরা রোজিনার সমর্থনে যায়। এদিকে মিয়া চেয়ারম্যান এর ২ কিশোর পুত্র সাবালক হয়। বড় ছেলে বারেক মিয়া জোবেদা চেয়ারম্যান এর কাজকর্মে সহায়তা করে আর ছোট ছেলে শরাফত মিয়া গ্রামের বাজারে আড়তদারি শুরু করে। ধীরে ধীরে রোজিনা ও তাঁর লোকজনের চরম কূটকৌশলের কাছে জোবেদা বেগম দিশেহারা হয়ে পরে ।

কারন গ্রামে যত অপরাধ হয় সব দোষ গিয়ে জোবেদার উপর গিয়ে পরে। এদিকে গ্রামের মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার হুজুরদের (যারা একসময় শিয়ালদের দখলে থাকা এই গ্রামকে শিয়ালমুক্ত লোকালয় গড়ে তোলার বিরোধিতা করেছিলেন বলে গ্রামের মানুষরা জানতো)রোজিনা নিজের পক্ষে নিয়ে যায়। সেই ইমাম ও মাদ্রাসার হুজুররাও জোবেদার বিপক্ষে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তুলে । তখন জোবেদা নতুন করে নির্বাচন করার ঘোষণা দেয় যা রোজিনা ও তাঁর পক্ষের লোকজন মেনে নিতে পারেনা। রোজিনা ও তাঁর লোকেরা তখন উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ এন ও) র অধীনে নির্বাচন করার দাবী তোলে।

যাই হোক জোবেদার লোকজনের সাথে রোজিনার পক্ষের লোকজনের কয়েকটা মারামারি দৃশ্যর পর জোবেদা সব দাবী মেনে নিয়ে ইউএনও র কাছে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দেয়। শুরু হয় দর্শকদের আবারো টেনশন!!!! এক দর্শক অন্য দর্শক কে জিজ্ঞেস করে " মিয়া ভাই!!! কি বিপদে পড়লাম বলেন তো? ছবি সময় কাটাতে ছবি দেখতে আসলাম কিন্তু ছবি তো শেষ হওয়ার নাম গন্ধ নেই!! এই ছবি শেষ হইবো কেমনে'? এই প্রশ্ন শুনে আরেকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বলে " ধুর মিয়াঁ! আপনি কি দেখলেন এতক্ষণ? রোজিনা তাঁর বাপের হত্যার প্রতিশোধ নিলেই তো শেষ হবে। এই তো আরেকটু বাকী। এইবার রোজিনা নির্বাচনে জিতলেই ''লাস্ট ফাইট'' শুরু হইবো। " এই কথা শুনে প্রশ্নকারী একটু আশ্বস্ত হয়ে পুনরায় ছবি দেখতে শুরু করে।

নতুন নির্বাচনে এবার জয়ী হয় রোজিনা। রোজিনা এলাকার গ্রামের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ঘোষণা দেয় তাঁর বাবা ও পরিবারদের যারা হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে হত্যার প্রতিশোধ নিবে বলে (ইয়া ঢিশুম !! ঢিশুম ) হত্যাকারী খুঁজতে থাকে। রোজিনা চেয়ারম্যান হয়েই তাঁর পুরানো বন্ধু এরশাদ মাতবরকে জেল থেকে মুক্ত করে আনে। অন্যদিকে তাঁকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার জন্য যেসব ইমাম ও হুজুররা তাঁর পক্ষে কাজ করেছিল সু কৌশলে তাদের সাথে চোখ পাল্টে ফেলে এবং তাদের কে ''শিয়াল তাড়াও'' অভিযানে শিয়াল এর পক্ষ নেয়ার পুরনো অভিযোগ পুনরায় গ্রামবাসীর মাঝে তুলে ধরে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জোবেদা শক্তিশালী ইমাম ও হুজুরদের নিজের পক্ষে নিয়ে নেয়।

শুরু হয় আবার চক্রান্ত। এতো চক্রান্তের মাঝেও রোজিনার কুটকৌশলের কাছে জোবেদার কূটকৌশল ব্যথ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে রোজিনা তাঁর বাবার হত্যাকারীদের খুঁজে কয়েকজনকে গ্রামে এনে গরুর খোঁয়াড়ে বেঁধে রাখে। অন্যদিকে অনেকদিন পর আবার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ায় রোজিনার পক্ষের সব ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রা এলাকায় ত্রাস আর লুটপাট শুরু করে দেয়। রোজিনা সব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।

সে দিনরাত আছে শুধু তাঁর বাবার হত্যাকারীদের বিচার নিয়ে। গ্রামবাসীর কোন সুখ শান্তির দিকে তাঁর কোন খেয়াল নেই। এভাবে কোনরকম ক্ষমতার পুরো সময় কাটিয়ে দিয়ে আবার সেই নিজের তৈরি ফাঁদে (ইউ এন ও এর অধীনে নির্বাচন) পা দিয়ে নতুন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ইতিমধ্যে এতদিন গ্রামবাসীর মনে রোজিনা কে নিয়ে ভীষণ ক্ষোভ জমতে থাকে। সেই ক্ষোভের কারনে গ্রামবাসী পুনরায় জোবেদা কে নির্বাচিত করে।

জোবেদা আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গ্রামের দায়িত্ব পায়। কিন্তু হায়!!!!!!!!! এবার দেখি আগের জোবেদার সাথে নতুন জোবেদার পার্থক্য !!! গ্রামবাসী হতাশ হয়ে যায়। জোবেদার বড় ছেলে বারেক মিয়া এবার সরাসরি গ্রামের রাজনীতিতে যোগ দেয়। এই সুযোগে বারেক এর কিছু দুষ্ট বন্ধু বারেক কে কাজে লাগিয়ে গ্রামের মাঝে লুটপাট শুরু করে ধনী হতে থাকে। গ্রামবাসীর দুর্ভোগ তো কমে না!!!!! এদিকে এই অবস্থায় সিনেমার দর্শকরাও হল ছেড়ে যেতে পারে না।

কারন এখনও তো রোজিনার পিতাসহ পুরো পরিবার হত্যার প্রতিশোধ নেয়া শেষ হয়নি। দর্শক এবার বাদাম চিবায় আর পর্দার দিকে তাকিয়ে এই জটিল কাহিনীর সিনেমা বেকুবের মত দেখতে থাকে। তাদের এতক্ষণের জমতে থাকা উত্তেজনা কিছুটা বিরক্তিতে রূপ নেয়। তবুও আশা যে তারা গ্রামবাসীকে সুখে শান্তিতে চিরায়ত সিনেমার মিলন দৃশ্য দেখে হল থেকে বেরোবে। জোবেদা চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে রোজিনা, এরশাদ মাতবর সহ গ্রামের আরও কিছু দালাল টাইপের লোকজন একজোট হয়ে ষড়যন্ত্র করতে থাকে উৎখাত করার জন্য।

এই জন্য রোজিনা তাঁর দলের লোকদের দিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের লাঠিদিয়ে পেটাতে থাকে। এরবিরুদ্ধে জোবেদার পক্ষ ও গ্রামের হুজুরা এক হলে তাঁরাও লাঠির বেধড়ক পিটুনি খেয়ে 'অক্কা' যায় । এই অবস্থায় দর্শক ভাবলো যে যাক বহু প্রতীক্ষিত 'শেষ ফাইট' শুরু হয়ে গেছে। এই ফাইট পরেই মিলন দৃশ্য আসবে!!!!! কিন্তু একী!!!!!! ফাইট শেষ হওয়ার আগেই পুলিশ এসে পরলো যা বাংলা সিনেমায় ইতিপূর্বে কোনদিন দেখা যায়নি। তাঁর মানে ছবি এখনও আরও বাকী!!!!! পুলিশ এসে গ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য রোজিনা ও জোবেদাকে জেলে নিয়ে যায়।

জোবেদার ছেলে ও ছেলের বন্ধুরাও জেলে যায়। দর্শক তখন মাথার চুল ছিঁড়তে থাকে রাগে !ক্ষোভে,! বিরক্তিতে! কারন কাহিনীর এই পর্যায়ে পুলিশ 'ইন্সপেক্টর' মধু নামের এক নায়কের আগমন ঘটে। যা দর্শক ধারনাই করতে পারেনি কাহিনীতে একবারও যাকে দেখা গেলো না সে কিভাবে নায়ক হয়ে যায়? এই নায়ক এতক্ষণ কেন আসেনি? তাও আবার একবারে নবাগত অভিনেতা। যাই হোক মধু ইন্সপেক্টর অনেক কৌশলে গ্রামের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা আর পারেনি। জেলে থাকা রোজিনার লোকজন এর সাথে মধু ইন্সপেক্টর সমঝোতা করে রোজিনাকে জেল থেকে মুক্তি করে আনে এবং মধু ইন্সপেক্টর গোপনে রোজিনার পক্ষ নিয়ে পুনরায় রোজিনাকে গ্রামের চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী করে।

যাক, এতক্ষণে দর্শক হাফ ছেড়ে বাঁচলো যে এইবার রহমান চেয়ারম্যান এর হত্যা প্রতিশোধ দিয়ে ছবি শেষ হবে। কিন্তু না!!!!! রোজিনা তাঁর শত্রুদের কয়েকজনকে শাস্তি দিতে পারলেও পুরো চক্রকে ধরতে পারেনি। এইদিকে আবার গ্রামেরঅবস্থা কাহিল হতে থাকে। এইবার রোজিনা সারাজীবন গ্রামের চেয়ারম্যান থাকার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই উদ্দেশ্য মিয়া চেয়ারম্যান এর স্ত্রী জোবেদার ঘর দখল করে জোর করে জোবেদাকে বের করে দেয়। জোবেদা হয় গৃহহীন।

গ্রামের মানুষও ভয়ে কোন প্রতিবাদ করে না। এদিকে জোবেদার ২ পুত্র মামলার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে পালিয়ে থাকে। গ্রামে আসলেই রোজিনার লোকজন তাদের ধরে আবার জেলে দিবে এই ভয়ে। রোজিনা ও তাঁর লোকজন গ্রামবাসির টাকা,পয়সা ব্যবসার লোভ দেখিয়ে নিজেদের পকেটে নিয়ে নেয়। আর গ্রামবাসী নিঃস্ব হয়ে পরে।

তবুও প্রতিবাদ করলেও রোজিনা কোন বিচার করে না। জোবেদাও বারবার রোজিনার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে রোজিনার কূটকৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। দর্শক এবার চরমখিপ্ত .!!!!!!!! কেউ পর্দার দিকে বোতল ছুঁড়ে মারে। ছবি তো শেষ হয়না!! চলছে তো চলছেই......................। সবার তখন ঘুরে ফিরে অনেক প্রশ্ন ছবি দেখতে এসে তো দেখি বিপদে পড়ে গেলাম! এই ছবি শেষ হবে কবে??????? গ্রামবাসীর সুখী মুখ কখন দেখা যাবে?????? আদৌ দেখা যাবে কিনা সেটাও প্রশ্ন!!!!! রোজিনা- জোবেদা কি কখনও গ্রামবাসীর সুখের জন্য মিলেমিশে একসাথে কাজ করবে না???? ছবির মূল চরিত্র(নায়ক) কে???? রোজিনা? জোবেদা? এরশাদ মাতবর? জোবেদার ছেলে বারেক মিয়াঁ? ওরা সবাই যদি মূল চরিত্র হয় তাহলে খলনায়ক/খলচরিত্র কার? সেটার উত্তর হয়তো একটাই ! ঐ নিরীহ ''গ্রামবাসী' যারা একেকবার একেক জনের কথা বিশ্বাস করে।

শেষ কথা- প্রিয় বন্ধুরা এতক্ষণ যে জমজমাট সিনেমার কাহিনীটা বললাম সেটা আমাদের খুবই পরিচিত একটি গল্পের। যে গল্পের ফাঁদে পড়ে আমরা নিরীহ সাধারন জনগণ আজ বেঁচে আছি শঙ্কায়, সঙ্কটে ও চরম এক অনিশ্চয়তায়। যার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের অর্থাৎ সাধারণ জনগণের। যে গল্পের গ্রামবাসীর মতো আমাদের অবস্থা। যারা বারবার দেশের মাথাদের বিশ্বাস করে হয়েছে প্রতারিত!!!!! হলের দর্শকদের মত আমাদেরও আজ দেশের মাথাদের কাছে একটিই প্রশ্ন "আপনাদের এই কাহিনি/ছবি শেষ হবে কবে?" আমরা যা আর পারছিনা!!!! চরম বিরক্তি আজ হয়ে গেছে ঘৃণা! ঘৃণা শুধুই ঘৃণা!!!!!!!!! কবি ও কাব্য- ২৯/০১/১২ . সব ক্যাচাল বাদ দিয়ে এইখানে গুঁতা দেন- লিঙ্ক  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.