আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুলি হয়নি বলে কেন আসিফ নজরুলের বিস্ময় !

সেনাবাহিনী সম্প্রতি একটি অভ্যুত্থান রুখে দিয়েছে। এরপর বিষয়টি দেশবাসীকে জানাতে গত বৃহস্পতিবার সেনাকর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছে। একটি অভ্যুত্থান অপচেষ্টা রুখে দেওয়া ও এ নিয়ে সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলনটি নিয়ে গত চারদিন ধরে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও এর সমমনা দলগুলো সেনাবাহিনীর দু’টি কাজকেই সাধুবাদ জানিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতাও অভ্যুত্থান অপচেষ্টা নস্যাতের ঘটনায় খুশি হয়েছেন।

দেশের প্রধান দু’টি দল এ নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। দু’টি দলের কোনো বিষয়ে এ ধরনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া যেমন বিরল, তেমনি সেনা অভ্যন্তরের কোনো ঘটনা সংবাদ সম্মেলন করে জানানোকে বিরল নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশের নাগরিক হিসেবে সেনাবাহিনী যেভাবে একটি অভ্যুত্থানকে রুখে দিয়েছে তাকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। একটি ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে। আর এই প্রশংসা করা মানে এই নয় যে, আমি কারো পক্ষে চলে গেলাম।

তবে এ বিষয়টি নিয়ে হোঁচট খেলাম যখন দেখলাম দা-কুমড়ো সম্পর্ক থাকা আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে নয়, আমাদের বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না। রোববার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগেরশিক্ষক ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন সাবেক ডাকসু ভিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বললেন, ‘মান্না ভাই একটি ক্যু’র চেষ্টা হলো, অথচ একটি গুলি হলো না!’ সেই থেকে মনের মধ্যে উসখুস করছে। ড. নজরুলের বক্তব্যটি মেনে নিতে পারছিলাম না।

সোমবার অফিসে এসে এ নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখার অনুমতি পাওয়া গেল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেনের কাছ থেকে। সম্পাদক মহোদয় সব সময়ই আমাদের মতো তরুণদের লিখতে উৎসাহ দেন। এবারও ব্যতিক্রম হলো না। ড. আসিফ নজরুল আমার সরাসরি শিক্ষক নন, তবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পড়েছি তিনি সেখানকার শিক্ষক। তাই তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি-‘স্যার, আপনি সেনা ক্যু-চেষ্টার ঘটনায় গুলি না হওয়াতে মনে হয় বিস্মিত হয়েছেন,ক্যু’র চেষ্টা হবে আর গুলি হবে না-হোক না সেটি ব্যর্থ ক্যু।

এটা কি হয়। তবে আমি আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি- গুলি না হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি। বিস্মিত হইনি। আমি বিস্মিত হয়েছি জাতির বিবেক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানকারী একজন শিক্ষকের বক্তব্য শুনে। আমার জানতে ইচ্ছে করছে- ‘স্যার, আপনি মনে হয় গুলি না হওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন।

কারণ আপনি তরুণ বয়সে যে ধরনের ক্যু এর কথা শুনেছেন আমাদের তখন জন্ম হয়নি। কিন্তু আমরা ওই ধরনের ক্যু, গুলি ও হত্যা চাই না। বোধ করি সেনাবাহিনীর এ প্রজন্মের তরুণ কর্মকর্তারাও এটা চান না। আর তারা এটি চান না বলেই সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আসিফ নজরুলের বক্তব্য অনুযায়ী সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হলে গুলি হবে, এরপর বিডিআর বিদ্রোহের মতো হত্যাযজ্ঞ হবে।

আপনি কি এরকমটাই চাইছিলেন? নাকি সেনাবাহিনী এটি ব্যর্থ করে দেওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন? ড. নজরুল এখানেই ক্ষান্ত হননি। টকশোতে তিনি সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন করাকেও নেতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। তার বক্তব্য, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সেনাবাহিনী এভাবে সংবাদ সম্মেলন কেন করলো, দোষীদের আগে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) কেন সংবাদ সম্মেলন করলো না। তদন্ত শেষ করেই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে ভালো হতো। তার কাছে সেনাবাহিনীর একটি কাজও ভালো লাগেনি।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশেই যেকোনো বড় ধরনের ঘটনায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় সংবাদ সম্মেলন করার নজিরও রয়েছে। সাম্প্রতিক লিবিয়া যুদ্ধেও ন্যাটো নিয়মিতই সংবাদ সম্মেলন করেছে। আপনি (আসিফ নজরুল) হয়তো বলতে পারেন- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের নিজেদের তুলনা করা ঠিক নয়। কিন্তু কারো যদি কোনো ভালো কাজের উদাহরণ থাকে তা থেকে শিক্ষা নিতে দোষ কোথায়। কেন আমাদের এই মূর্খতা।

তা বোধগম্য নয়। আপনি শিক্ষক হয়েছেন বলেই হয়তো আর শেখার প্রয়োজন নেই। আমরা তরুণ প্রজন্ম শিখতে চাই। শেখার তো শেষ নেই। আমাদের সেনাবাহিনীও শিখতে চায়।

তাই তারা সংবাদ সম্মেলন করে জাতিকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছে। এতে সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে জনগণের মধ্যে থাকা ধোঁয়াশা দূর হয়েছে। আর আপনার মতো গুটিকয় বুদ্ধিজীবী ইতিবাচক বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করতে চাইছেন। দয়া করে এ ধরনের ধূমূজাল তৈরি করবেন না। Click This Link আপনি সাম্প্রতিককালে টকশো কিংবা সংবাদপত্রে বিভিন্ন কলামে নিজেকে খুব নিরপেক্ষ ব্যক্তি বলে দাবি করেন এবং এটা প্রতিষ্ঠিত করতেও আপনার চেষ্টার ত্রুটি থাকে না।

আপনার কথা শুনলে যে কারো মনে হবে আপনার মতো নিরপেক্ষ ব্যক্তি আর কেউ নেই। কিন্তু জনাব আসিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যাদের কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সে ছাত্রই হোক, শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারী হোক, তারা সবাই জানেন আপনি কেমন নিরপেক্ষ লোক! আপনি কোন দল করে সহকারি প্রক্টরের পদ বাগিয়েছিলেন, উপাচার্যের কক্ষে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকদের ইতিবাচক সাংবাদিকতার জ্ঞান দিতেন। এখন আপনার সেই ইতিবাচক মনোভাব কোথায় গেল? সেনাকর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নয়, গুলি, হত্যার বিভীষিকাময় অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান-চেষ্টা সম্পর্কে জানতে যে আপনার প্রচণ্ড আগ্রহ- তা টকশোতে দেওয়া আপনার বক্তব্য শোনার পর আমাদের বুঝতে আর বাকি নেই। হত্যা-খুনের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যদি ঘটতো তাহলে এই আপনার মতো বুদ্ধিজীবীরা বলতেন,সেনাবাহিনী কেন আগে জানতে পারলো না, এই খুনের দায় তাদেরইতারা এড়াতে পারে না..ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম আরো অনেক জ্ঞানগর্ভ বুলি আপনিই আওড়াতেন।

তা বোধকরি বুঝতে আমাদের কারো বাকি নেই। শুধু সংবাদ সম্মেলন নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ার পাশাপাশি, কেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এই সংবাদ সম্মেলন করলো না তা নিয়েও তিনি কিছুটা আপসেট ছিলেন। তার মর্মবেদনার কারণ, কেন এটি সেনা পার্সোনেল পরিদপ্তর থেকে করা হলো! আপনি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন সেখানে যদি কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটে, আর এরপর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার কেউ সংবাদ সম্মেলন করেন তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হতো? সেই প্রশ্ন আপনার কাছে। ইশতিয়াক হুসাইন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.ক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.