আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রলীগকে কুকুরের সাথে তুলনা করবেন না

জাতির নানা - একটি ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার!!!! আমি লক্ষ্য করে দেখছি আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার মাস দুয়েক পর থেকে আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠনের ছাত্রদের কুত্তা বা কুত্তালিগ বলে সম্বোধন করা শুরু হয়। আমার আপত্তি আছে ছত্রলীগকে কুত্তালিগ বলাতে। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড দেখে ছাত্রলীগকে আমি শুধু অপছন্দ না, চরম ভাবে ঘৃণা করি। কিন্তু যেই কুকুরের সাথে তুলনা করা হয় সেই কুকুর কিন্তু মানুষের অকৃত্তিম বন্ধু, যারা মানুষের সাথে কখনো বেইমানি করে না, বিভিন্নভাবে আমাদের উপকার করে। রাতে আমাদেরকে পাহারা দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বিধান করে।

বিপদের সময় কুকুর আমাদের পাশে থাকে। কুকুর বিনা কারনে কাউকে আক্রমনও করে না। এই উপকারি বন্ধুকে তবে কেন এই তুলনা করা হয় ছাত্রলীগের সাথে????? ছাত্রলীগকে কুকুর ছাড়া অন্য কোন হিংস্র প্রাণী বা অন্য কিছুর সাথে তুলনা করতে পারেন। যেমন শুকুর, হায়েনা, হিংস্র বাঘ, বিষাক্ত সাপ বা বিষাক্ত বিচ্ছুর সাথে তুলনা করেন। তা না হলে বি এস এফ এর সাথে তুলনা করতে পারেন।

নয়তো ইন্ডিয়ান বলেও গালি দিতে পারেন। কিন্তু ছাত্রলিগকে কুত্তালীগ বলে গালি দিবেন কেন? ছাত্রলীগের এমন কোন মহৎ কর্ম নাই যে তাদেরকে কুকুরের সাথে তুলনা দিবেন। কুকুরের কোন গুনটা ছাত্রলীগের ভিতর আছে যে ছাত্রলীগকে কুত্তালীগ বলে গালি দিবেন বা তুলনা করবেন। দয়া করে কুকুরকে আর অপমান করবেন না। (নিচের অংশটুকু না পড়ে কেউ মন্তব্য করবেন না দয়া করে) আমার এবং আমাদের পরিবারের সাথে কুকুরের সম্পর্কঃ আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা সাদা রং এর রঙের কুকুর ছিল যেটা আমার ছোট কাকা চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে অধ্যাপক থাকাকালিন ঐ এলাকা থেকে কুকুরের বাচ্চাটাকে এনেছিল।

তার গায়ের রং সাদা হওয়াতে তার নাম হয়ে যায় ধলা। আমারা সবাই ধলাকে আদর যত্ন করতাম। একসময় ধলা বড় হয়। এই ধলাকে কখনো উচ্ছিষ্ট খাবার দেওয়া হতো না। আমরা যা খেতাম তাকে সেই খাবারই দেওয়া হতো একজন পরিবারের সদস্য হিসাবে।

ধলার জন্য একটা প্লেট ছিল যেটাতে তাকে খাবার দেওয়া হত। যে দিন ঘরে পলাও কোর্মা পাক হতো ধলাকেও তাই দেওয়া হতো। সময়ের সাথে সাথে ধলার ভিতর আমারা এমন কিছু গুনাবলি আবিস্কার করি যার প্রেক্ষিতে ধলা সবার প্রিয়ভাজন হয়ে যায় এবং পরিবারের এক সদস্যে পরিনত হয়। এই ধলা বেজির ও বাঘডাস এর মুখ থেকে কত হাস মুরগি উদ্দার করেছে তার কোন হিসাব নাই। উদ্ধার করা আহত মুরগি/হাস নিয়ে এসে আমাদের দরজার রাখত।

সে কোন বেজি বা বাঘডাস ধরলে সেখানে দাড়িয়েই ঘেউ ঘেউ করত যতক্ষণ না বাড়ির কোন সদস্য ঐ স্পটে না যেত। একবার আমার ২ বছর বয়সী ভাতিজা কিভাবে যেন পানিতে পড়ে পরে ডুবে যায়। আসে পাশে কেউ ছিল না কিন্তু ধলা সেটা দেখে আর বিকট শব্দে আওয়াজ করতে থাকে ঠিক যে জায়গায় পানিতে পরেছে ঠিক সেই বরাবর। আওয়াজ শুনে এক চাচা দৌড়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখে কিছুই নাই, কিন্তু পানির হাল্কা ঢেউ দেখে সন্দেহ হলে তিনি পুকুরে নামেন। নামার সাথে সাথে পায়ের সাথে ভাতিজার দেহ লাগে এবং তার বুঝতে আর দেরি হয় না।

ভাতিজাকে পানি থেকে তুলে সাথে সাথে বাচ্চার পেট থেকে কিছু পানি বের করে হাসপাতালে নিয়ে বাচ্চার জীবন রক্ষা করে। বছর দু’য়েক আগে আমাদের বাড়িতে ডাকাতের আক্রমন হয়। ডাকাতরা যখন শাবাল দিয়ে দরজা ভাঙ্গার চেস্টা করছিল তখন ধলার বিকট শব্দে বাড়ির সবাই জেগে যায় এবং বাড়ির সবার চিৎকারে আশেপাশের বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসতে থাকে। এদিকে ডাকাতরা ধলার দিকে শাবাল ছুড়ে মারে। ওটা ধলার পিছনের পায়ে গেথে মাটিতে পড়ে থাকে।

ডাকাতরা পালানোর সময় একজনকে আশেপাশের লোকজন ধরে ফেলে। আমরা যখন সবাই ঘর বাইর হই হঠাত ধলার গোঙ্গানির শব্দ শুনি, দেখি তার শরীরে শাবাল বিদ্দ অবস্থায় পড়ে আছে। গ্রামবাসী যখন ঐ ডাকাতকে নিয়ে ব্যাস্ত আমারা ছুটলাম ধলাকে নিয়ে থানা পশু হাসপাতালে। ঐ রাতে পশু ডাক্তারকে হাসপাতালের পাশের কোয়ার্টার থেকে ঘুম তুলে জোর করে ধরে এনে ধলার চিকিৎসা করাই এবং বাড়িতে নিয়ে আসি। প্রায় একসাপ্তহাও প্রতিদিন থানা পশু ডাক্তার আমাদের বাড়িতে এসে ধলার চিকিৎসা করে এবং ধলা সুস্থ হয়ে উঠে।

আরও একবার চোর এসে ধলাকে বিষ জাতীয় কিছু খাওয়ইয়া গ্রিল কাটা শুরু করে একপর্যায়ে ঘরের লোকজন টের পেয়ে চিৎকার করলে চোর পালিয়ে যয়। হতাঠ খেয়াল হয় ধলা কই, ওতো চিৎকার করার কথা। খুজে দেখি এক গাছের নিচে ধলা অচেতন হয়ে পড়ে আছে। আমাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না চোররা ওকে কিছু খায়ইছে। রাতের ৩টার সময় তাকে নিয়ে পশু হাসপাতালে যাই এবং ডাক্তারের অক্লান্ত চেষ্টায় ধলা সুস্থ হয়ে উঠে।

আমাদের সেই ধলার উপকারের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। ধলার আর একটা বিশেষ গুন ছিল। যদি কেও বাড়ি থেকে দূরে কোথাও রওনা দেয় ধলা সেটা বুঝতে পারে এবং তার সাথে সাথে বাসস্টেন্ড পর্যন্ত যায় এবং তার পাশে দাড়িয়ে থাকে। যখন ঐ ব্যাক্তি বাসে উঠে যায়, ধলা বাড়ি ফিরে আসে। ধলার ফিরা আশা দেখে বাড়ির লোকজন বুঝতে পারে উক্ত ব্যাক্তি বাসে উঠে গেছে।

তবে কেও যদি আশেপাশে কোথাও যাওয়ার/বেড়ানোর জন্য রওনা দেয় তাকে আগাইয়া দেওয়ার জন্য ধলা তার সাথে বাড়ি থেকে বের হয় না। তার অনুমান শক্তি মানুষের থেকেও বেশী মনে হত। গত ৬ই জুলাই’১১ বুধবার আমি বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ধলাও আমার সাথে সাথে বাসস্টেন্ড পর্যন্ত আসে। কিছুক্ষণ পর আমি বাসে উঠে রওনা দেই।

মিরসারাই থেকে ফেনী পৌছার পর ছোট ভাই ফোন করে। রিসিভ করার পর কান্নার শব্দ শুনি বাসের আওয়াজের মধ্যে কিছুই বুঝতে পারিনি, শুধু একটা শব্দ বুঝি ‘নেই’। আমি আবার কল ব্যাক করি তখন ফোন রিসিভ করে আমাদের কাজের ছেলে রুবেল। সে ফোন ধরেই বলে, “কাকু, ধলা নেই…………. ধলা আফনারে বিদায় দিয়া বাড়িতে ফেরার পথে ট্রাক চাপা পড়ছে। “ সাথে সাথে বাস ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলে আমি নেমে যাই।

এর পরের কিছুক্ষণ মুহুরথ্র আমার স্মরণ নাই। তারপর একটা মাইক্রো রিজার্ভ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ি এসে দেখি একটা মরা বাড়ির পরিবেশ। বাড়ির ছেলে বুড়ো সবাই একজন আরেকজনকে ধরে কান্নাকাটি করছে। আমার ছোট ভাই আর এক ভাতিজা উঠানের মাটিতে গড়াগড়ি করে বিলাপ করছে।

সেই হৃদয় বিদায়ক দৃশ্য দেখে আমি আর নিজকেও কন্ট্রোল করতে পারিনি। এরই মধ্যে বেশ কিছু আত্মীয় ধলার মৃত্যু খবর শুনে বাড়িতে হাজির। কিছুক্ষণের মধ্যে অনেক আত্মীয় স্বজন এসে বাড়িভর্তি হয়ে যায়। যিনি ছোট্ট ধলাকে এনেছিলেন সন্ধ্যার পর সেই ছোট কাকাকে আমিরিকায় ফোন করি। উনি তখন মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।

উনাকে ধলার মৃত্যুর কথা বলার পর উনি আধা ঘণ্টা অব্দি কান্নাকাটি করলেন। আমি মোবাইলে চুপচাপ উনার কান্না শুনলাম। উনি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর আমাদের সবাইকে ইচ্ছামত বকাবকি করলেন। উনার অভিযোগ, আমাদের অবহেলায় ধলা মারা গেছে। উনাকে আমি বুঝাতেই পারলাম না ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে ধলার মাথা চুরমার হয়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে স্পট ডেথ।

সেইদিন কাকা নাকি আর অফিসেই যান নাই। রাত ১০টার দিকে আমাদের পারিবারিক গোরস্তানের পাশের একটি বাগানে ধলাকে কবর দেই। আমার ভাতিজা একটা ফুলের চারা এনে ধলার কবরের উপর রোপণ করে। তার পরদিন থেকে আমার ছোট ভাই আর ঐ ভাতিজা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে ধলার কবরের পাশের ওয়ালে বসে বসে কাঁদতো। এক সাপ্তাহ যাবত ওদেরকে জোর করেও ওখান থেকে আনা যেত না।

ধলার মৃত্যুর পর থেকে আমার সামনে কেউ যখন কুত্তালিগ শব্দটা উচ্চারন করে বা কোথাও কুত্তালিগ শব্দটা পড়ি তখন আমার খুব কষ্ট হয়। ধলার কথা মনে পড়ে যায়............. ধলা চলে গেছে না ফেরার দেশে। । ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.