আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাবনার ধারাপাত

আলোকিত মানুষ চাই আজ দুপুরে। লাঞ্চ করি ফ্রেন্ডদের সাথে রেস্টুরেন্টে। উদাস উদাস চোখ। কাঁচের দেয়াল ভেদ করে দৃষ্টি শুধু বাইরে চলে যাচ্ছে, বন্ধুদের আলাপে মন নেই। ১ রিকশায় এক গ্রাম্য বৃদ্ধা, এক মধ্যবয়স্ক লোক তিনটা ছাগল নিয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ মনে হল আমাদের বাড়িতেও দুটো ছাগলছানা ছিল। আমাদের বাড়িতে তার প্রথম দিনে আম্মু ওটাকে নিচে না রেখে সোজা দুইতলায় এসে হাজির। দরজা দিয়ে ছাগলছানাকে আমার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সে আসবেই না! আম্মু ছাগলকে বলে, "যাও যাও কাছে যাও। আপু হয় তো!" আব্বু ওটাকে নিজের হাতে খাওয়াতো। সকাল রাত দুইবেলা।

এতো ন্যাওটা হয়ে গিয়েছিল আব্বুর যে শুধু ওই দুইবারই খেত শান্ত হয়ে, আর সারাদিন জ্বালাতো খুউউউব, মানুষের ছোট বাচ্চার মতো। আব্বু অনেক রাতে ফিরত আগে, ও আসার পর রাত ১১টার মধ্যে ফেরার চেষ্টা করত। আমি সত্যি ওই ছাগলের বাচ্চাকে হিংসা করতাম, আমার আব্বুকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়ার জন্য। আব্বু মারা যাওয়ার পর বেচারার অনেক কষ্ট হয়েছে বোধয়, কিছু খেত না, সারাদিন শুয়ে থাকতো, রাতে কোন গাড়ির শব্দ শুনলে আমাদের যেমন মনে হতো আব্বু আসছে ওটাও বড় লোহার গেট ভেঙ্গে বের হয়ে যেতে চাইতো। আব্বুর চল্লিশাতে ওকে রেঁধে খাওয়ানো হয়েছে।

তার আগে ওর দুটো ছবি তোলা হয়েছিল, যত্ন করে রেখে দিয়েছি। শহরের মানুষের বিল্ডিং বাড়িগুলোতে থাকে পোষা কুকুর, পোষা বিড়াল, পাখি... আমাদের ছিল ছাগল। আমার ছাগল ভাই। আমার ফ্রেন্ডরা খুব হাসাহাসি করে এটা নিয়ে। পুরো ছাগল জাত আমার ভাই-বেরাদার।

কিন্তু বুকের মাঝে কোথায় ব্যাথা বাজে nobody knows!!! ২ গ্রাম্য বৃদ্ধা আবার। এরপরই মনে হল আচ্ছা ভবিষ্যৎ চাকরি জীবনে আমার পোস্টিং কোথায় হলে ভালো হবে? রিকশার গ্রাম্য বৃদ্ধার মতো মানুষগুলো যেথায় থাকে সেরকম জায়গায়? নাকি কোনভাবে যদি মেডিকেল কলেজের টিচার হওয়া যায় সেটা করেই আরামে বাসায় দিন কাটাবো! প্রথমটা অ্যাডভেঞ্চারাস পরেরটা আরামদায়ক। আমি দুটোই ভালোবাসি। কনফিউজিং! আমার জন্য অনেক অনেক সাধারণ জিনিসই অ্যাডভেঞ্চার। এই যেমন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাফ-বয়েলড ডিম খাওয়া, বর্ষায় দু'মাইল কাদাওয়ালা গ্রামের রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া এবং তাতে তিন-তিনবার আছাড় খাওয়া, নদীর খাড়ারকমের বাঁধ দিয়ে নিচে নেমে আবার উঠে আসা, যারা ভয় পায় তাদের হাত ধরে উঠায় নিয়ে আসা সেইসাথে হাসাহাসি, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কলাগাছের ভেলায় চওড়া নর্দমা পার হয়ে নদী আবিস্কার করা, সামুতে দুই-এক লাইন লিখতে পারা- এসবই আমার অ্যাডভেঞ্চার।

কাজেই কোথায় জব করতে পারা ভালো হবে ডিসাইড করা খুবই কনফিউজিং! ৩ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাফ-বয়েলড ডিম খাওয়া। আমার রিসেন্ট বিস্ময়ময় অনুভূতি। জব চিন্তা শেষ করে মনে হল আম্মু আমায় ডিম খেতে এতো উৎসাহ দেয় সবসময়, তাহলে কখনও বাজারে নিয়ে গেলে কেন বলত না, "বাবা একটা ডিম খাবে?" আমার লোভাতুর দুইটা চোখ কি কখনও দ্যাখেনি মা? নাকি ওগুলোয় ধুলা-বালি পড়ে তাই? ধুলা-বালি কীভাবে পড়বে উপরে খোসা থাকে তো! উমমম আম্মু কী রাগ করবে তাহলে এই খাওয়ার কথা বললে? ও আচ্ছা আমি তো ছোটবেলায় ডিম খেয়েই অসুস্থ হয়ে যেতাম। এজন্য কখনও কিনে দেয়নি। আমি কিনে দিতে বললে অবশ্যই দিতো।

এখন যখন ফোনে বলি আজ ডিম খেয়েছি, অসম্ভব খুশি হয় যেন নোবেল পেয়েছি!! ৪ ছ'টাকার একটা ডিমের কথাতেই এতো হ্যাপী। না জানি আম্মুটা কেমন আছে। কীভাবে একা একা থাকে এতবড় বাসায়। ইদানীং এতো বেশি ক্রাইম বেড়ে গেছে যে ভয়ই লাগে কখন আম্মুটার কী হয়। আব্বু নেই, আমি দূরে, যদি কিছু হয়? আব্বু যখন মারা যায় মা ছিলনা।

আগের দিন শুধু আব্বু আর আমি, মৃত্যুর দিন আব্বু একা। অসম্ভব কষ্টের দিন ছিল সেগুলো। পুনরাবৃত্তি চাই না। আল্লাহ আমার আম্মুকে ভালো রেখ। ৫ আম্মুর মুখটা মনে ভেসে উঠল।

আম্মু যখন আমার কাছাকাছি থাকে অসম্ভব বিরক্ত হই, কোনকিছু স্বাধীনভাবে করা যায় না। এটা না, ওটা না, কে ফোন দিল, ছেলেদের সাথে কথা বলবে না, ছবি এঁকে রঙ নষ্ট করো কেন, এতটুকু ভাত খেয়েছ কেন, ঝাল খেতে পারো না কেন ইত্যাদি ইত্যাদি। নিত্যদিনের বকাঝকা। তবুও, আম্মু তুমি জানো না তোমায় কত্ত ভালোবাসি। ৬ সমাপ্ত।

বাস্তবে ফিরে এলাম। লাঞ্চ শেষ করলাম। মাটন বিরিয়ানী। জিনিসটা টেস্টি ছিল, আমিও ক্ষুধার্ত ছিলাম। (এসবই ছিল দু'মিনিটের বিরতি।

সত্যিই ভাবনা কোথায় শুরু হয়ে কোথায় শেষ হয়!) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।