আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবুজ ক্যাম্পাসে রক্তক্ষয়ী ছাত্রলীগ

কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নিষিদ্ধ ও সকল কার্যক্রম স্থগিত করা সত্ত্বেও মাথা উচু করে ছাত্রলীগ ব্যানারে পদচারনা করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় ভিসিপন্থী ছাত্র । চাঁদাবাজি, ছিনতাই,মাদক ব্যাবসা, ইভটিজিং, দ্বি-মতকারীদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়ন, সাংস্কৃতিক কর্মীদের হামলা, সাংবাদিক নির্যাতন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন, শিক্ষার্থীদের মাদক গ্রহণে প্ররোচনা, জমি দখল, চুরি এমনকি খুনের মত অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে সেইসব ছাত্রলীগের নামধারী নেতা-কর্মদের দ্বারা। তাদের এসব অপরাধমূলক কাজ দিনে আলোয় চোখের সামনে হলেও এদের কোন দায়ভার নিতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বলা হয়েছে জাবিতে যা ঘটছে তা প্রশাসনের মদদে ঘটছে । অপরাধের মাত্রা যতই হক না কেন সেই সব নামধারী সোনার ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রশাসন সেগুলো আমলে না এনে বলছে ওই সব বিচ্ছিন্ন,তুচ্ছ ঘটনা ।

আর তাই দীপু,আনন্দ,কবীর,জুবায়ের মত শিক্ষার্থীদের খুনের এখনও কোন সুষ্ঠ বিচার পায়নি । দলীয় কোন্দল আর ক্ষমতার অপপ্রভাব এখন বর্ত্্মান প্রশাসন ও নামধারী সেই ছাত্রলীগের আর সেই কোন্দল হতে শেষ পর্য্ন্ত তাদের বলী হতে হয়েছে জুবায়েরকে । একটু ঘুরে দেখি, ১৯মে ২০১০ সাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বহু প্রত্যাশিত ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করা হয় রাশেদুল ইসলাম শাফিনকে সভাপতি ও নির্ঝর আলম সাম্যকে সাধারণ সম্পাদক করে । কিন্তু এই প্রত্যাশা অপ্রত্যাশায় পরিণত হয় কতিপয় ভিসিপন্থী নামধারী ছাত্রদের শুরু হয় অভ্যন্তরীন কোন্দল । এই কোন্দল আরও মাথা চাড়া উঠে যখন দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের এলাকা গোপালগঞ্জের কতিপয় নেতা যখন নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত হন।

তবে তাদের মধ্যে শেখ নেয়ামুল পারভেজ সহ-সভাপতি পদ পেলেও তুষ্ট হতে পারেননি এ কোরামের নেতা-কর্মীরা। আর তাই ২০১০ সালের ৫ জুলাই অভ্যন্তরীন সংঘর্ষের পর কমিটির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় দু’শতাধিক নেতাকর্মী বিতাড়িত হতে হয় ক্যাম্পাস থেকে । এরপর ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু কে শুনে কার কথা, ‘গায়ে মানে না আপনে মোড়ল’ কথাটার বাস্তবিক রুপ দিতে এখন ক্যাম্পাস দাবড়ে বেড়াচ্ছেনএসব নেতাকর্মীরা । শুরু হয় তাদের তান্ডব আর তারই ধারাবাহিকতায় গতবছরে ২৬ জানুয়ারি মীর মশাররফ হোসেন হল ও আলবেরুনী (বর্ধিতাংশ) হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা সংঘর্ষ ,শহীদ সালাম বরকত হল, কামাল উদ্দিন হল ও আল বেরুনী হলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের নাটক চলাকালে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপরও হামলা,১ফেব্রুয়ারী সহকারী প্রক্টর কামাল হোসেন ও সাব্বির আলমের তত্বাবধানে ৩০/৩৫ ছাত্রলীগ কর্মী সশস্ত্র অবস্থায় শেখ নেয়ামুল পারভেজ ও আজগর আলীর নেতৃত্বে প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর হামলা করে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া,খেলার মাঠে সাংবাদিক পেটানো,ড. ওয়াজেদ মিয়া গবেষণাগার নিয়ে টেন্ডারবাজী সহ ক্যাম্পাসে এক অরাজকতা সৃষ্টি করে রেখেছে তারা।

এছাড়াও আছে সারা বছরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীদের মারধর ও নির্যাতন করে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত, গতবছরে প্রায় ২৫/৩০জন ছাত্রদল কর্মীকে মারধর ও নির্যাতন করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। বিভিন্ন সময় ছাত্রদল সন্দেহে বের করে দেওয়া হয় আরো অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীক। তাতেও শান্ত নয় তারা আর তাই তাদের নির্যাতন ও মারধরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীর, গত অক্টোবরে শহীদ রফিক জব্বার হলে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের প্রথম বর্ষের দু কর্মীকে মারধর করে। এছাড়াও জুনিয়র শিক্ষর্থীদের জোর পূর্বক মিছিলে নেওয়া,রাজনীতিতে অংশগ্রহনের জন্য ভয় দেখানো,র্যা গিং এর ফাদে ফেলানো তাদের নিয়মিত কার্য্ক্রম । মারধর আর বিরোধীদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেই সোনার ছেলেদের কাজ শেষ নয়,গত বছর তাদের কর্মীদের হাতে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে প্রায় ৩০/৩৫ ছাত্রী ।

কিন্তু তাদের শাস্তির ব্যাপারে প্রশাসনের কোন নজর না থাকায় তারা অনায়াসে মনের আনন্দে মানসিক ভাবে অপযস্ত করছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের,এমনে চলতে থাকলে হয়তবা জাবিতে সৃষ্টি হতে পারে নতুন কোন মানিক। মাদকসেবন ও পিছিয়ে নেই তারা সম্প্রতি হল গুলোতে মাদক সেবনের হার আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা যায় এই মাদকাসক্ত টিম দেখাশোনা করেন ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের কর্মী সমরাট, রাজিব, মিশুক,রাহাত, চয়ন, অর্ণব, ফেরদৌস, মিঠুন সহ আরও কিছু নেতা কর্মী । গত ১১ জুলাই ঘুমের ওষুধ না দেয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ কর্মী অর্ণব ৫-৬জনের একটি গ্রুপ ওষুধের দোকানে ভাঙচুর এবং দোকানীকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ আছে । এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কিছু কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ মদদে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এছাড়া চাঁদার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংস্কারকাজও বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫শ টাকার বরাদ্দের সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী জানান, ছাত্রলীগ নেতা আসগর আলী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স নয়ারহাট ট্রেডার্সের কাছ থেকে ২৬ হাজার চাঁদা নিয়েছেন তাই এই হলের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেন। এছাড়া ঢাকা- আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী সুপার, হানিফ, আনন্দ সুপার, শুভযাত্রা, তিতাস পরিবহনের বাস মালিকদের থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের বিশ্বস্ত একটি সূত্র। ছাত্রলীগ নেতা আসগর এসব চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন।

তবে তাঁর ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় জুনিয়র নেতা-কর্মীদের মধ্যে এসব চাঁদাবাজির দখল নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। যেকোন সময়ে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাংবাদিকরাও রক্ষা পাই নাই সেই সব পেঠোয়া বাহীনির হাত থেকে । সংবাদ পরিবেশনের ক্ষোভ থেকে যেকোন অজুহাতে গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বেশ কিছু গণমাধ্যম কর্মীদের নির্যাতন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নামধারী শিক্ষার্থীরা। গত বছরের জানুয়ারীতে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৪জন সাংবাদিককে নির্যাতন করে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা।

এছাড়া বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভোরের ডাক পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নাসির উদ্দিনকে কামাল উদ্দিন হলে ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করে। এছাড়া গত নভেম্বরে জনকন্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহমেদ রিয়াদকেও মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়া ছাত্রলীগের মিছিল চলাকালে ছবি ওঠাতে গেলে নিউএইজ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নাজমুস সাকিব রাফসানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় ছাত্রলীগের কর্মী । শেষ পর্য্ন্ত তাদের বলী হল ইংরেজী বিভাগের ছাত্র,বিরোধী প্যানেলের ছাত্রলীগ কর্মী,ক্যাম্পাস হতে বিতারিত জুবায়ের । তাকে নিষ্ঠুর ভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ২৪ঘন্টা থাকে প্রহরী ।

খুচিয়ে খুচিয়ে দীর্ঘ্ সময় ধরে হত্যা করল তাকে অথচ হাসপাতালে ভর্তি করার আগ পর্য্ন্ত কেউ নাকি জানতেও পারল না অথচ বাহির থেকে যায়া পরীক্ষা দিবে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন । আর সেই প্রশাসনের পদত্যাগের দাবী উঠালে লাঞ্চিত হতে হচ্ছে শিক্ষকদের, সাধারণ শিক্ষর্থীদের । সরিষায় যদি ভূত থাকে তবে সেই সরিষা দিয়ে কেমনে ভূত তারানো যাবে, প্রশাসনেই যদি দূর্নীতি থাকে তবে আমাদের মত সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোথায় যাব ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।