আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইহাই বুঝি আমাদের বাকী ছিল কাজের সন্ধানে আমাজন জঙ্গলে বাংলাদেশি!

পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/ ছোটবেলায় শুনেছিলাম, বউয়ের দুঃখে বনে আইলাম, এইখানে দেখি বানরে ডিস্টার্ব করে। ------------ পৃথিবীর মধ্যে আয়তনে সবচে বড় বন আমাজন। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু এবং ভেনিজুয়েলার বিশাল ভূখণ্ডজুড়ে এই জঙ্গলের অবস্থান। তবে বেশিরভাগ অংশ পড়েছে ব্রাজিলের মধ্যে।

নানা বৈচিত্রের গাছগাছালি আর জীব-জন্তুতে ভরা এই জঙ্গলের ব্রাজিল অংশে অল্প সংখ্যক মানুষ থাকেন তার বেশির ভাগই ব্রাজিলিও বা বলিভিয়ান। এখানে দ্বীপদেশ হাইতির লোকজনও রয়েছেন। কিন্তু সাতসমুদ্র তেরোনদী দূরের ওই গহীন জঙ্গলে বাংলাদেশি! অবিশ্বাস্যই বটে। চাকরির খোঁজে সেখানে গেছেন দুই বাংলাদেশি। সম্প্রতি কাকতালীয়ভাবে তাদের সন্ধান পেয়েছেন আল জাজিরার এক সাংবাদিক।

তাদের মুখেই এই বাংলাদেশিদ্বয়ের দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প শোনা যাক- গত মঙ্গলবার আমাজন জঙ্গলে আল জাজিরার সাংবাদিক গাব্রিয়েল সোন্দোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুইজন লোক। সোন্দো প্রথমে ভেবেছিলেন এরা ব্রাজিল নয়ত বলিভিয়ার নাগরিক হতে পারে। কিন্তু না, পরিচয় জানতে চাইতেই রীতিমতো ভড়কে যাবার জোগার। তাদের মধ্যে একজন এএইচএম সুলতান আহমদে (৩৬) মৃদু হেসে বললেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি। ’ পাশেই বসা ছিলেন তার বন্ধু আবদুল আউয়াল।

সেখানেই ঘাসের ওপর বসে তাদের সঙ্গে বহুক্ষণ কথা হলো। তারা এসেছেন ঢাকা থেকে। ব্রাসিলিয়ায় এসে পৌঁছেছেন গত সোমবার (০৯ জানুয়ারি, ২০১২) দিবাগত রাতে। মূল প্লাজার মেঝেতে তারা রাতে ঘুমিয়েছেন, আপাতত কোথাও যাবেন না। কারণ খুব পরিষ্কার, তাদের খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল, কিন্তু আকর্ণ বিস্তৃত হাসি বুঝিয়ে দিচ্ছিল এখনও যথেষ্ট শক্তি আর উদ্যম টিকে আছে তাদের মাঝে।

আপনারা কেন ব্রাজিল এসেছেন? জবাবে সুলতান জানান, তারা শুনেছেন ব্রাজিলের অর্থনীতি উদীয়মান এবং দেশটি কর্মসংস্থানের জন্য ভাল হবে। তারা আশা করেছিলেন, এখানে ভাল চাকরি পাওয়া যাবে। সুলতানের আশা, খুব শিগগির তিনি বৈধ কাগজপত্র পেয়ে যাবেন এবং একটি চাকরিও জুটে যাবে। এই আশাতেই তিনি খুব খুশি। ‘আমার মনে হয়, দক্ষিণ আমেরিকায় এখন অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে।

আমার দেশের অনেক মানুষই এখন এখানে আসার অপেক্ষায় আছেন’- বলে চলেন সুলতান। ব্রাজিলে নবাগত সুলতানের পর্তুগিজ ভাষাটাও জানা নেই। রংয়ের মিস্ত্রি হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি, এক সময় গ্রিসে কাজ করেছেন। তার বন্ধু আউয়াল একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান, আগে মালয়েশিয়াতে কাজ করেছেন। তারা দু’জনেই জানালেন, সংসারের খরচ চালানোর জন্য তাদের চাকরির দরকার।

সুলতানের পরিবারে তার স্ত্রী ও সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশু রয়েছে। আর আউয়ালের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, এক বছরের একটি মেয়ে এবং দুই বছরের একটি ছেলে। সুদূর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ থেকে আটলান্টিক পেরিয়ে ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলের এক দূরবর্তী কোণায় কীভাবে এসে পৌঁছলেন সেই অভিযাত্রার গল্পটা কি রকম? আগ্রহ দেখাতেই সান্দোকে কাহিনীটা বর্ণনা করলেন তারা। এর প্রেথমেই রয়েছে দালাল পর্ব। এই দীর্ঘ অভিযানের জন্য তারা দালালকে দিয়েছেন ৯ হাজার ডলার।

সেই দালাল তাদের ইকুয়েডরে ভাল চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জানিয়েছিল সহজেই পৌঁছানো যায় সেদেশে। সুতরাং সুলতান ও আউয়াল সেই টাকা পরিশোধ করে ঢাকা থেকে দুবাই যাত্রা করেন। কিন্তু কেন তারা কাজের জন্য দুবাই থেকে গেল না? সুলতান বললেন, ‘সেখানে সহজে কাজ পাওয়া যায় না। আমি ভেবেছিলাম ব্রাজিলে এর চেয়ে ভাল অবস্থা।

’ দালাল তাদের উড়োজাহাজে তুলে দেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বিমানে করে ১৫ ঘণ্টার এক বিরতিহীন যাত্রায় দুবাই থেকে সাও পাওলোতে যান তারা। ইকুয়েডরের কথা হলেও তাদেরকে পাঠানো হয় ব্রাজিল। অথচ সেদেশের ভিসা তাদের ছিল না। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সাও পাওলো পৌঁছার পর তারা বিমানবন্দর ছাড়তে পারেনি।

সেখান থেকে তাদের চিলির সান্তিয়াগোতে পাঠানো হয়। সান্তিয়াগোতে দীর্ঘ যাত্রা বিরতির পর অন্য আরেক ফ্লাইটে তারা পৌঁছান ইকুয়েডরের কিতোতে। সেখানে কয়েক দিন অবস্থান করেন তারা। ‘কিন্তু সেখানে আমাদের জন্য কোনও কাজ ছিল না’- বলেন সুলতান। সুতরাং শেষ ভরসা হিসেবে তারা ফের ব্রাজিলে যাওয়ার চিন্তা করলেন, যে দেশটি এখন পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত।

কিন্তু যেহেতু জানতেন না ভিসা ছাড়া কীভাবে ব্রাজিলে ঢোকা যায়, সেহেতু আরেক দালালের খপ্পরে পড়ে পকেট থেকে এ বাবদে ৫ হাজার ৪শ’ ডলার গচ্চা দিতে হয়েছে। সেই লোক বলেছে, ‘এটা খুব জটিল কাজ। কিন্তু কোনো চিন্তা নেই। আমি সব ঠিকঠাক করে দেব। ’ এরপর শুরু হয় তাদের আরেক যাত্রা।

একটি পাবলিক বাসে করে তাদের কিতো থেকে পেরুর রাজধানী লিমাতে পাঠানো হয়। টানা ২৬ ঘণ্টার এই বাসযাত্রা শেষে তাদের আবার আরেকটি বাসে করে ১২ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে পেরুর পাহাড়ি এলাকা ইনাপারিতে পাঠানো হয়। এই শহরটি ব্রাজিল সীমান্তের কাছাকাছি। কিন্তু এখনও তাদের ব্রাজিলের ভিসা মেলেনি। বহুদূরের সম্পূর্ণ আলাদা ভূখণ্ড আর সংস্কৃতি থেকে আসা এই দুই মানুষ স্থানীয়দের চরিত্র বুঝতে পারেন না।

এক লোক তাদের কাছ থেকে ৬০০ ডলার চেয়েছে। বলেছে, সে গোপনে তাদের বলিভিয়ার সীমান্তে পৌঁছে দিতে পারবে। ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গল থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে তাদের পৌঁছে দিতে পারবে সে। কিন্তু তাদের হাতে এখন আছে মাত্র ৩০০ ডলার। দালালের চাহিদা ৬০০ ডলার পূরণে সবশেষ উপায় হিসেবে সেই বাকি টাকার জন্য লোকটি সুলতানের সেলফোনটি চায় আর তারাও রাজি হয়ে যায়।

তারা ঢাকা ছেড়ে এসেছেন সেই ২২ দিন আগে এবং অনেক কাণ্ডের পর পৌঁছেছেন ব্রাসিলিয়াতে। ব্রাসিলিয়াতে এখন তাদের প্রায় যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে। সুলতানের হাতে আছে মাত্র ২০ ডলার এবং কয়েকটি ব্রাজিলিয়ান কয়েন। বাড়িতে ফোন করার মতো সেলফোনটিও বেচে দিয়েছেন। ১০ ডলারে তারা সামান্য খাবার আর পানি কিনে খেয়েছেন।

এখন তাদের পকেটে সর্বসাকূল্যে ১০ ডলার আছে- জানালেন সুলতান। স্থানীয় কেন্দ্রীয় পুলিশ কার্যালয়ে তারা তাদের পাসপোর্ট পাঠিয়েছেন যাতে তাদের কাজের অনুমতি মেলে। এতকিছুর পরও তারা দু’জনেই ব্রাসিলিয়াতেই থাকতে চান। এখানকার মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানে না। আর এ কারণে সমস্যাটা আরও বেশি।

তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক মধ্য বয়সী ব্রাজিলীয় এসে জিজ্ঞেস করলেন- এরা কারা? এরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে বলতেই তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের রাজধানী, ঠিক না?’ প্রসঙ্গত, ব্রাজিলের উত্তর-পশ্চিমের আমাজন বনাঞ্চলীয় শহর ব্রাসিলিয়ার লোক সংখ্যা ২০ হাজার ২৩৮ জন যাদের মধ্যে প্রায় এক হাজার ২শ’ জনই হাইতি থেকে আসা। Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.