আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোলাম আযমদের মোজেজা!

আজ দিন ভর গোলাম আজমের গ্রেপ্তার নিয়ে সব মহলে ব্যপক আলোচনা হল। মাঝখানে থাকলাম আমাদের মত ক’জন বোকাসোকা মানুষ। আমি আজ মানুষের আনন্দ দেখেছি। ভেবে আপ্লুত হয়েছি যে মা আজ তার একাত্তরে হারানো সন্তানের হন্তাকে এভাবে দেখলেন। দেখলেন গরাদের মাঝখানে আটক এক সময়ে যে ছিল প্রবল ক্ষমতার অধিকারী তার কারান্তরনের দৃশ্য।

কেউ আনন্দিত হবে এটা স্বাভাবিক। গোলাম আজমের সমর্থকরা কষ্ট পাবে এটা স্বাভাবিক। কেউ এখান থেকে রাজনীতির মেওয়া খাবে এটা স্বাভাবিক। আর কেউ অপেক্ষা করবে পরবর্তী মেওয়া খাবার অপেক্ষায়। তারপর কি হবে ? জিনিষটা একটু দেখে নিন কেমন লাগছে।

১১ই জানুয়ারি বঙ্গভবনে খালেদা জিয়ার হাত আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি এক সময়ের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক মন্ত্রী। যিনি ২১ শে আগস্ট এক মর্মান্তিক হামলায় তার স্ত্রী আইভি রহমানকে হারিয়েছিলেন। দেখুন তো দেখে কাউকে একে অপরের কিছু মনে হয় কিনা? এর মধ্যে কে জানি দলীয় লোক হওয়াও ফাঁসির আসামীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন! নিচের ছবিটা দেখুন। খালেদার দিকে কে তাকিয়ে আছেন? গোলাম আযম। দেখুন তো দেখে কাউকে একে অপরের কিছু মনে হয় কিনা? শেখ হাসিনার এবং সাজেদা চৌধুরীর সাথে নিজামি এবং মউদুদ আহমদ এক টেবিলে সংবাদ সম্মেলনে।

সেই ছবিটার কথা মনে আছে? খালেদা জিয়ার আগের সরকারের বিরুদ্ধে, এক সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে। মনে আছে এই তত্ত্বাবধায়কের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল। কমছে কম ২০০ মানুষ হত্যা। আরেকটু ঘুরে আসুন। খুজবেন নাকি ছবিটা যেখানে রাশেদ খান আর মতিউর রহমান নিজামি কোলাকুলি করছেন মহা আনন্দে।

মতিয়া চৌধুরী। এই নেত্রী এক সময় বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানাতে চেয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। কয়েকজনকে এবার একসাথে মেলান। হাসিনা, খালেদা, গোলাম আযম, নিজামি, জিল্লুর রহমান, মতিউর রহমান নিজামি, রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী। বাম, মধ্যম, ডান- সব একসাথে।

আরেকটু বলি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। সেই মানুষ গুলো যারা মেহেদি পাতা আঁকা বধুর করতল ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছিল রাইফেল। কেন? দেশ স্বাধীন হবে, কোন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হবে না। অধিকারের কথা বললে কেউ বন্দুকের মুখে, কালো বা সাদা পোশাকে উঠিয়ে নিয়ে গুম করে ফেলবে না।

নদীতে লাশ নয় থাকবে জলধারা সঞ্জীবনী। চাকুরি বা ব্যবসা কোথাও বৈষম্য থাকবে না। সবার সুন্দর জীবন হবে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস থাকবে না। মেধার জয় হবে।

কিশোরী ময়নার সাথে ঐ বাড়ির রহমান শেখের সদ্য চাকুরী পাওয়া ছেলে আজিজের বিয়েটা কিন্তু হবেই। বুক বাঁধা আশা। রাগ করবেন না- গভীর রাতে হয়ত হাসপাতাল যেতে হল মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে। বাসায় ফেরার পথে ওষুধ, মোবাইল ফোন, দুলাভাইয়ের দেয়া শখের ঘড়ি, শেষ ক’টা টাকা- সব হারালেন। পুলিশের কাছে গেলে কি ফল পাবেন? পুলিশকে বন্ধু ভাবেন? ক্যম্পাসে আছেন? বুয়েটের ঈশানের হাত ভাঙা ছবি, যুবায়ের এর নিথর দেহ কিংবা আবু বকরের মায়ের কান্নার ছবি মনে আছে, সেই টাঙ্গাইলের বৃদ্ধ সবজি বিক্রেতার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ছাত্র আবু বকরের বৃদ্ধা মা।

------------ নিজে একজন উদ্যোক্তা হতে চান। কত টাকা চাঁদা দিবেন, কাকে কাকে দিবেন আগে হিসেব কষেছেন? আপনার মত রাষ্ট্র পক্ষের বিরুদ্ধে যায়? কালো পোশাকের বন্দুক ওয়ালার কথা মনে হলে আজরাইলের নাম নিচ্ছেন কেন? মিশুক মুনির তারেক মাসুদ কে কারা মারলো- বিচার দাবি করবেন? মন্ত্রীর গাড়ি আসবে যাবে, পতাকা উড়বে। ভুলে যাবেন না গরু ছাগল চিনলে আপনিও দু একটা খুন করার লাইসেন্স পাবেন। আমি আর সামনে যাব না। শেষে বলবেন আমি বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলবার চেষ্টা করছি।

একটু ভেবে দেখি তো এই শোষকরা কারা? সময়ের পাল্টানো পিঠে এরা আর ওরা। জাত, ধর্ম, নাম পালটেছে। স্বভাব পালটেছে কি? কখন পাক, কখনও ব্রিটিশ, কখনও এই ভূখণ্ডের কোন তালুকদার বা মজুমদার। আরেকটু বিরক্ত করি। সিআইএ তার ক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস এ দেখাচ্ছে ইন্দিরা গান্ধী দুই পাকিস্তানের যুদ্ধের মধ্যে সামনে আসছেন যেন পাকিস্তান আর কোনদিন ভারতের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে।

এমাজউদ্দিন আহমেদ এর এক লেখায় দেখেছিলাম তিনি ভারতীয় প্রধান সেনা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চেয়েছেন এই কারনে যে ‘ এমন সুযোগ আর দ্বিতীয়বার আসবে না’। সময় বুঝে বিবেচকের মত কাজটি করেছিলেন তিনি। সে সময়কার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীকে ৩২৭ টি রাইফেল দিয়েছিলেন। কেন দিলেন তিনি। ক্ষুব্ধ হন ইন্দিরা গান্ধী।

শেষে তার মুখ্যমন্ত্রী পদ টাও যায়। জেনারেল স্যাম মানেক’শ কে পূর্ব পাকিস্তানে আক্রমনের দায়িত্ব দেয়া হলে কি তিনি কি করলেন। ইন্দিরা গান্ধীকেই জানিয়ে দিলেন তিনি এই কাজ না করে বরং পদত্যাগ করবেন। কিন্তু প্রস্তুতি নিতে সময় পেলে ভাল ফল আনবেন। সবচে কম সময়ে দুর্ধর্ষ একটি সেনাবাহিনীকে মাত্র ১৩ দিনের মাথায় আত্ম সমর্পণে বাধ্য করালনে।

৭১ এর ৩ ডিসেম্বর ভারত পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হয়। ১৬ই ডিসেম্বরের সেই যুদ্ধ জয়ের দলিল আছে নাকি দিল্লির সামরিক জাদুঘরে। পাকিস্তান ভারতের কাছে আত্ম সমর্পণ করেছিল এই মর্মে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার হিন্দুস্তান টাইমস এর বরাতে খবর ছেপেছিল ভারত নাকি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গোপন নথিপত্র সরকারি আদেশে নষ্ট করে ফেলতে বলেছে। কি ব্যপার এত ভারতের প্রতি রাগ কেন? রাগ না, ভালবাসাও না।

মাহবুবুল আলমের গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে বই দুটো কেন জানি মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধার সেই গান- ব্যর্থ রাতের আবর্জনা কুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো! এক সাগর রক্ত বিনিময় হল, রেল লাইনের পাশে মেঠো পথটার ধারে মা দাঁড়িয়ে রইলেন। মানুষ কি পেল? বদলানো শাসক আর শোষণের নিত্য নতুন আবিষ্কার। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে? কি জানি? জিয়াউর রহমান মরে গেল। এরশাদ ক্ষমতায় এলো।

এরশাদ গেল। নির্বাচন হল। খালেদা হাসিনা প্রায় সমানে সমান। ক্ষমতার ফ্যাক্টর গোলাম আজমের কাছে দু’জনই দোয়া চাইলেন। দাবার চালে জিতে গেল খালেদা।

হাসিনা বললেন – একদিনও শান্তিতে থাকতে দেব না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী উঠলো। দিন গেল। জামাত আওয়ামী লীগ একসাথে আন্দোলন করল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে ক্ষমতা দখলের দৌড় দেখা গেল।

ক্ষমতার পরিবর্তন হল। ‘চিঠি’ লিখে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে মুশতারী শফি জানালেন কিভাবে বিচারের আন্দোলন দমে গেল। আবার ক্ষমতার পরিবর্তন হল। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবী আবার এলো। আবারো ক্ষমতার পরিবর্তন হল।

তাহলে কি সেই সিমলা চুক্তি যারা করেছিলো তাদের বিচার হবে? পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের বিচার? হবে কি? ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা আরও অনেক হিসেব নিকেশ নাকি আছে। রাজনৈতিক ব্যপারস্যপার আছে। গোলাম আযম ধরা পড়ল। আমেরিকা থেকে সাদা চামড়ার বড় এক লোক এসেছিলো। ন্যায়বিচার চায়।

আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু এর মাঝে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব বন্ধক রেখে নাকি সরকার ঋণ নেবার পরিকল্পনা করছে। এখন আমার বাসা ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ। সকালে গ্যাস থাকে না।

শেষ রাতে আসে। পাশের বাসার আন্টি সাত বছরের বাচ্চার জন্য ঋণ করে স্কুলের পঁচিশ হাজার টাকা ডনেশান দেবার জোগাড় করছেন। এক বন্ধু পাঁচ বছর চাকরি করে আর কিছু ধার কর্জ করে নতুন চকচকে একটা মোটর সাইকেল কিনেছিল। মাস না যেতেই সেদিন রাতে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার সাধের ‘ ঘোড়া’ ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্ত। থানায় গিয়েছিল।

আর সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ করে একটা মামলা করতে পেরেছে এক উপরওয়ালার দয়ায়। পুলিশ বলছে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। নসিবে থাকলে পাবেন। বাজারে গেলে সব্জিওয়ালা বলে ‘ নিলে নেন না নিলে যান। প্যাঁচাল পাইরেন না’।

নিতু আপুর অফিসে বেতন বাড়েনি। কিন্তু ২৫ টাকার রিকশা ভাড়া বলতে গেলে ৫০ টাকা হয়ে গেছে। আগামি মাসে পিচ্চিটা যদি খেলনা চায়! অনুপমের স্কুল শিক্ষক বাবা ছেলের জন্য বাড়ি থেকে টাকা আনছিলেন। পথে অজ্ঞান পার্টির পাল্লায় পড়ে সব খুইয়েছেন। অনুপম আগামি মাসে বাসা ভাড়া দিতে পারবে না।

আইন শৃঙ্খলা ভালো আছে। পত্রিকার জরিপ বলছে বিরোধীদলের নাকি জনসমর্থন বেড়েছে। সরকারকে সচেতন থাকার বুদ্ধি দিয়েছে ঐ শীর্ষ দৈনিক। এভাবেই বাড়বে কমবে। ক্ষমতার পালা বদল হবে।

কখনও রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা এক হবে। কখনও ডান বাম। কখনও গোলাম আজম জেলে যাবে, কখনও তার গাড়িতে পতাকা উড়বে। ফেলানির লাশ কাঁটা তারে ঝুলবে। তিতাসের বুকে পাথর বসবে।

আবার দিন বদলাবে। হাতের অস্ত্র বদলাবে। আর আমি- গল্পটা শোনা এক সিনিয়র সাংবাদিকের কাছে। বঙ্গবন্ধুর এক জনসভার উপর প্রতিবেদন তৈরি করতে ময়মনসিংহ যান। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেন -২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করা হবে।

সবাই ব্যপক তালি বাজালো। কেউ কেউ লাফিয়ে উঠেছে আনন্দে। মঞ্চের সামনে এক বয়স্ক লোক, কোন রকম লুঙ্গি কাছা মেরে পরা। সেও লাফিয়ে উঠেছে। কি মনে করে হটাত বক্তৃতা থামিয়ে বঙ্গবন্ধু তাকে জিজ্ঞেস করলেন “তুমি লাফাও কেনো? তোমার কয় বিঘা জমি আছে?”।

লোকটা সম্বিৎ ফিরে পেল। হা করে তাকিয়ে খানিকক্ষণ পর বলল ‘আমার তো জমিন নাই’। বঙ্গবন্ধু তাকে কাছে ডেকে নিলেন। জিজ্ঞেস করলেন – তাইলে লাফাও কেনো? অনেক আলোচনা হয়েছে। বৃহৎ ক্ষমতার স্বার্থের কারণে হানাহানি মারামারি কাটাকাটি বন্ধ হয়নি।

শুধু সিঁথির সিঁদুর মুছেছে হরিদাসির। আর আমার যে বোনটি নৃত্য শিখেছিল সৃষ্টিশীল হবার আশায়, ও সম্ভ্রম হারিয়েছে। ইতি তাৎপর্য বিহিন। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.