আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমার তোমাকে খুঁজি

তোমাকে পাওয়া হয় না আমার, তোমার তোমাকে। তোমাকে যত বেশি করে পেতে চাই ততই যেন তুমি আরো বেশি দূরে সরে যাও। আমি দূর থেকে দেখি তোমাকে। তুমি হয়ে ওঠো আরো বেশি অচেনা। সেই অচেনা তোমাকে বারে বারে নতুন করে চিনি।

তারপরও তোমাকে চেনা হয় না আমার, তোমার তোমাকে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি তোমার চোখে। কতদিন ধরে তোমাকে আমি জেনেছি, তোমার চোখ, মুখ, চুল, হাসি, কথা সবকিছুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে, ভাঁজ খুলে খুলে দেখেছি। আর সবকিছুর পরে প্রতিবার তোমাকে আরো বেশি অজানা মনে হয় নিজের কাছে। কিছুতেই জানা হয় না তোমাকে আমার, তোমার তোমাকে।

আমি একটা অদ্ভুত গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতে থাকি। তোমার মাঝে নিজেকে হারাই, ডুবে যাই, ভেসে উঠি...আর আরো আরো বেশি করে ভালবাসি...তোমাকে, তোমার তোমাকে। তোমার এই ভালবাসার গোলকধাঁধায় ঘুরপাক আমার আদি-অন্তকাল থেকে। আমি যত পা এগিয়েছি তোমার দিকে, ততই পিছিয়েছি প্রতিবার। উদাসীন, নির্লিপ্ত তুমি আমার মাঝে ক্ষোভ জাগিয়েছো।

খুব রাগে, অভিমানে আমি সরে গেছি দূরে। কিন্তু তোমার সেই উদাসীনতাই আমার মধ্যে তৈরি করেছে দূর্নিবার আকর্ষণ। চুম্বকের মত টেনে রেখেছে তোমার দিকে। খুব বেশি দূরে যেতে পারিনি কখনোই তোমাকে ছেড়ে। মনে পড়ে বিয়ের দিনটার কথা।

এই দিনটার অপেক্ষায় আমার কত বিনিদ্র রাত কেটেছে, কত ভয়, কত শংকা অননুমেয় তোমাকে নিয়ে। তুমি যে সত্যিই আমার হবে স্বপ্নেও ভাবি নি, এমনকি বিয়ের মঞ্চে বসেও আমার বুক ধুকপুক করেছে এই ভয়ে যে হুট করে বুঝি তুমি মত বদলে নিবে আর ছেড়ে চলে যাবে আমাকে। আর সেই ভয়েই খুব অভিমানে হাত জমে গেছে আমার, কলমের সামান্য একটা খোঁচায় যেখানে তুমি আমার হয়ে যাচ্ছো, যখন তোমাকে পাওয়ার কঠিন, দুর্গম পথ পার হয়ে আমি চৌকাঠে পৌঁছে গেছি, তখন যেন আমার আর পা চলছে না। সে দিন, যখন তোমাকে প্রথমবার সামনাসামনি দেখলাম, যেন আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এই অসম্ভব রূপবান মানুষটি আজ থেকে আমার হল।

আমার, শুধুই আমার! মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল আমার চারিপাশের সবকিছু, থমকে গিয়েছিল সময়, আমি ভুলে গিয়েছিলাম অসংখ্য চোখ চেয়ে আছে আমার দিকে। সবকিছু ভুলে আমি দেখছিলাম তোমাকে। তুমি, আমার তুমি! কিন্তু সত্যিই কি আমি পেয়েছি তোমাকে? এখনও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরছি আমি, নিজের কাছে, তোমার মাঝে। রাতের পর রাত ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করে গেছি কম্পিউটারের সামনে কাজে মগ্ন তোমার পিঠের দিকে চেয়ে থেকে। মুগ্ধ আমি, হতভম্ব আমি শুধু দেখেছি গ্রীক দেবতার মত চওড়া কাঁধের, নীলনদের বাঁকের মত পিঠের সুঠাম একজন মানুষকে।

হাত বাড়ালেই যাকে ছুঁতে পারি, কান পাতলেই যার নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যায়, ঠোঁট নাড়ালেই যাকে ডেকে নেয়া যায়। তবু আমার হাত বাড়ানো হয় না, ঠোঁট নাড়ানো হয় না। তুমি যেন কোন অদৃশ্য রকেটে চড়ে সাঁই সাঁই করে সরে যেতে থাকো দূরে, শত শত আলোকবর্ষ দূরে। আমার জানা হয় না যে মানুষটিকে দেখে প্রতি মূহুর্তে নতুন করে মুগ্ধতার জাল জড়ায় চোখে, সে কি সত্যিই আমার? তার কতখানি পেয়েছি আমি? আমার যে সবটুকু চাই, সামান্যতে আমার পোষাবে না, কোন ভাগাভাগি আমি করতে পারবো না। বারবার মনে হয় তোমার ভিতরে ঢুকে গিয়ে, ডুবে গিয়ে, হৃৎপিন্ডের সবগুলো প্রকোষ্ঠ, দেহের সমস্ত শিরা-উপশিরা, রক্তকণিকা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষ, কোষ-অঙ্গাণু খুলে খুলে দেখি...কি আছে তোমার মাঝে যা আমাকে আমৃত্যু যন্ত্রণা দিয়ে যায়।

কি মায়ার জাল ছড়িয়েছো বুকের গভীরে, যা থেকে আমার নিস্তার নেই। কি দিয়ে গড়া তুমি, যে তোমার সশরীর উপস্থিতি অথবা কাছে না থেকেও আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা তুমি একইরকম আকর্ষণীয়। আমি প্রতিদিন তোমাকে নতুন করে ভালবাসি, অনেক বেশি, আরো অনেক বেশি। ভালবাসতে বাসতে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে, ছটফট করি, অস্থির হয়ে উঠি, পাগলামিতে পেয়ে বসে, মাতাল, নেশাগ্রস্ত হয়ে যাই। বারে বারে সে ভালবাসার পেয়ালায় চুমুক দেই আমি, তবু আমার তৃষ্ণা মেটে না, তৃপ্তি হয় না।

তোমাকে বুঝে ওঠা খুব কঠিন হয় নি কখনো, নিজের হাতের রেখার মতই পরিষ্কার পড়ে নিয়েছি সবসময়ে। আমি জানি তোমার চোখের ভাষা, তোমার নিঃশ্বাসের গন্ধ, তোমার ঠোঁটের, হাতের স্পর্শ...সব, সবকিছুই মুখস্থ আমার, দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলনসহ। তবু যেন তোমাকে বুঝে ওঠা শেষ হয় না আমার। বুঝতে পারি না কেন ভালবাসলে তুমি আমাকে, কাছে টেনে নিলে গভীর আবেগে, বেঁধে নিলে নিজের জীবনের সাথে। আমাকে, আমাকেই কেন? আমিতো তেমন নই যেমন তুমি কল্পনায় এঁকেছো সবসময়।

তোমার সাথে আমার কাজের, ভাবনার, পছন্দের মিলের চেয়ে অমিলই বরং বেশি। তবে কিসে তুমি ভালবাসলে আমাকে? কি পেলে তুমি আমার মাঝে? প্রশ্নটার জবাব খুঁজে ফিরি বারবার। এ শঙ্কায় কুঁকড়ে যাই যে হয়তো তুমি, বেখেয়াল উদাসীন তুমি হুট করেই একদিন সব আকর্ষণ হারাবে আমার ওপর থেকে। যেমন ঝড়ের মত, ঘূর্ণির মত, মাতাল হাওয়ার মত এসেছিলে আমার জীবনে তেমনি দমকা বাতাসে মিলিয়ে যাবে। তাই বারবার ভেঙে-চুড়ে নতুন করে নিজেকে তৈরি করে নেই, বদলে নেই, সাজিয়ে নেই।

আমার আমি বলে আর কেউ থাকে না, আমার নিজের চাওয়া, পছন্দ, ভালবাসা কিছুই আর তখন নিজের নয়। নিজেকে আমি তোমার চোখে দেখি, তোমার স্বপ্নের মত গড়ি। তোমার ভালবাসা পেতে আমি কখনো হই 'মিলি', কখনো 'রেমি', কখনো 'রাই', কিংবা 'কুসুম', আবার কখনো 'আনন্দ'। আমি অভিমানে ঠোঁট ফুলাই, দুচোখ ছাপিয়ে আমার জল নেমে আসে তোমার খুব সামান্য অবহেলায়, কটু কথায়, রূঢ় আচরণে। আমি জানি আমার এই ছেলেমানুষিতে তুমি হেসে উঠবে খুব, ভালবাসায় কাছে টেনে নিবে, আদরে আদরে ভরিয়ে তুলবে।

তাই বলে সবসময় মোমের মত গলে পড়ে যাই না আমি। আমি ফুসে উঠি, ফুলে উঠি, ক্ষেপে উঠি, প্রতিবাদে মুখর হই। উল্টে তোমাকেও কত কি না জানি শুনিয়ে দেই। তুমি কি ভয় পাও তখন আমাকে? নাকি সেটাও তোমার কাছে ভীষণ ছেলেমানুষি? নিজেকে ভেঙে-চুড়ে নতুন কত রূপ দেই শুধু পেতেই নয়। তোমার ভালবাসায় আকন্ঠ নিমজ্জিত আমি একবার হাত বাড়ালে আগুনেও ঝাপ দিতে পারি, ডুবে মরতে পারি সমুদ্রে।

কিভাবে চাও তুমি আমাকে? কতখানি চাও? পেয়েছো কি? আমাকে, আমার আমাকে! মনে অসংখ্য, কিংবা শুধু একটাই জ্বলজ্বলে প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকি তোমার, খুব খুব কাছে। তোমার চোখের মণির ভেতর আমার ছায়া দেখি, তোমার গালের নিচের হালকা নীল শিরাটাও স্পষ্ট দেখা যায়, তোমার চুলের ডগায় আলোর ঝলক, ঠোঁটের কোণে সদ্য তৈরি ছোট্ট, লালচে কাটা দাগ। আমার মুখে তোমার গরম শ্বাসের স্পর্শ, আমার মুঠোয় তোমার হাত, আমার চোখে তোমার চোখ। তোমাকে দেখি, ধীরে ধীরে তুমি দূরে সরে যাও, ঝাপসা হতে থাকে তোমার চুল, চোখ, ঠোঁট, মুখ। একসময় তুমি শুধুই একটা অবয়ব হয়ে ওঠো।

এত কাছে তুমি, তারপরও কত দূরে! যত বেশি করে তোমাকে পাই, তত বেশি যেন হারাই। যত বেশি নিজেকে বিলিয়ে দেই তোমার কাছে, ততই যেন গুটিয়ে নেই বারবার। অনুভবে যখন তুমি সবচেয়ে বেশি নিজের, তখনই যেন খুব দূরের কেউ। এই অনিশ্চয়তা তোমাকে পর করে দেবার বদলে তোমার প্রতি তৈরি করে দূর্বার আকর্ষণ, তুমি জালের মত জড়িয়ে রাখো আমাকে। তোমাকে আরো বেশি বেশি করে ভালবাসি।

ডুবে যাই তোমার মাঝে, হারিয়ে যাই। তোমাকে পাওয়া হয় না আমার...তোমার তোমাকে। তুমি আর আমি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.