আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাদা! ভোলাগঞ্জ গিয়েছিলুম দাদা!! চখাম একটা জায়গা দাদা!!!

জীবন আসলে চিল্লাপাল্লা ছাড়া কিছুই না। সেটাই করতে চাই, মনের সুখে, ইচ্ছা মতন। • মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়েছিলাম ৭.৩০ এ, উত্তেজনায় আগেই উঠে গেলাম, রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম ৮ টার মধ্যেই। সুরমা গেট থেকে অন্যদের সাথে CNG করে আম্বরখানা। সেখান থেকে বাসে যাওয়ার পরিকল্পনা।

কিন্তু সুবিধা হলনা, বাসে উঠে আবার নেমে গেলাম, অন্য ব্যবস্থা দেখা যাক। আমরা নেমে বিসমিল্লাহ্ ( আসার সময় অবশ্য এর নাম বদলে “আল-শার্ম” দিয়ে আসছিলাম, শারমিন আপ্পুর সম্মানে, কারণ এখানকার বিলটা দেয়ার সময় উনার মহানুভবতার পরিচয় পেয়েছিলাম। ) নামের একটা রেস্তরায় বসলাম আর প্রেসিডেন্ট ( মেহেদী ভাই) ও এক্স প্রেসিডেন্ট ( মাজহার ভাই) বিকল্প ব্যবস্থার কাজে নেমে গেলেন। পচানোর শুরু এখানেই........................!!! একজন আর একজনের পেছনে লেগে গেল, কাকে কিভাবে ও কত ভাবে যে পচানো যায় তার চর্চা শুরু হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা জেনে গেলাম যে, * ইমরান ভাই পুরা কপি টাইপ মানুষ, মানে তার সকল কথাই কোন না কোন বিখ্যাত লোক থেকে কপি মারা।

( BBA পড়া একটা লোকের কিভাবে এতো সাহিত্য জ্ঞান থাকে!!! সত্যিই অবাক করার মতো। ) * সুফি ভাই প্রেমিক মানুষ, কিন্তু Honors এর শেষ পর্যায়ে এসেও একটা গার্ল ফ্রেন্ড যোগার করতে পারেন নি। এখন তার চিন্তা বিয়ে নিয়ে, তার পর প্রেম করবেন। * শারমিন আপু নাকি আগামী ১ বছরের মধ্যে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার ও হতে যাচ্ছেন ১-২ বছরের মধ্যে। ( উনি আমার পরিচিত একমাত্র লোক, যার পরীক্ষা দিতে ও পড়াশুনা করতে ভাল লাগে।

) * এনি আপু ঘোষণা করলেন যে তিনি ১২ টা সন্তানের ম্যা হতে চান। * ফরহাদ ভাই একজন কবি মানুষ এবং মানুষ কে পচাতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। * পলাশ ও পিয়াস নিরীহ টাইপ মানুষ, কথা কম বলে। * শাকিল ভাই ও ভদ্র লোক, সে আমার মতো ভাল একজন দর্শক। * মাসুম ভাই বর্তমানে তার ২৬ নম্বর প্রেম চালিয়ে যাচ্ছেন, তার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে ছেলের সংখ্যা খুবি কম।

* বিভেক দা জেসমিন আপু কে খুব বেশী মিস করে......। ইত্যাদি...। ইত্যাদি...। এই সময় আমার মনে হচ্ছিল, ভোলাগঞ্জ যাওয়ার আর দরকার কি, আড্ডা দেয়াতেই তো বেশী মজা।  ১০ টার দিকে মাজহার ভাই ও মেহেদী ভাই মাইক্রো নিয়ে হাজির হলেন, সবাই দৌড় দিয়ে উঠে গেলাম।

উফ...!!!  বাংলা সিনেমায় যে কত গান আছে.........!!!আর এতো সংগীত প্রতিভা বাংলাদেশে!! পিয়াসের গাওয়াটা না শুনলে বিশ্বাস করা যায়না। সুফি ভাই কোন রোমান্টিক গান উঠলেই উদাস হয়ে যান, গানের একদম ভিতরে যাচ্ছিলেন, ( আমি নিশ্চিত উনি গণিত না করে গান চর্চা করলে সবকিছু ছাড়িয়ে যেতেন। ) রাস্তা টা যে এতো জগন্ন ছিল, সেটা একবারের জন্যেও মনে হয়নি। কেও কেও ( নাম প্রকাশ করলাম না, মাইর খাওয়ার ভয়ে) গানের মাজে কাওকে কাওকে ট্যাগ করে দিচ্ছিলেন,গান কে প্যারডি করে নিজের ও অন্যের গোপন কথা ফাঁস করে দিচ্ছিলেন চিকনে। জার্নির আড়াই ঘণ্টা সময় মনে হয় জীবনের সবচেয়ে ভাল অভিজ্ঞতার খাতায় যোগ হওয়ার মত।

এখানে একটা কথা উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না, ইমরান ভাই ও ফরহাদ ভাই বালিতে দেবে যাওয়া একটা CNG কে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন, পরে গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে যে তারা ভাঙ্গা রাস্তার ঝাঁকির ভয়ে একটু রিলাক্স করতে নেমেছিলেন মাইক্রো থেকে। ১২.৩০ এর দিকে ভোলাগঞ্জ পৌঁছলাম। মনের সুখে ফটো সেশন চলছিল, কোত্থেকে যেন দৌড়ে একজন BGD র ভাইজান আসল, আমাদের পরিচয় জানতে চাইল। SUST থেকে গিয়েছি জেনে সে পুরা মাখনের মতো নরম হয়ে গেল। নিজে থেকেই সব কিছু বর্ণনা করতে লাগলেন, তিনি একটা অনুরুধ করলেন যেন আমরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি না তুলি, কারণ আমরা যে জায়গাটায় দাড়িয়ে ছিলাম, সেটা আসলে বাংলাদেশের অংশ ছিলনা।

# ছবির সীমান্ত পিলারটি পাকিস্তান আমলের, এটাই এখন বাংলাদেশ ভারতের সীমানা। ভদ্রলোকের নাম ছিল “পলক”, আমাদের পলক ভাইজান। তিনি এই জায়গাটার পুরা বর্ণনা দিলেন অনেকক্ষণ যাবত। পলক ভাইজান থেকে জানতে পাড়লাম যে, কিভাবে পাথর তোলা হয়? কোথা থেকে আসে পাথর? ( পাহার থেকে) কিভাবে আসে? (পানির স্রোতে করে) এইখানে যারা কাজ করছে তারা কারা? ( বেশীরভাগই উত্তর বঙ্গের, মঙ্গা পীরিত অঞ্চলের, উনারা স্ব-পরিবারে চলে আসেন এবং বছরের এই ৩ মাস এখানে কাজ করেন এখানে) যারা করায় তারা কারা? ( এরা স্থানীয় প্রভাবশালী লোক, যারা ক্ষমতার জোরে জায়গাটা দখল করে নিয়েছে। ) এখনকার থাকা খাওয়া কিভাবে হয়?...... ইত্যাদি।

তিনি সামনে আঙ্গুল দিয়ে একটা পাহারের দিকে নির্দেশ করে বললেন যে ঐটাই হচ্ছে “চেরাপুঞ্জি” ( যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত হয়)। মেঘালয় পাহার ও দেখালেন। মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল দেখে, ভারতীয়রা আমাদের সম্পদ বলতে কিছুই দেননি, সব রেখে দিয়েছেন নিজেদের দখলে। ঈশ, পাহাড় গুলো যদি আমাদের হত!!! যাক, তিনি নাকি সময় থাকলে সব নিজে ঘুরে দেখাতেন, কোন বিপদ হলে তাকে ফোন দিতে বললেন, রাশা নামের একজনের কথা বললেন ( সে ঐ পাথর তোলা ব্যবসার নিয়ন্ত্রক), বিপদে তার নাম বললে নাকি সাত খুন মাপ। কোন কারণ ছারাই তিনি এত্ত হেল্প করলেন।

বিদায় নেয়ার সময় তার পরিচয় দেয়ার ভাবটা দেখলে কেন এতো সাহায্য করেছেন তার একটা কার্যকারণ পাওয়া যায়। তিনি বললেন, আমার নাম পলক, ৯৮ এ এস এস সি পাশ করেছি। ৬ বছর ধরে চাকুরী করছি, ব্যাচেলর। NB. যারা এখনো বুঝেন নি তাদের জন্য বলছি, “ আমাদের সাথে দুজন আপু ছিল। আমরা ঘুরতে বেড়িয়ে পরলাম, পাথর তুলা, ভাঙ্গা, থেকে শুরু করে শ্রমিকদের জীবন যাত্রা খুব কাছে থেকে দেখালাম,মানুষ যে বেচে থাকার জন্য কত কষ্ট করতে পারে!!! আর আমরা যে কত সুখে আছি অন্যদের তুলনায় তার একটি বাস্তব চলচ্চিত্র আমাদের চোখের সামনে মঞ্চায়িত হল।

( এই কষ্টের বর্ণনা আমি এখানে দিতে চাই না, কারণ এতে আপনার মনটা আমার চেয়ে বেশী খারাপ হয়ে যেতে পারে। ) আমাদের দেখে অনেক লোক আসে পাশে ভিড় জমাল, তাদের সরল সহজ মুখ গুলো দেখে সত্যিই আমার খুব মায়া হচ্ছিল। তাদের কিছু ছবি তুলে দিলাম, দেখলাম তারা এতেই অনেক খুশি, এদের আনন্দের জন্য উপলক্ষ অনেক ছোট হলেও চলে, যেটা দালান কোঠায় বসবাসকারী মানুষের জন্য ঠিক উলটো। তারপর আমরা ডিঙ্গি নৌকায় একটা ছোট খাল পেরিয়ে অন্য পাশে গেলাম। ওইপাশটা জঙ্গল, এর উপর দিয়ে চলে গেছে একটা রোপ ওয়ে।

যেটা দিয়ে আগে ইন্ডিয়া থেকে পাথর আনা হতো। বর্তমানে অকেজো, কিন্তু দেখার মতো একটা জিনিস। আমরা কয়েকজন একটু পিছনে পরে গিয়েছিলাম, একটু সামনে দেখলাম মাজহার ভাই, ফরহাদ ভাই ও বিভেক দা দৌড়চ্ছেন। এইটা কি হল? কিছুই তো বুজলাম না!!! ওরা দৌড়ায় কেন? আমরা একটু সামনে গিয়ে বুজলাম যে তারা কেন দৌড়চ্ছিল, তখন আমরাও দিলাম দৌড়। আসলে শ্রমিকদের ৩ মাসের এই অস্থায়ী এই বসতিতে স্যানিটেশন এর কোন ব্যবস্থা নেই, তারা প্রাকৃতিক কাজ টা এই জঙ্গলেই সারে, এর ফলে এই জায়গাটাতে প্রচুর গন্ধ।

তাই তারা দৌড়চ্ছিল। আমরা ব্রিটিশ আমলের একটা রেল লাইন ও কিছু স্থাপনা দেখলাম, মন জুড়িয়ে যাবার মতো জায়গা একটা। তখন আমি হয়ে গেলাম ফটোগ্রাফার, সবাই বিভিন্ন ভাবে পজ নিচ্ছে, ছবি তোলার যে কত ভাব, বাপরে বাপ!!! একটা বাঙ্কার পাওয়া গেল সেখানে, অনেক পুরাতন। এর উপরে উঠে আবার আড্ডা ও ছবি তোলা জমজমাট। বেলা শেষ হয়ে আসছিলো, যে রাস্তা:O সন্ধ্যার পর যাওয়া অসম্ভব।

তাই ফিরে আসার চিন্তা, এমন সময় পলাশ ও পিয়াস নিয়ে এলো তাদের গেম শো নিয়ে। Honestly! It was the most memorable event I have ever enjoyed. প্রথমে রেফেল ড্র এর মাধ্যমে ৫ জন বিজয়ী নির্বাচিত হল। তাদের কে দেয়া হল সুন্দর কাগজে মুড়ানো মজার মাজার পুরষ্কার। যেমন, চিরনি, কটনবাড, পাতিল মাজার কি জানি একটা, টূতপিক ইত্যাদি। কন্ডিশন হচ্ছে, যে যা পুরস্কার পেয়েছে সেটা সবার সামনে খুলবেন, এবং তার সম্পর্কে ১ মিনিট বিজ্ঞাপন করবেন।

ভাইরে ভাই, কি যে মজা হয়েছিল এই সময় একটু অনুমান করে নেন, ভিডিও দেখতে চাইলে আমার কাছে চলে আইসেন, সব গুলো আছে। তারপর যার যার নিজ প্রতিভা প্রদর্শনের পালা, প্রথমে ইমরান ভাই বাংলা সিনেমার বিভিন্ন নায়ক, নায়িকা, ভিলেনের ডায়লগ নকল করে দেখালেন, সুফি ভাই ও মাজহার ভাই দেখালেন নাচ ( চামক চালো গানের সাথে), বিভেক দা করলেন অভিনয় ( তিনি আর ১-২ মাসের মধ্যে নিজ দেশ নেপাল চলে যাবেন, তাই তিনি শেষ দিন তার প্রেমিকাকে কি বলবেন তা অভিনয় করলেন), এনি আপু শোনালেন ফেসবুকে কিভাবে তার এক বড় ভাই তাকে প্রপোজ করে বসছিল, ফরহাদ ভাই শোনালেন তার এক বন্ধু কিভাবে তার এক বন্ধু তার পছন্দের মেয়েটিকে প্রপোজ করেছিল তার সামনেই, তারই সাহায্যে। মাসুম ভাই দেখালেন কিভাবে ডেস্টিনির লোকজন তাদের কাস্টমদের কনভিঞ্চ করে!!! আমি একটা বিশেষ চরিত্রে ( চরিত্রটা কি, এটা বলা যাবেনা, পরে আমাকে ক্ষ্যাপাতে পারেন, এই সুযোগটা দিতে চাচ্ছি না। ) অভিনয় করে কিছু টাকা কামাই করে নিয়েছিলাম বড়ভাইদের কাছ থেকে। এর পরের ইভেন্ট ছিল ফুটবল পেনাল্টি কিক।

ছোট খালি পোস্টে কে গোল দিতে পারে! এই ইভেন্ট টায় কে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ হইছিল তা রহস্য রাখলাম। জগতে সব রহস্যের সমাধান জানতে হয় না, এটা প্রকৃতির নিয়ম। সময় এর মধ্যেই টান টান। সারাদিন খাওয়াদাওয়া হয়নি, মনেই ছিলনা এতক্ষণ করোর। হটাত ক্ষুধা পেটে চাড়া দিয়ে উঠল।

আর সন্ধ্যাও হয়ে আসছে, ফিরতে তো হবেই। ফেরার সময় সবাই ক্লান্ত, কিন্তু একজনের মুখেও হাসি ছাড়া আর কিছু দেখিনি। অবশ্য এতো সুন্দর একটা দিন খাটানোর পর, মুখে কোন দুঃখের ছাপ থাকার কথাও না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।