আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীর জেরায় সাক্ষী আমার ভুল হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাচ্ছেরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে গতকালও জেরা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। সাক্ষী মাহবুবুল আলম নিজেকে গোটা পিরোজপুর এলাকার দায়িত্বপ্রাাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা গোয়েন্দা হিসেবে দাবি করলেও পিরোজপুর জেলার কোনো একটি থানার রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং পিস কমিটির সভাপতি সেক্রেটারির নাম বলতে পারেননি। এমনকি তিনি গোয়েন্দা হিসেবে পিরোজপুরের কোনো একটি থানায়ও কোনো দিন যাননি বলে স্বীকার করেছেন। গত ৭ নভেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুরের মাহবুবুল আলম হাওলাদার আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, তিনি পুরো পিরোজপুর জেলায় একজন মুক্তিযোদ্ধা গোয়েন্দা হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এবং গোপন সংবাদ সংগ্রহ করেন। সারা জেলার এলাকায় এলাকায় পিস কমিটি কর্তৃক ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকজনকে গুলি করে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তিনি অবলোকন করেন এবং তা সুন্দরবন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সরবরাহ করেন।

তারই প্রদান করা এসব বিষয় উল্লেখ করে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করেন এসব বিষয় কি তা হলে আপনি মিথ্যা বলেছিলেন? তখন মাহবুবুল আলম বলেন, আমার ভুল হতে পারে। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি, কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া উপজেলার রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং পিস কমিটির সভাপতি সেক্রেটারির নাম জিজ্ঞেস করা হলে তিনি একটি উপজেলার একজনেরও নাম বলতে পারেননি। এমনকি তিনি স্বীকার করেন গোয়েন্দা হিসেবে তিনি ওইসব উপজেলায় কোনো দিনও যাননি। গতকাল সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সাক্ষী মাহবুবুল আলম আগের দিনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রশ্ন শুরু করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম।

আইনজীবী : একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি আপনি পিরোজপুর ডিসির কাছে আরেকটি আবেদন জমা দেন ঢেউটিন চেয়ে। বিষয়টি কি সত্য? সাক্ষী : করতে পারি। আইনজীবী : প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়ে প্রথম যে আবেদন করেছিলেন তাতে সাহায্য পেয়েছিলেন? সাক্ষী : হ্যাঁ। আইনজীবী : কত টাকা? সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : দ্বিতীয় দরখাস্তে কত টাকা সাহায্য পান।

সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : কত বান টিন পেয়েছিলেন মনে আছে? সাক্ষী : তাও মনে নেই। আইনজীবী : প্রথম দরখাস্তে আপনি বলেছিলেন আপনার বাড়িঘর পাকহানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় লুটপাট করে। সাক্ষী : হ্যাঁ। আইনজীবী : দ্বিতীয় দরখাস্তে বাড়িঘর লুটপাট এবং ক্ষতি সাধনের কথা বলেননি।

সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : আপনার পেশা কি? সাক্ষী : মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের সাথে জড়িত। আইনজীবী : সংসারে আয়ের উৎস কি? সাক্ষী : মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাই এবং বসতভিটা থেকে যে আয় হয় তা থেকে চলে যায়। আইনজীবী : আপনি বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী রিনা বেগমের সাথে বসবাস করছেন? সাক্ষী : হ্যাঁ। আইনজীবী : আপনার স্ত্রী দুস'মাতা কার্ড সংগ্রহ করে ৩০ কেজি চাল সংগ্রহ করেছেন ২০১১ সালে? সাক্ষী : হ্যাঁ।

শিশুকার্ড পেয়েছে। ভিজিএফ কার্ড নয়। আইনজীবী : আপনার বাড়ি তৈরির সাল বলতে পারবেন? সাক্ষী : ছয়-সাত বছর আগে। আইনজীবী : দালানবাড়ি তৈরির কাজ এই সরকারের আমলে শুরু হয়? সাক্ষী : সত্য নয়। আইনজীবী : আপনি সাক্ষ্যে বলেছেন সমস্ত পিরোজপুরে আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা গোয়েন্দা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পিরোজপুরে তখন পিরোজপুর সদর, কাউখালী, মঠবাড়িয়া, ভাণ্ডারিয়া, স্বরূপকাঠি এবং নাজিরপুর থানা ছিল? সাক্ষী : সঠিক মনে নেই। আইনজীবী : মঠবাড়িয়া থানা পিস কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি কারা ছিলেন? সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : মঠবাড়িয়া থানার রাজাকার কমান্ডার কে ছিলেন? সাক্ষী : খেয়াল নেই। আইনজীবী : আলবদর, আলশাসম কমান্ডার? সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : ওই থানার ওসি, সেকেন্ড অফিসার, সার্কেল অফিসার কারা ছিলেন বলতে পারবেন? সাক্ষী : মনে নেই।

রইজুদ্দীন, সইজুদ্দিন এবং আমি তিনজনে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করি। আমি পিরোজপুর এবং পারেরহাটের দায়িত্বে ছিলাম। আইনজীবী : কিন' পূর্বে যে আপনি সাক্ষ্যদানকালে বলেছিলেন পুরো পিরোজপুর জেলায় গোয়েন্দা হিসেবে আপনি দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এবং এলাকায় এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অবলোকন করেন এবং তা সুন্দরবন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সরবরাহ করেন? এ কথা কি তা হলে মিথ্যা? সাক্ষী : আমার ভুল হতে পারে। আইনজীবী : এ কথা আপনাকে কে শিখিয়ে দিয়েছিল? সাক্ষী : কেউ নয়। আমার নিজের উক্তি।

আইনজীবী : আপনি মঠবাড়িয়া, ভাণ্ডারিয়া, নাজিরপুর, কাউখালী, নেছারাবাদ এলাকায় কোনো দিন গোয়েন্দা হিসেবে যাননি? সাক্ষী : আমার দায়িত্ব ছিল না। গোয়েন্দা হিসেবে যাইনি। আইনজীবী : ভাণ্ডারিয়া এলাকায় গোয়েন্দার দায়িত্বে কে ছিলেন? সাক্ষী : খেয়াল নেই। আইনজীবী : কাউখালী, নাজিরপুর, স্বরূপকাঠি এলাকায় গোয়েন্দা কারা ছিলেন তাও আপনার মনে নেই? সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : বরিশাল জেলার রাজাকার কমান্ডার কে ছিলেন বলতে পারবেন? সাক্ষী : বলতে পারব না।

আইনজীবী : জিয়ানগর উপজেলা কোন সময় হয় বলতে পারবেন? সাক্ষী : খালেদা জিয়া সরকারের সময়। আইনজীবী : প্রথমবার না দ্বিতীয়বার? সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : শঙ্করপাশা কি জিয়ানগর উপজেলায় পড়েছে? সাক্ষী : কিছু অংশ আছে জিয়ানগরের পাশে। আইনজীবী : শঙ্করপাশার পিস কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারি কে ছিলেন? সাক্ষী : মনে নেই। পারেরহাট কমিটিই শঙ্করপাশার কমিটি সমন্বয় করত।

আইনজীবী : শঙ্করপাশার পিস কমিটির সভাপতি ছিলেন একরাম খলিফা। এটা আপনি গোপন করেছেন। সাক্ষী : সত্য নয়। আইনজীবী : একরাম খলিফা শঙ্করপাশার চেয়ারম্যান ছিলেন। সাক্ষী : সেটা জানি।

আইনজীবী : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আপনার এলাকায় প্রাদেশিক পরিষদে এবং জাতীয় পরিষদে মোট কতজন প্রার্থী ছিল বলতে পারবেন? সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কত ভোট পেয়েছিল মনে আছে? সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : ১৯৭৪ সালে পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান কে ছিলেন মনে আছে? সাক্ষী : মনে নেই। আইনজীবী : আবদুস সালাম, পিতা নবাব আলী, গ্রাম উমেদপুর। একে চেনেন? সাক্ষী : হ্যাঁ।

আইনজীবী : আস্রাব আলী, পিতা মৃত সেকেন্দার আলী, গ্রাম হোগলাবুনিয়া। তাকে চেনেন? সাক্ষী : চিনি না। আইনজীবী : চিত্তরঞ্জন তালুকদার, গ্রাম উমেদপুর। একে চেনেন? সাক্ষী : চিনতাম। আইনজীবী : তিনি কি দেশে থাকেন? সাক্ষী : মারা গেছেন।

আইনজীবী : কোন সালে? সাক্ষী : এক বছর আগে। আইনজীবী : ইউসুফ হাওলাদার, পিতা মোতাহার আলী, শঙ্করপাশা। তাকে চেনেন? সাক্ষী : মনে করতে পারছি না। আইনজীবী : আবুল বাশার মন্টু, পিতা মৃত এমদাদুল খান খোকন। একে চেনেন? সাক্ষী : চিনি।

আইনজীবী : মিজানুর রহমান, পিতা আস্রাব আলী হাওলাদার। তাকে চেনেন? সাক্ষী : চিনি। আইনজীবী : তিনি কি দেশে আছেন? সাক্ষী : মাঝে মাঝে দেখি। আইনজীবী : পিরোজপুর আদালতে আপনি আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন তাতে এদের সবাইকে আপনি সাক্ষী মেনেছিলেন এ কথা সত্য? সাক্ষী : হ্যাঁ। আইনজীবী : মাহবুব হোসেন, পিতা মান্নান হোসেন।

তাকে চেনেন? সাক্ষী : চিনি না। আইনজীবী : জাহাঙ্গীর পসারী, পিতা সইজুদ্দীন পসারী। তাকে চেনেন? সাক্ষী : চিনি। আইনজীবী : একই লোকের আরেক ছেলে কাঞ্চন পসারীকে চেনেন? সাক্ষী : না। আইনজীবী : হরিপদ মিস্ত্রি, চাদব চন্দ্র, মোজাহার খান, খবির হাওলাদার এদের চেনেন? সাক্ষী : খেয়াল নেই।

আইনজীবী : আপনি ২/২/২০১১ তারিখ থানা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস কর্তৃক হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে সংশোধনী এনে। সাক্ষী : হ্যাঁ। এরপর আরো দু-একটি প্রশ্ন করার পর গতকাল ৩টায় আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়। আজ আবার সাক্ষী মাহবুবুল আলমের জেরা হবে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী মাহবুবুল আলমকে জেরার সময় গত রোববার আদালত কক্ষে উপসি'ত ছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান।

তার উপসি'তি বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হলেও তা আদালত অগ্রাহ্য করেন। গতকাল আবারো তাজুল ইসলাম যুক্তি উপস'াপন করে বলেন, বিশ্বের কোনো আদালতে এমনকি বাংলাদেশের কোনো ক্রিমিনাল কোর্টেও সাক্ষীকে জেরাকালে তদন্ত কর্মকর্তা হাজির থাকেন এ রকম কোনো নজির নেই। কারণ তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীকে প্রশিক্ষণ দেন। অনেক সময় মিথ্যা সাক্ষ্য শিখিয়ে দেন। তাই তার সামনে সাক্ষী সত্য কথা বলতে ভয় পাবেন এটাই স্বাভাবিক।

তা ছাড়া সাক্ষীকে জেরার বিষয় উপসি'ত থেকে জেরার ধরন জেনে যাওয়ার কারণে অন্য সাক্ষীদের সে বিষয়ে অবগত করতে পারবেন। এসব যুক্তি পেশ করে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালত থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ প্রার্থনা করেন। কিন' আদালত এ আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।