প্রধান সাক্ষীর সওয়াল-জবাব : মানবতাবিরোধী অপরাধের কথিত অভিযোগ এনে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুরে দায়ের করা মামলার বাদী ও সরকারের প্রধান সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার আদালতে স্বেচ্ছায় যেসব জবানবন্দি দিয়েছেন, তার আলোকে গতকাল তাকে জেরা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। বেলা সোয়া ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জেরার একপর্যায়ে আদালত আজ সকাল পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি জবানবন্দিতে বলেছেন যে, মামলার আলামতগুলো নিজ জিম্মায় রেখেছিলেন। এটা ঠিক কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ, এগুলো আমার জিম্মায় ছিল।
প্রশ্ন : আপনি ও মানিক ফসারী (একাত্তরের ক্ষত্রিগ্রস্ত ব্যক্তি) পিরোজপুর আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পৃথকভাবে দুটি মামলা করেছিলেন।
এটা ঠিক কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, এটা ঠিক।
প্রশ্ন : মানিক ফসারীও আদালতে একটি আলামতের কথা উল্লেখ করেছেন এবং এগুলো তার জিম্মায় রয়েছে বলে হলফ করে ঘোষণা করেছেন। আপনি তাকে আলামতগুলো দিয়েছেন, এটা ঠিক কিনা?
উত্তর : আলামতগুলো মানিক ফসারীর কাছেই ছিল। তিনি এগুলো যে স্থানে রেখেছিলেন, তা আমি দেখেছি।
প্রশ্ন : মামলা দুটি দায়েরের পর আপনারা দু’জনেই পৃথকভাবে একুশে টিভি ও এটিএন বাংলাকে সাক্ষাত্কার দিয়েছিলেন, এটা ঠিক কিনা?
উত্তর : সাক্ষাত্কার দিয়েছিলাম কিনা তা মনে নেই।
প্রশ্ন : উদ্ধারকৃত আলামতগুলোর একটি জব্দনামা তৈরি করতে হবে—এটা আপনাকে কে প্রথম বলেছিলেন?
উত্তর : তদন্তকারী দলের সদস্যরা আমাকে জব্দনামার কথা বলেছেন।
প্রশ্ন : জব্দনামা কখন তৈরি করা হয়েছিল?
উত্তর : গত বছর ৮ মে, বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে।
প্রশ্ন : আপনি ইতিপূর্বে আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন, মানিক ফসারী ও আলম ফসারীর বাড়ির পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র ও অন্য মালামালের জব্দতালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই দুই বাড়ির মধ্যে কোন বাড়ির মালামালের জব্দতালিকা আগে করা হয়েছিল?
উত্তর : সম্ভবত মানিক ফসারীর বাড়ির মালামালের।
প্রশ্ন : মানিক ফসারীর বাড়ির মালামালের জব্দতালিকা করতে কত সময় লেগেছিল?
উত্তর : ১৫-২০ মিনিট হবে।
প্রশ্ন : আলম ফসারীর বাড়ির মালামালের জব্দতালিকা করতে কত সময় লেগেছিল?
উত্তর : ১০-১৫ মিনিট লেগেছিল।
প্রশ্ন : ইতিপূর্বে আপনি সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে বলেছিলেন যে, উভয় বাড়ির মালামালের জব্দতালিকা বেলা ১১টায় করা হয়েছিল। ওই বক্তব্য ঠিক কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, ওইদিন ১১টায় বলেছিলাম।
প্রশ্ন : জব্দ করা মালামালের কোনো লেভেল নাম্বার দেয়া হয়নি, এটা ঠিক কিনা?
উত্তর : এটা তদন্তকারী কর্মকর্তা করেছেন।
প্রশ্ন : মানিক ফসারী ও আলম ফসারীর মধ্যে বড় কে?
উত্তর : সম্ভবত মানিক ফসারী বড়।
প্রশ্ন : জব্দতালিকায় তাদের কাউকেই সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়নি, ঠিক কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, ঠিক।
প্রশ্ন : জব্দতালিকার মালামালের মধ্যে কোনো পোড়া দাগ ছিল না। এটা ঠিক কিনা?
উত্তর : এটা ঠিক না।
প্রশ্ন : মূলত মামলা করার জন্যই মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ মিথ্যা জব্দতালিকা তৈরি করা হয়েছে।
উত্তর : এটা ঠিক না।
প্রশ্ন : মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কখনও সেলিম খানের বাড়িতে গিয়েছেন?
উত্তর : ওইদিনই বেলা ১২টায়।
প্রশ্ন : আদালতে সেলিম খানের বাড়ির যে ছবি দিয়েছেন, তা মূল ছবি নয়, ফটোকপি। ঠিক কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, এগুলো ফটোকপি।
প্রশ্ন : ফটোকপি করার জন্য ওই বাড়িতে কোনো ফটোকপি মেশিন ছিল না, এটা ঠিক কিনা?
উত্তর : ফটোকপি মেশিন তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : তদন্তকারী কর্মকর্তারা ফটোকপি মেশিন কিসে করে নিয়েছিলেন?
উত্তর : ফটোকপি মেশিন তাদের ব্রিফকেসেই ছিল।
প্রশ্ন : জব্দ করা মালামালের সূত্র, স্থান—কার কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে, এসব কিছুই লেখা নেই।
উত্তর : হ্যাঁ, এসব নেই।
প্রশ্ন : আদালতে আরও যে তিনটি ছবি জমা দিয়েছেন, সেগুলোর অবস্থাও একই। ঠিক কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আলম ফসারীর পোড়া বাড়ির যে ছবি দিয়েছেন, সেটাও একই প্রকৃতির।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : আল্লামা সাঈদী কোন ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন?
উত্তর : জানি না।
প্রশ্ন : তিনি কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছেন?
উত্তর : আলেম ক্লাস পর্যন্ত।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি থেকে শর্ষীনা আলিয়া মাদরাসা কত দূরে?
উত্তর : ২০-২৫ কিলোমিটার হবে।
প্রশ্ন : আপনি মাদরাসায় কখনও গিয়েছিলেন?
উত্তর : না, আমি কখনোই যাইনি।
প্রশ্ন : আপনি ওই মাদরাসার প্রিন্সিপাল, মুহাদ্দিস কিংবা আল্লামা সাঈদীর কোনো সিনিয়র বা জুনিয়র ছাত্রকে চিনতেন কিনা?
আসামিপক্ষের আইনজীবীর এ প্রশ্নের পরপরই সরকারপক্ষের আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করে সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে। মামলার সঙ্গে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারপক্ষের আইনজীবীদের এ বক্তব্যের জবাবে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, মাননীয় আদালত, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশে একজনই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার সুখ্যাতি রয়েছে। অথচ এই সাক্ষীই আদালতে হলফ করে বলেছেন যে, অসদাচরণের দায়ে তদন্তপূর্বক আল্লামা সাঈদীকে ওই মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
আল্লামা সাঈদীকে দেইল্লা ও দেলু বলে সরকারপক্ষের বন্ধুরা কটাক্ষ করছেন এই সাক্ষীর জবানবন্দির আলোকেই। কাজেই আদালতে আমাদের এগুলো সম্পর্কে জানতেই হবে। এ পর্যায়ে আদালতের হস্তক্ষেপে সরকারপক্ষের আইনজীবীরা ক্ষান্ত হলে অ্যাডভোকেট মিজান আবার জেরা শুরু করেন।
প্রশ্ন : আপনি জীবনে কখনও শর্ষীনা আলিয়া মাদরাসার কোনো ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আল্লামা সাঈদীকে শর্ষীনা আলিয়া মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, এটা কিসের ভিত্তিতে আপনি বলেছেন?
উত্তর : আমি আমার এলাকার কয়েকজনের কাছে এটা শুনেছি।
প্রশ্ন : আপনি এ কথা পিরোজপুরে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেননি।
উত্তর : পরে সম্পূরক আবেদন দিয়ে এটা উল্লেখ করেছি।
প্রশ্ন : আপনি এ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত একটিই আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : আল্লামা সাঈদীকে হেয় করার জন্য আপনি এ মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
উত্তর : এটা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি যে বাড়িতে বসবাস করেন, তা কিসের তৈরি?
উত্তর : সেমিপাকা।
প্রশ্ন : আপনি এ বাড়িটি কবে করেছেন?
উত্তর : বাড়ির জমি আমার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। ৭-৮ বছর আগে আমি দালানটি করেছি।
প্রশ্ন : আপনি ২০০৪ সালের ৭ এপ্রিল পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করে সাহায্য চেয়েছেন। সেখানে আপনি নিজেকে ভূমিহীন, অসহায় ও বেকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটা ঠিক কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, ঠিক। আমি ওই আবেদন করেছিলাম।
সাক্ষীর এ বক্তব্যের পরপরই সরকারপক্ষের আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
তারা আদালতকে বলেন, ওই আবেদনের কপি আমাদের দেয়া হয়নি। এটার ওপর জেরা চলতে পারে না। এ পর্যায়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা শুনানি মুলতবির প্রার্থনা জানিয়ে বলেন, আদালত আমাদের সময় দিলে আমরা সব কাগজপত্র সরকারপক্ষকে দেব। উভয়পক্ষের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে আদালত গতকালের মতো শুনানি মুলতবি করেন। একইসঙ্গে মামলার ১নং ও ২য় সাক্ষীর বিষয়ে কোনো কাগজপত্র থাকলে তা সরকারপক্ষকে দেয়ার নির্দেশ দেন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।