আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজয়ের ৪০ তম বছরের এই বিজয়ের মাসে একজন খগেন্দ্রনাথ মন্ডলের চলে যাওয়া!

সাইটে ঢুকেই চোখে পড়ল হাসমত ভাইয়ের এই লেখাটি। উনি লেখাটি লিখেছেন আজকের প্রথম আলোর একটি সংবাদ থেকে। সংবাদটি এসেছে একজন দেশপ্রেমিক কে নিয়ে, আর তিনি আমাদের সাতক্ষীরার, সুতরাং তাকে একটু হলেও সম্মান জানাতে আমার এই লেখা। একটু হলেও বললাম এই জন্য যে আমরা দিনে দিনে যোগ্যকে তার উপযুক্ত সম্মান দিতেও কার্পন্য করি, আর অযোগ্যকে বানিয়ে ফেলি মাথার মুকুট। একজন খগেন্দ্রনাথ মন্ডল নিতান্তই একজন গ্রামের মানুষ।

তিনি তথাকথিত কোন জাতীয় নেতা নন, না কোন বড় সুশীল সমাজীয় ব্যক্তিও নন তিনি। লেখক কবিও না। তার আত্নহনন তেমন কেউ জানবে না এটাই স্বাভাবিক। তিনি তো ঢাক ঢোল পিটিয়ে অনশন করতে যাননি, দাবী আদায় হোক বা না হোক অনশনের মঞ্চ থেকে উঠে আসেননি। আমরন অনশন করবেন বলে অনশন স্থলে পানীয় পান করেননি।

তিনি নিরবে প্রতিবাদ করলেন আমাদের এ ঘুনে ধরা সমাজের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূর্নীতি, দেশপ্রেমহীনতার যে বৃক্ষ বেড়ে উঠছে তার সঙ্গে না পেরে। এ রাষ্ট্রযন্ত্র পারল না একজন দেশপ্রেমিকের মনের আকুতি মেটাতে। বাংলাদেশ এবছর উদযাপন করছে বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি। মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় ক্ষ্যন্ত দিয়ে বিদায় নিলেন খগেন্দ্রনাথ। হোক না সেটা ছোট পরিসরে।

এ এক বড় অভিমানী বিদায়, দেশপ্রেমিকরা তো একটু বেশীই আবেগী হন। আবেগী না হলে তিনি তো দেশের আর দশজন নেতা পাতিনেতার মত নিজের পকেট ভরার চেষ্টা করতেন, চেষ্টা করতেন গ্রামের উন্নয়নের চেষ্টার চেয়ে গ্রামের মানুষের পকেট কাটতে। তা না করে ব্যতক্রম মানুষটি করতে চেয়েছিলেন গ্রামের উন্নয়ন, ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না জেনে বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। জুটাপেটা করে গেলেন তথাকথিত নেতা নেত্রীদের। একজন খগেন্দ্রনাথের উন্নয়নের চাওয়া কি খুব বেশী? একজন খগেন্দ্রনাথের ওয়ার্ডের জনপ্রত্যাশা কি খুব বেশী? রাষ্ট্র প্রতিবছর যে পরিমান টাকা অপচয় করে তা দিয়েই দেশের সকল খগেন্দ্রনাথের দাবী পূরন অসম্ভব নয়।

প্রথম আলোর জনপ্রত্যাশা পূরনে ব্যর্থ হওয়ায় ইউপি সদস্যের আত্মহত্যা! শিরোনামের সংবাদ পড়ে জানা যায় জনসেবা করার জন্যই জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছিলেন না তিনি। এ নিয়ে দুঃখবোধ, হতাশা ও ক্ষোভ থেকে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন তিনি। আর আমাদের বড় বড় নেতা নেত্রীরা কি করেন? বার বার বছরের পর বছর ব্যর্থ হয়েও, জনগনের প্রত্যাশা পূরন না করতে পেরেও কোন লজ্জা পান না। সংবাদের নীচে একজন মন্তব্য করেছেন এমন “এদেশে মানুষের মধ্যে এখনো যে কতটা দায়িত্ববোধ ও দায়বদ্ধতা বেচে আছে সেটা ভেবে এক দিক থেকে যেমন গর্ব বোধ হলো তেমনি হতাশায় মুষড়ে পড়তে হয় যে একজন ‘সামান্য’ ইউপি সদস্যের মানসে যে দায়িত্ববোধ ও আত্মমর্যাদাবোধ কাজ করেছে তার ছিটেফোটাও যদি আমাদের বড় বড় (?) নেতা-নেত্রীদের থাকত তবে এই দেশ কতদুল-ই না এগিয়ে যেতে পারত! সর্বোপরি মি: মন্ডলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তার শোকাচ্ছন্ন পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

তার এই আত্মহত্যা যদি আমাদের বিবেকহীন নেতা-নেত্রীদের মধ্যে কিছুমাত্র চেতনার সৃস্টি করতে পারত !” আত্মহত্যা সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন নাকি আত্মাহুতি দিয়ে প্রতিবাদ করে গেছেন দেশের, সমাজের সকল অনিয়ম, দূর্নীতি, অদক্ষতার বিরুদ্ধে? নিজের বিবেক এবং সীমাবদ্ধতার কাছে পরাজীত এই সৈনিকের এ ছাড়া উপায় কি ছিল? তিনি তো কোন রাজনৈতিক দল করেন না। তবে কেন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা তার কথা শুনবে, তার দাবী কেন পূরন করবে? হয়ত তার উপর অন্যায় কোন চাপ ছিল যা তার নৈতিকতা তাকে বাঁধা দিয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে নৈতিকতার যুদ্ধে পরাজিত হতে চান নি বলেই তিনি আত্মহনন করেছেন। তিনি সত্যিই পরাজিত হননি, পরাজিত হয়েছে দেশের সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র, নেতা নেত্রীরা।

তার থেকে কি কোন শিক্ষা নিবেন আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা? খগেন্দ্রনাথকে স্যালুট (লেখাটি হোম সাতক্ষীরা থেকে নেওয়া) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।