আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাকাশ বিজয়ের কাহিনী

আমি বই পড়তে ভালোবাসি, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ক ও নৈতিকতা উদ্দিপক বই। মহাকাশ বরাবরই খুবই আকর্ষণীয় আর মজার একটা বিষয়। এই আকাশ আর তার ওপারের জগৎ নিয়ে সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ কতই না জল্পনা-কল্পনা করত। আজ থেকে আরও প্রায় ৫০ বছর আগেই মানুষ মহাকাশ জয় করেছিল! আর এই মহাকাশ নিয়ে যে কত সিনেমা, বই রয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। ১৯৪৪ সালে জার্মানির মহাকাশযান এ-৪ ঘুরে এসেছিল মহাকাশ থেকে।

ওটাতে অবশ্য কোনো প্রাণীই ছিল না। তবে চল্লিশের দশকেই মহাকাশযানের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাণীকেও পাঠানো শুরু হলো। ১৯৪৭ সালে আমেরিকা ভি টু রকেটে পাঠালো কতগুলো ফলের মাছিকে। এরপর ১৯৪৯ সালে পাঠালো ‘আলবার্ট’ নামের এক বানরকে। কিন্তু যাওয়ার আগেই মারা গিয়েছিল সে।

এরপর এলো লাইকা। অবশ্য এর আগেও অনেক বানর আর কুকুর মহাকাশে ঘুরতে গিয়েছিল। কিন্তু তারা যেমন পৃথিবীতে জীবিত ফিরে আসতে পারেনি, তেমনি ওরা কেউ পৃথিবীকে ঘিরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতেও পারেনি, মহাকাশে যাওয়া পর্যন্তই ওদের যাত্রা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু রাশিয়ান এই কুকুর কেবল মহাকাশে গিয়েই ওর ভ্রমণ সীমাবদ্ধ রাখল না। সে পৃথিবীর চারপাশে একবার পাঁকও খেয়ে নিয়েছিল।

তবে সে পৃথিবীতে জীবিত ফিরতে পেরেছিল তা না, ফেরার আগেই মারা গেল সে। প্ রথম মহাকাশ ঘুরে আবার জীবিত ফিরে এলো ‘আব্ল’ আর ‘বাকের’ নামের দুই বানর। মার্কিন রকেট জুপিটার এএম১৮-তে করে ওরা ঘুরে এলো মহাকাশ থেকে। আর সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীরাও চিন্তা-ভাবনা শুরু করলেন, এবার তবে মানুষই ঘুরে আসুক মহাকাশ থেকে। এই কাজের জন্যই তো বিজ্ঞানীরা সেই কবে থেকে প্রহর গুনছিলেন! মানুষের মহাকাশ অভিযানগুলো যে এত দ্রুত সাফল্য পাচ্ছিল, তারও কিন্তু একটা কারণ আছে।

তখন আবার এটা নিয়ে আমেরিকা আর রাশিয়ার মধ্যে চলছিল ভীষণ প্রতিযোগিতা। কে কার আগে মহাকাশ জয় করতে পারে তাই নিয়ে ওরা রীতিমতো কোমর বেঁধে লেগে গেছে। হতে পারে সেটাই একটা কারণ। প্রথম মহাকাশে প্রাণী পাঠাল আমেরিকা। আর তার জবাব দিলো রাশিয়া লাইকা’কে দিয়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করিয়ে।

আমেরিকা আবার তার পাল্টা জবাব দিলো আব্ল আর বাকেরকে মহাকাশ ঘুরিয়ে জীবিত ফিরিয়ে এনে। এই প্রতিযোগিতার ধারায় মহাকাশে প্রথম মানুষ পাঠানো নিয়েও আমেরিকা আর রাশিয়ার মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। আর সেই প্রতিযোগিতায় আবারও এগিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়া নামল আটঘাট বেঁধে। মানুষকে কীভাবে রকেটে করে মহাকাশ ঘুরিয়ে আনা যায় এই নিয়ে ওরা ‘ভস্তক প্রোগ্রাম’ নামে এক নতুন প্রজেক্টই হাতে নিয়ে ফেলল। এবার ওরা অনেক বেশি সতর্ক হয়ে পরিকল্পনা করতে লাগল।

ওই এক অভিযানের জন্য ১৯৬০ সালের মে থেকে ১৯৬১ সালের মার্চের মধ্যে ওরা একগাদা পরীক্ষামূলক মহাকাশ অভিযান করে ফেলল। তার সবগুলো অবশ্য সফলও হয়নি। কিন্তু শেষ দুটি হলো পুরোপুরি সফল। আর তাতে উত্সাহিত হয়ে বিজ্ঞানীরা ঠিক করলেন, আর পরীক্ষায় কাজ নেই। এবার আসল কাজ শুরু করা যাক।

এবার মানুষই যাবে, আর কোনো প্রাণীকে পাঠানোর দরকার নেই। ‘ভস্তক-১’ তৈরি হতে লাগল মহাকাশে প্রথম মানবকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওতে চড়ে যে যাবে মহাশূন্যে, তারও তো প্রস্তুত হওয়া চাই। সুতরাং সোভিয়েত স্পেস প্রোগ্রামের ২০ জন পাইলটকে নিয়ে শুরু হলো একটা স্পেস ট্রেনিং প্রোগ্রাম। আর শেষমেশ তা গিয়ে দাঁড়াল দুইজনের প্রতিযোগিতায়—ইউরি গ্যাগারিন আর গেরমান তিতোভ’র।

কিন্তু শেষপর্যন্ত টিকে গেলেন ইউরি-ই। আর তার টিকে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের একটা ছিল খুবই মজার—তিনি যে খাটো ছিলেন! আসলে ভস্তকের ক্যাপসুলের ভেতরের জায়গাটা তো ছিল খুবই ছোট। তবে তিতোভ’ও কিন্তু খুব একটা লম্বা ছিলেন না। তবে ইউরি’র চেয়ে অবশ্য লম্বা ছিলেন। এসব অভিযানে অবশ্য ব্যাকআপ ক্রু-ও রাখা হয়।

যাতে অভিযানের আগে আগে ইউরি অসুস্থ হয়ে পড়লেও অভিযান থেমে না যায়। প্রথম ব্যাকআপ ক্রু ছিলেন ওই তিতোভ-ই। আর দ্বিতীয় ব্যাকআপ ক্রু ছিলেন গ্রিগরি নেলুওবোভ। রওয়ানা হলো ভস্তক-১, ইউরি গ্যাগারিনকে নিয়ে। মানুষের ইতিহাসে প্রথম কোনো মানুষ পৃথিবী ছেড়ে বাইরে গেলেন, গেলেন মহাকাশে।

পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশেও মানুষ তার রাজত্ব বিস্তার করল। মহাকাশ পদানত হলো মানুষের কাছে। আর মহাকাশ জয়ের পর পৃথিবীতে ফিরে এসে ইউরি গ্যাগারিন হয়ে গেলেন রাশিয়ার মানুষের চোখের মণি। শুধু কি তাই, সারা পৃথিবীর মানুষই তাকে এক নামে চেনে। তিনি যেখানে ল্যান্ড করেছিলেন সেখানে রয়েছে একটা বিশাল রকেট এবং তার উপরে একটা ভাস্কর্য, ইউরি গ্যাগারিনের।

এক হাতে স্পেস হেলমেট, আরেক হাতে সবাইকে তিনি স্যালুট করছেন। সূত্র: ইত্তেফাক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।