আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পশুদের সংস্পর্শে মানুষও যেন পশু হয়ে যায়

অঝোর ধারায় নেমে খরাকে মুক্তি দিয়ে, মুক্ত করবো শিকলে বিদ্ধ সিক্ত নয়ন । আর নয় নিয়তির নির্মমতায় পদদলিত হওয়া, কন্টাকীর্ণ অথৈ সাগর পাড়ি দিয়ে আনব ছিনিয়ে মুক্তির রক্তিম সূর্য । মানুষ পশু দেখে মজা পায় , পশুদের বিচিত্র আচার-আচরণ দেখেও মজা পায় । তবে মুক্ত পশুদের নয়, বন্দী পশুদের । মানুষকে মজা দেয়ার জন্যই চিড়িয়াখানা নামক স্থানে পশুদের বন্দী করে রাখা হয় আর সভ্য মানবজাতি ব্যাপক বিনোদন পায় ।

এজন্যই চিড়িয়াখানাকে চিত্তবিনোদন এর অন্যতম উৎস হিসেবে ধরা হয় । তাই প্রত্যেক চিড়িয়াখানাকেই গাছপালা, পুকুর, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি দ্বারা যতটা সম্ভব মনোরম করে রাখা হয় । মানুষও কখনও বন্ধুদের সাথে , কখনও বা পরিবার কে নিয়ে, আবার কখনও প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলবন্দী হয়ে সেখানে অবসর সময়ে কিংবা ঈদ, পূজা-পার্বনে দারুণ এক সময় কাটিয়ে আসত । আমি যেরকম বর্ণনা দিচ্ছি সেটা ঘটত এইত ৫/৭ বছর আগেও। রংপুর চিড়িয়াখানার কথা বলছি, শহর-শহরতলী-গ্রাম সবখানের মানুষের এই একটি জায়গাই ছিলো পরিবার নিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে আসার জন্য।

আমরাই কত গিয়েছি ছোট বেলায়। বড়বোন আর আমার দারুণ একটি ছবিও আছে চিড়িয়াখানায় তোলা, আমার বয়স তখন ৭ কি ৮, এইরকম ই হবে । আর এখন বড়বোনকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার কথা আমার এই নির্বোধ মাথাটিতেও আসেনা । কি জন্য এত আক্ষেপ করছি এবার সেই কথায় আসি । সেদিন তিন বন্ধুর মাথায় হঠাৎ কি বুদ্ধি চাপলো ! ঠিক করলাম চিড়িয়াখানায় যাব ।

গেলাম একটা ক্যামেরা নিয়ে, কিছু ছবি তুলেও রাখা যাক এই ভেবে । সেইটাই যেন কাল হলো । শুধু পশু-পাখিদের খাচার সামনে ছাড়া কোথাও যেন ছবি তোলার জো নেই । বদ্ধ পশু-পাখিদের সামনে ছবি তোলা যায়, কিন্তু মাঠে-ঘাটে যত পাশবিক কর্মকান্ড ঘটছিলো সেগুলো পাশে রেখে তো আর ছবি তোলা যায় না!!! দু'জন প্রেমিক-প্রেমিকার সুন্দর সময় কাটানোর জন্য সেখানে অনেক যায়গা আছে। সুন্দর লেক পাড় আছে, সুন্দর কতগুলো বেঞ্চ আছে ।

আমি সেদিকে কিছুটা তাকালাম, প্রেমিক-প্রেমিকা গল্প করছে , কেউ কেউ হাত ধরে হাটছে ,যদি এরকম মধুর কিছু দৃশ্য দেখতে পাই!! হতাশ হতে হলো আমাকে । সেখানে কাউকেই খুজে পেলাম না । সামান্য ভিতরে পেয়ারা বাগান এ গিয়েই বুঝলাম ,এখানে কেউ আর প্রেম করতে আসেনা । আসে সস্তায় নিজেদের খারাপ অভিলাষ গুলোকে পুরণ করতে । আর একটু এগোতেই গাজার গন্ধ পেলাম।

বেশি কষ্ট করতে হলো না। পাশে তাকাতেই দেখতে পেলাম উন্মুক্তেই নেশায় বুদ দুই যুবক । সবচেয়ে অবাক হলাম যখন শেষ সীমানায় পৌছলাম । দেয়ালের ওদিকেই মুরগির দোকান, মরা মুরগি গুলো বেশি কষ্ট না করে তারা এদিকেই পাচার করে দিয়েছে । বমি আসা দুর্গন্ধ সেখানে , হাটাই দায় ।

পরম বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, সেই পরিবেশের সকল প্রতিবন্ধকতা সহ্য করে এক যুগল অতি গোপনে অতি গোপন কাজ সারছেন । পরিবেশের দুর্গন্ধ , দুর্গন্ধময় রুচির কাজ, এতো কিছু বেশিক্ষণ সহ্য করা যাবে না। কেটে পরলাম । তবে যখন ক্যামেরায় কিছু ক্লিক করছিলাম , দেখলাম হয়ত প্রশাসনের কেউ এসে কপোত-কপোতী, গাজাখোরদের তুলে দিলেন। তারা আবার ক্যামেরা দেখলেই ভাবেন এরা প্রেস এর লোক।

আরো একটা নোংরা তথ্য পেয়েছি । এবার খাচা আর ঘরে আসা যাক। পশু-পাখিদের খাচার অবস্থা করুণ। নোংরা-দুর্গন্ধময়, অনেক খাঁচাই ফাঁকা, আগের অনেক পশু-পাখিই নেই। ঘরের ব্যাপারটি না বললে কেউই বুঝবেন না।

চিড়িয়াখানার শেষ দিকে লেক পার হয়ে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আছে। বাইরে থেকে সবই স্বাভাবিক, কিন্তু গোপনে খোঁজ নিয়ে এবং কিছু খবরের কাগজ ঘেটে উন্মোচন করা হলো আসল তথ্য। প্রকাশ্যে তো নোংরামি চলছেই, শেষ পর্যায়ের নোংরামিটা ঘটছে এই রেস্টুরেন্ট এর ভিতরে। অবৈধ শারীরিক মিলনের জন্য সেখানে ঘন্টাভিত্তিক ঘর ভাড়া দেয়া হয়। নৈতিকতা হারিয়ে অনেক কপোত-কপোতীই এর সুযোগ নিচ্ছেন।

কেউ সন্দেহও করছে না, ভাবছে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসছে। ৫০০ টাকা দিয়েই বিছানায় শোয়া যাচ্ছে!!! ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর এর কাহিনী। একদল সচেতন যুবক আর সহ্য করতে না পেরে,হয়ত অন্য কোনো উপায় না পেয়ে, অনেকটা অবৈধ উপায়েই সেই রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেয়। কিউরেটরও বরখাস্ত হন, সেই ঘর থেকে ১ জোড়া কপোত-কপোতী এবং মূল হোতা লিটনকেও আটক করা হয়। যুবকদল ঘটনার দ্বায়িত্ব স্বীকার করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি স্বরূপ লিফলেট বিতরণ করে।

এই বিস্তারিত টুকু আপনারা পাবেন The Daily Starএ প্রকাশিত এই সংবাদে, Click This Link কি ভাবছেন সকল নোংরামি বন্ধ হয়ে গেছে??! ভুল ভাবছেন, অনেক বেড়ে গেছে । নতুন সাজে শুরু হয়েছে ঘন্টাভিত্তিক ঘর ভাড়া দেয়ার ব্যবসা। একটার বদলে তিনটা ঘর এখন সেখানে ব্যবসা বাড়িয়ে দিয়েছে । পুরোদমে চলছে চিড়িয়াখানার ভিতরে মানুষের লীলা। চলছে চলুক, আমাদের কী, তাই না!!? আমাদের তো সেই যুবকদলের মত সাহস নেই।

ওদের কাজ ছিলো না, তাই ওসব নোংরামি পরিষ্কার করতে গিয়ে নিজের হাত নোংরা করেছে। আমরা তো বুদ্ধিমান, আমরা হাত নোংরা করতে রাজি না। তাই না??? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.