আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা গল্প, একটা পতাকা আর সম্ভবত আমার একটু বাড়াবাড়ি।

কল্পিত সুখ শুধু কল্পনায় সুন্দর বাস্তবতায় খুব বেমানান। ছোট বেলায় দাদির কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম। ঠাকুরমার ঝুলি না। একটা সত্য ঘটনা, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা। দাদি যুদ্ধ দেখছেন, অবর্ণনীয় কষ্ট দেখেছেন, আমার দাদা ছিল মুক্তিযোদ্ধা।

দাদির মুখে একটা গল্প শুনেছিলাম। এক বাড়ির নতুন বউ, বিয়ে হয়েছে বেশিদিন হয়নি। তার স্বামী ছিল যুদ্ধে। ঘরে ছিল তার অসুস্থ শশুর। একদিন ভোর রাতের দিকে পাক হানাদারেরা তার বাড়িতে ঢুকে পরে।

আর সেই ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত অমানবিক আর পাশবিক নির্যাতন করে সেই ফুটফুটে মেয়েটা। যার হাত থেকে সম্ভবত মেহেদির রঙ মুছেনি তার আগেই তার সব ধ্বংস করে দিয়েছিক সেই পিশাচগুলো। অসুস্থ শশুর তার ছেলের বউটাকে বাচাতে পারেনি। কিভাবে লোকটা বেঁচে গিয়েছিল কেজানে, দাদিও অত বিস্তারিত কিছু বলেনি, তখন অত আগ্রহও হয়তো ছিলনা সব জানার, এখন বুঝি কথা গুলো। এইটুক শুনিছি তার বিবস্ত্র ছেলের বউকে ঘরে থাকা লাল আর সবুজ কয়েক টুকরা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল।

আসলে তখন কি পতাকা সম্পর্কে এত ধারনা সেই অসুস্থ লোকটার ছিল? এতকিছু জানিনা...। । তার ছেলের বউয়ের লজ্জানিবারনের জন্য সেই লালসবুজকে জড়িয়েছিল। ঘরে কাপড়ের টুকরা ছিল তাই দিয়ে তাকে ঢেকেছিল। ।

তাও কাপড়গুলো ছিল মুক্তিবাহিনীর, যখন তারা এখানে একবার আশ্রয় নিয়েছিল তখন নাকি রেখে গিয়েছিল। লোকটা নাকি যুদ্ধের পর ও অনেক দিন বেঁচে ছিল। দাদি এই গল্পটা বলেছিলেন একদিন পতাকা নিয়ে একটা ঘতনার পর। দাদির ডায়াবেটিকস ছিল। একদিন দাদিকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলাম, একটা চা দোকানের সামনে একটা পতাকা টেবিল এ ক্লথ হিসেবে বিছানো ছিল।

অনেক লোক ছিল দোকান ভর্তি কেও বেপারটা দেখেও হয়তো দেখেনি, অথবা দোকানদার টার মতো তাদের ও কিছু এসে যায়নি, অথবা কারো বলা সত্ত্বেও দকানি কথা শোনেনি, অতকিছুত জানিনা। আমি বেশী বড়ো ছিলাম না আর সেই সময়তা সম্ভবত মেয়েদের এত স্বাধীনতাও ছিল আওয়াজ তোলার। তবুও দোকান দার কে বলেছিলাম এটা তো পতাকা এটা এভাবে রেখেছেন কেন? উনার উত্তর ছিলঃ আফা ১৬ ডিসেম্বর আসিলো না? পতাকা কিন্না দোকানে টাঙ্গাইসিলাম, ১৬ ডিসেম্বর তো শেষ এইটত টেকা দিয়া কিনসি, এইটা কি ফালাই দিমু?? সেদিন দাদি খুব আফসোস করছিলো আর এরপরই এই পতাকার জন্যই মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প বলেছিল। আজ আমার আফসোস কোথায় জানেন?? কেন এই গল্প বললাম জানেন??? আজ মানুষ এই পতাকা দিয়ে ফ্যাশান করে… আমার কষ্টটা হল শুধু মাত্র ডিসেম্বর মাসে ফেসবুক এ প্রোফাইল পিকচার দেয়ার জন্য পতাকাকে এভাবে অবমাননা করার কি আছে?? একটা পতাকার ছবি ই নাহয় প্রোফাইল এ দিত… কিংবা সে লাল সবুজ শাড়িই নাহয় পরতো। তার আরকটা ছবি ছিল লাল সবুজ শাড়ি পড়া ওঁটাই নাহয় থাকতো…পতাকা নিয়ে এই দেশ প্রেমের নখরামি টা না করলে কি চলতোনা?? জানি হয়তো অনেকেই বলবেন এতে আমার কি?? আমার খারাপ লাগে, আমাকে পতাকার স্থান কারো পিছনে দেখতে পারবনা।

অনেকেই ভাববেন আমার বাড়াবাড়ি কিন্তু আমি দেশ যতটুকুই বা ভালবাসি তাতে আমার কষ্ট লাগে এসব দেখতে। পতাকার সম্মান দিতে না পারুক তাকে অবমাননা করার কোন অধিকার কি কারো আছে??? পতাকা কোন ফ্যাশান কিটস অবশ্যই না। তাই না? কেও রেগে যাবেন না প্লিজ। আমার খারাপ লাগা থেকেই কথা গুলো বলা। কাওকে আঘাত করার জন্য না।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.