আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তবুও বাংলাদেশই আমার প্রিয়

রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুসিলিনি মুচির কাজ করেছেন। জামানির সাবেক প্রেসিডেন্ট এডলফ হিটলার মেথরের কাজ করেছেন। মিশরের বাদশা ফেরাউন কবর খানায় কাজ করেছেন। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবুল কালাম পত্রিকার হকার ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন খেয়াঘাটের মাঝি ছিলেন।

হান্ডুরাসের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট জেয়লা মুরগী চোর ছিলেন। উপরোক্ত কোন দেশ কি বাংলাদেশের চেয়ে কম উন্নত? বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে কি কেউ আছেন এমন অতীত সম্পন্ন? সবার অতীত এদের চেয়ে ভাল। কিন্তু দেশটি নানাবিধ সমস্যায় জজরিত হয়ে অনেকদিক থেকে পিছিয়ে আছে। আসলে সমস্যা হচ্ছে মানসিকতায়, সংকট হচ্ছে মানবিকতার। বাংলাদেশে আমরা এমন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রপ্রধান পাচ্ছিনা যারা মাহাথির মোহাম্মদের মত যোগ্যতা ও আন্তরিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে কিংবা সহজ সরল বিলাসীতা মুক্ত জীবন যাপন করবে।

যেমন- উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকার বার্ষিক আয় প্রায় দেড় লাখ ডলার। কিন্তু নিজের বেতনের শতকরা ৯০ ভাগই এই প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দান করে দেওয়ার পর তার মাসিক ১২ হাজার ডলার বেতনের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে কমবেশি ৭৭৫ ডলার। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় ২৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন রবার্ট মুগাবে। তার বর্তমান বার্ষিক আয় মাত্র ১৮ হাজার ডলার। ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত প্রেসিডেন্ট।

তার বার্ষিক আয় মাত্র তিন হাজার ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বিশ্বের সবচেয়ে কম আয়ের প্রেসিডেন্টদের প্রথম ১০ জনের তালিকায় রয়েছেন। তার বার্ষিক আয় প্রায় ৩২ হাজার ডলার। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই অযথা আড়ম্বর ও বিলাসিতাকে সবসময়ই এড়িয়ে চলেন । বিশ্লেষকরাও তাকে স্বল্প আয়ের প্রেসিডেন্ট বলে থাকেন।

তার বার্ষিক আয় মাত্র ৬ হাজার ৩০০ ডলার। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। চীনের মতো উন্নত দেশে একজন রাষ্ট্রনায়ক হয়েও তার বার্ষিক আয় ৩৯ হাজার ডলার। অর্থের পেছনে ছোটার চেয়ে দেশের মানুষের সমস্যা সমাধানই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদকে অনেকে 'মি. নরমাল' হিসেবে চেনেন।

সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি। ওলাঁদের সম্পদ বলতে রয়েছে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের রিভিয়েরা উপকূলের বাড়িটি। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১১ লাখ ৭০ হাজার ইউরো। অন্যান্য সম্পদের মধ্যে ব্যাংকে আছে আট হাজার ২০০ ইউরো, তিন হাজার ৫৫০ ইউরোর জীবন বীমা এবং ১৫ হাজার ইউরোর আসবাবপত্র। এ সম্পদের পরিমাণ এতটাই কম, ফ্রান্সে কর দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ সম্পদ থাকতে হয় সেটাও তার নেই।

তাই ওলাঁদকে কর দিতে হয় না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে ওলাঁদ প্যারিসের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। নির্বাচনের আগে প্রতিদিন একটি স্কুটারে করে কাজে যেতেন। নির্বাচনী প্রচারের সময়ও তিনি কোনো গাড়ি ব্যবহার করেননি। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে বলা হয় 'অতিমানবীয় কর্মঠ' নেতা।

১৯৯৪ সাল থেকে তিনি বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অধিষ্ঠিত। তার বর্তমান বার্ষিক আয় মাত্র ৩৩ হাজার ডলার। অথচ চিন্তা করে দেখুন আমাদের দেশের নেতানেত্রীদের কথা। তাদের ভোগ বিলাসিতা ও আরাম আয়েশের কথা। বিদেশ ভ্রমণ করে নাম পরিবতন করে রাষ্ট্রীয় অথের অপচয়ের কথা একটু ভাবুন।

দুনীতি-স্বজনপ্রীতির কথা নাইবা বললাম। আমার এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে এসব নানা আলাপ হচ্ছিল। হঠাৎ ওকে বেশ উত্তেজিত মনে হল। সে বলল-‘ সিঙ্গাপুরের সাথে ঢাকার তুলনা দিয়ে লাভ নেই। সেখানে পুরো শহরটাকে দিনে দু’বার ধৌত করা হয়।

ফলে পরিষ্কার পরিবেশে বাসকারী মানুষগুলোর মনটাও স্বচ্ছ আর আমাদের নেংরা পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষের মনটাও নোংরা। বাংলাদেশ যেখানে প্রয়োজনীয় রাস্তায় ইট বিছাতেও পারেনা সেখানে বেলজিয়ামের কাচের রাস্তার কথা বলে লাভ কি? ফুটবলার ডেভিড ব্যাকহামের ছবি তার দেশের কাগজের মুদ্রায় ছাপে আর আমরা সারাক্ষণ ড. ইউনুসকে গালমন্দ করি। আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচি যদি পাল্টানো যেত তবে আমরা উন্নত জাপানের মত উড়ন্ত রেলগাড়ি না দেখলেও এতদিনে ভূগভস্থ পাতাল রেল চালু করতে পারতাম’। সাংবাদিক বন্ধুর এসব কথাবাতা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে আরেকজন বলে ওঠল-‘রাজনীতিবিদদের দোষ দিয়ে কি লাভ? তুই কি করেছিস দেশের জন্য, জাতির জন্যে? জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিস, সুস্থ সবল আছিস অথচ নিজকে ও নিজ পরিবার নিয়েই ব্যস্ত আছিস। লিবিয়ার নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফীর এক পা ছিলনা তবু জনপ্রিয়তা ছিল, শ্রীলংকার সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিমা কুমারা তুংগার একচোখ কানা ছিল বলেতো ক্ষমতা কম ছিলনা।

অন্যকে দোষারোপ করে লাভ নেই। ফ্রান্সের প্যারিসে কুকুরেরও হোটেল আছে আর ঢাকায়তো অনেক মানুষেরই থাকার জায়গা ফুটপাথ। অথচ ফুটপাথে যে থাকে তার ভোটেই এমপি- নিবাচিত হয়। ফলে কে অন্ধ কে বোবা, কে ফুটপাথে থাকে আর কে প্রাসাদে থাকে সেটার চেয়ে বড় কথা মানুষটি দেশপ্রেমিক কিনা, সৎ ও যোগ্য কিনা?’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।