আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যযুগের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য

বল বীর- বল উন্নত মম শির, শির নেহারি' আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য সম্পর্কে কিছু জানার আগে সম্রাট কনস্ট্যানটাইন সম্বন্ধেও কিছু জানা দরকার। আর এই সম্রাট কনস্ট্যানটাইন ছিলেন পশ্চিম রোম সম্রাট প্রথম কনস্ট্যানটিয়াসের পুত্র। ব্রিটেন সফরে গিয়ে কনস্ট্যানটিয়াস মারা গেলে সৈন্যরা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে কনস্ট্যানটাইনকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি ৬ বছর ব্রিটেন ও গল শাসন করেন।

অন্যদিকে সিংহাসনের আরেক দাবিদার ম্যাক্সেনটিয়াস শাসন করেন রোম। ৩১২ সালে মিলভিয়ান সেতুর যুদ্ধে ম্যাক্সেনটিয়াসকে পরাজিত ও নিহত করেন কনস্ট্যানটাইন। যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি আকাশে মেঘের গায়ে ক্রুশ চিহ্ন দেখতে পান এবং ঘটনাটি তাকে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত করে। তিনি এর পরই ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি প্রবর্তন করেন এবং খ্রিস্ট ধর্মালম্বীদের উপর নির্যাতন বন্ধের ব্যবস্থা করেন। ৩২৪ সালে পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট লিসিনিয়াসকে পরাজিত করে পুরো সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হন।

এর এক বছর পর তিনিই প্রথম নাইসিয়ায় (বর্তমান তুরস্কের ইনজির) খ্রিস্টান গির্জাসমূহের সম্মেলন আহবান করেন। সম্রাট কনস্ট্যানটাইন কনস্ট্যানটাইন ৩৩০ সালে সাম্রাজ্যের রাজধানী পৌত্তলিক রোম থেকে সরিয়ে নতুন শহর কনস্ট্যান্টিনোপলে নিয়ে যান। শহরটি বাইজেন্টিয়ামের (বর্তমান তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল) গ্রাম এলাকায় তৈরি হয়েছিল। কনস্ট্যানটাইন যখন ৩৩০ সালে রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী রোম থেকে তার নতুন শহর কনস্ট্যান্টিনোপলে স্থানন্তর করেন তখন তিনি শুধু ক্ষমতার কেন্দ্রেরই পরিবর্তন ঘটাননি, ৪৭৬ সালে রোমের পতনের পরও রোমান সাম্রাজ্য অব্যাহত বা টিকিয়ে রাখার পথ দেখান। কনস্ট্যান্টিনোপলের অবস্থান ছিল প্রাচীন গ্রিক বাইজেন্টিয়ামের পাশে।

ঐতিহাসিকরা প্রায়ই পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য হিসেবে অভিহিত করেন। ৫২৭ থেকে ৫৬৫ সালের মধ্যে প্রথম জাস্টিনিয়ানের শাসনকালে এই সাম্রাজ্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। তার শক্তিমান জেনারেল নার্সেস ও বেলিসারিয়াস এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান এশিয়া মাইনর, বলকান উপদ্বীপ, ফিলিস্তিন, মিশর, উত্তর আফ্রিকা, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চল এবং ইতালির অংশবিশেষ পর্যন্ত। জাস্টিনিয়ানের মৃত্যুর কয়েক বছর পর বাইজেন্টাইন ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসে। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মানচিত্র বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্মের নিজস্ব বৈশিস্ট্য ছিল, যার রক্ষণকর্তা ছিল ইস্টার্ন অর্থডক্স চার্চ।

জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প সংস্কৃতিরও উন্নত কেন্দ্র ছিল এই সাম্রাজ্য। এরই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ ইউরোপে। ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটায়। এবং এরই সাথে সাথে সমাপ্তি ঘটে মধ্যযুগের। ১৩০০ সালের দিকে ওসমান নামের এক তুর্কি নেতা কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে এশিয়া মাইনরে একটি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।

তার অনুসারী এবং উত্তরাধিকারীরা অটোমান বা উসমানিয়া হিসাবে পরিচিত। তারা ক্রমশ এশিয়া মাইনরে রাজ্য বিস্তার করতে থাকে এবং ১৩৪৫ সালে তারা বাইজেন্টাইন সম্রাট জন ক্যানটাকুজেনকে সাহায্য করতে এশিয়া পেরিয়ে ইউরোপে যায়। সে সময় গৃহযুদ্ধ চলছিল। সে সময়কার মুদ্রা ইউরোপে পা রেখেই অটোমান বা উসমানিয়া তুর্কিরা দ্রুত তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে থাকে। ১৪০০ সাল নাগাদ কয়েকটা অভিযানের পর তারা ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়া জয় করে।

তারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে সংকুচিত করতে করতে বাইজেন্টিয়ামের (কনস্ট্যান্টিনোপল) চৌহদ্দিতে নিয়ে আসে। তখন এর আয়তন ছিল আজকের তুরস্কের আয়তনের সমান। বাইজেন্টিয়ামকে কিছুকালের জন্য রক্ষা করেন মোঙ্গল বীর তৈমুর লং। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৪০২ সালে তিনি অধিকাংশ উসমানিয়া সাম্রাজ্য তছনছ করে দেন।

এমনকি তার মৃত্যুর পরও উসমানিয়া সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু ১৪৫১ সালে দুর্দান্ত ও অদম্য সুলতান মোহাম্মদ ফতেহ বিজয়ীর বেশে আবির্ভুত হন এবং উসমানিয়া সাম্রাজের সিংহাসনে আরোহন করেন। ১৪৫৩ সালে দেড় লাখ সৈন্য নিয়ে তিনি কনস্ট্যান্টিনোপল অবরোধ করেন। তার এক বিশাল গোলন্দাজ বাহিনী ৬ সপ্তাহ ধরে নগরীটিতে গোলাবর্ষণ করতে থাকে এবং তিনদিক থেকে স্থলভাগে তুর্কিবাহিনী এবং নৌপথে তুর্কি জাহাজ আক্রমণ চালায়। সর্বশেষ বাইজেন্টাইন সম্রাট একাদশ কনস্ট্যান্টাইনের সৈন্যসংখ্যা ছিল ৮ হাজার।

তা সত্ত্বেও তারা দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং তুর্কিরা চূড়ান্তভাবে হামলে পড়বার আগে ৫৪ দিন পর্যন্ত তাদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। ইতিমধ্যে সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন নিহত হন। অতঃপর তুর্কিরা নগরীটিকে জয় করে তাদের সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে গড়ে তুলতে থাকে এবং তারা এই নগরীর নাম দেয় ইস্তাম্বুল। কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সীমানা প্রাচীর কনস্টানন্টিনোপলের পতনকে গণনা করা হয় মধ্যযুগের অবসান হিসাবে। কনস্টানন্টিনোপলের অনেক পন্ডিত পশ্চিমে পালিয়ে যান, তারা শিক্ষা বিস্তারে উৎসাহ জোগান এবং উচ্চতর জ্ঞানচর্চা করেন, যা রেনেসাঁস বলে পরিচিত।

বর্তমানে যে সমস্ত দেশ সমূহ সে সময়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল সেগুলো হলো- আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, আর্মেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, মিশর, ফ্রান্স, জর্জিয়া, গ্রিস, সিরিয়া, ইরান, লিবিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, ইসরাইল, ইটালি, জর্ডান, কসোভো, মেসিডোনিয়া, মাল্টা, মন্টেনিগ্রো, মরক্কো, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্যান মারিনো, সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন এবং ভ্যাটিকান সিটি। ফে ফ্রাংকলিন সম্পাদিত হিস্ট্রিজ টাইমলাইন অবলম্বনে। আমার পার্সোনাল ব্লগে  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.