আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনুষ্য সংসারে যদি 'মুই বলে খুদা', সে ক্ষণে তাহার শির ছেদি কর জুদা

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র মনুষ্য সংসারে যদি 'মুই বলে খুদা, সে ক্ষণে তাহার শির ছেদি কর জুদা। - কাজী মনসুর আহমেদ আসিফ মহিউদ্দীন ব্লগে ফাইজলামি করে নিজেকে খোদা দাবি করায় অনেকেই তার ফাঁসির দাবী করলো কিছুদিন আগে। কাজী মনসুর আহমেদ তাদের কেউ না। কাজী মনসুর আহমেদ কক্সবাজারস্থ রামুর লোক ছিলেন। কাজীর দায়িত্ব পালন করেছেন বলে কাজী টাইটেল, মূলত ছিলেন সুফি কবি।

তবে তিনি যেই সময়ে রামুতে বাস করতেন সেই সময়ে রামুর বৌদ্ধ মুর্তিগুলায় কেউ আগুন ধরাইতে যাইতোনা। কেউ নিজেকে খোদা দাবি করলে তার কল্লা নেয়ার ঘটনাও সেইকালে বাঙলায় ঘটেছে এমন কথা শোনা যায়নাই, বরং বিশেষ কিছু মানুষকে খোদা জ্ঞান করার একটি সূদীর্ঘকালের ঐতিহ্য ছিলো। এই লাইনখানা তার শ্রীনামা কাব্যের অংশ, লেখা হয়েছিলো ১৭০৩ সালে। কাজী মনসুর আহমেদও কেউ নিজেকে খোদা দাবি করলে তার কল্লা নেয়ার পক্ষে উৎসাহ দেন নাই। উপরের বাক্যখানা লিখেছিলেন দুনিয়ার পরিস্থিতি বুঝাতে, যে নিজেকে খোদা দাবি করাটা নিরাপদ না, কল্লা যাওয়ার ডর আছে।

তবে তেমন কোন ঘটনা রামুতে ঘটে নাই। মধ্যপ্রাচ্যে ঘটেছিলো। যার জীবনে ঘটেছিলো তার নাম শ্রীনামা কাব্যে আছে। তিনি বিখ্যাত দরবেশ মনসুর আল হাল্লাজ। আনাল হক্ক বলে শরিয়াপন্থীদের রোষে পরে শুলে চড়েছিলেন, হাত, পা, মাথা সব খুইয়েছিলেন।

কিন্তু বাঙলায় তিনি যথেষ্ট জণপ্রিয় ছিলেন। কাজী মনসুর আহমেদের ভাষায় - “মনসুর হাল্লাজ নামে আউলিয়া প্রধান, আপনার মধ্যে মিশি পাসরি আপন, মুই ‘হক’ হেন করি সদাএ কহিলা”। কিন্তু কল্লা হারানের ডর উপেক্ষা করে মনসুর হাল্লাজ কেনো ‘মুই হক’ কইলেন? মনসুর আহমেদের প্রশ্ন এবং উত্তর – “কি হেতু কহিল পীরে এময় বচন, তার রূপ ধরি কহে প্রভু নিরঞ্জন”। অর্থাৎ, পীর হাল্লাজ এমনি এমনি কইলেন নাই, প্রভু আল্লাহ নিজেই তার মুখ দিয়ে কইছেন। কিন্তু প্রভু আল্লাহ কেনো দুনিয়ায় এতো লোক থাকতে মনসুর হাল্লাজের মুখ দিয়াই কথা কইলেন? প্রথমে যেই আয়াত দিয়ে শুরু করলাম সেই আয়াতের পরের অংশটুকুও পড়া যাক – মনুষ্য সংসারে যদি 'মুই বলে খুদা, সে ক্ষণে তাহার শির ছেদি কর জুদা।

যেবা যাই চাহে সে অবশ্য সেই পাএ সেই পাইলে সেইজন সে মত হএ। তারমানে কেউ খোদা হইতে চাইলে খোদা তার মধ্যে ধরা দেন। না হইতে চাইলে ধরা দেন না। তার মুখ দিয়া কথাও কন না। আমাদের আসিফ মহিউদ্দীন অবশ্য খোদা হইতে চায় নাই।

সে নেহায়েতই ফাইজলামি করে নিজেকে খোদা দাবি করেছিলো ব্লগের কোন একটা মন্তব্যে। তাই সে খোদা হতে পারবেনা। তার মুখ দিয়া খোদা কথাও কইবেন না। কাজী মনসুর আহমেদ বেঁচে থাকলে আসিফের এই ফাইজলামি পছন্দ করতেন বলে মনে হয়না। তবে তার ফাঁসির দাবিতে যেসব তেতুলখোড় উলামারা হেলিকপ্টারে চড়ে দেশের এমাথা ওমাথা নাস্তিক বিরোধী জিহাদের হুঙ্কার দিয়ে বেরান তাদের উপর যে তিনি মহা ক্ষেপা ক্ষেপতেন তাতে কোন সন্দেহ নাই।

ইসলামের পক্ষে জিহাদ বলতে তিনি যা বুঝতেন তা হল রিপুর বিরুদ্ধে জিহাদ। শ্রীনামা কাব্যে এই জিহাদের পক্ষে সুন্দর কয়েকটা আয়াত আছে- “বাজায় বিয়াল্লিশ বাদ্য শ্রীগোলার হাটে চৌকি রাখেলেন্ত নিয়া ত্রিপিনীর ঘাটে। অনাহত শব্দ উঠে করি হুলুস্থুল কাঁশাঁ করতাল শব্দ আনন্দ বহুল ক্ষেমাই প্রেমাই দুই গেল রণস্থল রিপু সৈন্য ভঙ্গ দিল না আটিয়া বল”। ক্ষেমাই প্রেমাই, মানে ক্ষমা আর প্রেম, এই দুই দিয়ে রিপুকে পরাজিত করতে হবে, রিপুর ক্ষমতা নাই ক্ষমা আর প্রেমের সাথে গায়ের জোরে আটে। এই যুদ্ধের লক্ষ্য আল্লাহকে পাওয়া।

এই যুদ্ধ যে করে সেই মুমিন, এই যুদ্ধ না করে যারা নাস্তিকের কল্লার জন্যে যুদ্ধ করে, যাদের ‘কামশরে কামানলে জ্বলি যায় হিয়া’, যারা ‘সুন্দরি যুবতি করে মন কুতুহলে’, , যারা ‘কাম ক্রোধ লোভ মোহ নিন্দাচর্চায়’ নিয়জিত, তারা কাফির। এগুলা আমার কথা না, কাজী মনসুর আহমেদের কথা। শ্রীনামা’র পাতায় পাতায় লিখে রেখে গেছেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।