আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা?

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। আহলে সুন্নাতের পরিচিতি মুসলমানদের সেই বৃহৎ ফেরকা যা পৃথিবী জুড়ে মুসলমানদের সংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ এবং চারজন ইমাম তথা আবু হানিফা, মালিক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বলের তাকলীদ করেন এবং তাদেরই ফতোয়া অনুসারে আমল করে থাকেন। পরবর্তীতে এই ফেরকার আরো একটি শাখা বেরিয়েছে যাকে ‘সালফিয়া’ বলা হয়। তার রূপরেখা ইবনে তাইমিয়া নির্ধারণ করেছেন, সে জন্যই এরা ইবনে তাইমিয়াকে ‘মুজাদ্দেদুস সুন্নাহ্’ বলে থাকেন। তারপর ‘ওয়াহাবী’ ফেরকা সৃষ্টি হল, এই ফেরকার প্রবর্তক হলেন মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব এবং এটিই হল সাউদী আরবের বর্তমান মাযহাব।

আর এরা সকলেই নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ বলে থাকেন আবার কখনো “ওয়াল জামায়াত” শব্দটিও বর্ধিত করে নেন এবং এদেরকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ নামে ডাকা হয়। ঐতিহাসিক আলোচনা দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আহলে সুন্নাত যেটিকে খেলাফতে রাশেদা বা খোলাফায়-এ-রাশেদীন বলে থাকেন, সেটি “আবু বকর, উমর, উসমান” এবং আলীর খেলাফতকে বুঝায় (পরবর্তী আলোচনা দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত হযরত আলীকে প্রথম দিকে খোলাফায়ে রাশেদীনের মধ্যে গণ্য করতেন না। বরং এক দীর্ঘ সময়ের পর গণ্য করা শুরু করেছেন)। আহলে সুন্নাত তাঁর ইমামতকে স্বীকার করেন, স্বয়ং তাঁর যুগেও তাঁকে ইমাম স্বীকার করতেন এবং আজকের যুগেও তাঁকে ইমাম মান্য করেন। আর যে বা যারা খেলাফতে রাশেদাকে অস্বীকার করে, উহাকে শরীয়াত বহিঃর্ভূত গণ্য করে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হযরত আলীর খেলাফতকে প্রমান করে, সে হলো ‘শীয়ানে আলী’ আর্থাৎ আলীর অনুসারী’।

ইহাও স্পষ্ট যে, আবু বকর হতে বনী আব্বাসীয় খলিফাদের শাসনকাল পর্যন্ত প্রত্যেক শাসকই আহলে সুন্নাতের প্রতি রাজি ছিল এবং সমস্ত বিষয়াবলীতে তাদের ঐক্যমত ছিল। কিন্তু হযরত আলীর অনুসারীদের প্রতি তারা রাগান্বিত থাকত এবং তাদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতো। এর উপর ভিত্তি করেই তারা আহলে বাইতের অনুসারীদেকে আহলে ‘সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’-এর মধ্যে গণ্য করতো না। বস্তুতঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ব্যবস্থাপনাটি হযরত আলীর সমর্থকদের প্রতি জেদ করেই রচনা করা হয়েছিল এবং রাসুলে খোদা (সা.)-এর ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মার মাঝে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার কারণ হয়েছে। আবার আমরা যখন ঐতিহাসিক মজবুত উৎসের মাধ্যমে কারণসমূহ নির্ণয় করব এবং বাস্তবতার উপর থেকে পরদা সরাবো তখন জানা যাবে যে, রাসুল (সা.)-এর ঠিক ইন্তেকালের পরপরই ফেরকার বিভক্তি হয়েছিল।

যদিও হযরত আবু বকর খেলাফতের মসনদে আসীন হয়েগিয়েছিলেন এবং সাহাবাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার বায়াত করে নিয়েছিল। পক্ষান্তরে হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, বনী হাশিম গোত্র এবং সাহাবাগণের মধ্যেকার কিছু লোক যাদের অধিকাংশ গোলাম ছিলেন, তারা সেই খেলাফতের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন। ইহা তো স্পষ্ট আছেই যে, ক্ষমতাসীন হুকুমাত (প্রশাসন) তাঁদেরকে মদীনা থেকে দূরে অবস্থান করতে বাধ্য করেছিল। কিছু কিছু লোককে দেশান্তর করে দিয়েছিল এবং তাঁদেরকে ইসলামের গন্ডির বাহিরে গণ্য করতে লাগল এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার জন্য সেই ব্যবহারেরই প্রচলন রেখেছিল যা কাফেরদের ক্ষেত্রে স্বীকৃত ছিল। আর তাঁদের প্রতি সে ধরণেরই অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক নিয়মানুবর্তিতা আরোপ করা হলো, যা কাফেরদের প্রতি আরোপ করা হত।

ইহা স্পষ্ট যে, অদ্যকার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত সেই যুগের রাজনৈতিক চক্রান্তের রীতি-নীতিকে বুঝতে পারবেন না, আর না সেই যুগের হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার মাত্রা অনুমান করতে পারবেন, যা রাসুল (সা.)-এর পরবর্তীতে মানব ইতিহাসের মহান ব্যক্তিত্বকে অপসারণ করার কারণ হয়েছিল। অদ্যকার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা তো ইহাই যে, “খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে জামানার সমস্ত বিষয়াবলী আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী আঞ্জাম পেত”। সুতরাং তারা খোলাফায়ে রাশেদীনকে ফেরেশতাতুল্য মনে করেন, যারা একে অপরকে সম্মান করতেন এবং তাদের মাঝে কোন বিদ্বেষ ও ঘৃনা ছিল না, আর না তাদের চরিত্রের মাঝে কোন মন্দ দিক ছিল। আপনরা লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আহলে সুন্নাতগণ সাধারণতঃ সমস্ত সাহাবাদের ব্যাপারে, আর বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদীনের ব্যাপারে আহলে বাইতের অনুসারীদের দৃষ্টিভঙ্গীকে খন্ডন করে থাকেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তাদের ওলামাদের লিখিত ইতিহাসও অধ্যয়ন করেন নি।

বরং তারা তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট সাধারণ সাহাবাদের বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদীনদের প্রশংসা শুনেই যথেষ্ট মনে করে নিয়েছেন। তারা যদি উন্মুক্ত দৃষ্টি ও প্রশস্ত অন্তরকে কাজে লাগাতেন এবং নিজেদের ইতিহাস ও হাদীসের কিতাবাদির পৃষ্ঠা উল্টাতেন, আর তাদের অন্তরের মধ্যে যদি সত্য সন্ধানের অনুভূতি হত, তাহলে অবশ্যই তাদের আকীদার পরিবর্তন ঘটত। আর এ বিষয়টি কেবল সাহাবাদের আকীদার সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়, বরং তারা আরো অনেক বিষয়াবালীকে সঠিক বলে জ্ঞান করে থাকেন অথচ সেগুলি সঠিক নয়। আমি আমার সুন্নী ভাইদের জন্য এমন কিছু বাস্তবতা উপস্থাপন করতে চাই, যা’দ্বারা ইতিহাসের কিতাবাদি ভরপুর হয়ে আছে। এবং সংক্ষিপ্ততার সাথে এমন কিছু আলোকিত ও স্পষ্ট আল্লাহর সিদ্ধান্তাবলীকে (নুসুস) চিনিয়ে/প্রকাশ করে দিতে চাই, যা বাতিলকে মুছে হককে প্রকাশ করে দিবে।

আশা করি ইহা মুসলমানদের বিরোধ ও বিবাদের ক্ষেত্রে ফলদায়ক ঔষধ বলে প্রমানিত হবে এবং তাঁদেরকে একতার সূত্রে বেঁধে রাখার কারণ বলে বিবেচিত হবে। ইহা মিথ্যা নয় যে, অদ্যকার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত হিংসুক নন, আর না তারা ইমাম আলী ও আহলে বাইতের বিরোধি। কিন্তু তাঁদের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তারা তাঁদের শত্রুদেরকেও ভালবাসেন। আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে সেই শত্রুদের আনুগত্যও করেন যে তারা সকলেই রাসুল (সা.)-কে দেখেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত আউলিয়া আল্লাহর প্রতি ভালবাসা এবং তাদের শত্রুদের থেকে দূরত্ব অবলম্বন করার পদ্ধতির উপর আমল করেন না, বরং তারা সবাইকে ভালবাসার পদ্ধতিতে বিশ্বাসী।

তারা মোয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ানকেও বন্ধু গণ্য করেন এবং হযরত আলীকেও বন্ধু গণ্য করে থাকেন। তারা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের” চমকপ্রদ নামকে খুবই পছন্দ করেন। কিন্তু উহার আঁড়ালে যে ষড়যন্ত্র রচিত হচ্ছে সেটা থেকে তারা অজ্ঞ। তারা যদি এ কথা জানতে পারেন যে, সুন্নাত-এ-মুহাম্মাদী হলেন কেবলমাত্র হযরত আলী আর তিনিই হলেন সেই দরজা যার মাধ্যমে সুন্নাত-এ-মুহাম্মদী পর্যন্ত পৌছানো যায় (অথচ আহলে সুন্নাত প্রত্যেক বিষয়েই তাঁর বিরোধিতা করে থাকেন এবং তিনিও প্রত্যেক বিষয়ে তাদের বিরোধী) তাহলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলতেন এবং গভীরভাবে এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন। তারপর ‘শিয়ানে আলী’ আর ‘শিয়ানে রাসুল’ ছাড়া আহলে সুন্নাতের কোন নাম নিশানা অবশিষ্ট থাকতো না।

কিন্তু এ সমস্ত বিষয়ের জন্য সকল জিনিষের উপর থেকে পরদা উন্মোচন করা আবশ্যক। যা সুন্নাত-এ-মুহাম্মদী থেকে মানুষকে দূরে রাখতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে এবং সেগুলিকে জাহেলিয়াতের বিদআত দ্বারা পরিবর্তন করে ফেলেছে, যা মুসলমানদের জন্য মুসিবাত এবং সিরাতে মুস্তাকীম থেকে সরিয়ে দেয়ার কারণ হয়েছে, তাদের মাঝে বিভক্তি ও বিরোধের কারণ হয়েছে এবং কেউ কেউ একে অপরকে কাফের পর্যন্ত বলেছে এবং পরস্পর যুদ্ধও করেছে। তাদের এই সমস্ত বিষয়াবলীই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও টেকনোলজীতে পশ্চাতে পড়ে থাকার কারণ হয়েছে। আর এভাবেই তাদের প্রতি বিধর্মীদের সাহস বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা তাদেরকে তুচ্ছ ও নীচ বলে জ্ঞান করছে এবং প্রতিনিয়ত যুদ্ধের উস্কানী দিচ্ছে। উভয় ফেরকার এই সংক্ষিপ্ত পরিচিত উপস্থাপন করার পর এই কথা বয়ান করে দেয়া জরুরী যে, ‘শিয়ানে আলী’ সুন্নাত বিরোধী কোন বিষয় নয়, যেমনটি সাধারণ মানুষের ধারণা।

যদিও তারা গর্বের সাথে নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ বলে থাকেন এবং অন্যান্যদেরকে সুন্নাত বিরোধি গণ্য করে থাকেন। অথচ বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আহলে বাইতের অনুসারীদের আকীদা হল যে, “কেবল আমরাই রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতের সাথে সম্পৃক্ত আছি। কেননা আমরা সুন্নাতকে ‘সুন্নাতের দরজা’ হযরত আলী ইবনে আবি তালিব নিকট থেকে হাসিল করেছি। আর আমাদের আকীদা হচ্ছে যে, তাহাই রাসুল (সা.) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা হযরত আলীর মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছে”।

আমি আমার অভ্যাসবশতঃ হক পর্যন্ত পৌছানোর জন্য নিরপেক্ষ পথ অবলম্বন করে থাকি। আর এ বিষয়ে শ্রদ্ধেয় পাঠকমন্ডলীর জন্য আমি ঐতিহাসিক ঘটনাবলী উপস্থাপন করব। আর এ বিষয়েও দলিল ও প্রমান উপস্থাপন করব যে, আহলে বাইতের অনুসারীগণই হলেন আহলে সুন্নাত, যেমনটি আমি অত্র বইয়ের নামও এটিই রেখেছি। অতঃপর পাঠকমন্ডলীর জন্য মন্তব্য ও রায় প্রদান করার স্বাধীন অধিকার আছে। চলবে........... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।