আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শফীকে ক্ষমা চাইতে হবে: সরকারি দল

১১ দিন মুলতবি থাকার পর গতকাল রোববার অধিবেশন শুরু হতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জাতীয় সংসদ। দিনের কার্যসূচির শুরুতেই সরকারি দল নারীদের নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীর আপত্তিকর বক্তব্যের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।
তবে বিরোধী দল দাবি করেছে, ‘মিডিয়া ক্যু’র মাধ্যমে আহমদ শফীর বক্তব্য বিকৃত করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
সরকারি দলের সাংসদ বেবী মওদুদ আহমদ শফীর বক্তব্যকে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে বিতর্কের সূত্রপাত করেন। পরে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ সরকারি দলের কয়েকজন সাংসদ বক্তব্য দেন।

এর বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফী।
এ ছাড়া মওদুদ আহমদ পাঁচ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়রদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেন। একইভাবে এম কে আনোয়ার ২ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয় নিয়ে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্যের সমালোচনা করেন। তিনি প্রথম আলোর বক্তব্যকে সঠিক বলে মন্তব্য করেন।
আহমদ শফী সম্প্রতি এক ওয়াজ মাহফিলে নারীদের চতুর্থ শ্রেণীর বেশি পড়াশোনা না করানো, নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা এবং পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করেন।


কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী হেফাজতের আমিরের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে সবাই মিলে তাঁকে ‘ধিক্কার’ ও ‘ছি, ছি’ জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘নারী সম্পর্কে হেফাজতের শফী সাহেব যে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা নারীসমাজ তা প্রত্যাখ্যান করি। এতে ভাইদেরও পাশে চাই। আমরা মনে করি না, তাঁর মতো আমাদের ভাইয়েরা বিকারগ্রস্ত, মতলববাজ। ’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, যারা নারীদের আক্রমণ করে, বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে, অন্যায় করে, কুরুচিপূর্ণ কথা বলে, তাদের রুখতে হবে একসঙ্গে।

মুক্তিযুদ্ধে পুরুষ-নারীর একসঙ্গে এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই সময় পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর গোলাম আযম “গনিমতের মাল” বলে নারীদের পাকিস্তানি হানাদারদের ভোগ করার জন্য তুলে দেওয়া, জেনা করা জায়েজ’—এমন সব ফতোয়া দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ছেলেরা জীবন দিয়েছে। মেয়েরা জীবন ও সম্ভ্রম—দুটোই দিয়েছেন। মোনায়েম খান ফাতেমা জিন্নাহকে চরিত্রহীন আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই মোনায়েম খানকে বিরোধী দলের এক সাংসদ পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেন।

তাঁকে সবাই ‘কদমবুসি’ আমলা বলতেন।
নারীকে সম্মান জানানোর বিষয়ে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আল্ল্লামা মানে ধর্ম সম্পর্কে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার কথা থাকলেও হেফাজতের আমির শফী তা সম্পর্কে অবগত নন। তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মেয়েরা পতিতাবৃত্তিতে লাইসেন্স নিয়েছিলেন। তখন শফী সাহেব বা তাঁর অনুসারীরা মেয়েদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি। জিয়ার মদের লাইসেন্স দেওয়া, প্রিন্সেস জরিনা-লাকি খানদের নাচ বন্ধের বিষয়ে শফী সাহেব কোনো প্রতিবাদ বা বিবৃতি দেননি।

আহমদ শফীর উদ্দেশে মতিয়া চৌধুরী বলেন, তিনি কি মায়ের গর্ভ থেকে আসেননি? কিছু হলে মেয়েরাই কেন ভিকটিম হয়?
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন আল্লামা শফীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন, তখন বিরোধীদলীয় নেতা চুপ করে বসে ছিলেন। আল্লামা শফীর বক্তব্য সংবিধানবিরোধী। তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। আর যাদের সঙ্গে তিনি জোট বেঁধেছেন, তাদেরও ক্ষমা চাইতে হবে। সিটি করপোরেশনে জিতেছে বলে মনে করার কারণ নেই যে তারা সবকিছু পেয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শফীর এ বক্তব্যের প্রতিবাদ নারীসমাজ করবে। আমরা মিথ্যার সঙ্গে আপস করি না, আমাদের নেত্রী করেন না। জয় আমাদের হবেই। ’
এরপর মওদুদ আহমদকে ফ্লোর দেওয়া হলে তিনি বলেন, আগে আসিফা আশরাফী বলবেন।

তারপর তিনি বলবেন।
আসিফা আশরাফী ফ্লোর পেয়ে বলেন, ‘আল্ল্লামা শফী একজন আলেম মানুষ। তিনি এই সরকারের আমলে বিভিন্ন পদ-পদবি পেয়েছেন। আজ হঠাৎ করে এই পার্লামেন্টে শফী সাহেবকে নিয়ে আলোচনার কারণ কী জানতে চাই। ’ তিনি বলেন, আল্লামা শফী তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

জানিয়েছেন, তিনি যেভাবে বলেছেন গণমাধ্যমে সেভাবে আসেনি।
আসিফা বলেন, শফীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য মিডিয়া ক্যু করা হয়েছে। সরকার-সমর্থক গণমাধ্যমে এটা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, আল্ল্লামা শফীর ১৩ দফায় নারীর নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে।

এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। শাহবাগিরা মাসের পর মাস বসে থাকবে। আর হেফাজত বসতে পারবে না। এই সরকার ইসলামি জলসার অনুমতি দেয় না। কিন্তু উলঙ্গ নৃত্যের অনুমোদন দেয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিয়ে হেফাজতের কর্মীদের জবাই করা হয়েছে। শাপলা চত্বরে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া হয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ইমানদার মুসলমান। হেফাজতকে সমর্থন করা তাঁর ইমানি দায়িত্ব। এ কারণেই তিনি ঢাকাবাসীকে হেফাজতকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।


সরকারি দলের ফজিলাতুন নেসা হেফাজতকে বিরোধী দলের সমর্থনের সমালোচনা করে বলেন, ‘শফী সাহেব নারীকে ঘরের ভেতর আবদ্ধ থাকতে বলেছেন। তিনি যাদের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন কিংবা যে নেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান করেছেন, শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদে হামলা চালিয়েছেন, সেই নেত্রীর ডাকে যখন সাড়া দেন কিংবা আর্থিক সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন সেই নেত্রীকে দেখলেও কি তাঁর জিভে জল আসে?’ তাঁর এ বক্তব্যের সময় বিরোধী দলের মহিলা সদস্যরা হইচই করেন।
এ সময় আসিফা আশরাফী খালি গলায় চিৎকার করে স্পিকারকে উদ্দেশ করে বলতে থাকেন, ‘এখানে বিরোধীদলীয় নেত্রীর নাম কেন আসছে, মাইক বন্ধ করেন। ’
সরকারি দলের তারানা হালিম বলেন, ‘বিরোধী দলের যে সংসদ সদস্যরা চিৎকার করছেন, তাঁরা প্রচ্ছন্নভাবে নারীকে অবমাননা করে দেওয়া বক্তব্যের সমর্থন দিচ্ছেন। একজন নারী হিসেবে আমি লজ্জিত হচ্ছি।

আজকে যখন জাতিগতভাবে নারীদের আঘাত করা হয়েছে, তখন বিরোধী দলের সদস্যরা বিপরীতধর্মী অবস্থান নিয়ে চিৎকার করছেন, এটা আমাকে মর্মাহত করছে। ’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা: মওদুদ আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত মেয়রদের দুর্নীতিবাজ বলেছেন। এটা জনগণের রায়কে অপমানিত করার শামিল। তাঁর বক্তব্য আমাদের বিস্মিত করেছে। এ বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।


সরকারি দলের আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, মওদুদ আহমদ অতীত নিয়ে কথা না বলতে বলছেন। অতীত ছাড়া বর্তমান হয় না। বর্তমান ছাড়া ভবিষ্যৎ হয় না। তিনি আল্লামা শফীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, দেশকে আজ মধ্যযুগে ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

নীরব থাকা যায় না।
বিএনপির এম কে আনোয়ার বলেন, প্রথম আলোয় প্রকাশিত বক্তব্য সদিচ্ছাপ্রসূত সম্পাদকীয় ছিল। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ সম্পাদকীয়র সমালোচনা করেছেন, সংবাদমাধ্যমকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানান।
এ বক্তব্যের জবাবে সংসদের চিফ হুইপ আবদুস শহীদ বলেন, সরকারি ও বিরোধী দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে বাজেট পাসের দিন বেলা একটা পর্যন্ত আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু ওই দিন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্পিকার আলোচনার সুযোগ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি গিলোটিন করেন। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.