আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্রষ্টার অস্তিত্ব !!! ৪

[b] স্রষ্টার অস্তিত্বের ব্যাপারে বিজ্ঞানের ভূমিকা ঃ[/b] স্রষ্টার অস্তিত্বের ব্যাপারে অনেককে বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী হতে দেখা যায়। বিজ্ঞান যদি স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তবে কিছু লোক খুশিতে আটখানা হয়। শুধু তাই নয়, এ সংক্রান্ত তত্ত্ব প্রচার করে নিজেকে জ্ঞানী আখ্যায়িত করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাও করে থাকে। বিজ্ঞানের কার্যাবলীকে দুটিভাগে ভাগ করা হয়ঃ ১. প্রকৃতিতে কোনকিছূ আছে কিন্তু মানুষ জানতো না, সেটি খুঁজে বের করা। ২. প্রাকৃতিক বস্তুসমূহকে বিশেষ জ্ঞান বা কৌশলে নতুন রূপ দিয়ে তাকে অধিকতর ব্যবহার উপযোগী করা।

বিজ্ঞান কোন একটি বিষয় সম্পর্কে যখন গবেষণাগারে পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করে বা কোন বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে তখন তাকে ‘law বলে। অর্থাৎ, এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যা বিজ্ঞানীদেরকে প্রমাণ করে দেখাতে হয়। আর, যখন বিজ্ঞান কোন বিষয়বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কে অনুমান নির্ভর কথা বলে, তার জানা তথ্য, যুক্তি, বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে এবং তার মত করে যখন কোন যুক্তি উপস্থাপন করে, তখন তাকে ‘theory’ বলে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বহু প্রতিষ্ঠিত ‘খধ’ি অর্থাৎ গবেষণাগারে পরিক্ষীত প্রমানিত সত্যটিও অবান্তর প্রমানিত হয়েছে বা হয়। কিছু বিজ্ঞানীর যুক্তিনিষ্ঠ আবিষ্কার কিছুকাল পরে অন্য বিজ্ঞানী অবান্তর বা ভুল আখ্যায়িত করে এবং তিনিও গবেষণাগারে তা প্রমাণ করে দেখান।

নিওটন, আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং এর মত বিজ্ঞানীদের আবি®কৃত বহু থিওরী ভুল প্রমাণ করেছে এখনকার বিজ্ঞানীরা। যেখানে ‘law পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে যায়, সেখানে থিওরীর অবস্থা কি হতে পারে, তা কি ভেবে দেখেছি ? আচ্ছা বলুন তো, যে লোকটি এ্যাডউইন হাবলের বিগব্যাং থিওরী (এই থিওরীর শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা মহা প্রতিভাধর বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং) অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির ঘটনা পড়ে আবিভূত হয়ে সেমিনারে সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে বেড়ালো এবং নিজেকে সেকেন্ড হকিং বলে প্রমান করার আপ্রাণ চেষ্টা করলো। তিনি যদি কিছুকাল পর দেখেন যে, স্বয়ং স্টিফেন হকিং তার বিগব্যাং থিওরীর ভুলের কথা অকপটে স্বীকার করছে, তখন সেকেন্ড হকিং এর দশাটা কি হবে একবার চিন্তা করেছেন ? হ্যাঁ তাই হয়েছে, স্টিফেন হকিং তার বিগব্যাং থিওরীর বেশ কিছু ভুলের কথা স্বীকার করেছেন এবং প্রথিতযশা বহু বিজ্ঞানীই তা মানেননি এবং তারা উল্টো প্রমাণ করেছেন যে, হকিং এর ব্যাখ্যা ভুল। সে যাই হোক, স্রষ্টার অস্তিত্ব খোঁজা বিজ্ঞানের কাজ নয়। তার কাজ হলো, যা কিছু দৃশ্যমান, অনুভূত বা পদার্থ তার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করা।

আল্লাহকে যেহেতু দেখা যায় না, তাই তাকে ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রশ্নই উঠে না। আর, তার সম্পর্কে ধারণা করে বোকা বনে যেতে চায় না অনেকেই। এ কারনে বহু বিজ্ঞানীকেই নিঃশঙ্কচিত্তে স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করতে দেখা যায় এবং যুক্তি দিয়ে চিন্তা করে তারা একজন স্রষ্টার অস্তিত্ব দেখবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই, একত্ববাদের প্রতি বহু বিজ্ঞানীকেই ঝুঁকতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে বহু বিজ্ঞানী ইসলাম গ্রহন করেছেন এবং তাদের রিসার্স আল-কুরআনমুখী করেছেন।

অনেকে ইসলাম গ্রহন করেনননি তবে স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়েছেন। বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিঁনি বলেছিলেন, “আমি মহান স্রষ্টাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই তাঁর অসীম দয়ার জন্য,যিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন শত শত বছর ধরে লুকায়িত অপার সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করতে। ”(গ্যালিলিও গ্যালিলি,বর্ণনা মাইক উইলসন,‘দ্য ফুলিসনেস অব দ্য গ্রস’,ফোকাস ম্যাগাজিন) স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেন,“ ইশ্বর অনন্ত ও অসীম। সর্বশক্তিমান ও সর্বোজ্ঞ। তাঁর স্থায়ীত্বকাল অনন্ত কাল থেকে অনন্ত কাল পর্যন্ত বিস্তৃত।

তাঁর উপস্থিতি অসীম থেকে অসীমে। তিঁনি সব কিছুই জানেন এবং সব কিছুই করেন,যা করা যায় কিংবা যা করা সম্ভব। আমরা তাঁকে শুধু অনুভব করি তাঁর বিজ্ঞ ও অনন্য উদ্ভাবনী সৃষ্টির মাধ্যমে। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা করি ও ভালবাসি তাঁর অনুগত দাস হিসেবে। ”(‘প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল ফিলোসফি’,উইলিয়াম বেন্টন,১৯৫২ সাল,পৃষ্ঠা ঃ ২৭৩-২৭৪) “বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা ইশ্বরের অস্তিত্বের কথা জানি এবং তাঁর মহিমার মাধ্যমে আমরা তাঁর স্বরুপ বুঝতে পারব।

”(ব্লেইজ প্যাসকেল,পেনসিস,পৃষ্ঠা- ২৩৩) থার্মোমিটারের উদ্ভাবক জন হেলমন্ড বলেন- “বিজ্ঞান হল বিশ্বাসের অংশ। ” জর্জ বুভিয়ার আধুনিক জিবাশ্ম বিজ্ঞানের জনক। তিঁনি বলেন,“ফসিল বা জিবাশ্ম হচ্ছে সৃষ্টির এক জীবন্ত প্রমান যা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে,বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীরা ইশ্বরের সৃষ্টি। ” কার্ল লিনিয়াস সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবদ্ধকরণকে সুসংবদ্ধ করেন। তিঁনি বলেন,“প্রাকৃতিক আকরিক হল ইশ্বরের অস্তিত্বের এক বিশেষ প্রমান।

” বিখ্যাত জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী মার্কস প্লাঙ্ক বলেন,“এই মহা বিশ্বের স্রষ্টা ইশ্বর এবং এই বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের একটি আদর্শিক তত্ত্ব্ । ” মহা বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেন, “ইশ্বর ছাড়া বিজ্ঞানের অস্তিত্ব নেই। ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু। ” যুক্তি দিয়ে এবং আল্লাহ কতৃক সৃষ্ট গোটা মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ করে স্রষ্টার অস্তিত্ব বুঝেছেন, এমন বিজ্ঞানীর সংখ্যা হাজার হাজার। বিখ্যাত চিত্র শিল্পী,যন্ত্র ও প্রকৌশল বিজ্ঞানী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্জি(১৪৫২-১৫১৯),জর্জ এগ্রিকোলা(১৪৯৪-১৫৫৫),মহাকাশ ও যন্ত্র বিজ্ঞানী জন উইলকিন্স(১৬১৪-১৬৭২),প্রখ্যাত গণিতবিদ আইজ্যাক ব্যারো(১৬৩০-১৬৭৭),নিকোলাস স্টেনো(১৬৩১-১৬৮৮),নৃ-বিজ্ঞানী টমাস বুমেট(১৬৩৫-১৭১৫),ওষুধ বিজ্ঞানী নিহিমালা গ্রী(১৬৪১-১৭১২),জীব বিজ্ঞানী উইলিয়াম উইশটন(১৬৬৭-১৭৫২),জন হ্যাচিনসন(১৬৭৪-১৭৩৭),জোনাথন এ্যাডওয়ার্ড(১৭০৩-১৭৫৪),রিচার্ড কিরওয়ান(১৭৩৩-১৮১২),জেম্স পারকিনসন(১৭৫০-১৮২৪),উইলিয়াম ফিরবি(১৭৫৯-১৮৫০),বেঞ্জামিন বারটন (১৭৬৬-১৮১৫), জন ডালটন (১৭৬৬-১৮৪৪), চার্লস বের (১৭৭৪-১৮৪২), জন কিড (১৭৭৫-১৮৫১), জন গজ (১৭৭৭-১৮৫৫), বেঞ্জামিন সিলিমান (১৭৭৯-১৮৬৪), পিটার মার্গ রগেট (১৭৭৯-১৮৬৯), উইলিয়াম বাকল্যান্ড (১৭৮৪-১৮৫৬), উইলিয়াম প্রট (১৭৮৫-১৮৫০), এ্যাডওয়ার্ড হিচকক (১৭৯৩-১৮৬৪), রিচার্ড ওগান (১৮০৪-১৮৯২), স্যার হেনরী রলিংসন (১৮১০-১৮৯৫), জন এমব্রস ফ্লেমিং (১৮৪৯-১৯৪৫), চার্লস পি স্মিথ (১৮১৯-১৯০০), হেন ফেবরী (১৮২৩-১৯১৫), জোসেফ লিস্টার (১৮২৭-১৯১২), এ এইচ সেইচ (১৮৪৫-১৯৩৩), পল লেমনি (১৮৭৮-১৯৪০), চার্লস স্টিনো (১৮৮২-১৯৫৪), এল মর্সন ডেভিস (১৮৯০-১৯৬০), স্যার কসিল পি জি ওয়াকিনি (১৮৯২-১৯৭৯) ইত্যাদি নাম উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া, সমসাময়িক বহু বিজ্ঞানী স্রষ্টার সৃষ্টির নিদর্শন দেখে , পর্যবেক্ষণ করে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন,“তারা আকাশ পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পরিভ্রমন করে। ” প্রাচীন গ্রীক শিক্ষা ও বস্তুবাদী দর্শনের উপর ভিত্তি করেই ইউরোপে উনবিংশ শতাব্দীতে বস্তুবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ডারউইনের বিবর্তনবাদ তেমনি একটি বস্তুবাদী মতবাদ। ডারউইনিজমে বলা হয় ‘জীবন্ত বস্তুসমূহ’(!) কাকতালীয়ভাবে বা হঠাৎই সৃষ্টি হয়েছে।

ডারউইনের এই অভিমত একদা বস্তুবাদী হিসেবে পরিচিত বিজ্ঞানীরাও প্রত্যাখ্যান করেছেন বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। বিখ্যাত জীব বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফলি তার বিখ্যাত বই ‘ন্যাচারাল থিওলজি’ তে বলেন, “প্রতিটি ঘড়ি যেমন প্রমাণ করে এর পেছনে একজন নির্মাতা আছে, ঠিক তেমনি প্রকৃতির পরিকল্পনা প্রমাণ করে যে, এর পেছনে একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। ” জিন নিয়ে আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেলেরার’ একজন প্রখ্যাত জীব বিজ্ঞানী জিন মাইন্স বলেন, “আমাকে যা আবিভূত করে তা হল, জীবনের স্থাপত্য। ব্যবস্থাটি ভীষন রকমের জটিল। এটা দেখে মনে হয়, এটা পরিকল্পিত এবং এর পেছনে বিশাল বুদ্ধিমত্তা রয়েছে।

”(সানফ্রান্সিসকো ক্রনিকল্স, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০০১ ) আমেরিকার বায়ো কেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান মাইকেল জে বেহে তার ডারউইন ব্লাক বক্স নামক বইটিতে বস্তুবাদকে সম্পুর্ণ অসার প্রমাণ করেন। তিনি বলেন, “গত চার যুগ যাবত গবেষণার পর আধুনিক প্রাণ রসায়ন বা বায়ো-কেমিস্ট্রি কোষের রহস্য উম্মোচন করেছে। এর অগ্রগতি ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। দশ হাজারেরও অধিক বিজ্ঞানী তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় উৎসর্গ করেছে পরীক্ষাগারের একঘেঁয়ে গবেষণার কাজে। শুধুমাত্র একটি কোষের রহস্য উদঘাটনে জীবনকে আনবিক স্তরে অনুসন্ধান করার এই সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ফল হচ্ছে স্পষ্টতঃ “এটি পরিকল্পিত”।

এই ফলাফল এতই স্পষ্ট যে, একে বিজ্ঞানের ইতিহাসের বৃহত্তম আবিষ্কার বলা যায়। কিন্তু এই সাফল্যে কোন বোতলের ছিপি খোলা হয়নি (উৎসবের জন্য) কিংবা কোন হাততালিও বাজেনি। কেন বৈজ্ঞানিক সমাজ এই চমকপ্রদ আবিষ্কারকে আলিঙ্গন করছেনা ? কারণ হল, এই ইস্যুটির একটি অংশের পরিচয় যদি “বুদ্ধিবৃত্তিক পরিকল্পনা ” হয়(অর্থাৎ সবকিছু হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি বরং এর পেছনে যিনি ছিলেন তিনি সু-পরিকল্পিতভাবেই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। ),তবে অপর পাশের পরিচয়টি হচ্ছে ‘সৃষ্টিকর্তা’ । ”(নিউইয়ার্ক প্রেস,পৃষ্ঠা ঃ ২৩১-২৩২, ১৯৯৬ সাল) অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত প্রাণ রসায়নবিদ মাইকেল ডেন্টন বলেন- “প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জটিল গঠন-প্রণালীকে বিবর্তনবাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।

এটিকে(বিবর্তনবাদকে) অনেকে সাধারণ হিসেবে বর্ণনা করলেও এটি(বিবর্তনবাদ) একটি মৌলিক সমস্যা। ” সুবিখ্যাত জার্মান জীব বিজ্ঞানী ওয়ার্নার গিট বলেন-“আমরা যদি একটি কম্পিউটার দেখি তাহলে বুঝতে পারি, এর পেছনে একজন প্রগ্রামার রয়েছে। একটি গাড়ী দেখলে বুঝতে পারি,এর পেছনে একজন প্রকৌশলী রয়েছে। আমরা যদি জৈবিক তথ্যাবলী দেখি তবে আমরা বুঝতে পারব নিঃসন্দেহে এর পেছনে একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছে। স্রষ্টা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টির মাধ্যমে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরী করেছেন,যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরী হয়,কাজেই আমরা বলতে পারি বিবর্তন একটি অসম্ভব প্রক্রিয়া।

” আমেরিকার প্রখ্যাত জীব বিজ্ঞানী ফিলিপ ই জনসন বলেন-“আমরা পৃথিবীতে এসেছি একজন বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তার ফসল হিসেবে,যিনি সু-নির্দষ্ট উদ্দেশ্যে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের এবং গোটা প্রাণী জগতের সৃষ্টি-একজন স্রষ্টার সু-চিন্তত ফসল। ” প্রখ্যাত জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী ডঃ মরিচ বুকাইলি ইসলাম গ্রহন করে ঐশী গ্রন্থের(আল-কুরআন) সাথে বিজ্ঞানের যোগ-সূত্র খুঁজতে থাকেন এবং আল-কুরআনের বেশ কিছু আয়াতকে তিনি বিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন। তাঁর লিখিত বই “বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান” খুবই প্রসিদ্ধি লাভ করে। সমাজতান্ত্রিক,বস্তুবাদী মানুষিকতা সম্পন্ন বিজ্ঞানীরা স্রষ্টার অস্তিত্ব ওফবড়ষড়মুর কারনে অস্বীকার করে একটা পর্যায়ে পেছনে যেতে যেতে যখন একক সত্ত্বার অস্তিত্ব পেত অথবা মহা বিশ্বের সৃষ্টির পেছনে বুদ্ধিবৃত্তিক দিকটি সু-স্পষ্টভাবে ধরা পড়ত, তখন তারা স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে আর উক্তবাচ্য করত না এবং ‘এটি আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়’ বলে এড়িয়ে গেছে।

অবশ্য বাংলাদেশের অনেক কম্যুনিষ্টদেরকে স্রষ্টার বিরুদ্ধে কথা বলে গোপনে নামাজ পড়তে দেখা যায়(সম্ভবতঃ এরা যা কিছু বলে তার অনেকটাই বিশ্বাস করেনা)। আর পূঁজিবাদী জীবনাদর্শের ধারক বিজ্ঞানীরা বলে, স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে তা আমরা বিশ্বাস করি, তবে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো পৃথিবীতে আমাদের কাজ করতে হবে। এসো আমরা এভাবে কাজ করি। তার মানে তারা ব্যপারটি এড়িয়ে যায়। কোথা থেকে আসলাম, কোথায় যাব, আমাকে নিয়ে স্রষ্টার কোন পরিকল্পনা আছে কি না, তা নিয়ে মোটেও তর্ক চলবেনা।

বরং পৃথিবীতে আসলাম এটাই বড় কথা এখন খাও-দাও ফুর্তি কর, পয়সা ইনকাম কর। এ চিন্তাশুন্য সমাজ মূলতঃ যেমন খুশি তেমন চলো নীতির ফলশ্র“তি যা পুঁজিবাদ দিয়েছে। মূলতঃ সৃষ্ট বস্তু বা জীব সীমাবদ্ধ, তার জন্য একটা সীমানা নির্ধারণ করা আছে, যার বাইরে সে চলতে পারে না। আর এই সীমাবদ্ধতা দিয়ে অসীম বা যে সত্তার কোন সীমা-পরিসীমা নেই তাকে মাপতে যাওয়া সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে সৃষ্ট জীব তখনই কিছু জানতে পারবে, যখন ঐ অসীম সত্ত্বা তাকে কিছু স্বেচ্ছায় জানাবে।

আর সেই অসীম সত্ত্বার পরিচিতি যদি শুধু ইতিহাস থেকেও খুঁজি, তবে আমরা আল কুরআনকে পাব। আল-কুরআনের মধ্যে আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের সম্বন্ধে যতটুকু বলেছেন এবং তার প্রেরিত পুরুষ মুহাম্মদ(সাঃ) যতোটুকু তাঁর সম্পর্কে জানিয়েছেন, এর বাইরে আমাদের পক্ষে বিন্দুমাত্র তথ্য পাবার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ, আল্লাহর সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য পেতে আমাদেরকে তাঁর প্রেরিত নবী, রাসূল ও কিতাবের উপর নির্ভর করতে হবে। ঐশী কিতাবের জ্ঞান ছাড়া শুধু উর্বর মস্তিস্কের দ্বারা স্রষ্টাকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। কারণ, মানুষের যে ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য জ্ঞান আছে, তা তাকে সাধারণ ব্যাপারেও সবসময় সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম নয়।

অন্ধকার রাতে সে একটি দড়িকেও সাপ ভেবে দৌড়ে পালায়। এখানে তার চোখ ভুল তথ্য দিয়েছে, তার মস্তিস্ক ভুল বিশ্লেষণ করেছে এবং তার আচরণও (অপঃরড়হ) ভুল ছিল। তার অন্য ইন্দ্রীয়েরও একই অবস্থা। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় বহন করে যে মস্তিস্ক, তারও হাজার সীমাবদ্ধতা আছে। তাই স্রষ্টা সম্পর্কে মনগড়া কথা বা তথ্য আবিস্কারের চেষ্টা হচ্ছে নিজের শার্টের পকেটে মহাবিশ্বকে ঢুকানোর চেষ্টা করা।

সেটিও নয়, কারণ- মহাবিশ্বের সীমা আছে কিন্তু স্রষ্টার কোনো সীমা নাই। তাই, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ যেটুকু তথ্য দিয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট হওয়া যুক্তি সঙ্গত। “আকাশ-মন্ডলী ও পৃথিবীর অণু পরিমানও তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয় এবং এর চেয়ে ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কোন কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই। ”(১০ঃ৬১) আর তিনি যা জানিয়েছেন বা যে বিধান দিয়েছেন পৃথিবীতে চলার জন্য, তার থেকে বেশী কিছুর প্রয়োজনও নেই। আর, তিনি যা দিয়েছেন বিজ্ঞান তার চরম উৎকর্ষতার সময়েও সেখান থেকে খুব নগণ্য অংশ সম্পর্কেই অবহিত হয়েছে।

আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুই দিয়ে দিয়েছেন। আর, যে বিধান দিয়েছেন তাই উত্তম এবং যথেষ্ট। এখন আমরা যদি আমাদের উর্বর মস্তিস্ক দিয়ে চিন্তা করে নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে চলি, তাহলে পৃথিবীতে চলার ক্ষেত্রে ভূল হবে এবং মানুষের নিজস্ব সীমাবদ্ধতার কারণেই তা হবে। যারা আল্লাহর বিধান দ্বারা পরিচালিত হবে না তাদেরকে তিনি নিজের পরাক্রমশালীতার কথা, কঠোরতার কথা জানিয়ে কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন। আর যারা তার বিধাণ অনুযায়ী চলবে তারা পৃথিবী ও আখিরাতে সফল হবে, বিনিময়ে পাবে চিরস্থায়ী শান্তি।

আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিজের ইচ্ছায় এবং তিনি তাদের পরীক্ষা করে নিতে চান। আল্লাহ কেন মানুষ সৃষ্টি করলেন, তা বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় নয়। এটা বিজ্ঞানের ‘ল’ হতে পারে না। বরং, সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারে। অর্থাৎ, কোন বস্তু কোন উপাদানে গঠিত বা এটার সাথে কোন বস্তুর সংমিশ্রনে নতুন ধরনের বস্তু তৈরী হয়, তা বিজ্ঞান আলোচনা করে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রমানিত হলে তা ‘ল’ তে রূপান্তরিত হয়।

কিন্তু, বস্তুটি কেন সৃষ্টি করা হল ? এটি সৃষ্টি করার কি দরকার ছিল ? এগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞান সমাধান দেয় না তবে বিজ্ঞানীরা এ সম্পর্কে চিন্তা করে কোন একটা ‘থিওরি’ বের করতে পারেন এবং এ ব্যাপারে প্রত্যেক চিন্তাশীল ব্যক্তিই স্বাধীন। তাই, একই বিষয়ে একাধিক লোক ভাবতে পাওে, কিন্তু এ বিষয়টি বিজ্ঞান তার ল্যাবরেটরীতে নিয়ে পরীক্ষা করতে সক্ষম নয়। কাজেই, আমরা এখানে সব কিছুর স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপরই নির্ভর করব। .............................>>>>  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।