আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহিংসতা ও সংঘর্ষে নিহত ৫

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দলটির ডাকে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালে কয়েকটি জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেন হরতাল-সমর্থক জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হরতাল-সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে জামায়াত ও শিবিরের দুজন কর্মী নিহত হন। আহত হন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন উপ-অধিনায়ক, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অন্তত ১৫ সদস্য।

কুষ্টিয়ায় সড়ক অবরোধের সময় ‘গণপিটুনিতে’ নিহত হন শিবিরের দুজন কর্মী। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও আঞ্চলিক অফিস-এর পাঠানো খবর:
সাতক্ষীরা: জেলার সখীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবদুল করিমের ভাষ্যমতে, তাঁর ভাই দেবহাটা উপজেলার সখীপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ (৪২) বেলা ১১টার দিকে ঘের থেকে মাছ নিয়ে পারুলিয়া বাজারে বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন। পথে ধোপাডাঙ্গা মোড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাঁর গতিরোধ করেন। এতে তিনি বাধা দিলে লাঠি ও ইট দিয়ে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আবদুল আজিজকে হত্যা করেছেন।

তবে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিংবা পারিবারিক বিরোধের কারণে দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করেছে। হত্যার সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সম্পর্ক নেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, জামায়াত-শিবিরের পিকেটাররা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হরতালের সমর্থনে ভোর থেকেই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সাতক্ষীরা-যশোর মহাসড়কের ছয়ঘড়িয়া, অন্নের মোড়, মাধবকাটি, তুজুলপুর এবং সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের সখীপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে, বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। বিস্ফোরণ ঘটানো হয় অর্ধশতাধিক ককটেলের।

দেবহাটা উপজেলার গাজীরহাটে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয় হরতাল-সমর্থকেরা। সকাল ছয়টার দিকে একটি বিয়ের গাড়ি খুলনা থেকে সাতক্ষীরা আসার পথে বিনেরপোতায় হরতাল-সমর্থকদের ধাওয়ায় পড়ে। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ১০ যাত্রী আহত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: জেলা সদর ও শিবগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। শিবগঞ্জে সংঘর্ষে জামায়াতের একজন ও শিবিরের একজন কর্মী নিহত হন।

আহত হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ১৫ সদস্য। নিহত ব্যক্তিরা হলেন জামায়াতের কর্মী নুরুল ইসলাম ও শিবিরের কর্মী জিয়াউর রহমান। নুরুল ইসলামের বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার মহদিপুর গ্রামে। জিয়াউর রহমানের বাড়ি ঘোড়াপাখিয়া গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোলাম আযমের মামলার রায় ঘোষণাকালে বেলা একটার কিছু পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের রসুলপুর এলাকায় অবস্থান নেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা।

তাঁরা ইট ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা অবরোধ সরাতে গেলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় হরতাল-সমর্থকেরা অর্ধশতাধিক ককটেল ফাটান। জবাবে পুলিশ ও বিজিবি গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান নুরুল ইসলাম।

গুরুতর আহত জিয়াউর রহমানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ককটেলে ৯ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মিজানুর রহমান, শিবগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমানসহ ১৫ জন আহত হন।
পুলিশ সুপার বশির আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের ককটেল হামলার কারণে বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হয়। এ সময় বিজিবির গুলিতে কয়েকজন আহত হন।
জামায়াতের উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত আমির মনিরুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে জামায়াত-শিবিরের ওই দুজন নিহত হওয়া ছাড়াও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন রসুলপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে শিবিরের কর্মী মনিরুল ইসলাম (৩৫) ও জালাল উদ্দীনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শিবিরের কর্মী রায়হান।
কুষ্টিয়া: মিরপুর উপজেলার কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা আঞ্চলিক সড়কের আনন্দনগর এলাকায় ভোর সাড়ে চারটার দিকে সড়ক অবরোধ করার সময় ‘গণপিটুনিতে’ শিবিরের দুই কর্মী নিহত হন। গুরুতর আহত আরেকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিবিরের নিহত কর্মীরা হলেন উপজেলার বামনগাড়ী গ্রামের শফিউল আলমের ছেলে আল মুকিত ওরফে তরুণ (১৮) ও হালশা গ্রামের খবির উদ্দীনের ছেলে সবুজ হোসেন (১৬)। মুকিত কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।

আর সবুজ হালশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। গুরুতর আহত সাদ্দাম হোসেন ওরফে ফরিদ (১৯) ইশালমারী গ্রামের শফি উদ্দীনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
কুষ্টিয়া শহর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনজনই ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী। পিকেটিং করার সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের পিটুনি দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হালশা গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, সেহিরর পরপরই ২৫-৩০ ব্যক্তি জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিসংবলিত বেশ কিছু পোস্টার হালশা বাজারে লাগান। এর পর তাঁরা সড়কে গিয়ে গাছ ফেলে অবরোধ করেন।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে ডাকাতির সময় গ্রামবাসীর পিটুনিতে দুজন মারা গেছে। নিহত ব্যক্তিরা স্কুল ও কলেজের ছাত্র। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.