আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোনো এক অনিন্দিতার গল্প! (১ম পর্ব)!

স্বপ্নরা ডানা মেলুক ইচ্ছে মত ..নীল আকাশে. কফির মগের উপর দিয়ে এখনো ধুয়া উরছে। যেন ছোট্ট ছোট্ট মেঘ..সেগুলো হাত দিয়ে ছুয়ে দিচ্ছে মেয়েটা..সত্যি মেঘ গুলো তো ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে। তাই এগুলো ছুয়েই অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটায় সে। মেঘ দেখতে বেশ ভালো লাগে তার! আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। যেন রাজ্যের সব সুখ আর আনন্দ তখন ধরা দেয় পায়েলের কাছে! আজকের কফিটা একটু অন্য রকম করে বানিয়েছে সে।

কফি..সাথে ছোট ছোট দুটো ক্রিমার..কিন্তু কোনো চিনি দেয় নি। চিনির বদলে আস্ত একটা মিল্ক চকলেট ঢেলে দিয়েছে। গরম কফির মধ্যে চকলেট গলে গিয়েছে..স্বাদটা একটু অন্য রকম লাগছে। হট চকলেট আর কফির মাঝামাঝি কোনো জায়গায়..কিন্তু বেশ লাগছে সেটা খেতে তার। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে..মনে মনে ভাবছে এভাবে কফি বানানোর কথাটা প্রিতমকে জানাতে হবে! যদিও চকলেট ওর খুব একটা পছন্দের না কিন্তু তাতে কি..কফির সাথে ট্রাই না করলে বুঝবেই না যে কেমন লাগে! উরে যাওয়া ধুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গত রাতের কথা মন পরলো পায়েলের।

কাল রাত ৩টা অব্দি ঘুমায়নি পায়েল। একটা মুভি দেখতে বসেছিল। শেষমেশ মন খারাপ করে ছাড়ল সে মুভি। একা একা নীরবে কেঁদেছিলোও পায়েল। নিজের এই বদ অভ্যাসটার জন্য মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ হয় নিজের উপর তার।

মায়ের কাছ থেকে অন্য কোন গুন পাক আর না পাক এটা সে পেয়েছে উত্তরাধিকার সুত্রে। " আম্মুটা যে কেন এমন করে টিভি দেখে একা একা কাঁদে? এখন আমারও তাই হচ্ছে!" মনে মনে ভাবে পায়েল। যেন এ তার মায়ের ই দোষ! সবাই বলে পায়েল ওর আব্বু বা আম্মু কারো মতই হয়নি দেখতে! "তবে কি আমাকে কুরিয়ে পেয়েছিল কোনো পথের ধারে? কিংবা হসপিটালের বারান্দায়?" মনে মনে ভাবে পায়েল... আরো ভাবে.."হয়তো তাই! হয়তো আমি কোনো রাজার ঘরের আদরের দুলালী ছিলাম! আমার কোনো যমজ বোন ছিল! জন্মের পর পর আমাকে এনে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে আব্বু-আম্মুর কাছে! হয়তো একদিন আসবে ঠিক আমার মতই দেখতে একজন। আমাকে বলবে -- পায়েল! দ্যাখ! আমি তোর বোন! আমরা দেখতে একই রকম! কি মজাটাই না হবে তখন! " ----এই সব ভাবনাগুলো এক নিমিশে উরে পালায় যখন পায়েল ওর দাদুর ছবিটার দিকে তাকায়। দাদু দেখতে ঠিক পায়েলের মত ছিল।

সেই মুখ, সেই চোখ,এক হাসি, গালে টোল। শুধু দাদুটা অনেক ফর্সা ছিলেন। আর পায়েলটা হয়েছে শ্যামলা। দাদুর ছবিটার দিকে তাকিয়ে প্রায়ই একা একা তাকিয়ে থাকে পায়েল যেন নিজেকে দেখতে পায় সে। পায়েল যখন জন্মেছিল তখন নাকি বেশ কালো ছিল।

ছোট মামা বলে বেরিয়েছিলেন আপার একটা কালো মেয়ে হইছে!........ সেই কালো মেয়েটা এখন শ্যামলা রং ধারন করেছে..দেখতে দাদুর মত সুন্দর না হলেও আয়নায় যখন নিজেকে দেখে পায়েল তখন নিজেই নিজের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মাঝে মাঝে। -------------------------------------------------------------------- প্রিতমের আজ মন খারাপ! কেন খারাপ তা সে জানে না। জানার চেষ্টাও করবে না। প্রিতমের ধারনা "মন" নামক ধরাছোয়ার বাইরের যে বিষয় বস্তুটা, তাকে বেশি পাত্তা দেয়া উচিত না। যত বেশি তাকে নিয়ে চিন্তা করা হবে ততই সমস্যা! অবশ্য নিজের এই ফিলোসফি সে যে খুব একটা মেনে চলে তা নয়।

সময় পেলে মনের জানালা খুলে বসে...কিংবা চুপচাপ কফির মগটা নিয়ে জানালার কাছের আরাম কেদারায়টায় হেলান দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো সফট মিউজিক ছেরে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। তখন প্রিতম অনেক কিছুই ভাবে। জীবনের অনেক কিছুই ভাবে সে...প্রিতম কাউকে ভালোবাসে না। বাসতে যে চায় না তা না। কিন্তু অমন কাউকে এখনো তার চোখে পরেনি বলেই হয়তো এখনো একা একাই কফির মগটা হাতে নিয়ে বসে থাকে।

বেশ রুটিন মাফিক জীবন প্রিতমের। ছন্নছাড়া কিংবা অগোছালো নয়। সময় মত করে সব করতেই ভালো লাগে তার। সপ্তাহে পাঁচ দিন কলেজ করে ১০টা ৫টা করে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে..নিজের হাতেই সকালের নাস্তা আর চা টা বানায় সে।

সন্ধ্যায় ক্লাস শেষে সোজা বাসায়। অবসর সময়টাতে বই পড়া আর গান শোনা ছাড়া তেমন কিছু করার অভ্যাস নেই প্রিতমের। বেশ চুপচাপ একটা মানুষ। কারো আগে বা পিছে নেই। খুব ই সাধারন থাকতে আর ভাবতে পছন্দ করে প্রিতম।

আর আরেকটা জিনিস খুব ভালো পারে প্রিতম। তা হচ্ছে খুব সুন্দর করে কথা বলা। অনেক আগ থেকেই তার মনের আসনে বসিয়ে রেখেছে কোনো এক অনিন্দিতাকে। যার অপেক্ষায় এখনো সে প্রহর গুনছে। যার সাথে আনমনে কথা বলে বেরায় সে।

হয়তো তাকে নিয়ে কবিতাও লেখে মাঝে মাঝে..কিন্তু সেটা কাউকে কখনো দেয়া হয়নি। প্রিতমের ইচ্ছে কোনো এক বিশেষ দিনে কোনো এক অনিন্দিতাকে সে পড়ে শোনাবে নিজের এই লেখা কবিতা। -------------------------------------------------------------------- এই অতি সাধারন ছেলেটাকে ভালো লাগে পায়েলের। ভালো লাগে শুধু বন্ধু হিসেবেই। ভালো লাগে তার সাথে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে..অনলাইনে চ্যাটিং করতে।

প্রথম দিকটায় পাত্তা দিত না পায়েল তেমন একটা..প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে এমন করে রেখেছিল যেন প্রিতম পায়েলকে কখনোই অনলাইনে দেখতে না পায়। বাট এখন আর তা করে না। এখন সে বসে থাকে প্রতিক্ষায় কখন আসবে প্রিতম অনলাইনে! প্রতিদিন ই কথা হয় তাদের মাঝে। প্রতিদিনের নানা রকম খুটি-নাটি বিষয় গুলো পায়েল শেয়ার করে প্রিতমের সাথে..যেন ওর চুপচাপ শুনে যাওয়াতেই পায়েলের যত ভালোলাগা। প্রিতম ওর সব কথা শোনে..মাঝে মাঝে ..কথা বলতে বলতে যে কখন তারা একে অপরের এত কাছের মানুষ হয়ে গেছে তা বোধহয় পায়েল টেরও পায়নি।

ভালো লাগার যে সুক্ষ একটা ধারা বয়ে যাচ্ছিল সে শুধু টের পাচ্ছিল প্রিতম ই। একটু একটু করে যেন সে বুঝতে পেরেছিলো এতদিন যে অনিন্দিতাকে সে লালন করে এসেছে বুকের মাঝে তার বুঝি কোনো চেহারা এত দিনে দেখা পাবার একটা ক্ষীন আশা দেখা দিচ্ছে! কেন যেন আজকাল সব ভাবনার মাঝে পায়েলের মুখটাই ভেসে উঠছে। দেখা গেল ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম দিতে লাইনে দারিয়ে আছে..আর পায়েলের কোনো কথা মনে করে অকারনে একা একা হেসে ফেললো!আশেপাশের মানুষগুলো তখন এমন ভাবে তাকাই যে মনে হয় প্রিতম অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছে। এমন আজকাল প্রায়ই হচ্ছে। পায়েলের চন্চলতা ..সরলতা..আর অবাক করে দেয়া আপন করে নেয়ার ক্ষমতাকে ভয় হতে লাগলো প্রিতমের।

কেন যেন মনে হচ্ছে পায়েলকে ছাড়া চলবে না তার। "কিন্তু যদি পায়েল একি ভাবে না ভাবে? তখন? তখন কি হবে? তখন তো আমি বন্ধু হিসেবেও হারাবো তাকে!" মনে মনে ভাবে প্রিতম! "নাহ এ কথা কোনোভাবেই পায়েলকে জানতে দেয়া যাবে না। " .... প্রিতমের এখনো মনে আছে..পায়েলকে প্রথম দেখার ক্ষনটি। সেমি স্যারকেলটার উপর দারিয়ে ছিল প্রিতম। মেইন বিল্ডিংটার সামনে দিয়ে শত শত স্টুডেন্ট আসছে-যাচ্ছে।

এত প্রতিদিনকার ঘটনা। কিন্তু সেদিন এই শত শত স্টুডেন্টের মাঝে একটি মেয়েও হেটে আসছিলো মেইন বিল্ডিং এর দিকে। মেয়েটি যেন নিজের ছোট্ট জগতে মগ্ন ছিল। একা একা হাটছিল আর মুচকি মুচকি হাসছিল..প্রচন্ড বাতাসে তার চুল উরছিল। চারপাশের মানুষগুলো যেন স্টাচু হয়ে গিয়েছিল।

শুধু সেই মেয়েটিই হাটছিল। প্রিতম স্পষ্ট তার গালের টোলটা পর্যন্ত দেখতে পেয়েছিল। কোনো এক মায়ার টানে প্রিতম ওর দিকে তাকিয়েই ছিল যতক্ষন না পর্যন্ত তাকে দেখা যায়.."ওয়্যাও". এই একটি শব্দই বেরিয়াছিল তখন প্রিতমের মুখ দিয়ে। তার পর তো পরিচয় হলো বন্ধুদের মাধ্যমে। ওর সাথে প্রিতমের একটা ক্লাস ও ছিল..পায়েল কখনোই দেখেনি প্রিতমকে অবশ্য ক্লাসের সময়ে কারন পায়েল বসত প্রফেসরের ঠিক সামনে আর প্রিতম ঠিক পেছনে।

প্রথম যেদিন ফেসবুকে কথা হলো পায়েল বলে দিয়েছিল যে ওর বয় ফ্রেন্ড আছে। নাম "অনিক"! এর ঠিক মাস খানেক পর একদিন প্রিতম জিগ্গেস করেছিল পায়েলকে অনলাইনে " সো তোমার বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে?" "কে আনিক?" সাথে সাথে পায়েলের উত্তর। " ও অনেক ভালো আছে। এই একটু আগেও ওর সাথে কথা বলছিলাম :-)" সাথে সাথে প্রিতম ধরেফেলেছিল যে পায়েল মিথ্যা বলছে.."অনিক? না আনিক?" সত্যিই যদি পায়েলের কেউ থেকে থাকে তাহলে এ্যাটলিস্ট নামের বানানটা জানবে! দুইদিন দুই ভাবে বলার প্রয়োজন টা কি? বুঝেও সেদিন প্রিতম চুপ ছিল। সে চেয়েছিল পায়েল নিজে থেকেই সত্যিটা তাকে বলুক।

সেই সত্যি বলার দিনটাও এসেছিল একদিন। বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি প্রিতমকে। : "তোমাকে একটা কথা বলবো। " : বল.. : আসলে তোমার সাথে প্রথম থেকেই একটা মিথ্যা বলে এসেছি। সবার সাথেই অবশ্য বলেছি! অনেকটা সেফ থাকার জন্য! এটা আমার অনেক পরোনো একটা ট্রিক।

: কি সব আবোল তাবোল বলতেছো?? : আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই অনিক নামে! বানিয়ে বলেছি! তুমি তো আমার অনেক ভালো বন্ধু। আমি জানি তুমি এমন কিছু করবে না যাতে আমার বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়। তোমাকে বললে কোনো সমস্যা নেই। তাই তোমাকে বললাম! : :-) (প্রিতম শুধু একটা হাসির এমো পাঠিয়েছিল ম্যাসেন্জারে) সেদিন প্রিতমের কলেজে যাবার কথা ছিল না। কিন্তু না গিয়েও পারলো না! আজ যে পায়েল কে না দেখলেই নয়! আজ এত বর খুশিটা যে পায়েল তাকে উপহার দিয়েছে।

পায়েলকে টেক্সট ম্যাসেজ করে বললো ক্লাস থেকে বাইরে বেরিয়ে যেন সোজা ওকে কল দেয়। ও কলেজে আসছে। ফলের শুরু...চারদিকে গাছের পাতাগুলো লাল-হলুদ আর কমলা রং এর। ম্যাপল পাতাগুলো পরে পরে পথঘাট গুলো ভরে আছে। তারই মধ্যে দিয়ে ধীর পায়ে হেটে যাচ্ছে প্রিতম।

চোখে চশমা...কপালের উপর উরে চলে আসা চুল গুলোকে হাত দিয়ে হালকা করে সরাচ্ছে..কালো জ্যাকেটের নীচে আজ প্রিতম শার্ট পরেছে। নরমালি টি-শার্ট পরে কিন্তু আজ নয়। কারন পায়েলের শার্ট পরা ছেলেদের খুব ভালো লাগে দেখতে। আর হাতে এক গুচ্ছো ফুল। সব গুলো্ই গোলাপ।

হলুদ আর লাল গোলাপ। হঠাৎ করেই বাতাস টা যেন বেড়ে গেল.... বাতাসের সাথে সাথে ছোট ছোট শিলা-কনাও পরছে। চশমার ফ্রেমটা কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে প্রিতমের ছোট ছোট বৃষ্টির ফোটায়...তবুও অসম্ভব এক ভালো লাগায় দারিয়ে আছে সে কোনো এক অনিন্দিতিার অপেক্ষায়................................................. (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.